skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I সায়েন্টিফিক্যালি ইওরস

দেখাবে ফ্যাশনদুরস্ত। দূর হবে দশার দুর্দশা। এক পোশাকের এত গুণ! শাস্ত্রে এ নিয়ে চর্চা বহু আগের। সম্প্রতি মিলেছে বিজ্ঞানসম্মত সমর্থন। আর কী চাই

বাঙালি নারীমাত্রই শাড়ির প্রতি আলাদা আবেগ। সেই শৈশব থেকেই। এই উপমহাদেশে শাড়ির পরিচয় সর্বকালের। প্রিয় নারী পোশাক হিসেবে। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানের আধুনিক সময় পর্যন্ত শাড়ি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে সমানতালে, একইভাবে। ভূমিকা শেষ, এবার আসল প্রসঙ্গ। বিষয় ঠিক শাড়ি বা তার জনপ্রিয়তা নয়, বরং আরও গভীরের, ভিন্ন। শাড়ি পরার বৈজ্ঞানিক কারণ বা উপকারিতা নিয়েই মূল আলাপ। কারণ, হিন্দু পণ্ডিতেরা বলছেন, বিজ্ঞানসম্মতভাবেও শাড়ি পরাটা জরুরি। অনেক ইতিবাচক দিক আছে এর।
তবে সরাসরি সে বিষয়ে বলার আগে প্রাসঙ্গিকভাবে কিছু ব্যাপারে উল্লেখ করা জরুরি। যেমন শাস্ত্রমতে যেকোনো পোশাক পরার স্টাইল মন, শরীর, আত্মা ও সমাজের ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলে। যদি প্রশ্ন করা হয়, মানুষের জন্য পোশাকের প্রয়োজন ছিল কেন? উত্তর—শরীর ঢেকে রাখা বা লজ্জা নিবারণ। তবে পণ্ডিতদের কাছে এ উত্তর যথেষ্ট নয়। এর পেছনে আরও বড় কারণ রয়েছে বলে তারা মনে করেন। তাদের মতে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ইতিবাচক ও নেতিবাচক—উভয় শক্তি রয়েছে। শরীরকে নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করতে ঢাল হিসেবে কাজ করে পোশাক। সেই মানদণ্ডে শাড়ি সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ, আকারের কারণে এটি শরীরের বাইরের অংশে পুরো সূক্ষ্ম আবরণ তৈরি করে। কুদৃষ্টি থেকে বাঁচিয়ে নারীকে শালীন দেখাতে সাহায্য করে। তারা মনে করেন, শাড়ি একজন নারীকে অবাঞ্ছিত নেতিবাচক দৃষ্টি থেকে বাঁচায়। আর এ কারণে শাড়ি প্রাত্যহিক জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে যুগ যুগ ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়ে আছে। বলা হয়, এটি নারীর সব ইন্দ্রিয়কে সুস্থ রাখে। কারণ, শাড়ি যেভাবে পরা হয়, তাতে পরিধানকারীর মন, আত্মা, শরীর সুস্থ ও সুখী রাখার জন্য শরীরে ইতিবাচক শক্তি প্রবাহিত হয়। হিন্দু পণ্ডিতেরা মনে করেন, এই শক্তি পৃথিবীতে এবং মহাবিশ্বে একইভাবে একটি বৃত্তে চলে। এ কারণে নারীর শরীর বেশি বক্র হয়। সুস্থ থাকার জন্য শরীরের শক্তিগুলোকে বৃত্তাকার গতিতে চলা চাই। শরীরের দিকে প্রবাহিত যেকোনো শক্তি প্রথমে পোশাক স্পর্শ করে। তারপর তা শরীরে এবং এর শক্তি চ্যানেলে; তারও পরে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোতে প্রবেশ করে। পরার স্টাইলের কারণে শাড়ি শরীরের চারপাশে একটি বৃত্তাকার গতি গড়ে তোলে, যা প্রায় শেষ পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। তাই যখন কোনো শক্তি শাড়ি স্পর্শ করে, তখন তা শরীরের চারপাশের বলয়ে ঘুরতে থাকে এবং শক্তিকে সঠিক পথে চলতে সাহায্য করে। ফলে শাড়িই একমাত্র পোশাক, যা আমাদের মন, শরীর ও আত্মাকে নেতিবাচকতা থেকে বাঁচিয়ে সুস্থ রাখতে সক্ষম।
আরেকভাবে বলা হয়, এই বিশাল ছয় গজ কাপড়ে শক্তি ভ্রমণ করার সময় ভেতরে আসা নেতিবাচক শক্তিগুলো কাপড়ের মধ্যে আটকে যায় এবং এটি ধোয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায়। এই ধরনের ভারী শক্তি মন্থর; খুব একটা নড়াচড়া করতে পারে না। বায়ুমণ্ডলে এটি বাতাসের সঙ্গে ভ্রমণ করে। প্রচুর সেলাইযুক্ত কাপড় আসলে শক্তিকে বিভ্রান্ত করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শাড়িতে সেলাই না থাকা তাই একটা প্লাস পয়েন্ট। তবে এ ক্ষেত্রে শাড়ির সুতা প্রাকৃতিকভাবে তৈরির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া চাই। কারণ, সিনথেটিক শক্তির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা ঘটায়। সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও বেশ ক্ষতিকর। তাই এসব কৃত্রিম তন্তুতে তৈরি পোশাক সব সময় ক্ষতি ডেকে আনে।
শাড়িতে শরীরের মাঝামাঝি কিছু অংশ অনাবৃত থাকে। পেটের যে অংশ অনাবৃত থাকে, সেটি শরীরের ‘ব্রহ্মস্থান’। বিশ্বাস করা হয়, এই অংশ থেকে শরীর প্রচুর জীবনীশক্তি পায়। তাই এই জায়গা সব সময় খোলা রাখা উচিত। এমনকি বাস্তুবিজ্ঞানে, বাড়ির কেন্দ্রের অংশটিকে ব্রহ্মস্থান বলা হয় এবং আকাশের দিকে খোলা রাখা হয়। তাই শাড়ি পরার এই স্টাইল শরীরের জন্য উপযোগী।
সিল্কের শাড়িতে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক এনার্জিকে আকর্ষণ ও সঞ্চয় করার ক্ষমতা রয়েছে। শরীর এবং রেশমি কাপড়ের মধ্যে ঘর্ষণে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন হয়, যা ইলেকট্রো স্ট্যাটিক আকর্ষণের জন্ম দেয়। শাস্ত্র অনুসারে এই শক্তি ভক্তের মনের শক্তি অনেক গুণ বাড়িয়ে তোলে। এটাও বলা হয়, পূজা করার সময় যে কম্পন উৎপন্ন হয়, সিল্ক শাড়ি পরার মাধ্যমে দেহে তা-ও সংরক্ষণ করে। তাই ভারতবর্ষে পূজার সময় সিল্কের শাড়ির চাহিদা থাকে তুঙ্গে।
সৌন্দর্যসচেতন নারীমাত্রই তার দেহাবয়বের সঙ্গে পোশাকটি যথাযথ মানানসই হওয়ার বিষয়ে খুব সচেতন থাকেন। এদিক থেকেও শাড়ি সবচেয়ে সঠিক পোশাক। কে না জানে, শাড়িতে নারীর ফিগার যতটা সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে, তা আর কোনো পোশাকেই হয় না! যে কেউ তার ফিগারের সঙ্গে শাড়ি পরার স্টাইল সামঞ্জস্য করতে পারেন। অত্যধিক লম্বা, পাতলা বা মোটা—যা-ই হন না কেন, শাড়ি ফিগারের খুঁতগুলো ঢেকে রাখতে সক্ষম; যদি সেটি ঠিকভাবে পরা হয়, তবেই। ফিগারের সঙ্গে মানিয়ে শাড়ি পরার টেকনিক আয়ত্ত করতে পারলে এ পোশাক কখনো নিরাশ করবে না, বরং লুকে সব সময় কমনীয়তার ছোঁয়া দেবে।
অনেকের কাছে শাড়ি পরার কনসেপ্টটা একটু গোলমেলে। সামলানো কঠিন, এমনকি ক্লাস্ট্রোফোবিক লাগতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে বুঝে নেওয়া চাই, শাড়িটি ঠিকভাবে পরা না হলেই এমন অবস্থার উদ্রেক ঘটবে। কীভাবে এটি পরে হাঁটতে হয়, তা-ও অনেকের অজানা। যখন একটি শাড়ি সঠিকভাবে ড্রেপ এবং প্রয়োজনীয় জায়গায় পিনআপ করা হয়, তখন এটি সামলানো খুব সহজ ও আরামদায়ক। শাড়ি সুন্দরভাবে বহন করার জন্য সঠিক বিন্যাস প্রয়োজন। এই পোশাক নারীর মধ্যে একরকম আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। যখন কোনো নারী শাড়ি পরে হাঁটেন, তার পশ্চার ঠিক থাকলে এটি শরীরের বিভিন্ন চক্রে (দেহে আধ্যাত্মিক শক্তি কেন্দ্র) ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে তিনি একধরনের আনন্দ অনুভব করেন।
পণ্ডিতদের মতে, যখন শাড়ি কিংবা ধুতির মতো সাত্ত্বিক পোশাক পরা কারও দিকে তাকানো হয়, তখন এগুলো থেকে নির্গত ঐশ্বরিক শক্তি আনন্দ ও শান্তি তরঙ্গায়িত করে। তারা মনের ওপর ইতিবাচক ছাপ ফেলে যান। শরীরের চারপাশে নেতিবাচক শক্তির কারণে সৃষ্ট ক্লেশ কমতে শুরু করে। আত্মিক নিরাময় সাধিত হয়।

 রত্না রহিমা
মডেল: তানহা
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আদ্রিয়ানা এক্সক্লুসিভ
জুয়েলারি: রঙবতী
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top