ফিচার I জার্সি ২০১৮
বিশ্বজুড়ে বইছে বিশ্বকাপের হাওয়া। কারণ, ১৪ জুন পর্দা উঠছে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপের। তাই ফুটবলপ্রেমীরাও নিজেদের তৈরি করে নিচ্ছেন। বাংলাদেশেও ফুটবলভক্তের সংখ্যা কম নয়। পাড়ায়-মহল্লায় শুরু হয়েছে নিজেদের দল নিয়ে উন্মাদনা। নিজের দলের পতাকা আর জার্সি কিনতে ব্যস্ত এখন নগরবাসী।
জার্সি স্পন্সর
প্রতিবারের মতো এবারও জার্সিতে এসেছে কিছু পরিবর্তন। লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, নেইমারদের মতো বড় বড় তারকার দলের জার্সি তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে আটটি কোম্পানি। যাদের মধ্যে ১২টি দলের জার্সিই তৈরি করছে অ্যাডিডাস। ১০ দলের কিট তৈরি করে দিচ্ছে নাইকি। তিন দেশের দায়িত্বে রয়েছে পুমা। দুটি করে দল পাচ্ছে আমব্রো ও নিউ ব্যালেন্স। একটি করে দল পেয়েছে হামেল, ইরিয়া ও ইউএইচএল স্পোর্ট।
জার্সিতে নতুনত্ব
এবার প্রায় প্রতিটি দলই জার্সির ডিজাইনে এনেছে নতুনত্ব। অবশ্য মূল জার্সিতে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনেনি বিশ্বকাপের দলগুলো। জার্সির রং আছে আগের মতোই। তবে পুরোনো রঙে ভিন্নতা দেওয়ার চেষ্টা ছিল সবার মধ্যেই।
রাশিয়া বিশ্বকাপের জন্য নতুন জার্সি করেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। বরাবরের মতো এবারের জার্সিতেও বৈচিত্র্য এনেছে নাইকি। হোম জার্সিতে পতাকার রঙের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হলুদ রঙের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আর অ্যাওয়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে গাড় নীল রঙে, যাতে দেওয়া হয়েছে বাড়তি ডিজাইন। দুই জার্সির গলা কিছুটা ‘ভি’ আকৃতির। লিওনেল মেসিদের সেই বিখ্যাত আকাশি নীল-সাদা স্ট্রাইপের জার্সিতে কোনো পরিবর্তনই আসেনি। তারা এই জার্সিতে সম্মান জানাতে চায় আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ১২৫ বছরের অবদানকে। তাদের জার্সির কাঁধের মধ্যে সাদা রঙের তিনটি রেখা দেওয়া আছে। তিনটি রেখা থাকবে বুকের দিকেও। তবে সেটা আকাশি রঙের। অ্যাওয়ে জার্সিতে এসেছে পরিবর্তন। গাঢ় নীলের বদলে এই প্রথম তারা ব্যবহার করবে সম্পূর্ণ কালো জার্সি।
কলম্বিয়ার হলুদ রঙের হোম জার্সিতে কাঁধে এবং দুই পাশে দেশটির জাতীয় পতাকার রঙের লাল ও নীল স্ট্রাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। নীল রঙের অ্যাওয়ে জার্সির কলারে ‘এক অবিচ্ছিন্ন দেশ’ কথাটি খচিত আছে। পেরুর জার্সিতে বিশেষ কিছু নেই। তবে দলটির ঐতিহ্যবাহী লাল রঙের লাইনটি ঠিকই আছে। ইংলিশরা বিশ্বকাপে খেলবেন সাদা জার্সি ও নেভি ব্লু রঙের শর্টস পরে। সঙ্গে থাকবে সাদা রঙের মোজা। অ্যাওয়ে জার্সিটি হবে লাল রঙের, সঙ্গে সাদা শর্টস ও লাল মোজা। ১৯৮৪ সালের পর প্রথমবারের মতো বেলজিয়াম দলকে মেরুন ঘেঁষা লাল রঙের জার্সি পরে খেলতে দেখা যাবে। সামনে রয়েছে হীরার আদলে নকশা। দলটির অ্যাওয়ে কিটের রঙ হলুদ, দুই কাঁধের ওপর কালো ও লালের তিনটি স্ট্রাইপ রয়েছে। নিজেদের লাল রঙের হোম জার্সিতে দেশ ও তাদের পর্বতময় অঞ্চলের গৌরব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে সুইজারল্যান্ড। তবে কলারটি সাদা রঙের, ভি-আকৃতির। পর্বতের ছাপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জার্সি জুড়ে সাদা লাইনে। অ্যাওয়ে জার্সিটি সাদা এবং কলার লাল। জাপানের হোম জার্সিতে এবার গাঢ় নীল রঙ এবং ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সাদা সাদা ফোঁটা ব্যবহার করা হয়েছে। জাপানের মানুষদের কারিগরি দক্ষতা এবং দেশটির ঐতিহ্যবাহী সেলাই কৌশল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই নকশা বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালের হোম জার্সিটি নতুনভাবে উপস্থাপন করে এবার অ্যাওয়ে জার্সি হিসেবে ব্যবহার করবে জাপান। ১৯৯০ সালের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত মেক্সিকোর হোম জার্সিতে দুই কাঁধে তিনটি করে সাদা স্ট্রাইপ থাকবে। অ্যাওয়ে জার্সিতে দেশটির পতাকার তিন রঙ সাদা, লাল ও সবুজ ব্যবহৃত হয়েছে। জার্মানিও তাদের হোম জার্সিতে ৯০ বিশ্বকাপের ছোঁয়া দিতে চেয়েছে। সাদা জার্সির বুকের অংশে কালো রঙের নকশা রয়েছে। মাঝখানে রয়েছে শেষ বিশ্বকাপ জয়ী দলের ব্যাজ। সবুজ অ্যাওয়ে জার্সির দুই পাশে কালো স্ট্রাইপ রয়েছে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দলের জার্সিতে বিশেষ কিছুই নেই। মেরুন রঙের হোম জার্সির কলারে সবুজ ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সাদা অ্যাওয়ে জার্সিতে ছোট ছোট সবুজ ফোঁটা ব্যবহৃত হয়েছে। এটাই সবার নজর কেড়েছে। ফ্রান্সের নীল রঙের হোম জার্সিতে এবার উঠে আসবে জাতিটির দেশপ্রেম। অ্যাওয়ে জার্সির রঙ হবে সাদা। সেখানে লেখা থাকবে, ‘বৈচিত্র্য আমাদের এক করে’। স্পেনের হোম জার্সিতে উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের স্মৃতি। লাল রঙের এই জার্সির ডান পাশের কাঁধ থেকে নিচ পর্যন্ত একটা নকশা আছে। অ্যাওয়ে জার্সিটি হালকা ধূসর। তাতে লাল স্ট্রাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। মিসরের জার্সি সম্পূর্ণ লাল। কলারে কালো রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। দুই পাশে তিনটি করে সাদা অ্যাডিডাস স্ট্রাইপ ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রচেষ্টার স্মরণে নাইজেরিয়া সে সময়ের জার্সি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। সবুজ রঙের মাঝে সাদার প্যাটার্ন ও দুই হাতের অংশে সাদার মাঝে কালোর প্যাটার্ন দিয়ে তৈরি হয়েছে হোম জার্সি। অ্যাওয়ে জার্সিতে ব্যবহৃত হয়েছে গাঢ় সবুজ রঙ। সেনেগালের সাদা জার্সির দুই পাশে সবুজ লাইন ব্যবহার করা হয়েছে। জার্সির সামনে একটি নকশা সূচিত থাকবে। ১৯৮৮ সালের অলিম্পিকে বীরত্ব স্মরণে স্বাগতিক দেশটি লাল রঙের হোম জার্সি ব্যবহার করবে। দুই কাঁধে একটু বাঁকানো তিনটি সাদা স্ট্রাইপ থাকবে। সাদা অ্যাওয়ে জার্সিতে অনেক কালো ফোঁটা ব্যবহৃত হয়েছে। এটা দেশটির বৈশিষ্ট্য এবং অসংখ্য শহরের প্রতীক। সুইডেন তাদের ১৯৮৮ সালের জার্সির প্রতি সম্মান দেখিয়ে হলুদের সঙ্গে কলারে নীল রঙ ব্যবহার করে তৈরি হোম জার্সি পরবে। অ্যাওয়ে জার্সি ঠিক এর বিপরীত। নেভি ব্লু জার্সির কাঁধে তিনটি হলুদ স্ট্রাইপ। উরুগুয়ের আকাশি নীল রঙের হোম জার্সির সামনে দেশটির একটি স্মৃতিস্তম্ভের নকশা আঁকা হবে। অ্যাওয়ে জার্সির রঙ সাদা। কলারে নীল রঙ ব্যবহৃত হয়েছে। সার্বিয়ার সাদা রঙের জার্সির দুই পাশে একটি করে লাল লাইন ব্যবহৃত হয়েছে। লাল লাইনটি জার্সির সামনেও রয়েছে।
রেপ্লিকা জার্সি
দেশীয় এসব ভক্তের চাহিদা পূরণে স্পোর্টস গিয়ারের দোকানগুলোর পাশাপাশি বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস নিয়ে এসেছে জার্সি। তাদের মধ্যে অন্যতম ইয়েলো, সেইলর, জেন্টল পার্ক, টেক্সমার্ট, এক্সট্যাসি। শোরুমগুলোতে বেশি দেখা মিলছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মেক্সিকো, পর্তুগাল ও স্পেনের জার্সি। কেউ তৈরি করেছে রেপ্লিকা জার্সি, কেউ আবার অরিজিনালটিই নিয়ে এসেছে ভক্তদের জন্য। এসব জার্সি মিলবে ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
তৌহিদুল ইসলাম তুষার
ছবি: সংগ্রহ