ফিচার I চায়ে চুমুক
চা পানের সঙ্গে মেজাজ ভালো থাকার ব্যাপারটি অনেকে বিশ্বাস করেন। আবার কারও কারও মতে, এটি একদমই অবান্তর চিন্তা! তবে স্বীকার করতে হবে, সারা বিশ্বে এই পানীয় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সতেজ স্বাদ এবং বেশ কিছু স্বাস্থ্য সুবিধার কারণে চা সব বয়স ও সংস্কৃতির লোকেরা উপভোগ করে। শরীর চাঙা রাখতেও এর বিকল্প মেলা ভার। চা মনোযোগ ধরে রাখতে এবং মানসিক স্বচ্ছতা উন্নত করতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ব্রেইন ফাংশনের উন্নতি ঘটায়। মেজাজ রাখে ইতিবাচক।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা কমাতে এবং দুশ্চিন্তা দূরীকরণেও চায়ের রয়েছে ভূমিকা। আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, মুড যেমনি হোক, তার জন্য চাই চা!
বাপ্পী খানের কথায় ১৯৯২ সালে প্রকাশিত এলআরবির সেই গান মনে আছে তো? বলছি ‘এক কাপ চা’-এর কথা। গানের শুরুটা এ রকম—‘শয্যায় এলোমেলো ওঠা প্রভা/ ক্লান্তির গুঞ্জনে এক কাপ চা/ বিষণ্ন গাঢ় রাত ভরা নীলিমা/ অপাঙ্গ দেহ সুখে/ এক কাপ চা…’। আসলে ব্যক্তিজীবনের নানা সুখ ও অসুখে চা এভাবেই জড়িয়ে থাকে অনেকের সঙ্গে।
রোমান্টিক জীবনে যখন কোনো মানুষের সঙ্গে আমরা প্রথম দেখা করি, সেখানেও হয়তো আনমনেই বেছে নিই এমন জায়গা, যেখানে চাইলেই চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে শুরু হবে আলাপ। হোক সেটি কোনো খোলা চত্বর কিংবা পাঁচ তারকা হোটেল। বাংলাদেশের আরেক জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলসের গানের কথাও চাইলেই মনে করতে পারেন, ‘চায়ের কাপে পরিচয় তোমার সাথে…’!
এই পানীয়ের প্রতি তৃষ্ণা বেশ প্রচলিত। যারা চা পান করেন, তারা প্রতিদিন কয়েকবার পেয়ালা বা কাপে চুমুক দেন। কবীর সুমন হয়তো এ জন্যই প্রিয়জনের উদ্দেশে গেয়েছেন, ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই…’।
আবার ধরুন ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ সিনেমার কথা। ওয়ান্ডারল্যান্ডে প্রাণীদের নৃতাত্ত্বিক রূপ দেওয়া হয়, সেখানে কোনো উঁচু শ্রেণি নেই; নেই কোনো স্নুটিনেস। এমনকি বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে থাকতে পারেনি সরল অ্যালিসও। অথচ সমগ্র বিশ্বে স্থিতিশীলতার একমাত্র উৎস হলো চা—আপাতদৃষ্টে বাড়াবাড়ি মনে হলেও এমনটাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ওই সিনেমায় একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের মাধ্যমে।
অনেকে বলেন, নার্ভাসনেস কাটাতে পারে চা। ২০১৩ সালে লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও অভিনীত ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’ সিনেমায়ও দেখা গেছে এমন নমুনা। এতে একটি টি-পার্টির দৃশ্যকে এমন গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা হয়েছে, যেখানে প্রথমবার হেডোনিস্টিক ও বোমাস্টিক জে গ্যাটসবিকে বাস্তবে আবেগতাড়িত হতে দেখা যায়; ডেইজির প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছিল তাতে। দৃশ্যে আগমনের আগে গ্যাটসবি ভুগছিল স্নায়বিক চাপে। চা ও ম্যাকারনের পরিবেশনা তাতে এক নির্মল পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিল।
সংগীত ও সিনেমার আলাপ থেকে বাস্তব জীবনে ফেরা যাক! আজকের দিনে চা ব্যাপারটিই যেন রোজনামচার একটি অংশ। সকালে ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত, অনেকের জীবনেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে এই পানীয়। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা ছাড়া দিন শুরু করতে পারেন না—এমন মানুষ কম নেই দুনিয়ায়। অনেকের তো দিনে বহুবার চা পান করার অভ্যাস রয়েছে। কারও কারও কাছে চা পান আবার শৌখিনতা। এই যেমন হাই টি-পার্টি কিংবা টি-পার্টি আয়োজন করতে দেখা যায় উচ্চবিত্তদের। বিভিন্ন ধরনের চায়ের স্বাদ চেখে দেখতে পছন্দ করেন তারা। আপনি যে তালিকাতেই পড়ুন না কেন, চা আপনাকে চাঙা রাখবে—এ কথা মোটামুটি হলফ করে বলাই যায়!
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট