ইন্টেরিয়র I আকাশজানালা
সকালের মিষ্টি রোদ, তারায় ছাওয়া রাতের এক টুকরো আকাশ, বৃষ্টির মুষলধারা কিংবা টাপুরটুপুর হরদম আসা-যাওয়া করবে এখন আপনার ঘরে
স্কাইলাইটস। পুরোদস্তুর বিদেশি। আবিষ্কারটাও তাদেরই। প্রাচীন রোমান স্থাপত্যশৈলীর এক নজরকাড়া নিদর্শন। যা এখন জায়গা করে নিয়েছে একবিংশ শতাব্দীতে তৈরি মডার্ন ইন্টেরিয়র আউটলাইনে। সহজে বোঝাতে চাইলে বলতে হয় স্কাইলাইটস হচ্ছে একধরনের জানালা। একদম সাধারণ জানালা। কিন্তু এর রয়েছে অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। ঘরের বাকি জানালাগুলোর মতো নয় এটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এর জায়গা ঘরের দেয়ালে নয় বরং সিলিংয়ে। কখনো সটান সমান্তরাল তো কখনো খানিকটা ঢালু। এরও মূল কাজ হচ্ছে প্রাকৃতিক আলো-বাতাসে ঘরকে ভরিয়ে তোলা। কিন্তু দেয়াল নয়, সিলিং ফুঁড়ে। হিসাব করে দেখা গেছে, একটা আদর্শ আকৃতির জানালার চেয়ে অন্তত আট গুণ বেশি আলো প্রবেশ করে স্কাইলাইটসের মাধ্যমে। এতে সাশ্রয় হয় বিদ্যুৎ। টেনে ধরা যায় বাড়তি বিলের লাগাম। তা ছাড়া এর আরেকটা বড় সুবিধা হচ্ছে, ঘরে বসেই সরাসরি উপভোগ করা যায় বাইরের প্রকৃতির রূপ। ইট কাঠ পাথরের শহরে বসে এটিই-বা কম কিসের।
মূলত তিন ধরনের স্কাইলাইটের ব্যবহার হয় বাসাবাড়িতে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই নাম আসে ভেন্টিলেটিং স্কাইলাইটের। এটা সহজেই খোলা ও বন্ধ করা যায় বলে ছাদ দিয়েই আলো-বাতাস নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে ঘরে। রান্নার জায়গা আর বাথরুমের ছাদের জন্য এ ধরনের স্কাইলাইটস সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এতে এসব জায়গায় তৈরি বাড়তি আর্দ্রতা কিংবা বাজে গন্ধ সহজেই দূর করা যায়। রিমোট, হ্যান্ড ক্র্যাম্প কিংবা অটোমেটিক সেন্সর চালিত হয়ে থাকে এগুলো। এ ছাড়া আছে ফিক্সড স্কাইলাইট। এটা ছাদে একবার লাগানোর পর খোলার কোনো উপায় নেই। শুধু আলোই প্রবেশ করে এর মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া বৃষ্টির দিনগুলোতে ঘরে শুয়ে-বসে বর্ষাবিলাসেও বেশ সুখকর ভূমিকা রাখতে পারে এগুলো। আর আছে টিউবুলার স্কাইলাইট। তুলনামূলকভাবে ছোট এ স্কাইলাইটগুলো মূলত ঘরের ছোট আকারে অন্ধকার জায়গাগুলোতে ছড়ায় বাড়তি আলো। এ ছাড়া ডিজাইন ভেদে স্কাইলাইটের রকমফের হয়। ফ্ল্যাট বা সমান্তরাল স্কাইলাইটগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুলভ এবং সর্বাধিক ব্যবহৃত। এটা লাগানো তুলনামূলকভাবে সহজ। বর্গাকার অথবা চতুর্ভুজাকৃতির গ্লাস অথবা অ্যাক্রিলিক ছাদে বসিয়ে তৈরি হয় এ স্কাইলাইট। পছন্দ অনুসারে একদম ফিক্সড অথবা ভেন্টিলেশন সিস্টেমে ইনস্টল করা যায় এগুলো। ছাদের দেয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা গোলাকার স্কাইলাইটগুলো ঘরের ভেতরকার সৌন্দর্য বাড়াতে কার্যকর। বহুভুজাকৃতির গ্লাস অথবা অ্যাক্রিলিক দিয়ে তৈরি হয় পলিগন স্কাইলাইট। এগুলো দামে অনেক বেশি, কিন্তু নান্দনিকতায় অসামান্য। চারটি ত্রিভুজাকৃতির গ্লাস অথবা অ্যাক্রিলিক শিট দিয়ে তৈরি হয় পিরামিড স্কাইলাইট। গম্বুজ আকৃতির স্কাইলাইটও বেশ চোখে পড়ে এখন। এ ছাড়া লিন টু নামে একটি ডিজাইন রয়েছে। যেখানে স্কাইলাইটের শুরুটা হয় ছাদে, তবে তা ঢালু হয়ে শেষ হয় দেয়ালের কোনো একটা অংশে। এ তো গেল স্কাইলাইটের আকৃতি আর ডিজাইনের কথা। কিন্তু লাগানোর সময় এমন অনেক খুঁটিনাটি ডিটেইল রয়েছে, যা মাথায় না রাখলেই নয়। প্রথমেই এর ম্যাটেরিয়াল অর্থাৎ কী দিয়ে তৈরি স্কাইলাইট ঘরে লাগাবেন, সেদিকে নজর দেওয়া জরুরি। অ্যাক্রিলিক অথবা প্লাস্টিকে তৈরি স্কাইলাইটে খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং টিকেও থাকে দীর্ঘ সময়। কিন্তু এতে আলাদা কোটিং না দেওয়া থাকলে খুব দ্রুত হলদেটে ছাপ পড়ে যায়। অন্যদিকে কাচে তৈরি স্কাইলাইটে খরচ বেশি। কিন্তু এটা টিকে থাকে অনেক বছর। স্পেশাল গ্লেজিং করার পাশাপাশি কাচ টেম্পারড কিংবা লেমিনেটও করে নেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, ঘরের কোন দিকে মুখ করে স্কাইলাইট লাগানো হচ্ছে। কারণ, এটি দিয়ে শুধু আলোই ঢোকে না, শীতের সময় ঠান্ডা আর গরমের সময় তাপ ঢোকে। উত্তরমুখী স্কাইলাইট ঘরকে বেশি উত্তপ্ত না করে পর্যাপ্ত আলোর জোগান দেয়।
অন্যদিকে দক্ষিণমুখী স্কাইলাইটগুলো ঘরে বাড়তি তাপ জুগিয়ে করে তোলে উষ্ণ। পূর্বমুখী স্কাইলাইট দিয়ে দিনের শুরুতে সবচেয়ে বেশি আলো আর তাপ ঢোকে আর দিনের বাকিটা সময়ের কাজ সারার জন্য পশ্চিমমুখী স্কাইলাইটই যথেষ্ট। তাই এগুলো লাগানোর আগে বুঝে নিতে হবে- কোন ঘরটায় কতটুকু আলো বা তাপ চাই। তবে বাড়তি আলো, বাতাস কিংবা তাপ বন্ধ করার ব্যবস্থাও করে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বাড়তি শেড কিংবা ব্লাইন্ড, ব্যবহার করলেই চলবে। এ ছাড়া বাজারে মিলবে কিছু হিট অ্যাবজরভিং ব্লাইন্ড যা সূর্যের অতিরিক্ত আলো কিংবা তাপের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিকর আলো ঢুকতেও বাধা দেবে। ঘরটা কতটুকু নিজের, তা-ও খেয়াল করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘরে জানালার সংখ্যা বেশি হলে মোট ফ্লোর এরিয়ার পাঁচ ভাগ জায়গাজুড়ে স্কাইলাইট লাগানোই যথেষ্ট। অন্যদিকে যদি জানালা কম থাকে, সে জায়গা বেড়ে হবে ১৫ শতাংশ। তবে আগে জানা চাই নিজের চাহিদা। থাকতে হবে বিশেষজ্ঞের তদারকিও।
জাহেরা শিরীন
ছবি: সংগ্রহ