(প্রসঙ্গ- ট্রি-হাউজ)
উষ্ণায়ন আর নগরায়ণের এই পৃথিবীতে সকলেই কমবেশি চাইছেন প্রকৃতিবিচ্ছিন্নতা থেকে সরে এসে বেশি করে প্রকৃতিনিবিড় হয়ে উঠতে। তাই দৈনন্দিন যাপন বা লাইফস্টাইলকে বেশি করে ইকো-ফ্রেন্ডলি করে তোলার ভাবনা সবারই। এই ভাবনা থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে নিজস্ব বাসাবাড়িকে পুরোপুরি প্রাকৃতিক করার প্রয়াস। যেভাবে সব পাখি ঘরে ফেরে, মানুষও সেভাবেই ঘরে ফিরতে চায়। এবং যন্ত্রসভ্যতার অন্দরে থাকা চলা রণরক্তসফলতার কোনো কোনো মানুষ আজকাল তার ঘরকে দিতে চাইছে পাখির বাসার চেহারা। কিংবা আদ্যিকালে যেভাবে প্রকৃতিমুখর মানবসভ্যতা বৃক্ষযাপন করতো, সেই যৌথবিস্মৃতিকে উস্কে দিয়ে আজকের প্রযুক্তিবিদ্যায় রপ্ত থাকা মানুষ ফের বাস করছেন গাছে। হ্যাঁ, বৃক্ষের কাণ্ড আর শাখার মধ্যে বেড় দিয়ে অনেকেই বানিয়ে ফেলছেন নিজস্ব গাছবাড়ি বা ট্রি-হাউজ। গাছের মধ্যেই গাছের ডাল আর দড়ি, লোহার শিকল কিংবা সামান্য কিছু ইস্পাতের ব্যবহারে গাছের মগডালের মাথায় বসবাসের জায়গা করে নিচ্ছে শহুরে যাপনে ক্লান্ত নাগরিকেরা। আদিম জীবনকে আধুনিকতার সঙ্গে মেলবন্ধন করে তৈরি হচ্ছে গাছবাড়ি।
এতে করে প্রথমত ইট-কংক্রিটের ইমারত বানানোর মতো বিপুল অঙ্কের খরচ পড়ছে না, দ্বিতীয়ত এক গাছবাড়ি থেকে সহজেই স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন গাছে, ফলে মানুষের মধ্যে পাখিভাব তীব্র হয়ে উঠছে, তৃতীয়ত, বিল্ডিং বানানোর জন্য প্রশাসনিক স্তরে যে অনুমতির প্রয়োজন, নির্জনে গাছবাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে সেসব অনুমতি ও কাগজপত্র সংক্রান্ত নিয়মকানুন অনেক শিথিল।
অরণ্যদেবের সেই গাছবাড়ির মতোই বিশ্বের নানা জায়গাতেই গাছবাড়ি বানানোর ধূম লেগেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় এই গাছবাড়ি জনজীবনে খুবই জনপ্রিয় বহুদিন ধরেই। এখন ইউরোপ, আমেরিকা, লাতিন আমেরিকাতেও গাছবাড়ির প্রচলন রয়েছে। জাপানে বহুদিন ধরেই এই ধরনের বাড়ি রয়েছে। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন প্রভৃতি দেশেও গাছবাড়ি জনপ্রিয় এখন। এমনকি উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গাতেও গাছবাড়ি দেখা যাচ্ছে। রিসোর্ট হিসেবে গাছবাড়ি তৈরির উদ্যোগ যেমন চোখে পড়ছে, ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকেই নির্মাণ করছেন গাছবাড়ি।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরেই তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ট্রিহাউজ ত্রি-স্টার রিসোর্ট। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই গাছবাড়িতে থাকলে কংক্রিট-সিমেন্টের হোটেলে থাকতে ইচ্ছে করবে না পর্যটকদের। বাংলাদেশের মানুষের জন্যেও এই ট্রি-হাউজ রিসোর্ট দারুণ আকর্ষণীয়।
ভারতের কেরালা, হিমাচল প্রদেশ থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাতেও রয়েছে অজস্র ট্রি-হাউজ। পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতন সংলগ্ন এলাকাতেও বেশ কিছু শিল্পী, সাহিত্যিক, গবেষক ও অধ্যাপক ট্রি-হাউজ বানিয়ে থাকছেন। সব মিলিয়ে ট্রি-হাউজ আগামী পৃথিবীর মানুষের বিকল্প বাসস্থান হিসেবে জনপ্রিয় হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
I অতনু সিংহ