সেলুলয়েড I উড়োজাহাজ
কাহিনি: সোহিনী দাশগুপ্ত
পরিচালনা: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
চিত্রগ্রহণ: অসীম বোস
সম্পাদনা: অমিতাভ দাশগুপ্ত
অভিনয়: চন্দন রায় সান্যাল, পার্নো মিত্র, সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
সময়ব্যাপ্তি: ৮১ মিনিট
ভাষা: বাংলা
দেশ: ভারত
মুক্তি: ২০২০
বলা হয়, বাস্তবতা স্বয়ং এত পঙ্কিলতা ও নির্মমতায় ভরা, কল্পরাজ্যে ভেসে বেড়ানোর সক্ষমতা না থাকলে মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারা দুরূহ হয়ে উঠত। আর বাংলা চলচ্চিত্রে বাস্তবতার সঙ্গে কল্পনার মিশ্রণ ঘটানোর তুখোড় জাদুকর হিসেবে শুরুর দিকেই নাম চলে আসে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। তার সৃষ্টিশীলতাকে নিরেট যুক্তিতর্কের কাঠামোতে উপলব্ধি করা মুশকিল। যুক্তির বাইরে যে বিশাল পৃথিবী, চলচ্চিত্রে সেটির কথাই বলেন তিনি। এর আরেকটি উদাহরণ ‘উড়োজাহাজ’।
এই চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্র বাচ্চু। মোটর মেকানিক। উড়োজাহাজের যেমন দুই ডানা, মানুষের সম্পর্কেরও তেমনি—স্পর্শ ও কল্পনা। বাচ্চুর জীবনে এই দুই ডানা প্রসারিত হয়ে যায় সহজাতভাবে। স্ত্রীকে ভালোবাসে সে। শিশুসন্তানকে ইংরেজিতে কথা বলতে শুনে একধরনের গর্ব হয় তার। একেবারে ডাল, ভাত ও আদর-মমতায় জড়ানো জীবনের এই যুবক একদিন গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলে একটি উড়োজাহাজকে পড়ে থাকতে দেখে। নদী পেরিয়ে, জঙ্গলের শুকনো পাতা মাড়িয়ে সে চলে যায় সেই উড়োজাহাজের কাছে। আর মুহূর্তেই তার মাথায় ভাবনা খেলে যায়, কীভাবে এই যানকে ওড়াতে পারবে। ভাঙা ওই উড়োজাহাজকে বাচ্চু রং দিয়ে নতুন করে তোলে। আর নিজের গ্যারেজের এক সঙ্গীকে নিয়ে এসে জানতে চায়, কীভাবে এই উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বানানো সম্ভব।
বুদ্ধদেবের চলচ্চিত্র মানেই যেহেতু অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের দোলাচল, ফলে ওই জঙ্গলে বেশ কিছু অশরীরীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বাচ্চুর। এদের কেউ বিষপানে আত্মহননকারী, কেউ বালিশচাপায় খুন হওয়া। তবু ভূত নয় এরা। স্রেফ পার্থিব শরীর বা প্রাণ হারানো সত্তা। ঠিক যেন ইঞ্জিনবিহীন উড়োজাহাজটির মতোই।
এই উড়োজাহাজকে প্রাণ অর্থাৎ ইঞ্জিন দেওয়ার স্বপ্নে শহরে পৌঁছায় বাচ্চু। কিন্তু শহুরে লোকের কাছে তাকে নেহাত পাগল মনে হয়। অন্যদিকে, চাকরিচ্যুতির হুমকি পায় গ্যারেজের মালিকের কাছ থেকে। এমনকি বাড়িতে আসে পুলিশও। বাচ্চুর বউ তখন বাচ্চুকে এমনভাবে লুকিয়ে রাখতে যায়, যেভাবে মা লোকচক্ষুর আড়ালে রাখেন গর্ভের ভ্রূণ। তবু আধুনিক প্রচারযন্ত্রের পৃথিবীতে চাইলেই কাউকে লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। যুদ্ধের উড়োজাহাজকে স্বপ্নের উড়োজাহাজে রূপান্তর করার যে স্বপ্ন বুনেছিল বাচ্চু, তা বাঁক নেয় দুঃস্বপ্নে। কেননা, তার সেই নির্মল কল্পনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র তার রিুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্র হিসেবে ভাষান্তর করে নিয়ে তাকে ঠেলে দেয় গভীর বিপদে। তারপরও কি স্বপ্নকে আদৌ চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব? এমন জিজ্ঞাসার আড়ালে স্বপ্নের দার্শনিক সত্তার আলাপনের সম্ভাবনা জারি রাখে ‘উড়োজাহাজ’।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। উড়োজাহাজটি কোথায় পড়ে থাকে?
[ক] নদীর তীরে
[খ] খোলা মাঠে
[গ] জঙ্গলে
[ঘ] গ্যারেজে
২। বাচ্চুর পেশা কী?
[ক] মোটর মেকানিক
[খ] রিকশাচালক
[গ] কৃষক
[ঘ] পাইলট
৩। জঙ্গলে কার সঙ্গে দেখা হয় বাচ্চুর?
[ক] দাদি
[খ] মামা
[গ] প্রতিবেশী
[ঘ] অশরীরী
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. ইশা, গুলশান, ঢাকা
২. আফেরিন সিদ্দিক, ধানমন্ডি, ঢাকা
৩. টিংকু সেন, হালিশহর, চট্টগ্রাম