skip to Main Content

ইভেন্ট I প্রশান্তি প্রসূত

নাগরিক জীবনে শীতের বাতাস যখন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন প্রশান্তির খোঁজ নিয়ে আয়োজিত হলো ইয়োগা অ্যান্ড ওয়েলনেস ফেস্টিভ্যাল। আয়োজক ঢাকা ফ্লো। স্থান ঢাকার গুলশান সোসাইটি লেক পার্ক

৬ ও ৭ ডিসেম্বর ২০২৪। দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো ভালো থাকার এই উৎসব। শহরের মধ্যিখানে সবুজে ঘেরা লেকটি হয়ে উঠেছিল মুখরিত। ইয়োগাশালা, অ্যাম্ফিথিয়েটার এক্সপেরিয়েন্স, মেডিটেশন গার্ডেন, আর্ট অ্যান্ড সোল—এমন বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল উৎসবটি। রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয়েছে। সব বয়সী মানুষের জন্যই ছিল বন্দোবস্ত। মা-বাবার সঙ্গে ছিল শিশুদের পদচারণও।
ইয়োগা ইন্ধন
দেশ ও বিদেশের বিশেষজ্ঞরা ইয়োগার নানা কৌশল প্রদর্শন করেছেন। কার্ডিও ফ্লো, ট্রান্সফরমেটিভ ইয়োগা, কুণ্ডলিনী ইয়োগাতে অনুশীলনের সুযোগ ছিল। প্রশিক্ষক তাসমিয়াহ টি রাহমান তার সেশনে বলেন, প্রতিদিন মাত্র পাঁচ মিনিটের শ্বাসপ্রশ্বাস চর্চা এবং কয়েকটি আসন ভূমিকা রাখতে পারে ভালো থাকার মন্ত্রে। কুণ্ডলিনী ইয়োগা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন ফারিন। সমাপ্তিতেও ছিল ইয়োগা। প্রশিক্ষক ছিলেন ক্যারি। মন ও শরীরের সংযোগ তৈরির এই মন্ত্রে দীক্ষিত হতে আগ্রহী ছিলেন অসংখ্য মানুষ।
ছন্দে আনন্দে
ড্যান্স অ্যান্ড ড্যাজেল, সালসা, সিং অ্যালঙ্গের মতো কনসেপ্ট উপস্থিত ব্যক্তিদের উপভোগ করতে দেখা গেছে। অঙ্কন, আত্মরক্ষা আর বক্সিংও ছিল এই তালিকায়। ইমতিয়াজ কবির, রিদি শেখ দেখিয়েছেন তাদের মুনশিয়ানা। বিশ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অডিসি শিল্পী এরিন উইলসনে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শক।
ধ্যানের আমন্ত্রণে
মেডিটেশন মানুষকে ভালো থাকার গান শোনায়। দিন দিন এই শান্তির ধ্যানে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। ঢাকা ফ্লো মন ও শরীরের সুস্থতার জন্য মেডিটেশনের গুরুত্ব নিয়ে সচেতন সব সময়। এই উৎসবেও দেখা গেছে তার প্রতিচ্ছবি। আগ্রহীরা সবুজ প্রকৃতিতে মগ্ন হয়েছেন মেডিটেশন ম্যাজিকে। সাউন্ড হিলিং, মেডিটেশন অ্যান্ড সাউন্ড সেশন। এই অধ্যায়ে মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড সাইকো সেশন সম্পন্ন করেছে প্রাভা হেলথ।
মন থেকে মনে
কয়েকটি আনকোরা আইডিয়া মন কেড়েছে দর্শকদের। এগুলোর মধ্যে আছে শেয়ারপি ও রাইট টু রিলিজ। শেরাপিতে জানা গেছে অনুভূতির জানান দেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। রাইট টু রিলিজের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা কষ্ট, অভিমান, অসহায়ত্ব, রাগকে লেখার মাধ্যমে প্রকাশ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। মনের সিন্দুকে কথা জমিয়ে রাখার ভার বহন না করে প্রকাশের চর্চা ছিল মূল শিক্ষা। এ ছাড়া ছিল ম্যানিফেস্টেশন সেশন, যা সম্পন্ন করেন রাসমিত।
দেহ যতনে
প্রাভা হেলথ আয়োজিত ওয়ার্কশপের মাধ্যমে ইমারজেন্সি সিপিআর কীভাবে দিতে হয়, তা শেখানো হয়। একজন ইমারজেন্সি স্পেশালিস্ট দর্শকদের সামনে হাতেকলমে এই প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। খাবার গলায় আটকে গেলে কী করণীয়, তা-ও দেখান তিনি। এই অর্গানাইজেশন আরও আয়োজন করেছিল ফ্রি ডায়েটিশিয়ান কনসালটেশন। স্বাস্থ্যসচেতনদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা গেছে। বাংলাদেশি হারবাল বিউটি ব্র্যান্ড ‘আড়ং আর্থ’ কফি ফ্লেভারের স্ক্রাব ব্যবহারে হ্যান্ড মাসাজের আরামদায়ক একটি আয়োজন করেছিল। নিজের যত্ন নেওয়ার এই আয়োজন উপভোগ করেছেন অনেকে।
ম্যারাথন ম্যাজিক
উৎসবের শেষ দিন সকালে ছিল পাঁচ কিলোমিটার ম্যারাথন। শিরোনাম, ‘রান+রানার্স রিসেট’। হোস্ট হিসেবে যুক্ত ছিল পাওয়ার। ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড বাটার সাব ব্র্যান্ড এটি। বিডি রানার্সের সঙ্গে কোলাবোরেশনে সম্পন্ন হয় ভোরবেলার এই যজ্ঞ।
আলাপে-সংলাপে
গোল্ডেন বাংলাদেশ ২.০ প্যানেল ডিসকাশনে দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা প্রকাশ পায়। হেলদি লিভিং শিরোনামের ডিসকাশনে জীবনযাপন ও সুস্বাস্থ্য ছিল আলোচনার বিষয়। বক্তারা যেমন তাদের চিন্তাশীল অবস্থানকে ব্যাখ্যা করেছেন, শ্রোতারাও প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। সব মিলিয়ে মিথস্ক্রিয়ার একটি আয়োজন সম্পন্ন হয়।
টেকসই তত্ত্বে সম্পূর্ণ
সাসটেইনেবল ফ্যাশন শোতে প্রদর্শিত হয় হুমায়রা খানের পোশাক। এই ফ্যাশন ডিজাইনারের সাসটেইনেবল ফ্যাশন শো বুঝিয়েছে, প্রকৃতিকে ভালোবেসেও ফ্যাশনিস্তা হওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ইভেন্টটিতে টেকসই তত্ত্বের নিয়ম মেনে তৈরি ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল লেবেলের প্রদর্শনী ছিল। বাংলাদেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডগুলো সাজিয়েছিল পসরা। দেশি-বিদেশি পোশাক, গয়না, অনুষঙ্গ, হাউসহোল্ড আইটেমের পাশাপাশি বই, নোট প্যাডসহ স্টেশনারি নিয়েও ছিল আয়োজন।
ছোটদের দুনিয়া
অনেক মা-বাবা এসেছিলেন শিশুসন্তানদের সঙ্গে নিয়ে। তাদের কথা মাথায় রেখে পুরো সময়ে প্লে গ্রাউন্ড তৈরি রেখেছিল আয়োজকেরা। ছিল আর্ট অ্যান্ড সোল স্টেশন। বাচ্চাদের জন্য ডান্স শো করেছেন রিদি শেখ। ছিল ফেস পেইন্টিং, পটারি, কার্টুন ড্রয়িং, রিকশা আর্ট। বেশ কয়েকজন শিল্পীর আয়োজন ছিল শিশুদের জন্য। যেমন তন্ময়, ফাতেমা, নাজিয়া ও রিপ্পি। তাদের উপস্থিতি শিশুদের আরও বেশি আনন্দ দিয়েছে।
স্বাদে সন্তুষ্টি
পার্কের দুটি জায়গায় ছিল খাবারের আয়োজন। মুড়ি মাখা, ফুচকা থেকে শুরু করে ভেগান, পিজ্জা—সবই ছিল। নানা রকম ফিঙ্গার ফুড ছিল। বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ফুডি সকল আমন্ত্রিতের জন্য ফ্রি নুডলস তৈরি করেছিল। ইস্পাহানী ব্লেন্ডার টি তৈরি করেছিল টি স্টেশন। সেখানে তাদের বাগানের তাজা চায়ের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ মিলেছে।
প্লাস্টিক ফ্রি ছিল পুরো আয়োজন। প্রকৃতিপ্রেমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিটি স্তরে। পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করার প্রত্যয়ে একত্র হয়েছিলেন ব্যস্ত এই শহরের নাগরিকেরা। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে ধরণীকে উপহার দেওয়ার চেষ্টা ছিল। কার্বন ফুটপ্রিন্টে যখন বিপর্যস্ত দুনিয়া, সেখানে অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে ছিল এলিট ফোর্স। মিডিয়া পার্টনার ক্যানভাস।

 সারাহ্ দীনা
ছবি: ঢাকা ফ্লোর সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top