ফিচার I ড্রেস কোড এনকোডিং
বর-কনে বাদে বাকিদের জন্য। থিম মেনে ম্যাচিং কিংবা একদম উলটপুরাণ। আমন্ত্রণপত্রেই মিলবে আভাস
একসময় বিয়েতে বর-কনের জন্য ছিল ধরাবাঁধা রং। বউয়ের লাল শাড়ি আর বরের সাদা পাঞ্জাবি। যেন অলিখিত ড্রেস কোড। সেখানে পরিবর্তন এসেছে বেশ আগেই। আজকালের গল্পও নয় সেসব; বরং কয়েক যুগ আগের। কালার প্যালেটের কোনো কালারের ব্যবহারই এখন আর বাদ নেই। সব রং নিয়েই নিরীক্ষা চলেছে বিয়ের বাজারে। বর-কনের ড্রেস কোডে পড়েছে যতিচিহ্ন। এখন ড্রেস কোড সেট করা হচ্ছে অতিথিদের জন্য।
বিয়ের আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ থাকতে পারে ড্রেস কোড। আবার ইন্টিমেট ওয়েডিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রিয়জনেরা মিলে ঠিক করে নেওয়া হয় কে কী পরবেন। বেশ কয়েকটি গেস্ট ড্রেস কোড ব্যবহৃত হচ্ছে ইদানীং। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে লিখে দেওয়া হয় অনেক সময়। কোন কোডে কেমন পোশাক পরতে হয়, তা জানা থাকলে ওয়্যারড্রোব প্ল্যানিং খানিকটা সহজ হবে। কাছের মানুষের বিশেষ দিনে তার মতে প্রাধান্য দিয়ে পোশাক পরে নিলে ক্ষতি কী! সেই খুশি দেখতে ভালো লাগবে নিশ্চয়।
হোয়াইট টাই
মোস্ট ফরমাল ওয়েডিং অ্যাটায়ার। মেয়েদের পোশাক হিসেবে পরতে হয় ফরমাল ড্রেস। ফ্লোর লেন্থ গাউনই সই। সঙ্গত দেয় গয়না, হিল আর এলিগেন্ট ক্লাচ। পুরুষের পোশাকে থাকে টাক্সিডো উইদ টেইলস। আর এর সঙ্গে ফরমাল হোয়াইট শার্ট। সংযুক্তিতে বো টাই, সাদা অথবা গ্রে গ্লাভ। পুরোপুরি ফরমাল ফুটওয়্যার। উদাহরণে বলা যেতে পারে ডার্বি শু অথবা অক্সফোর্ডের কথা।
ব্ল্যাক টাই
ব্ল্যাক টাই বলতে ফরমাল ড্রেসআপকেই বোঝায়। মেয়েরা সেখানেও ফ্লোর লেন্থ গাউনে নজরকাড়া। একদম পায়ের গোড়ালি অব্দি ঢাকা। পোশাকের ফ্যাব্রিকে থাকে সিল্ক অথবা অরগাঞ্জার ব্যবহার। ছেলেদের জন্য টাক্সিডো ইজ আ মাস্ট। অনুষঙ্গে ব্ল্যাক বো টাই, ব্ল্যাক ভেস্ট অথবা কামারবান্ড। ফুটওয়্যারে প্যাটেন্ট লেদার শু। গ্রীষ্মের বিয়ের সময়টাতে টপে সাদা ডিনার জ্যাকেট এবং ব্ল্যাক টাক্সিডো পরে নেওয়া যেতে পারে।
ককটেল
বিয়ের আয়োজনে দারুণ জনপ্রিয় ড্রেস কোড ককটেল। এলিগ্যান্ট, কমফোর্টেবল আর ফ্যান্সির মিক্স বলা যেতে পারে। মেয়েদের জন্য নি-লেন্থ এবং টি লেন্থ (গোড়ালির তিন থেকে চার ইঞ্চি ওপর অবধি) পোশাক। মিডি লুকও বেশ মানায়। ছেলেদের জন্য এই ড্রেস কোডে থাকে স্যুট ও টাই। সহজ-সরল। আধিক্যহীন।
ড্রেসি ক্যাজুয়াল
ড্রেস কোডে ড্রেসি ক্যাজুয়াল থাকলে অনুষ্ঠান কখন আয়োজন করা হয়েছে, সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সন্ধ্যার আয়োজন হয়, তাহলে কালার প্যালেটের গাঢ় শেড বেছে নেওয়া হয়। আর দিনের বেলার আয়োজনে লাইট শেড আর হালকা বুননের ফ্যাব্রিক। মেয়েরা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য আছে এমন পোশাক পরে থাকেন। যেমন নি-লেন্থ ফ্রক অথবা ড্রেসি স্কার্ট-টপ। ছেলেদের জন্য শার্ট ও ড্রেস প্যান্ট। সঙ্গত দিতে পারে টাই। সেমি ফরমাল ড্রেস কোডে আরামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে একদম ক্যাজুয়াল হয়ে যা ইচ্ছা পরে নেওয়ার কোড এটি নয়।
ফেস্টিভ
তুলনামূলক নতুন এ ড্রেস কোডের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। মূল কারণ, এখানে আছে লুক নিয়ে নিরীক্ষার স্বাধীনতা। মেয়েদের পোশাকের সাজেশনে বোল্ড কালারে মাত হওয়ার স্বাধীনতা, প্লে ফুল জুয়েলারি আর অনুষঙ্গ আস্বাদনের স্বাধীনতা আছে। আর ছেলেদের পোশাক হিসেবে টেক্সচারড স্যুট বেছে নিয়ে থাকে। অনুষঙ্গ হিসেবে টাই আর পকেট স্কয়ার। এই দুই ক্ষেত্রেই উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়।
ক্যাজুয়াল
ক্যাজুয়াল ড্রেস কোড মূলত ডেস্টিনেশন ওয়েডিংয়ের জন্য জনপ্রিয়। বিশেষ করে বিচ ওয়েডিংয়ে। ছেলেদের জন্য জিনস, শর্টস, ট্যাংক টপ, টি-শার্ট। ফুটওয়্যারে ফ্লিপ-ফ্লপস এবং স্নিকার। ড্রেস প্যান্ট অথবা খাকি প্যান্টও থাকতে পারে বটমে। এর সঙ্গে সন্ধি করা যেতে পারে কলারসহ শার্টের। মেয়েরা পরতে পারেন সামার সানড্রেস, ফুলেল প্রিন্টের মিনি ড্রেস। পায়ে ওয়েজেস অথবা ড্রেসি স্যান্ডেল লাগবে জুতসই।
ট্রপিক্যাল অর ডেস্টিনেশন
ট্রপিক্যাল ওয়েদার মানেই সেখানে উষ্ণতার উচ্ছ্বাস। এমন আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা—দুই নিয়েই ভাবতে হয়। হালকা বুননের ফ্যাব্রিক ব্যবহারে তৈরি পোশাক আরাম দেয়। মেয়েদের জন্য এমন আয়োজনে কটনের সান ড্রেস হতে পারে প্রথম পছন্দ। এর সঙ্গে স্যান্ডেল অথবা ওয়েজেস ব্যবহৃত হতে পারে। আউটডোরে বিয়ের আয়োজন করা হলে সানহ্যাট বেশ ভালো অনুষঙ্গ। ছেলেদের জন্য চার-চারটে পকেটওয়ালা মেক্সিকান ওয়েডিং শার্ট এ ক্ষেত্রে থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়।
কনসেপ্ট স্টাইল
বর-কনের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় যে ড্রেস কোড, সেটিই কনসেপ্ট স্টাইল নামে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী রং ঠিক করে দেন বেশির ভাগ জুটি। আবার অনেকে ইন্সপায়ারড লুকও বেছে নেন। সেটি হতে পারে দুজনের পছন্দের কোনো ক্যারেক্টার; অথবা কোনো মোটিফ। দেশে গেস্ট ড্রেস কোড হিসেবে কনসেপ্ট স্টাইল বেশ জনপ্রিয়।
কাম অ্যাজ ইউ আর
বিয়ের আমন্ত্রণপত্রে ড্রেস কোড হিসেবে ‘কাম অ্যাজ ইউ আর’ লেখা থাকলে বুঝতে হবে, বর আর কনে চাচ্ছেন, অতিথিরা নিজের মতো করে পোশাক বেছে নিক। এমন হলে যে পোশাকে আত্মবিশ্বাস অনুভূত হয়, সেটি বেছে নিলেই চলবে। মনমতো করে। শুধু এমন কোডে একদম সাদা কোনো পোশাক না পরাই ভালো। একই সঙ্গে অতি জাঁকজমকপূর্ণ কিছু নয়। বিয়ের বর-কনেই যে আয়োজনে মধ্যমণি, সেখানে অতিথির পোশাক তাদের থেকে কম গর্জাস হলেই সুন্দর।
সারাহ্ দীনা
মডেল: জারিফ, জেমিম, সিয়াম, শাকিরা, নাজাহ নোয়ার ও তমাল
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: নাবিলা
জুয়েলারি: জড়োয়া হাউজ ও রঙবতী
ছবি: কৌশিক ইকবাল