skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ব্রিদ ইন দ্য ব্লুম

আগামী বছর পঁচিশে পদার্পণের উত্তেজনাকে উসকে দিতেই জমে উঠেছিল পাঁচ দিনের এই ফ্যাশন ফিয়েস্তা। আশিজন তালিকাভুক্ত ডিজাইনারের বহর নিয়ে। ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে নতুন অংশীদারীর অধীনে। উদ্দেশ্য, ফ্যাশন বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ। মিলেছে আসছে মরশুমের ফ্যাশন আভাসও। বিস্তারিত জাহেরা শিরীনের লেখায়

ল্যাকমে ফ্যাশন উইক। সেই ২০০০ সালের শুরু থেকে ভারতের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ফ্যাশন প্যারেড। মাঝে কিছু সময়ের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আবার ফিরেছে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে। ৯ থেকে ১৩ অক্টোবর নবরাত্রি আর দুর্গাপূজার পাশাপাশি পুরো দিল্লিতে উদ্‌যাপনের আনন্দে যেন নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে ল্যাকমের সাম্প্রতিক সময়ের এই আয়োজন। ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সঙ্গে পার্টনারশিপে। ল্যাকমে ফ্যাশন উইক x এফডিসিআই ২০২৪। মূল আসর বসেছিল দ্য গ্র্যান্ড হোটেলে। পাশাপাশি দ্য ইম্পেরিয়াল হোটেল এবং বিখ্যাত বড় খাম্বার একটি কলোনিয়াল দালান ছিল অফ-সাইট ভেন্যু হিসেবে। যেখানে পাঁচ দিনের প্রতিদিনই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন ডিজাইনাররা। রানওয়েতে অবিস্মরণীয় সব মুহূর্তকে মূর্ত করে তুলতে। প্রদর্শিত হয়েছে সপ্রতিভ সাহসী সব লুক, যা স্পষ্ট সাক্ষ্য দিয়েছে ভারতীয় ডিজাইনাদের সৃজনী সক্ষমতার।
আয়োজনের পর্দা ওঠে ৯ অক্টোবর। ফ্যাশন ব্র্যান্ড পেরোর পনেরো বছরে পদার্পণের উদ্‌যাপন দিয়ে। ডিজাইনার আনিথ অরোরার এ ব্র্যান্ডের এবারকার মূল আকর্ষণ ছিল আইকনিক ব্র্যান্ড হ্যালো কিটির সঙ্গে কোলাবরেশন। কাওয়াই ভাইব দেওয়া এ লেবেল এবার পা দিয়েছে পঞ্চাশে। ফলে এই শো হয়ে উঠেছিল দুটো ব্র্র্যান্ডেরই মাইলফলক উদ্‌যাপনের উপলক্ষ। পুরো কালেকশন ছিল শৈশবের মায়া আর সরলতায় জড়ানো। নজর কেড়েছে হ্যালো কিটি প্রাণিত প্লেফুল সব নকশা। কিউট বো, ভাইব্র্যান্ট চেরি, রসাল স্ট্রবেরি, মিল্ক কার্টন আর স্বপ্নের মতো সুন্দর সব কাপকেকের উপস্থিতি চোখে পড়েছে পোশাকের প্রিন্টে। রং ছড়িয়েছে জাপানিজ হারাজুকু স্ট্রিট স্টাইল প্যালেট। প্রাধান্য পেয়েছে চোখধাঁধানো গোলাপি, লাল, নীল আর সূর্যরঙা হলুদ। জাপানিজ ফ্লোরাল, নটিক্যাল সেইলর স্ট্রাইপ ছাড়াও ছিল পেরোর সিগনেচার এমবেলিশমেন্টগুলোর উপস্থিতি। এমব্রয়ডারড বিডওয়ার্ক, ফ্যাব্রিক অরিগামি, ক্রোশে, অ্যাপ্লিক, প্যাচওয়ার্ক আর কাস্টমাইজড কাঠের বোতাম এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পোশাকগুলো তৈরিতে প্রাধান্য পেয়েছিল চান্দেরী, মাশরু, সিল্ক আর জামদানির মতো একদম দেশীয় ফ্যাব্রিকগুলো। পুরো কালেকশনে শিকড়ের স্বাদ অক্ষুণ্ন রাখতে। মডেলরা রানওয়ে মাতিয়েছেন ফ্লোয়ি শিলুয়েট আর ব্যাগি স্টাইল পোশাকে। স্মৃতিকাতরতা উসকে দিয়ে। কালেকশনের প্রতিটি শার্ট, ট্রাউজার, ড্রেস, স্কার্ট, জ্যাকেটের পরতে পরতে। যেন কটেজ কোরের টুইস্টেড ভার্সন। এ ছাড়া চোখ আটকে গিয়েছিল হ্যালো কিটি চার্ম, সক, ব্যাগ, হ্যাট আর রুমালের মতো প্লেফুল অ্যাকসেসরিজগুলোতে।
১০ অক্টোবর। ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের দ্বিতীয় দিনটিকে সাসটেইনেবল ফ্যাশন ডে হিসেবে ঘোষণা দেন আয়োজকেরা। আয়োজন শুরু হয় মধ্য দুপুরে। এনআইএফডি গ্লোবাল প্রেজেন্টস, জেননেক্সটের আয়োজন দিয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চার প্রতিশ্রুতিশীল ডিজাইনারের সৃজনশীলতা উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে। নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন এবং ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সম্মিলিত উদ্যোগে প্রতিবছর ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে বসে অভিনব এই আসর। ভারতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এনআইএফডি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট থেকে সেরাদের বাছাই করে আনা হয় এই প্ল্যাটফর্মে। নতুন প্রতিভার বিকাশে সহায়তার পাশাপাশি তাদের সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করাই এর মূল লক্ষ্য; যা ভবিষ্যতের ফ্যাশন শিল্পকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে সহায়ক হবে বলে বিশ্বাস আয়োজকদের।
জেননেক্সট প্রোগ্রাম মূলত ফ্যাশনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য প্রসিদ্ধ। একই মনোভাবের একদল ডিজাইনারকে এ ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়; যারা আত্মপ্রকাশ করেন ল্যাকমের বিশ্বমানের ফ্যাশন মঞ্চে। প্রাধান্য পায় সাসটেইনেবিলিটি, ক্র্যাফটসম্যানশিপ আর কালাচারাল স্টোরিটেলিং। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চার ডিজাইনার উপস্থিত হয়েছিলেন তাদের স্বতন্ত্র ভাবনা আর অনন্য আবেদন নিয়ে। পদ্মা সালভনের কথাই ধরা যাক। লাদাখের লেহ থেকে আসা এই ডিজাইনার প্রতিনিধিত্ব করেন তার লেবেল ২১১২ সালডনের। মঞ্চে ছড়িয়ে দেন লাদাখি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের স্বাদ। সেই অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী পোশাক গনচা অথবা কস ছিল পুরো কালেকশনের প্রাণ। নকশা থেকে রঙে প্রাচীনের উপস্থিতি যেন নস্টালজিয়াকে উসকে দেওয়ার কাজ করেছে। সঙ্গে সমসাময়িকতার সঠিক মিশেল প্রতিটি ডিজাইনকে করে তুলেছিল প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক ফ্যাশন-সচেতনদের কাছে আকর্ষণীয়। টাইমলেস ইয়েট মডার্ন। অকৃত্রিমতা রক্ষায় আপোসহীন। অমৃতসর, পাঞ্জাবের ডিজাইনার অনন্য আরোরা মঞ্চ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তার সৃষ্টি ‘অনন্য-দ্য লেবেল’ নিয়ে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মিশেলে কাজ করা এই ডিজাইনারের এবারের নকশায় প্রাণ জুগিয়েছে ফ্রেঞ্চ সিম্বলিস্ট আর্টিস্ট অজিলো হদোরের চিত্রকর্ম দ্য বুদ্ধা। সূক্ষ্ম নকশায় সৃষ্ট কালেকশনটিকে সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের প্রতিফলন বলা যেতে পারে। সাসটেইনেবল এবং এথিক্যাল ফ্যাশনের প্রতি অনন্যর দায়িত্বশীল আচরণের প্রতিশ্রুতি আরও প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে এ শোর মাধ্যমে। নয়ডাবেসড ডিজাইনার সৌরভ মৌরিয়া তার লেবেল মার্জিন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন এবারের আসরে। আধুনিক উপকরণের সঙ্গে ভারতীয় কারুশিল্পের সুনিপুণ সংমিশ্রণে তৈরি একেকটি ওয়্যারেবল আর্টের দেখা মেলে তার শোজুড়ে। সবশেষে ছিল লেবেল ভিজে। ডিজাইনার নাগপুরের সাক্ষী ভিজেয়। হাজির হয়েছিলেন তার বোল্ড নিটওয়্যার কালেকশন নিয়ে। সাসটেইনেবল, আপসাইকেলড ম্যাটেরিয়ালে তৈরি। মানসিক দৃঢ়তা আর আত্মদর্শনকে ফ্যাশনের মাধ্যমে উপস্থাপনের উপায় বাতলানোই ছিল তার এবারের কালেকশনের উদ্দেশ্য।
এই দিনে ডিজাইনার অনুরাগ গুপ্তার পোশাকেও মঞ্চ মাতাতে দেখা গেছে মডেলদের। ফরাসি বিপ্লবপ্রাণিত ‘হিম’ নামের কালেকশনটি মূর্ত হয়েছিল আভাঁ-গার্দ অ্যাসথেটিক। পোশাকে সাহসী রং আর নিরীক্ষাপ্রাণিত সব শিলুয়েটের ব্যবহার পষ্ট। প্রকাশিত ভারতীয় ফ্যাশন শিল্পের পটপরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি। মুম্বাইবেসড ডিজাইনার মধুমিতা নাথের ব্র্যান্ড ‘এক কথা’র কালেকশনে ছিল লাক্সারিয়াস সাসটেইনেবল রেডি টু ওয়্যার ওমেনজ ক্লদিং, ‘মোমেন্টস অ্যান্ড মেমোরিজ’ নামে। ইঞ্জিনিয়ার থেকে পুরোদস্তুর ডিজাইনার বনে যাওয়া অ্যালেন অ্যালেক্সান্ডার লঞ্চ করেন তার লেবেল ‘কলিকাল’। অর্গানিক ম্যাটেরিয়ালে তৈরি পোশাকগুলোতে স্টাইল এবং সাসটেইনেবিলিটির দারুণ সংমিশ্রণ চোখে পড়ে।
সাসটেইনেবল ফ্যাশন ডে হিসেবে উদ্‌যাপিত এই দিনে আরও প্রদর্শিত হয় ডিজাইনার ব্র্যান্ড অন্তর অগ্নির লেটেস্ট কালেকশন ‘টু ফেসড’। দশ বছর উদ্‌যাপিত হয় বৈপরীত্যের চিত্তাকর্ষক প্রতিক্রিয়া, ফ্লুয়িডিটির সঙ্গে স্ট্রাকচারের সংমিশ্রণ, মিনিমালিজমের মাঝে অলংকরণের যোগ আর ঐতিহ্য ও উদ্ভাবনের মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি অভিনব সব উপস্থাপনের মাধ্যমে। প্রথিতযশা অভিনেত্রী শেফালি শাহ র‌্যাম্পে হেঁটে শুরু করেন আব্রাহাম অ্যান্ড ঠাকুরের স্প্রিং সামার ২৫ শো। তার পরনে ছিল আবর্জনার ব্যাগ আর ভাঙাচোরা সিডি দিয়ে তৈরি ঝলমলে কালো শাড়ি। ‘ফাইন্ডিং বিউটি’ নামের কালেকশনটির মাধ্যমে বর্জ্য থেকে পরিধানযোগ্য পোশাক তৈরি করে সবার চোখ কপালে তুলে দিয়েছিলেন এই ডিজাইনার ডুয়ো। মডেলদের পোশাকে নজর কেড়েছে সূক্ষ্ম শিলুয়েট, পুরোনো ক্যাসেট টেপ আর ফিল্ম দিয়ে তৈরি এমব্রয়ডারড ওয়ার্ক।
১১ অক্টোবর। শো শুরু হয় ডিজাইনার রিচা খেমকার বহুল প্রত্যাশিত অভিষেক দিয়ে। ‘কম্পোজিট’ টাইটেলের শোটির থিম ছিল ‘পিসিং টুগেদার আর্ট’। মোজাইক আর্টের সৌন্দর্যকে ফ্লুয়িড শিলুয়েটের মাধ্যমে উপস্থাপনের এমন আর্টিস্টিক পন্থা ফ্যাশনবোদ্ধাদের মুগ্ধ করেছিল। জনপ্রিয় মেনজওয়্যার লেবেল টিসা স্টুডিও মঞ্চ মাতায় বোল্ড জাপানিজ ট্যাপেস্ট্রি প্রাণিত নকশায় করা ইন্দো-জাপানিজ স্টাইলের সব পোশাক দিয়ে। লেদার জিওমেট্রিস্ট হিসেবে খ্যাত ডিজাইনার সামির মদন। স্ট্রাকচার ও ফর্ম নিয়ে তার চিরাচরিত ঘোর চোখে পড়েছে এবারও। বড় বড় জুয়েলারি, পোশাকে কালো চামড়ার ব্যবহার আর বডিকন ড্রেসে উদ্‌যাপিত হয় মব ওয়াইফ অ্যাসথেটিক। এবারের আয়োজনে ব্রিটিশ রিটেইল ব্র্যান্ড মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের অভিষেকটাও ছিল বহুল প্রত্যাশিত। তাদের অটাম কালেকশন প্রদর্শিত হয় মঞ্চে। সহজে পরিধানযোগ্য পোশাকের কালেকশনে নজর কাড়ে ব্লু ভেলভেটে তৈরি স্টেটমেন্ট পিসসহ ডেনিম, নিটওয়্যার আর আউটারওয়্যারের মতো সিজনাল স্টেপলগুলো।
নেক্সা প্রেজেন্টস দ্য স্পটলাইটের অষ্টম সংস্করণের আয়োজন ছিল এবারের আসরে। যেখানে এই সিজনের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ডিজাইনারকে তার উদ্ভাবন উপস্থাপনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। যার এবারকার বিজয়ী বেসপোক ক্লদিং লেবেল টিল বাই অঙ্কুর ভার্মা। বাস্তবতা আর বিভ্রমের মাঝের রেখাকে অস্পষ্ট করে তোলার এমন অভিনব পোশাকি উপস্থাপন উপস্থিত দর্শকদের নতুন জীবনাদর্শে ভাবতে বাধ্য করছিল যেন। ‘তেহজিব’ নামের কালেকশন নিয়ে মঞ্চ দাপিয়ে বেড়ান ডিজাইনার পায়েল সিংঘাল। আসছে শীত আয়োজনকে কেন্দ্র করে তৈরি প্রতিটি পোশাকে চিরাচরিত শিলুয়েটগুলোর এক অন্যতর রূপ নজর কেড়েছে উপস্থিতদের। ডিকনস্ট্রাকটেড আনারকলি, করসেট চোলির মতো নিরীক্ষাধর্মী পোশাক হয়েছে প্রশংসিত। অরগাঞ্জা আর ভেলভেটের জমিনে সনাতন এমব্র্রয়ডারির ভিন্নধর্মী শৈলী নজর কেড়েছে সবচেয়ে বেশি। উজবেকিস্তানের প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ধারার অনুপ্রেরণায় তৈরি সব পোশাকের দেখা মিলেছে ‘রাইজিং সান’ নামের কালেকশনটিতে। ডিজাইনার পায়েল জৈন।
এফডিসিআই আয়োজিত ‘দ্য ডেনিম এডিট’-এর মাধ্যমে পাঁচ শীর্ষস্থানীয় ডিজাইনার ডেনিমের কালজয়ী আবেদনকে ভিন্নমাত্রা দেন। লেস ইজ মোর—এই দর্শনকে প্রাধান্য দিয়ে কালেকশন প্রদর্শন করেন আশিশ এন সোনি। নানা ধরনের ওয়াশের টেইলরড সেপারেটেরের সঙ্গে ওভারসাইজড জিনস আর জ্যাকেটের দেখা মেলে এই শোতে। প্রাকৃতিক ভাঁজ আর প্যাচওয়ার্কে সাজানো পোশাক প্রদর্শিত হয় ডিজাইনার সুশান্ত আবরোলের কিউতে। রেট্রো চার্মের আধুনিক রূপ চোখে পড়ে ধ্রুব কাপুরের লিমিটেড এডিশন কালেকশনে। অন্যদিকে কণিকা গোয়েলের তৈরি ডেনিমের পোশাকগুলো প্রাধান্য পায় টেইলরিং আর বোল্ড গ্রাফিক। টেকসই অভ্যাসগুলোও যে ফ্যাশনেবল স্টেটমেন্ট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে, তারই প্রমাণ মিলছিল 11.11/ইলেভেন ইলেভেনের প্রতিটি আউটফিটে।
১২ অক্টোবর। ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের এবারকার আসরের চতুর্থ দিন। উদ্‌যাপিত হয় ব্রাইডাল কালেকশনের বৈচিত্র্যময় সব রূপ। মেঘা বানসাল, সলিতা নন্দা আর রোমা আগারওয়ালের নকশা করা চোখধাঁধানো সব পোশাকে। খোয়াব-খোয়াইশো কা শামিয়ানা নামের কালেকশনেরও মাধ্যমে ডিজাইনার মেঘা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন ভারতীয় কারিগরদের। নজর কাড়ে মোগল জালি প্যাটার্ন, স্ট্রাইকিং স্লিভ আর সিল্কের ওপর সূক্ষ্ম সূচিকর্মের তৈরি বিয়ের পোশাক। সলিতা নন্দার ‘সিয়েলো’ তে প্রদর্শিত হয় ওয়েটলেস ফর্ম আর স্ট্রাকচারড শিলুয়েটের সংমিশ্রণে তৈরি সব ব্রাইডাল অ্যাটায়ার। রোমা আগারওয়ালের ‘আহেলী’র শোতে মূর্ত হয়ে ওঠে ফুলেল মায়া। কনসেপ্ট শাড়ি থেকে ব্রাইডাল লেহেঙ্গায়।
শহুরে জীবন আর নগর স্থাপত্যের প্রেরণায় পুরুষদের পোশাক তৈরি করে দেখিয়েছেন দীপিত চুগ। স্ট্রাইকিং স্টাইল জ্যাকেট, ওয়াইড ফ্রিঞ্জ প্যান্ট, ওভারসাইজড লেপেল, জিওমেট্রিক প্রিন্ট—সবই দেখা গেছে কিউতে। আরেক ডিজাইনার রাহুল সিংয়ের মেনজ কালেকশনে ছিল সামার লিনেনের মাসকুলিন সব শেডের উপস্থিতি, শিবরি প্যাটার্নে। ডিজাইনার ডুয়ো পঙ্কজ অ্যান্ড নিধির ‘লুপ’ নামের কালেকশনে প্রাণ জুগিয়েছে অসীমতা প্রকাশের প্রতীকটি। উদ্দেশ্য, সংবেদনশীলতার স্বতন্ত্র সব উপাখ্যানের সহজ উপস্থাপন। নজর কেড়েছে অলংকরণের ভিন্নতা আর গঠনগত শৈলী। কলামের মতো শিলুয়েট, স্ট্রাকচারড জ্যাকেট, ওয়াইড লেগ প্লিটেড প্যান্ট, কিমোনো বোম্বার জ্যাকেট, শার্প জাম্পস্যুট—চোখ কপালে ওঠার মতো সব নকশা। মনীষা জয়সিংয়ের ‘দ্য সেইলিং ব্রাইড ২.০’ শোতে মডেলদের দেখা যায় হলিডে এবং ডেস্টিনেশন ওয়েডিং অ্যাটায়ারে। আধুনিক কনেদের কথা মাথায় রেখে তৈরি। এই দিনের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত শোটির আয়োজন ছিল একদম শেষে। প্রথিতযথা ডিজাইনার তরুণ তাহলিয়ানির লাক্সারি প্রেট ব্র্যান্ড ওটিটির। এই মাসেই অফিশিয়ালি লঞ্চ হতে যাওয়া এই ব্র্র্যান্ডকে বলা হচ্ছে তাহলিয়ানির ডিজাইন দর্শনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তার সৃষ্ট সিগনেচার ড্রেপিংগুলোকেই আরও আধুনিক শিলুয়েটে দেখতে পাবেন অনুরাগীরা। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল ছাড়াও ওটিটির প্রতিটি পোশাক পরিধানযোগ্যতা এবং ইনক্লুসিভিটির ওপর জোর দিয়ে তৈরি। লাক্সারি ফ্যাশনকে আরও সহজলভ্য করে তোলার প্রয়াস।
১৩ অক্টোবর। আয়োজনের শেষ দিন। ইন্ডিয়ার পার্ল একাডেমি আর এফডিসিআইয়ের কোলাবরেশনে ফাইনাল ইয়ার ফ্যাশন ডিজাইন স্টুডেন্টদের কাজ প্রদর্শিত হয় ‘ফার্স্ট কাট’ নামের শোতে। ভারতীয় সমাজে নারীদের সহনশীলতা আর ক্রমবিকাশকে উদ্‌যাপনের উপলক্ষ হয়ে ওঠে পুরো আয়োজনটি। মাঝে অনেক আয়োজন থাকলেও সবার অধীর আগ্রহ ছিল শোর গ্র্যান্ড ফিনালেতে। কারণ, একটাই। রোহিত বাল রিটার্নস টু রানওয়ে। হৃদ্‌রোগের কারণে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দিন ধরে অনুপস্থিত ছিলেন এই কুতুরিয়ার। দীর্ঘ বিরতির অবসান ঘটল যেন। কায়েনাত-আ ব্লুম ইন দ্য ইউনিভার্স শোর মাধ্যমে। পুরো কালেকশনটি তৈরি হয়েছিল প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং আভিজাত্য উদ্‌যাপনে। ফ্লোয়ি ফ্যাব্রিক, সূক্ষ্ম এমব্রয়ডারি, প্রাণবন্ত সব রং আর মোটিফে ফুলেল উপস্থিতি যেন তারই পষ্ট প্রমাণ। প্রকৃতি, সৌন্দর্য এবং রূপান্তরের নৈপুণ্যের প্রশংসায় যথাযথ প্রদর্শন। বলিউড অভিনেত্রী এবং ল্যাকমে ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর অনন্যা পান্ডে শো স্টপার হিসেবে পর্দা নামান এবারকার আয়োজনে।রোহিত বালের সিগনেচার পিসে। তার পরনে ছিল বড় বড় গোলাপ ব্ল্যাক লেহেঙ্গা, ব্রালেট ব্লাউজ আর কেপ স্টাইল ব্লেজার। হোয়াট অ্যান এন্ডিং!

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top