দেহযতন I কার্ডিও অ্যাট হোম
তুমুল বর্ষণের মৌসুমে প্রাত্যহিক রুটিন যখন এলোমেলো, শরীর আলসেমির আশকারায় দিশেহারা, প্রকৃতির দোহাইয়ে দেহচর্চায় বিরাম টানার কথা ভাবছেন? মোটেই তা বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়! রয়েছে বিকল্প সমাধান
বর্ষার এ এক আলাদা দ্যোতনা। ঝরো ঝরো বরিষণে অজান্তেই শরীরে চেপে বসে ক্লান্তি। সেই সঙ্গে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা তো আছেই। জিম কিংবা পার্কে গিয়ে শারীরিক কসরত করা মুশকিল ভীষণ! এমন সময়ে চাইলেই বাসায় অনুশীলন করা যেতে পারে কিছু কার্ডিও এক্সারসাইজ।
তবে তার আগে জেনে নেওয়া ভালো এর পরিচয়। কার্ডিও এমন ব্যায়াম, যা আপনার হৃৎস্পন্দন ইতিবাচকভাবে বাড়িয়ে দেবে। দৌড়ানো কিংবা দ্রুত হাঁটা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ব্যায়ামই এই দেহচর্চার অন্তর্ভুক্ত। ঘরে থেকে এর চর্চা করতে খেয়াল রাখা চাই বেশ কয়েকটি বিশেষজ্ঞ দিকনির্দেশনায়।
বারপিস
বারপিস ক্রসফিটের চর্চা করতে অনেক সময় পেশাদারেরাও ভয় পেয়ে যান! তবে এটি অল্প সময়ের মধ্যে একটি কিলার কার্ডিও ওয়ার্কআউটের অনুভূতি দিতে সক্ষম। সার্টিফাইড ট্রেইনার সাদিয়া শীলা বলেন, ‘এর চর্চা করতে কোনো ইক্যুইপমেন্ট কিংবা অনেক বেশি স্থানের প্রয়োজন পড়ে না। ফলে এটি বাড়িতে করার জন্য দুর্দান্ত কার্ডিও ওয়ার্কআউট। বারপিস চর্চা করতে বিকল্প প্ল্যাঙ্ক অবস্থানের পরিবর্তন করে, সঙ্গে সঙ্গেই উঠে বাতাসে সামনের দিকে এগিয়ে লাফ দিতে হবে। এ সময়ে নিশ্চিত করা চাই, হাত যেন মাটিতে সমতল অবস্থায় এবং পিঠ সোজা থাকে। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে মাত্র ১০ মিনিটে ১০০ ক্যালরির বেশি বার্ন করা সম্ভব।’ তবে ইনজুরি যেন হানা না দেয়, সে জন্য ধীরগতিতে শুরু করার এবং দিনে ১০ মিনিটের বেশি চর্চা না করার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের।
দড়িলাফ
অনেক ক্রীড়াবিদই ক্রস ট্রেনিংয়ে এর চর্চা করেন। যেকোনো জায়গায় এটি করা যায়। তবে সবার প্রথমে স্পোর্টস পণ্যের দোকান থেকে একটি বিশেষ ধরনের দড়ি কিনে আনা চাই। শীলার মতে, মাত্র ২০ মিনিট দড়িলাফে প্রায় ২২০ ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব। যদিও অনেকের কোনো সমস্যা ছাড়াই ছোটবেলায় দীর্ঘ সময় ধরে দড়িলাফ দেওয়ার স্মৃতি থাকতে পারে, তবে পরিণত বয়সে ২০ মিনিটের অধিক সময় ধরে এর চর্চা চালাতে চাইলে নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
জাম্পিং জ্যাকস
দড়িলাফের মতো এই কার্ডিও ওয়ার্কআউটও আপনার মনে শৈশবস্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারে। সাদিয়া শীলা বলেন, ‘বারপিসের মতো একটানা ১০ মিনিট জাম্পিং জ্যাকস করলে প্রায় ১০০ ক্যালরি বার্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বারপিস, দড়িলাফ ও স্কোয়াট জাম্পের সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে এই ব্যায়ামের। ফলে এগুলো যে কেউ একের পর এক চর্চা করতে পারেন। কোনো ইক্যুইপমেন্ট ছাড়াই যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে জাম্পিং জ্যাকস সঞ্চালন করা যায়।’
স্কোয়াট জাম্প
দুর্দান্ত এই কার্ডিও এক্সারসাইজের চর্চা একা একাই করা সম্ভব। নাম থেকে বোঝা যায়, স্কোয়াটের মাধ্যমে এটি শুরু করা চাই; তারপরে লাফিয়ে যতটা ওপরে ওঠা সম্ভব—ততটুকু উঠে আবার স্কোয়াটে ফিরে আসতে হবে। শীলা সতর্ক করে বলেন, ‘এই চর্চায় হাঁটুর ওপর বেশ প্রভাব পড়ে। তাই শিক্ষানবিশ হলে কিংবা হাঁটুতে আঘাত পেলে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন।’
কিকবক্সিং
সংগঠিত কার্ডিও সেশনে আরও বেশি ক্যালরি বার্ন করতে চান? তাহলে কিকবক্সিং শুরু করুন। বাড়িতে করার জন্য এটি একটি সেরা কার্ডিও ওয়ার্কআউট। কিকবক্সিং হলো কারাতে ও বক্সিংয়ের সংমিশ্রণ। এটি শুধু কার্ডিও নয়; স্ট্রেন্থ স্ট্রেনিংয়ের জন্যও দারুণ। সাদিয়া শীলা বলেন, ‘এর চর্চায় একটি পাঞ্চিং ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইতিমধ্যে কিকবক্সিংয়ে দক্ষতা থাকলে নিজে নিজেই করা সম্ভব। প্রতি ১০ মিনিটের ওয়ার্কআউটে প্রায় ১০০ ক্যালরি বার্ন করার পাশাপাশি মানসিক চাপ এবং আগ্রাসী মনোভাব থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।’
নাচ
বাড়িতে মজার কোনো কার্ডিও ওয়ার্কআউট করার কথা ভাবছেন? তাহলে প্লে-লিস্টে কিছু আপবিট মিউজিক রাখুন; আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচার চেষ্টা করুন। এই ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড পাম্প করে; ফলে কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত করার পাশাপাশি কিছু ড্যান্স মুভ মাংসপেশির উন্নতি ঘটাতেও উপকারী। আরও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পেতে বিনা মূল্যে ইউটিউবে ড্যান্স এক্সারসাইজ ভিডিও দেখতে পারেন।
সিঁড়িতে দৌড়
এই দেহচর্চার জন্য আবাসস্থলে সিঁড়ি থাকা চাই। সিঁড়িতে দৌড়ানোর ওয়ার্কআউট পূর্ণাঙ্গ শরীর, বিশেষ করে শরীরের নিম্নাংশে শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে। হৃৎস্পন্দন যথাযথ রাখতেও কাজে দেয়। তাই সকল ওয়ার্কআউট শেষ করার পরেও আরও বেশি ক্যালরি বার্ন করতে চাইলে নিজেকে জানাতে পারেন নিয়মিত সিঁড়িতে দৌড়ানোর চ্যালেঞ্জ।
এক জায়গায় অবস্থান করে জগিং
বৃষ্টির দিনে দৌড়ানোর জন্য বাইরে যাওয়ার কিংবা ট্রেডমিলে ওঠার দরকার নেই। বাড়িতে একই জায়গায় জগিং সমান সুবিধা এনে দেবে আপনার দেহে। অবশ্য দীর্ঘ সময়ের জন্য একই জায়গায় অবস্থান করে দৌড়ানো অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে। এ জন্য বারপিস, দড়িলাফসহ অন্যান্য ব্যায়ামের সঙ্গে জগিংয়ের অন্তর্ভুক্তি হতে পারে দারুণ অপশন।
সাদিয়া শীলার মতে, উল্লিখিত ব্যায়ামগুলোর সংমিশ্রণে একটি চমৎকার ফল পাওয়া সম্ভব। ২০-৩০ মিনিট করে প্রতিটি ব্যায়ামের অনুশীলনে যেমন ক্যালরি বার্ন করা যাবে, তেমনি শক্তিশালী মাংসপেশি গঠনেও সহায়ক। বেশির ভাগ ব্যায়ামের অনলাইন টিউটরিয়াল ভিডিও দেখে এর কিছু ট্রিকস রপ্ত করা যেতে পারে, যা পরবর্তীকালে ওয়ার্কআউট করার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
একজন ব্যক্তি বাড়িতে ব্যায়াম করছেন মানেই তার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি নেই, তা নয়। তাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কিছু পরামর্শ দিয়েছেন শীলা।
অবাধে চলাফেরা করার জন্য বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা উন্মুক্ত রাখা;
পাটি, ম্যাট বা কার্পেট স্থিতিশীল কি না, তা পরীক্ষা করা;
মেঝেতে নন-স্কিড জুতা পরা;
হৃৎস্পন্দন বাড়াতে এবং পেশি উষ্ণ করতে ৫ মিনিট ওয়ার্মআপ করা;
হাইড্রেটেড থাকার জন্য পানি পানের নিয়মিত বিরতি নেওয়া;
শরীর ও হৃৎস্পন্দন বুঝে ব্যায়ামের সীমারেখা নির্ধারণ করা;
একটি ওয়ার্কআউট শেষ হলে কিছু সময় বিরতি নেওয়া এবং অল্প সময়ের জন্য পেশি প্রসারিত করা;
সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যা কিংবা বর্তমান উপসর্গের অবনতি ঠেকাতে ব্যায়াম শুরুর আগে যথাযোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো।
ব্যায়াম একজন মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার একটি অপরিহার্য উদ্যোগ। যেকোনো ধরনের ব্যায়াম ধীরে ধীরে শুরু করা শ্রেয়। ফিটনেস বাড়তে থাকলে ব্যায়ামের সঙ্গে শরীর অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, এতে আঘাতের ঝুঁকি কমে আসে অনেকাংশে।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট