skip to Main Content

সেলুলয়েড I কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন

পরিচালনা: মার্টিন স্করসেজি
চিত্রনাট্য: এরিক রথ, মার্টিন স্করসেজি
চিত্রগ্রহণ: রড্রিগো প্রিয়েটো
সংগীত: রবি রবার্টসন
সম্পাদনা: থেলমা স্কুনমেকার
অভিনয়: লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, রবার্ট ডি নিরো, লিলি গ্ল্যাডস্টোন
সময়ব্যাপ্তি: ২০৬ মিনিট
ভাষা: ইংরেজি, ওসেজ
দেশ: যুক্তরাষ্ট্র
মুক্তি: ২০২৩

রুশ সাহিত্যিক ফিওদর দস্তোয়েভস্কি তার স্বদেশি মহাকবি পুশকিন সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘পুশকিন তার কবরে অনেক রহস্য নিয়ে চলে গেছেন। আমাদের কাজ সেই রহস্যগুলোকে মাটি খুঁড়ে বের করে সবার সামনে উপস্থাপন করা।’ ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ দেখার পর বোদ্ধা দর্শকের মনে হওয়া স্বাভাবিক, যেসব মানুষের জীবনের (প্রকৃত অর্থে মৃত্যুর) ওপর ভিত্তি করে এই ছবি নির্মিত (অথবা বৃহত্তর রাজনৈতিক অর্থে একটি গোটা রাষ্ট্র নির্মিত), তারা সবাই অনেক রহস্য নিয়ে এভাবেই নিজেদের কবরে চলে গেছেন, বা পরোক্ষভাবে তাদের নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সেই রহস্যে মিশে আছে এক চরম বিশ্বাসঘাতকতা বা পুরো একটি জাতির গণহত্যার চক্রান্ত, আর তাই শতাব্দী পেরিয়েও এত দিন কোনো আমেরিকানই সাহস দেখাতে পারেনি এই রহস্য উন্মোচন করে জনসমক্ষে উপস্থাপন করতে, পাছে কোনো তিক্ত সত্যের সম্মুখীন হয়ে তাদের অতীত অপরাধবোধ ফিরে আসুক সেই ভয়ে। আধুনিক আমেরিকার অন্যতম মাস্টার ফিল্মমেকার মার্টিন স্করসেজি সেই সাহস দেখিয়েছেন, সবার সামনে তুলে ধরেছেন শতাব্দী ধরে মাটি চাপা পড়ে থাকা তিক্ত সত্যকে।
আমেরিকান লেখক ডেভিড গ্র্যান রচিত ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন—দ্য ওসেজ মার্ডারস অ্যান্ড দ্য বার্থ অব এফবিআই’-এর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ছবির গঠন মূলত একটি ট্র্যাজেডির সমরূপ। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আমেরিকার ওকলাহোমা রাজ্যের ফেয়ারফ্যাক্স নামক ছোট এক শহরে তেল আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু বিত্তবান ও আধুনিক সাদা আমেরিকানদের দম্ভে চিড় ধরিয়ে দেখা যায়, যে জমিতে তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে, সবই আদিবাসী আমেরিকানদের নামে নথিভুক্ত। এসব তেলের মালিকানা পাওয়ার লোভে বিভিন্ন সাদা আমেরিকান এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে এবং বিশেষত তারা বিভিন্ন আদিবাসী নারীদের সঙ্গে বিয়ের ফাঁদ পাতে। এই অসবর্ণ বিয়ের ফলে তেলের মালিকানা মূলত এসব সাদা আমেরিকানদের হাতে চলে আসে এবং এরপর শুরু হয় সেই নারকীয় গণহত্যা—যেখানে একের পর এক আদিবাসী নারী-পুরুষ রহস্যজনকভাবে মারা যেতে থাকে।
‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’-এর গল্পটি মূলত বয়ে চলে এসব ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন চরিত্রকে কেন্দ্র করে—মলি, আর্নেস্ট ও উইলিয়াম হেল। তেলের মালিকানা পাওয়ার লোভে ভাইপো আর্নেস্টকে ওসেজ নারী মলিকে বিয়ে করার পরামর্শ দেন কাকা উইলিয়াম হেল। অতঃপর, এই তিনজনের (মূলত মলির) জীবনে ঘটে চলে অস্বাভাবিক নানা ঘটনা। মলির বিভিন্ন আত্মীয় একের পর এক আস্বাভাবিকভাবে মারা যেতে থাকে। অতঃপর, একটি সময় আসে যখন আর্নেস্ট ক্রমাগত বিষক্রিয়ার মাধ্যমে মলিকেই হত্যা করতে চায়। এই সবকিছুই ঘটে চলে কাকা উইলিয়াম ‘কিং’ হেলের সুপরিকল্পিত ছকে। যদিও এত পরিকল্পনা সত্ত্বেও সর্বশেষে এরা সবাই ধরা পড়ে পুলিশের হাতে।
গল্পের এই সারাংশ থেকে মনে হতে পারে, এটি খুব মাখো মাখো ইনভেস্টিগেটিভ থ্রিলারের গল্প। বস্তুত, ডেভিড গ্র্যানের বইটিও এই ইনভেস্টিগেটিভ দৃষ্টিকোণে বেশি গুরুত্ব পোষণ করে। কিন্তু স্করসেজির কাছে এই ইনভেস্টিগেশনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব। তাই ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ একটি জনেরিক ছবি না হয়ে, হয়ে ওঠে চরিত্রগুলোর গভীর ও ভয়াবহ বাসনার এক মানবতাবাদী মনস্তাত্ত্বিক নিরীক্ষণ।

 আবির্ভাব মৈত্র

কুইজ
১। ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ কার বই অবলম্বনে নির্মিত’
[ক] উইলিয়াম শেকসপিয়ার
[খ] বার্নার্ড শ
[গ] ফিওদর দস্তোয়েভস্কি
[ঘ] ডেভিড গ্র্যান

২। এর প্রেক্ষাপট কোন সময়ের?
[ক] বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ
[খ] মধ্যযুগের শেষ ভাগ
[গ] মধ্যযুগের প্রথমার্ধ
[ঘ] চলতি শতাব্দীর প্রথমার্ধ

৩। এখানে রহস্যময় গুপ্তহত্যার শিকার কারা?
[ক] কৃষ্ণাঙ্গরা
[খ] ওসেজ জনগোষ্ঠী
[গ] শ্বেতাঙ্গরা
[ঘ] শিশুরা

গত সংখ্যার বিজয়ী
১. মানহা মুসারাত, উত্তরা, ঢাকা
২. আনসারী, ফুলবাড়ী, খুলনা
৩. রাকিবুল হাসান, হালিশহর, চট্টগ্রাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top