skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ফ্যাশন ইমোশন

আবেগকে আশ্রয় করে তৈরি নব্য বাজারজাতকরণ কৌশল। প্রাধান্য পায় ব্র্যান্ড আর ক্রেতার মধ্যকার মনস্তাত্ত্বিক সংযোগ। প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফ্যাশন মার্কেটে টিকে থাকার জন্য। বিস্তারিত সারাহ্ দীনার লেখায়

বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। যোগ হচ্ছে নতুন নতুন ব্র্যান্ড। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রথম স্থান জিতে নেওয়ার খেলায় প্রয়োজন পড়ছে নিত্যনতুন কারিকুরি। রঙিন ফ্যাশন দুনিয়া যেন এক যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে বিখ্যাত সব ব্র্যান্ড দুর্দান্ত রণকৌশলে অপরপক্ষকে টক্কর দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সারাক্ষণ। ব্র্যান্ডিংয়ের মতো সফটকোর বিজনেসকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনার কারণ, মানুষের মন জয় করাও কম কঠিন নয়। বিকল্প যেখানে অজস্র, টিকে থাকার সংগ্রাম ততটাই কঠিন।
বাজারের কলেবর বৃদ্ধির কারণ বেশ কয়েকটি। ক্রেতার সংখ্যা, ব্যয় সক্ষমতা, চাহিদা বৃদ্ধি অন্যতম অনুঘটক। ফলাফল, ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সংখ্যাও বাড়ছে টেক্কা দিয়ে। ক্রেতা চাহিদার পরিবর্তন আকাশপাতাল বদলে গেছে। প্রযুক্তি বিশ্বগ্রাম ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্রেতা নিত্যনতুন সংকলনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন। একের পর এক নতুনের আগমন ক্রেতার জন্য যেন নতুন দুয়ারের উন্মোচন। আর নব্যের প্রতি আকর্ষণ তো চিরন্তন। আনকোরার আশায় নতুন ঝাঁপ তোলা দোকানে ঢুঁ। দীর্ঘদিনের ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কে ভাটার টান। কাস্টমার লয়ালটি তলানিতে ঠেকেছে। একবারের ভালো অভিজ্ঞতা বারবার খরিদ্দার টেনে আনবে—ব্যবসাসংশ্লিষ্টদের এমন আশার এখন গুড়ে বালি।
ক্রেতা আকর্ষণে নিত্যনতুন কৌশলে মন দিচ্ছেন ফ্যাশন বাজারের হর্তাকর্তারা। ব্র্যান্ড নিউ ব্র্যান্ডিংয়ে ক্রেতা জয়ের চেষ্টা। ব্যবসায় বরাবরই বিশেষ ভূমিকা রাখে ব্র্যান্ডিং। কীভাবে? নতুন সংকলন, মূল্যছাড়সহ কোম্পানির হালনাগাদ তথ্য সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেওয়া ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। উদ্দেশ্য—কোম্পানির ঝাঁ-চকচকে উপস্থিতির জানান দেওয়া। একেক সময়ে একেকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণের মন্ত্র কাজ করেছে। অস্থির এই সময়ে ক্রেতাকে আকর্ষণ করছে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং।
ইমোশনাল ফ্যাশন ব্র্যান্ডিং কী
কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে মানুষের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে ব্র্যান্ডটির প্রচারের পদক্ষেপের পুস্তকীয় নাম ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং। ২০০১ সালে বিশ্ব প্রথম পরিচিত হয় এই মার্কেটিং টার্মের সঙ্গে। মানব মনের সঙ্গে বাণিজ্যের সন্ধি প্রথম থেকেই আলোচনার বিষয়বস্তু। দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত ধারার একত্রীকরণ ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যাকরণকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়।
ফ্যাশন বাজারের লোকদের মতে, আগের মতো সহজ-সরল ব্রান্ডিং জলে পর্যবসিত হচ্ছিল। সম্ভাব্য ক্রেতারা ফিরেও তাকাচ্ছিলেন না। সেখান থেকেই পট পরিবর্তনের গল্প শুরু। একই সঙ্গে মানুষের মনোযোগ নিয়েও সচেতন থাকতে হয়েছে ব্র্যান্ডিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বর্তমানে ৮ দশমিক ৩৫ সেকেন্ড পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রাখতে পারছেন। তাই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সব। প্রতিটি মুহূর্তকে গুরুত্ব দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণ করার চেষ্টায় ব্যস্ত ব্র্যান্ড-সংশ্লিষ্টরা। মনোযোগের এই নিম্নগামিতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর প্রকাশভঙ্গি, যোগাযোগের ধরন—সবকিছুতেই দেখা যাচ্ছে মানবজীবন ও আবেগকে উপজীব্য করার উদাহরণ। প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন আর অহংবোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয় পণ্যকে আবেগের মোড়কে বিক্রি করতে। উদ্দেশ্য, ক্রেতার মনে স্থান করে নেওয়া। ব্র্যান্ড লয়ালটি তৈরির জন্য ক্রেতার অভিজ্ঞতা, নিজস্বতা, পক্ষপাত আর কো-ক্রিয়েশনকে উপজীব্য করে সংবেদনশীল ব্র্যান্ডিং। গল্পের ছলে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে মানুষের যাপিত জীবনের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করে। পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং কনটেন্টে সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনও জনপ্রিয় হয়েছে। কারণ, মানুষ নিজের জীবন, ভাবনা, দর্শনকে গুরুত্ব দিয়েই দিন যাপন করতে পছন্দ করে। কোনো পণ্য কিংবা সেবার ব্র্যান্ডিং জীবনঘনিষ্ঠ হলে সেটির প্রতি আলাদা আকর্ষণ তৈরি হয়।
প্রবহমান বাজার
ফ্যাশন বাজারে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একসময়ের বহুল জনপ্রিয় গণমাধ্যম টেলিভিশন হারিয়েছে গুরুত্ব। এখন ক্রেতা টিভি পর্দার বিজ্ঞাপনচিত্র দেখেই খুশি নন। আবার রেডিওর স্বর্ণযুগেও যতিচিহ্ন। তাই আরডিসি, অর্থাৎ রেডিও ডেটা কমিউনিকেশনের মাধ্যমেও পণ্যের গুণাগুণ ক্রেতার কান পর্যন্ত পৌঁছানো আগের মতো সম্ভব হচ্ছে না। ছাপা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও একই মত। ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন সেখানেও নেই। ডিজিটালাইজেশন গণমাধ্যমকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। ক্রেতা এখন বাজার সেরে নিচ্ছেন অনলাইনে। এক-দুই ক্লিকে। ব্র্যান্ডিং কর্তারাও সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছেন। ক্রেতার মহামূল্যবান সময়ের মধ্য থেকে মনোযোগ আকর্ষণ সহজ নয়। চটকদার বিজ্ঞাপনে থোড়াই কেয়ার করবেন তারা। তাই মনস্তাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশ বুঝে তবেই ফেলতে হচ্ছে পা। বর্তমান মার্কেটকে নন-ট্র্যাডিশনাল মার্কেট বলা হয়। যেখানে মোবাইল এবং ওয়েব-বেসড টেকনোলজি কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্সে আমূল পরিবর্তন এনেছে। তাতে ক্রেতা অন্তর্জালে খুঁজে পান ব্র্যান্ডিংয়ের বার্তা। আবার সেখানেই শপিং ব্যাগ ভর্তি করে কেনাকাটা সারেন।
ক্রেতা অভিজ্ঞতা
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের চাহিদা তৈরির পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ক্রেতা অভিজ্ঞতা। কারণ, পণ্য বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন, ক্রেতা অনুভূতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে। শুধু একটি ব্র্যান্ডের পণ্যই ব্যবহার করে এখন আর আজীবন সন্তুষ্ট থাকেন না কোনো ভোক্তা। পণ্যের মান ভালো—এই বক্তব্য ক্রেতা ধরে রাখার একমাত্র উপায় এখন আর নয়। আবার দামের পারদের নিম্নগতিও ক্রেতা আকর্ষণে সব সময় কার্যকর নয়। নতুনত্বের স্বাদ তাদের কাছে দারুণ আকাঙ্ক্ষিত। তারা নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান।
জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ইতিবাচক অনুভূতি ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে। একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড ব্যবহারের পুরো অভিজ্ঞতার পর বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পায়। যেমন ব্র্যান্ডের লোগোর ডিজাইন, বাহ্যিক চেহারা, মোড়ক, ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত কনটেন্টগুলোর বুদ্ধিদীপ্ততা এবং প্রকৃতির সঙ্গে পণ্যের সম্পর্ক। আবার ব্র্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স যে শুধু কেনাকাটা শেষ হওয়ার পরে চারদেয়ালের মাঝে অনুভূত হবে, বিষয়টা তা-ও নয়। বর্তমানে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে যোগ হয়েছে নতুনত্ব। মাল্টিপল চ্যানেল ব্যবহার করে শপিং সেরে নেওয়ায় অভ্যস্ত হচ্ছে সবাই। যেমন ফিজিক্যাল স্টোর, ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। অনেক সময় শুধু একটি পণ্য কেনার উদ্দেশ্যেও সব কটি মাধ্যম ব্যবহার করতে দেখা যায়। এটি ব্র্যান্ডের রিয়েল টাইম এবং ইমোশনাল কনটেন্টের অন্যতম কারণ। পণ্য বা সেবা—যা-ই হোক না কেন, জনগণের সামনে আসামাত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করেন সম্ভাব্য ক্রেতারা। যেখানে পাঁচ ধরনের সেনসরি এক্সপেরিয়েন্স পণ্য আর মানুষের মাঝে সংযোগ তৈরি করে। এগুলো হচ্ছে চিন্তা, অনুভূতি, স্পর্শ, সম্পর্ক এবং ক্রিয়া। অর্থাৎ ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ক্রেতা রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্সের আশা করেন।
নিজস্বতাবোধ
ব্র্যান্ডের নিজস্বতা তাকে বাজারে হাজার পণ্যের মাঝে অনন্য করে তুলতে পারে। ফ্যাশন ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে তাদের ডিজাইন, ফ্যাব্রিক সিলেকশন, রং নির্বাচন সেই নিজস্বতা তৈরিতে ভূমিকা রাখে। ফ্যাশনের সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিত্ব সরাসরি সম্পর্কিত। কেউ যখন কোনো ফ্যাশন আইটেম কেনেন, তখন তা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। এ কারণে ব্র্যান্ড ভ্যালু তার কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া স্বাভাবিক। দেহ ও মনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ফ্যাশন লেবেলকে আলাদা করে। ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং আগ্রহী মানুষের ব্যক্তিত্বকে স্পর্শ করে বার্তা তৈরি করতে পারে, যার মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
ওয়ার্ম গ্লো
হাজার ব্র্যান্ডের ভিড় বাজারে। নির্দিষ্ট করে কোনোটির প্রতি ক্রেতার ইতিবাচক মনোভাব তৈরির জন্য ব্র্যান্ডটির সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কিত মনে হওয়া জরুরি। অর্থাৎ আন্তব্যক্তিগত সম্পর্ক। যেখানে ক্রেতা অনুভব করবেন ব্র্যান্ড তার জন্য চাহিদা বুঝে পণ্য তৈরি করেছে। কোনো বিজনেস মডেলে বিক্রেতা যখন ক্রেতাকে আস্থার জায়গা তৈরি করে দিতে পারেন, তখন ক্রেতা কেনাকাটায় স্বস্তি পান। এখানে ‘আমরা’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু রিটেন কনটেন্টের বেলায় নয়, সব ক্ষেত্রে একাত্মবোধ করাতে পারলে ক্রেতা স্বস্তি অনুভব করেন। ক্রেতা ও বিক্রেতা অবশ্যই বিপরীত দুই ব্যক্তি। যেখানে একজন বিক্রি করতে চাচ্ছেন, অন্যজন চাহিদা ও দামের সমন্বয়ে সেরা পণ্যটি বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্যে বাজারে এসেছেন। এখানে ক্রেতা যদি অনুভব করেন, বিক্রেতাকে ভরসা করতে পারছেন, তাহলে আন্তরিকতার উষ্ণতা অনুভব করেন, যা তাকে আনন্দ দেয় এবং সম্ভাব্য ক্রেতা হতে সাহায্য করে। এই অর্থনৈতিক সূত্রকে বইয়ের ভাষায় ওয়ার্ম গ্লো বলে; যা ক্রেতাকে আবেগীয় পুরস্কার দেয়। ওয়ার্ম গ্লো অনুভূতি বিভিন্নভাবে অনুভূত হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। স্বেচ্ছা সেবা, দান অথবা উপহার কেনাতেও এই আনন্দময় অনুভূতি অনুভূত হতে পারে বলে জানা যায়।
২০১০ সালে একটি গবেষণায় ওয়াইন্সটাইন ও রায়ান নামের দুই গবেষক সেলফ ডিটারমিনেশন থিওরি আবিষ্কার করেন; যা প্রমাণ করে একজন ব্যক্তির ভালো অনুভব করা তিনটি মূল বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমটি সম্পর্কযুক্ত হওয়ার অনুভূতি, দ্বিতীয়টি ব্যয়ের সামর্থ্য এবং শেষটি নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা। যখন কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবা ক্রয় করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে টানাপোড়েন অনুভব করেন, তখন সেই পণ্য বা সেবা ব্যক্তির সঙ্গে কতটা সম্পর্কযুক্ত, মূল্য ক্রেতাসামর্থ্যের মধ্যে আছে কি না এবং তিনি নিজেই কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কি না—এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কো-ক্রিয়েশন
পোস্টমডার্ন সমাজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যা ক্রেতা অব্দি পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে পরিচিতরা। তাদের মাধ্যমে বিশালসংখ্যক ক্রেতার কাছে পণ্য ও সেবার তথ্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। ওয়ার্ড অব মাউথ অর্থাৎ মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া প্রশংসা কিংবা নিন্দা সব সময় মানুষের কাছে গুরুত্ব পেয়ে এসেছে। আর এই সময়ে ইনফ্লুয়েন্সারদের কথার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তথ্য। আর শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই কো-ক্রিয়েশনের একমাত্র স্থান এমনটা বলা যাচ্ছে না। বেশ কিছু মাধ্যম এই কাজের উপযোগী। যেমন ম্যাগাজিন, নিউজলেটার, ব্লগ পোস্ট, ভিডিও, ওয়েবিনার, পডকাস্ট ও ওয়েবসাইট। ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এই মাধ্যমগুলোর জনপ্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলা যেতে পারে জীবনঘনিষ্ঠ উপস্থাপন দক্ষতা। সরাসরি বিক্রি চেষ্টার থেকে উপযোগিতার ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ তাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কৌশল
চারটি ধাপে একে ভাগ করা যেতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার সঙ্গে ব্র্যান্ডিংয়ের সন্ধি সম্পন্ন হয় এসবের মাধ্যমে। যার সুফল ব্র্যান্ড লয়ালটি।
সেনসরি
ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে সেনসরি অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান বাজার পণ্যের সঙ্গে ক্রেতার সম্পর্ক স্থাপনকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করে। ব্র্যান্ড পরিচিতিকে তাই আনন্দ ও উত্তেজনার সঙ্গে সম্পর্কিত করে তোলার চেষ্টা চলছে। মানব মনকে আন্দোলিত করে পাঁচটি বিষয়—দৃশ্য, শব্দ, অনুভূতি, স্বাদ ও ঘ্রাণ। ফ্যাশন ব্র্যান্ডিংয়ে এগুলো মাথায় রেখে তবেই পরিকল্পনা করে থাকেন ব্র্যান্ড-সংশ্লিষ্টরা; যা সম্ভাব্য ক্রেতাদের উপলব্ধি, বিচার-বিবেচনা, নিজস্ব ভাবনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। ফ্যাশন রিটেইলাররা তাদের ফিজিক্যাল শপে সহজে ক্রেতাদের এই চাহিদা মেটাতে পারেন। অনলাইনে এই কৌশল ব্যবহারে কিছু ছাড় দিতে হয়। ইতিমধ্যে বেশ কিছু ব্র্যান্ড ক্রেতার ইতিবাচক সেনসরি এক্সপেরিয়েন্সের জন্য অ্যাডভান্স টেকনোলজি ব্যবহার শুরু করেছে। প্রাডার স্মার্ট ক্লজেট কনসেপ্ট এই ধারণার শক্তিশালী উদাহরণ। যেখানে টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে পণ্য স্পর্শের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন ক্রেতারা। রে-বেনের অগমেন্টেড রিয়েলিটি মিররও একটি অনবদ্য সংযোজন হিসেবে ইতিমধ্যে আলোচিত।
স্টোরিটেলিং
সরাসরি তথ্য প্রদানের তুলনায় গল্পের পরতে পরতে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিং কার্যকর বলে জানা যায়। এর কারণ, গল্প মানুষকে কল্পনা করার সুযোগ দেয়। একই সঙ্গে আবেগের জায়গাকে স্পর্শ করতে পারে। স্টোরিটেলিংকে তাই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির শক্তিশালী টুলস বলা হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে সুন্দর করে গল্প বলে যে তথ্যগুলো সহজে প্রচার করা যায়, সেগুলো মানুষ বেশি মনে রাখে। সে তুলনায় একজন ব্যক্তি কম তথ্য মনে রাখতে পারেন। আবার এমন কনটেন্টের বিশ্বাসযোগ্যতাও মানুষের কাছে বেশি। সামগ্রিকভাবে ব্র্যান্ডের গুরুত্ব তৈরি করতে কার্যকরী। ট্র্যাডিশনাল ও ডিজিটাল—উভয় মাধ্যমে দারুণভাবে ব্যবহারযোগ্য। বেশ কিছু সফল ফ্যাশন ব্র্যান্ড স্টোরিটেলিংয়ের মাধ্যমে ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ে নিয়মিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লুই ভিতোঁ।
কজ ব্র্যান্ডিং
সমাজ, পরিবেশ ও পৃথিবীর উপকারকে কেন্দ্র করেও হতে পারে ব্র্যান্ডিং। এ ধরনের মার্কেটিং কৌশল ক্রেতাদের মনে ইতিবাচক স্থান তৈরি করতে সক্ষম। মানুষের জন্য উপকারী এমন কোনো কিছুর উদ্দেশ্যে পণ্য কিনতে পারলে ক্রেতার মনে আনন্দ অনুভূত হয়। নীতিবোধ এবং তার চর্চা ব্যক্তিকে আত্মমর্যাদার অনুভূতি দেয়। এ কারণে নৈতিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্র্যান্ডিং কনটেন্ট ক্রেতাকে ফ্যাশন পণ্য কেনায় আগ্রহী করতে পারে। ক্রেতার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এই মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। কারণ, ক্রেতা ভালো অনুভূতির স্মৃতি মনে রাখেন। তাই কজ ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য নিজের টার্গেট কাস্টমার বুঝে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়াকে জরুরি বলে মনে করা হয়। যেমন ফিমেল ক্লদিং ব্র্যান্ড ব্রেস্ট ক্যানসারে ভুক্তভোগীদের জন্য তহবিল গঠন করতে পারে। আবার টেকসই তত্ত্ব মেনে পরিবেশের সুরক্ষা বেশ জনপ্রিয় কৌশল। মেইড উইদ লাভও এই কৌশলের একটি সূত্র।
এমপাওয়ারমেন্ট
ট্র্যাডিশনাল মার্কেটপ্লেসে প্রভাবশালী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন বিক্রেতা। স্নায়বিক চাপ তৈরির মাধ্যমে বিক্রেতা ক্রেতার কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন। এমন অবস্থায় ক্রেতা হয়ে পড়তেন ক্ষমতাহীন; যা তার জন্য সুখকর ছিল না। অর্থাৎ অর্থ ব্যয় করে কেনাকাটায় কোনো ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন সম্ভব হতো না। এর পরিবর্তন আসে নতুন ধারার বাজারে। সেখানে ক্রেতাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হয়। যখন কোনো ফ্যাশন ব্র্যান্ড মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি হিসেবে ক্রেতার ক্ষমতায়নকে ব্যবহার করে, তখন ক্রেতা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে সক্ষম হন। ইমোশনাল ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতার ক্ষমতায়ন কার্যকরী কৌশল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। কারণ, বর্তমান সময়ের ক্রেতাদের মাঝে স্বাধীনতা সব ক্ষেত্রে কাম্য। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ক্রয়ক্ষমতাকে বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে ক্রেতা সচেতন হয়েছে নিজ অর্থের ব্যবহারের বিষয়ে। বিক্রেতা কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ তাই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
সমাপ্তে ভালোবাসা
আবেগ মানুষকে জড়িয়ে রাখে। সেই আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে বিক্রিবাট্টার কৌশল নির্ধারণ সহজেই ক্রেতা মন ছুঁয়ে যাবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু একঘেয়েমি সেখানে গ্রহণীয় নয়। নিত্যনতুনের সঙ্গে পরিচয় বড় আকাঙ্ক্ষিত। ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছেন যারা, তা তারা ভালোই জানেন। মানব মনের অঙ্ক বোঝার দায় এখন তাদের ঘাড়ে। ক্রেতা উপভোগ করছেন আতিথ্য। কষ্টে উপার্জিত অর্থের বিনিময়ে যথাযথ পণ্য, সুন্দর ব্যবহার আর পরিবেশের সঙ্গে সঠিক সমন্বয় ক্রেতাকে আকৃষ্ট করছে।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top