skip to Main Content

মনোজাল I ডিভোর্স জুয়েলারি: রূপান্তরকারী শক্তি

গয়না ব্যবসায়ীদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে ট্রেন্ডটি। বদলে যাচ্ছে বিচ্ছেদের সুর

বিয়ে। মিলনের রঙিন স্বপ্নের বুনন। যদিও এর সঙ্গে বিচ্ছেদ শব্দটিও অঙ্গাঙ্গি জড়িত। মিলন থাকলে বিচ্ছেদও থাকবে। স্বাভাবিক। তবে বিয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সঙ্গীর চোখে চোখ রেখে নিশ্চয় সেটি চিরস্থায়ী হওয়ার কল্পনাই করেন সবাই। কেউ তো কখনো বিবাহবিচ্ছেদের পরিকল্পনা নিয়ে আগায় না। তবে পরিসংখ্যান বলছে, দুর্ভাগ্যবশত সেটি প্রায় অর্ধেকের সঙ্গেই ঘটে যায়। অর্থাৎ হিসাবমতে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ বিয়ে টেকে আর বাকি পঞ্চাশ ভাগের পরিণতি দাঁড়ায় বিচ্ছেদে। যে কারণেই হোক, যাদের টেকে না, তাদের করণীয় কী? হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসবেন? তা তো আর নয়; কারণ, জীবন থেমে থাকে না। প্রতিনিয়ত সব প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকার নামই জীবন। সুতরাং আবারও হাসতে হয়, এগিয়ে যেতে হয়। তার জন্য দরকার মানসিক প্রস্তুতি আর সাহস।
যে উৎসাহ, আনন্দ আর উদ্‌যাপনের মাধ্যমে বিয়ের জন্য গয়না গড়ানো হয়, একবার বিচ্ছেদের কাগজপত্রে সই হয়ে গেলে সেগুলো যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো অনুভূতি দিতে শুরু করে। সোনার যে দাম, পানিতে ফেলে দেওয়ারও তো উপায় নেই! যদিও অনেকে, বিশেষ করে বিয়ের আংটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করার তাগিদ অনুভব করেন; পরিসংখ্যান অন্তত তা-ই বলে। সেটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঠিক আছে, তা না হয় ফেলে দেওয়াই গেল; তবে তার আগে, বিকল্প ভাবনারও সুযোগ আছে। ডিভোর্সড কাপলদের কথা মাথায় রেখে এই কনসেপ্টের জন্ম। যার নাম ডিভোর্স জুয়েলারি বা বিবাহবিচ্ছেদ গয়না। নামটা কেউ কেউ নিশ্চয় শুনেছেন। যারা শোনেননি, একটু আলোচনা তাদের জন্য।
ডিভোর্স জুয়েলারি কী
ট্রেন্ডের শুরুটা একজন সুপার মডেলের হাত ধরে। বছর দুয়েক আগে এমিলি রাতাকোয়াস্কির বিবাহবিচ্ছেদের মধ্য দিয়ে। ডিভোর্সের কয়েক দিন পর ইনস্টাগ্রামে ‘ডিভোর্স রিং’ ট্যাগ লাইনে একটি পোস্ট দেন এই মডেল। ছবিতে তার হাতে তারই এনগেজমেন্ট দ্বিখণ্ডিত করে গড়ানো নতুন দুটি আংটি। এ যেন স্বাধীনতা উদ্‌যাপনের নতুন পন্থা। নিমেষে এই ভাবনা মন জয় করে নেয় তার ফলোয়ারদের। এই ট্রেন্ড এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, খোদ জুয়েলাররা তাদের প্রোডাক্ট ক্যাটাগরিতে যুক্ত করতে শুরু করেন ডিভোর্স জুয়েলারির আলাদা লাইন।
আক্ষরিক অর্থে বলা যায়, এ হলো বিবাহের সমাপ্তিকে সম্মান করার জন্য তৈরি করা যেকোনো গয়না। যদিও বিবাহবিচ্ছেদের স্মরণে এই কনসেপ্ট কিছুটা অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। তবে একটু গভীরে চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, এটি আসলে সম্পর্ক ভাঙার পরে জীবনে আসা রূপান্তর এবং সেটিকে উদ্‌যাপনের জন্য বানানো। এই বিবাহবিচ্ছেদ গয়নাকে আসলে পরিচয় পুনরুদ্ধার এবং নতুন স্বাধীনতাকে আলিঙ্গন করার একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। একাকী এগিয়ে যাওয়ার কঠিন যাত্রায় নেভিগেট করার সময় এটি শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতার অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। কারণ, যতই বন্ধুত্বপূর্ণ বা মিউচুয়াল হোক না কেন, বিবাহবিচ্ছেদ সব সময় যন্ত্রণার, কষ্টকর। আর কেউ যদি এই ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে গিয়ে নিজের জন্য নতুন একটি পথ তৈরি করতে পারেন, তবে সেটি অবশ্যই উদ্‌যাপনের যোগ্য। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তাই বলছেন।
সময় পাল্টে গেছে, কোনো কিছু ভেঙে যাওয়া মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়; বরং নতুন কিছু গড়ে তোলার চেষ্টা। সে কারণে ডিভোর্স জুয়েলারি কনসেপ্ট এখন দারুণ জনপ্রিয়। নামীদামি জুয়েলারি ডিজাইনাররা রীতিমতো মাথা খাটিয়ে তৈরি করছেন এ ধরনের গয়না। বেছে নেওয়া যেতে পারে সেখান থেকে। কিংবা নতুন কিছু তৈরি করতে পুরোনো বিয়ের আংটি বা গয়নাগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে। বিয়ের গয়না পুনর্ব্যবহার করে, ‘ব্যর্থতার’ বর্ণনাটি আমূল পরিবর্তনই মূলত উদ্দেশ্য। প্রতিটি পিস যেন জীবনের এই নতুন পর্বের জন্য আশার আলোকবর্তিকায় পরিণত হয়, সেই প্রচেষ্টাই থাকে। গবেষকেরা মনে করছেন, এভাবে পুরোনো দিয়ে নতুন অতীতকে সম্মান জানানোর একটি সুন্দর উপায় হতে পারে এটি।
রেডিমেড ডিভোর্স জুয়েলারি
বিদেশে আজকাল এ ধরনের গয়না প্রচুর মিলছে। যদিও এগুলোর কোনোটিই ঠিক বিবাহবিচ্ছেদের জন্য একচেটিয়া নয়; বরং বলা যেতে পারে, আপনার নিরাময় যাত্রার একটি অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে। জীবনের নতুন অধ্যায় সূচনার একটি বাস্তব উপস্থাপনা হিসেবেও কাজ করতে পারে। প্রতিটি গয়নারই রয়েছে কোনো কোনো নিরাময় ক্ষমতা, যা মনে সাহস জোগাবে। যেমন—
বার্চ নেকলেস বা ইয়ারিং
এটিকে বলা হয় নিরাময় এবং পুনর্নবীকরণের প্রতীক। কারণ, আগুন বা দাবানলে বন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও বার্চ গাছই প্রথম ছাইয়ের মধ্যে আশার একটি সাদা ঝলক হিসেবে পুনরায় আবির্ভূত হয়। এই গাছের বাকল বা ইথারিয়াল ছাল ক্ষত নিরাময় এবং পোড়া কমাতে ব্যবহৃত হয়। সেই গাছ দিয়ে বানানো গয়না অনেকটা টোকেনের মতো করে একটি অনুস্মারক হিসেবে পরা হয়। কারণ, এটি সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আবার জেগে ওঠার আশা জোগায়। বলা হয়, নতুন শুরুর সময়ে এটি মনোবাসনার শিকড়কে গভীরভাবে মাটিতে গাঁথতে সহায়তা করে এবং ক্রমশ বেড়ে শক্তি জোগায়।
ইভিল আই রিং
অন্ধকারে আলো খোঁজার প্রতীক। নাম যদিও শয়তানের চোখের সঙ্গে সম্পৃক্ত; তবে বলা হয়, এটি শুধু নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে এমন নয়; বরং সব সময় অন্ধকারের মধ্যে আলোর সন্ধান করার একটি শক্তিশালী অনুস্মারক হিসেবেও কাজ করে। এটি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, তাতে খুব সহজে যে কারও আটকে পড়ার ভয় থাকে না। আপনি যখন এই জুয়েলারি সঙ্গে রাখেন, তা মন ও শক্তিকে ভালোর দিকে মনোনিবেশে সাহায্য করে। যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যেও শক্তিশালী থাকতে বা ইতিবাচকতাকে প্রসারে কাজ করবে।
ওয়েব অব উইয়ার্ড পেনডেন্ট
এই গয়না হলো অসীম সম্ভাবনার প্রতীক। যেকোনো সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ব্যক্তি জীবনের এমন একটি মোড়ে উপস্থিত হন, যখন সামনের অজানা পথ ভীতিকর মনে হয়। সুস্থভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাও অনেক সময় থাকে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোন পথটি ‘সঠিক’ বা ‘ভুল’, তার ওপর ফোকাস করার পরিবর্তে প্রতিটি চয়েসকে আরও সম্ভাবনাময় তৈরি করার চেষ্টাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কোনো একক ক্রিয়া জীবনকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না। কীভাবে ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার কিংবা পুনরুদ্ধার করা যায়, সে চেষ্টা করাই আসল। সে কাজে এই গয়না সহায়ক হতে পারে। আবার সেই পুরোনো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে নিতে সাহস জোগাবে।
কেশি পার্ল নেকলেস
স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক। বলা হয়, মুক্তা হলো চাপে পড়ে ঝিনুকের প্রতিক্রিয়ার সুন্দর ফল। এই মুক্তার গয়না মনকে সুরক্ষিত ও শান্ত রাখে বলে ধারণা করা হয়। নেতিবাচক আবেগকে প্রশমিত করে ইতিবাচক, উদ্দীপক অনুভূতি নিয়ে আসে। কঠিন সময়ে আলোর বাতিঘর হিসেবে এই গয়না পরা হয়। দুর্ভাগ্য কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজেকে আলোকিত করার চেষ্টা থাকে এটির।
কাস্টম ডিভোর্স জুয়েলারি
ওপরের গয়নাগুলো পছন্দ না-ও হতে পারে, কেউ কেউ কুসংস্কার হিসেবেও ভাবতে পারেন। পরতেই হবে এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই; বরং নিজেই মনমতো বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, বিবাহবিচ্ছেদের গয়না শুধু শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক নয়, এটি বিয়ের পুরো সফরকে ব্যক্তিগতকরণের এবং গল্পকে প্রতিফলিত করার একটি দারুণ সুযোগ। মনমতো ডিজাইন ব্যবহার করে এমন একটি জুয়েলারি তৈরি করা যেতেই পারে, যা সত্যিই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর আবেগকে উপস্থাপন করে। তার জন্য প্রয়োজন কেবল একটু চেষ্টা ও মনোযোগ। ভাবতে হবে, বিবাহবিচ্ছেদের গয়নাগুলোকে কোন প্রতীকীতে তৈরি করতে চান। সেটি পরিধানকারীর সত্যিকারের স্টাইল কী রকম, সে অনুযায়ী বানিয়ে নিতে হবে গয়না।

 রত্না রহিমা
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top