skip to Main Content

মনোজাল I ব্রেকআপ-কাট

অতীত অতিক্রান্ত। এ যেন নতুন শুরুয়াতের প্রতীক। এভরিথিং আন্ডার কন্ট্রোল ভাইব দিতে

‘এমিলি ইন প্যারিস’ দেখেননি এমন মানুষ খুব কম মিলবে। সিরিজটির অন্যতম প্রধান চরিত্র এমিলি কুপার (লিলি কলিন্স)। তার কথা প্রথমেই উল্লেখ করা হচ্ছে বিশেষ কারণে। এটি একটি রোমান্টিক গল্প, যেখানে নায়িকা তার হৃদয় ভাঙার পর নিজেই নিজের হেয়ারকাটের মাধ্যমে নতুন একটি লুক ক্রিয়েট করে। নিজেকে পাল্টে ফেলার এই চেষ্টায় দারুণ এক আত্মবিশ্বাস এসে ভর করে তার মধ্যে। মোটামুটি এই হচ্ছে পেছনের গল্প। আর সামনের গল্পটি হলো ব্রেকআপ-পরবর্তী ট্রমা থেকে উঠে আসার জন্য এ কাজ যে কেউ করতে পারেন। কারণ, যে মুহূর্তে এমিলি তার জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে কাঁচি নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল, আসলে তা ছিল নিজ জীবনের ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ ও রোমান্টিক চাপের প্রতি তার আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া। তুমুল জনপ্রিয় এই নেটফ্লিক্স শো চলাকালীন এর আরেক প্রধান চরিত্র মিন্ডি (অ্যাশলে পার্ক) মজা করে এমিলির এই লুককে ‘ট্রমা ব্যাংস’ বলে উল্লেখ করে। আর সেই থেকে শুরু। টার্মটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তরুণদের মধ্যে। এখন ট্রমা ব্যাংস কী—যারা জানেন না, তাদেরকে একটু বিস্তারিত বলা প্রয়োজন।
ট্রমা ব্যাংস বা ট্রমা হেয়ারকাট। টার্মটি দীর্ঘদিন ধরে চুল কাটার সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আরও বুঝিয়ে বলা যাক। মনে বড় আঘাত পাওয়ার পর সেটি থেকে উঠে আসার জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে নতুন একটি হেয়ারকাট। এই কাটকেই বলা হয় ট্রমা হেয়ারকাট বা ট্রমা ব্যাংস; যা বর্তমান বিশ্বে অসংখ্য মানুষের কাছে জনপ্রিয় বলে বিশ্বাস করেন গবেষকেরা।
এখানে আসল প্রশ্ন হলো, জীবন একটু বিশৃঙ্খল হয়ে পড়লেই কেন চুল কাটায় ঝোঁক বাড়ে? ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জেইম জুকারম্যান এর খুব সুন্দর ব্যাখা দিয়েছেন। তার মতে, ক্রান্তিকালে হঠাৎ চুলের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ‘একধরনের পুনর্জন্ম’ হিসেবে কাজ করে। এমনও বলা যায়, এই সিদ্ধান্ত জীবন পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে।

চুল খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার। শরীরের গুটি কয়েক অংশের মধ্যে এটি একটি, যা দিয়ে বাহ্যিকভাবে স্টাইল, ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় প্রকাশিত হয়। ব্রেকআপের পর চুল পরিবর্তনের এই ইচ্ছা তারই প্রতিফলন। আরও একটু গভীরভাবে বলা যায়, হেয়ারকাটে পরিবর্তন চারটি সম্ভাব্য মানসিক প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত দিতে পারে। নিয়ন্ত্রণ হারানো, এড়িয়ে চলার প্রক্রিয়া, নতুন করে চুল কাটার আকাক্সক্ষা অথবা আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা। তার মতে, মানুষ স্বভাবতই যখন কোনো সংকটে পড়ে, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন আড়ালের জন্য নানান বাহ্যিক উপায় খোঁজে। লুক পাল্টে ফেলা তার মধ্যে একটি। এ ছাড়া কারও কারও মধ্যে অ্যালকোহল বা মাদকের ওপর নির্ভরতা, খাবারের অতিরিক্ত চাহিদা, কেনাকাটার প্রবণতা ইত্যাদি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কিন্তু চুলের ব্যাপারটা এমন, যেটি নিজের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকে। পরিবর্তনে তুলনামূলক তাৎক্ষণিক ফল দেয়। ব্যক্তি যদি বিশেষ কোনো ঘটনা এড়িয়ে চলতে চান; যা তার কষ্ট বা উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়, সে ক্ষেত্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চুল কাটা বা রং করা একটি তাৎক্ষণিক সমাধান হতে পারে; যা মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেবে। মনোজগতে হওয়া অস্বস্তি থেকে তাৎক্ষণিক তৃপ্তি দেবে। যার মধ্যে কোনো নেতিবাচকতা থাকবে না। যখন কেউ একটি কঠিন পরিবর্তনের পরে আবার আত্মবিশ্বাস বা নিজেকে ফিরে পেতে চান, তারা তাদের চেহারা পরিবর্তন করতেই পারেন।
গবেষকদের মতে, ব্রেকআপ-পরবর্তী এই হেয়ার কাটকে প্রায়শই ইতিবাচকভাবে একটি নতুন শুরুর প্রতীক বলা যায়। কখনো কখনো জীবনের কঠিন বা ক্রান্তিকালে চেহারার এই পরিবর্তন মেজাজ, শক্তি ও আত্মবিশ্বাসে প্রয়োজনীয় উন্নতি আনতে পারে। তবে বিতর্কও আছে। যেমন অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, চাপের সময় চুল কাটা কি আঘাতের প্রতিক্রিয়া? তারা আবার এর নেতিবাচক প্রভাব আছে বলেও বিশ্বাস করেন। ড. জুকারম্যান অবশ্য এই মতামতের পুরোটাই বিপক্ষে। তার মতে, সাধারণভাবে চুল পরিবর্তন প্রকৃত আঘাতের প্রতিক্রিয়া নয়। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত কষ্টের কারণে চুল কাটা মানসিক চাপে অনুপ্রাণিত হতে পারে। আর জানা আছে তো, চাপ ও আঘাত খুব আলাদা প্রতিক্রিয়া। একটি হলো স্বাভাবিকভাবেই ঘটে যাওয়া আবেগ; অন্যটি একটি অভিজ্ঞতা বা ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ঘটা আবেগ। আসলে, ব্যক্তিভেদে ট্রমা নানাভাবে প্রকাশ পেতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে সারাক্ষণ শোকে কাতর হয়ে থাকা, ক্রমাগত স্মৃতিচারণা করা, ঘুম ও ক্ষুধা কমে যাওয়া, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, আতঙ্কে বসবাস করা ইত্যাদি। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণে করা খুব মামুলি এই কাজ সাধারণত ট্রমার প্রতিফলন নয় বলেই তার বিশ্বাস।
আসলেই তো। যদি আত্মঘাতী না হয়, অন্য কারও ক্ষতি না করে, বা জীবনকে কোনো নেতিবাচক উপায়ে প্রভাবিত না করে, তাহলে এটি করতে সমস্যা কোথায়? নতুন এই চেহারা বা স্টাইল মেজাজ ভালো করে দেওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে, যা ব্রেকআপের কঠিন সময় পেরোনোর জন্য ভীষণভাবে প্রয়োজন। তাই নিশ্চিন্তে করুন!

 রত্না রহিমা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top