কভারস্টোরি I কুক টিউব
ইউটিউব চ্যানেলগুলো আজকাল রান্না শেখানোর দায়িত্বও নিয়েছে। দিনে দিনে বাড়ছে এই কুকিং স্কুলের জনপ্রিয়তা
রান্না এমন এক শিল্পকলা, যার ওপর প্রাত্যহিক জীবনের বেশ কিছু বিষয় নির্ভরশীল। পেটের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য যে খাদ্যসম্ভারের আয়োজন, তা শুধু ক্ষুধা নিবৃত্তি বা শারীরিক পুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং রুচি, লোকাচার, সংস্কৃতি ইত্যাদির সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্কিত। রন্ধন যেহেতু শিল্পকলা, তাই এর প্রশিক্ষণ ও অধ্যয়নের ব্যবস্থাও আদিকাল থেকেই বিদ্যমান। প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে জানতে গেলে দেখা যাবে, নানা খাদ্যের পাশাপাশি সেগুলোর রন্ধনপ্রণালির বর্ণনাও উপেক্ষিত হয়নি। রন্ধনশিক্ষার ব্যবস্থা বর্তমানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে রয়েছে। কিন্তু সবার জন্য, যেকোনো সময়ে রন্ধনশিক্ষার উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব। নতুন প্রজন্মের যাপন আজ ইউটিউবের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাদের এই সম্পৃক্ততার কারণেই আমরা তাদের চিহ্নিত করছি ‘টিউব জেনারেশন’ নামে।
ইউটিউবের কল্যাণে এই ‘টিউব জেনারেশন’-এর ঘরে ঘরে রন্ধনশিল্পী। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো ডিশ শেয়ার হচ্ছে ভিন্ন কোনো দেশের ডাইনিং টেবিলে। জাতিতে জাতিতে ঘটছে খাদ্যাভ্যাস ও স্বাদের বিনিময়। এ সবকিছু ঘটছে ইউটিউবের দৌলতেই।
ভিডিওতে, কখনো স্লো মোশনে, প্রয়োজনীয় উপকরণের পরিমাণসমেত রন্ধনপ্রণালি বর্ণনা করা হয়ে থাকে ইউটিউবের রন্ধনশিক্ষাবিষয়ক একেকটি কনটেন্টে। সেসব টিউটরিয়ালে আস্থা রাখা যায় বৈকি। কেননা ওসব ‘কুকিং চ্যানেল’-এর নেপথ্যে থাকেন নামকরা দেশি-বিদেশি শেফরা।
‘ফুড উইশেস’। মার্কিন শেফ ‘জন মিটজেউইচ’-এর তত্ত্বাবধানে চলছে এই ইউটিউব চ্যানেল। ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ তে চালু হওয়া এ চ্যানেলের বর্তমান সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৩ জন। ইউটিউবের সার্চ বারে ইংরেজিতে www.youtube.com/user/foodwishes লিখলেই পেয়ে যাবেন এ সাইটের হদিস। মাত্র ২ থেকে ১০ মিনিট ব্যাপ্তির ভিডিওগুলোতে একেকটি রেসিপিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নিপুণভাবে। প্রয়োজনীয় উপকরণ হাতের কাছে থাকলে এখনই সহজে বানিয়ে ফেলতে পারবেন ফুড উইশেসে দেখানো রেসিপিগুলো। কোরিয়ান বারবিকিউড র্যাক অব ল্যাম্ব থেকে শুরু করে রোমেসকো সস- যেটিই তৈরি করতে চান না কেন, ঢুঁ মেরে আসতে পারেন ‘ফুড উইশেস’ সাইট থেকে। প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার নতুন কোনো রেসিপির ভিডিও প্রকাশ করা হয় এ চ্যানেলে।
ফুড উইশেসের মতোই আরেকটি কুকিং সাইট ‘মানচিজ’। ২৪ মার্চ ২০১৪ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এর সাবস্ক্রাইবার ২৩ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪৩ জন।
সার্চ বারে www.youtube.com/user/ লিখলেই পেয়ে যাবেন এ সাইট। মূলত তরুণদের পছন্দসই ডিশগুলোর রন্ধনশৈলীসহ ভিডিওবার্তা আকারে প্রকাশ করা হয়ে থাকে মানচিজে। বেনানা ব্রেড কিংবা চকলেট হেজেলনাট সেমিফ্রেডোর মতো মুখরোচক পদগুলো বানাতে চাইলে ঢুঁ মারতে পারেন। মানচিজের নেপথ্যে রয়েছেন ম্যাটি ম্যাথেসন।
‘বিনজিং উইদ বাবিশ’। রান্নার এ চ্যানেল ইউটিউবে আসে ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট। বর্তমানে তাদের সাবস্ক্রাইবার ২৮ লাখ ৬০ হাজার ৮ জন। এর ভিডিওতে মজার মজার রান্না শেখানো হয়। চ্যানেলটির কুজিনে পপ কালচারের প্রভাব লক্ষ করা যায়। হোস্ট অ্যান্ড্রু রেয়া।
www.youtube.com/user/bgfilms লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন এ চ্যানেল।
এ ধরনের আরেকটি চ্যানেল হচ্ছে ‘লোরা ইন দ্য কিচেন’। এখানে শেফ ‘লোরা ভিটালি’ নিজের রেসিপিগুলো শেয়ার করেন। সেখান থেকে অন্যরা শিখে নেন। ইউটিউবে চ্যানেল তিনি তৈরি করেন ২০১০ সালের ১৪ জানুয়ারি। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার রেসিপি শেয়ার করেছেন নিজের চ্যানেলে। বর্তমানে এর সাবস্ক্রাইবার ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৪৪০ জন। লোরা মূলত আমেরিকা ও ইতালির টেলিভিশন হোস্ট। চকো টেকস, ডেলি স্টাইল ম্যাকারনি স্যালাড, লেমন ক্রিম পাফসহ আকর্ষণীয় সব রেসিপি পেতে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন লোরার চ্যানেলে। ইউটিউবের সার্চ বক্সে
www.youtube.com/user/LauraVitalesKitchen লিখে এন্টার বাটন চাপলেই পেয়ে যাবেন তার চ্যানেলটি।
‘বোন অ্যাপেটাই’। এটি মূলত রান্না ও বিনোদনবিষয়ক একটি আমেরিকান পত্রিকা। তবে এর একটি ইউটিউব চ্যানেলও আছে। রান্নাবিষয়ক টিপসও পেয়ে যাবেন সেখানে। বোন অ্যাপেটাই চ্যানেলটি চালু হয় ২৯ এপ্রিল ২০০৮ সালে। বর্তমানে এর সাবস্ক্রাইবার ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩১ জন।
www.youtube.com/user/BonAppetitDotCom ঠিকানায় সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন চ্যানেলটি।
বাড়িতে খুব দ্রুত মুখরোচক খাবার তৈরি করতে চান? তাহলে চোখ রাখতে হবে ‘এভরিডে ফুড’ নামের রান্নাবিষয়ক চ্যানেলে। কারও একক প্রচেষ্টায় এটি চলে না। মার্থা স্টিওয়াড, সারা কেরি, শিরা বোকার, লিনডসে স্ট্রান্ড ও থমাস জোসেফের প্রচেষ্টায় চ্যানেলটি বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পুরো সপ্তাহেই তারা নতুন নতুন রেসিপি নিয়ে হাজির হন এই চ্যানেলে। এটি চালু হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ সালে। বর্তমানে তাদের সাবস্ক্রাইবার ১১ লাখ ৩৬ হাজার ১২৫ জন। সপ্তাহজুড়েই আপনি নিজের রান্নার খুঁটিনাটি শেয়ার করতে পারবেন এভরিডে ফুড চ্যানেলের হর্তাকর্তাদের সঙ্গে। পটেটো পিরোগি কিংবা চকলেট চিপ কুকি আইসবক্স কেকের মতো অসাধারণ সব পদ তৈরি করা শিখতে পারবেন এভরিডে ফুড চ্যানেলের মাধ্যমে। চ্যানেলটি খুঁজে পেতে ব্রাউজ করুনwww.youtube.com/user/EverydayFoodVideos অ্যাড্রেসটি।
‘সিরিয়াস ইট’। চ্যানেলটি তৈরিই হয়েছে ইউটিউব-নির্ভর রাঁধুনিদের জন্য। ১২ ডিসেম্বর ২০১২ সালে শুরু হয়েছিল এর পথচলা। ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ জন সাবক্রাইবার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কিছুটা বৈচিত্র্যপূর্ণ রেসিপি, টিপস ও ফিউশন দেখা যায় এর ভিডিও কনটেন্টগুলোতে। চ্যানেলটি খুঁজে পেতে সার্চ করুনwww.youtube.com/user/SeriousEats অ্যাড্রেসটি।
রান্নাবিষয়ক কিছু বাংলাদেশি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। যেমন- ‘কুকিং চ্যানেল বিডি’। এটি এমন এক চ্যানেল, যাতে পাবেন সব ধরনের রেসিপি। তবে এখানে সাব-কন্টিনেন্টাল রেসিপিগুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। টিপিক্যাল কিংবা ট্র্যাডিশনাল- উভয় ধরনের রেসিপি ঠাঁই পেয়েছে কুকিং চ্যানেল বিডিতে। এটি আসে ২৮ নভেম্বর ২০১৬ সালে। বর্তমানে এর সাবস্ক্রাইবার ৫৩ হাজার ৪০৩ জন। চ্যানেলটি খুঁজে পেতে সার্চ বারে লিখুন www.youtube.com/channel/UCjbbmv0jDiwGyAHFVHz3X0Q ।
‘কুকিং স্টুডিও অব উম্মে’ নামের আরেকটি বাংলাদেশি চ্যানেল চালু রয়েছে, ৭ আগস্ট ২০১৫ সাল থেকে। বর্তমানে এর সাবস্ক্রাইবার ৭ লাখ ৪১ হাজার ৭৪২ জন। এখানে খুব সহজ পদ্ধতিতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রেসিপিগুলো শিখে নেওয়া যায়।
লিংক:www.youtube.com/channel/UCYtF9WkDFA6kEeyulEh3Ynw ।এগুলো ছাড়াও ইউটিউব জুড়ে ঘুরছে আরও অনেক রান্নাবিষয়ক চ্যানেল। একজন দক্ষ রাঁধুনি হয়ে উঠতে চাইলে পছন্দসই চ্যানেলগুলোর সাবস্ক্রাইবার হতে পারেন।
শিবলী আহমেদ