ফরহিম I চর্চায় চলতি
শুধু মেয়েদের বিষয়—ভ্রান্ত এ ধারণা দূর হয়েছে বহু আগেই। জেন্ডার ইকুয়ালিটির এই সময়ে এমন সেকেলেপনা মানায় নাকি!
গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিসার্চ এজেন্সি মিন্টেলের তথ্যমতে, বর্তমানে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে নির্দিষ্ট রূপরুটিন মেনে চলার আগ্রহ বেশ। দিন শেষে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি বাইরে যাওয়ার আগে ত্বককে প্রস্তুত করতেও ভালোবাসেন। আধুনিক এই পুরুষেরা নিজের সৌন্দর্য, সুস্বাস্থ্য, আত্মবিশ্বাস নিয়ে সচেতন। ইজি স্কিন কেয়ার রুটিনেই ভরসা তাদের।
কায়দামতো ক্লিনজার
ওয়াশ রুমে একটামাত্র সাবান। তা দিয়েই গোসল, মুখ ধোয়া, হাত ধোয়া! এই যদি হয় কোনো পুরুষের মুখের ত্বক পরিষ্কারের পদ্ধতি, তাহলে চিন্তার বিষয় বটে। কেন? কারণ, মুখের ত্বকের চাহিদা আর হাত পরিষ্কারের চাহিদা কখনোই এক নয়। গায়ে মাখার সাবান কিংবা হ্যান্ড ওয়াশ লিকুইডে ক্ষারের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে, যা মুখত্বকের কোমল অংশর জন্য মোটেই মানানসই নয়। বের হলেই মুখে তেল উৎপাদনের মাত্রা বাড়ে, যা বাইরের ময়লার সঙ্গে মিশে ত্বক অপরিষ্কার করে। কোমল ক্লিনজার ব্যবহার করে ত্বক থেকে এ ধরনের ধূলিকণা আর তেলের মিশ্রণ তুলে নেওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ক্ষারসংবলিত সাবান অথবা হ্যান্ড ওয়াশ ব্যবহার করেও ত্বক পরিষ্কার সম্ভব, প্রাথমিকভাবে ভালো অনুভূতিই হবে। কিন্তু ক্ষতি হবে দীর্ঘমেয়াদি। সিবাম গ্ল্যান্ড আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে, যা ত্বককে আরও বেশি তৈলাক্ত করবে, ত্বকে দাগ তৈরি হবে, বাড়বে বলিরেখা। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত হবে। তবে এর সমাধান সহজ। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্লিনজার ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ত্বকের ময়লা দূর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বল হবে, পোর মিনিমাইজ হবে। ত্বক শুষ্ক অথবা সেনসিটিভ হলে ক্লিনজিং বাম ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার তৈলাক্ত ত্বকে ক্লিনজিং পাউডারও ব্যবহৃত হতে পারে। পানির সঙ্গে মিলিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে এই স্কিন কেয়ার আইটেম।
অ্যাসিড ওয়াইপ
স্পেশালিস্ট ডাক্তার ড্যানিশ গ্রস প্রমাণ করেছেন, এএইচএ অর্থাৎ আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ত্বকের জন্য দারুণ উপযোগী। বলা যেতে পারে গেম চেঞ্জার। ত্বকের সারফেসে জমে থাকা ধুলা, বালু, তেল, মেকআপ দূর করতে সক্ষম এই এএইচএ থেকে তৈরি প্যাড। এটি ব্যবহারের ত্বক পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি নতুনের মতো সুন্দর করে তুলতে সক্ষম বলে জানা যায়। খুব সহজে স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখা সম্ভব। কারণ, দুই মিনিটের বেশি সময় দরকার হয় না এই প্যাড মুখে বুলিয়ে নিতে।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের উপযোগিতাও আলোচনা করা জরুরি। এটি ত্বক থেকে মৃতকোষ সরিয়ে নিতে সক্ষম। ত্বক পরিষ্কার করার পরে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড প্যাড মুখত্বকে বুলিয়ে নিয়ে দশ মিনিট অপেক্ষা করা সম্ভব হলে দেখা যাবে, ত্বক থেকে মৃতকোষ উঠে আসছে। ডেড সেল ত্বকে ময়লা তৈরি করে। বাড়তি প্রলেপ সৃষ্টির ফলে ত্বক ভারী অনুভূত হয়। তাই এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি। আর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড প্যাড দিয়ে সেটিকে সহজে করা সম্ভব।
টিন্টেড ময়শ্চারাইজার
ত্বক পরিষ্কার করার পরে টিন্টেড ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করলে চেহারায় সতেজতা তৈরি হয়। এটি ত্বকের দাগ আড়াল করতে পারে। তাই এই বিউটি প্রোডাক্ট মেয়েদের মেকআপ আইটেম ভেবে দূরে সরিয়ে রাখলে ভুলই হবে। কারণ, মেয়েরা শুধু মেকআপের উদ্দেশ্যে টিন্টেড ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করেন না। দাগছোপ ঢেকে রাখতেও এর উপযোগিতা রয়েছে।
বিবি ক্রিম, অর্থাৎ ব্লেমিশ বামও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ক্রিমগুলোর কাভারেজ তুলনামূলক লাইট হয়ে থাকে। ফলে ত্বকে আলাদা করে ভারী মেকআপের প্রলেপ তৈরি করে না। ব্যবহারের কিছুক্ষণের মধ্যে ত্বকের সঙ্গে মিশে যায়। তাই অল্প কিছু সময় দিতে হবে সেট হওয়ার জন্য। এই পণ্য ফুল কাভারেজ মেকআপের জন্য নয়। হালকা প্রসাধন ব্যবহারে চেহারায় জেল্লা বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত।
রাতে রেটিনল
রাতভর ঘুমের পরে সকালে আয়নায় চেহারার সতেজতা দেখলে ভালো লাগবেই। এ জন্য ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে রেটিনল। ভিটামিন এ থেকে তৈরি করা হয়। বলিরেখা, অ্যাকনে, টেক্সচারের জন্য দারুণ উপযোগী। অয়েল অথবা ক্রিম—দুই ফর্মেই পাওয়া যায়। স্বচ্ছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতে হবে। সারা রাত ধরে ত্বকে রেটিনলের উপস্থিতি ত্বকের টেক্সচার ও টোনের উন্নয়নে সহায়তা করবে। গোপন ক্লান্তির ছাপ হটাবে।
সানস্ক্রিনে সকাল-সন্ধ্যা
সূর্যের ক্ষতিকর বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে হলে রূপরুটিনে সানস্ক্রিনের বিকল্প নেই। মর্নিং জম্বি ফেস নিয়ে বাইরে বের হওয়ার আগে মনে রাখতে হবে, ত্বকের জন্য খুব জরুরি এটি। আকাশ রোদে ঝলমল করুক, কিংবা মেঘ করুক থমথম—সানস্ক্রিন চাই-ই চাই। ত্বকে সরাসরি সান কেয়ার আইটেম ব্যবহার না করাই ভালো; বরং ভিটামিন সি সেরামের লেয়ার ব্যবহার করে, তার ওপরে ময়শ্চারাইজারের প্রলেপ দিয়ে এরপরে সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে ত্বক আরও বেশি উপকৃত হতে পারে বলে স্কিন স্পেশালিস্টদের মত।
ময়শ্চারাইজার ইজ আ মাস্ট
ত্বক শুষ্ক হোক বা তৈলাক্ত, ময়শ্চারাইজার জরুরি। হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন স্কিন কেয়ার স্পেশালিস্টরা। কারণ, এই উপাদান ত্বককোষের পুনরুৎপাদনে সহায়ক। এমনকি সজীবতা ফিরিয়ে দিতেও। যাতে নিশ্চিত হয় ত্বকের সুস্থতা। উজ্জ্বলতা বাড়ে লক্ষণীয়ভাবে।
ত্বকের চাহিদা বুঝে প্রসাধন নিতে হবে। নেওয়া যেতে পারে বিশেষজ্ঞ পরামর্শও। শুধু ত্বককে অবহেলা না করলেই চলবে।
সারাহ্ দীনা
মডেল: আহনাফ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: কৌশিক ইকবাল