ত্বকচর্চা I ক্লাউডলেস স্কিন
গ্লাস, মোচি আর হানি স্কিনের পর সৌন্দর্যে কোরিয়ানদের সাম্প্রতিক সংযোজন এটি। মেঘমুক্ত আকাশের মতো ঝকঝকে, উজ্জ্বল আর স্বচ্ছ ত্বকের জন্য
শিশুদের ত্বকের মতোই ক্লাউডলেস স্কিন। লোমকূপমুক্ত, নিখুঁত। দাগছোপের বালাই নেই। ত্বকের সব জায়গা সমানভাবে সুন্দর আর উজ্জ্বল। সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় কে-বিউটি ট্রেন্ড গ্লাস বা হানি স্কিনের মতো আর্দ্র আর চকচকে উজ্জ্বল ভাব নয়, ক্লাউডলেস স্কিনের মূলমন্ত্র ত্বকের সম্পূর্ণ সুস্থতা অর্জন। নিষ্প্রভতাকে সামলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখানো। যদিও তা রাতারাতি সম্ভব নয়। শুধু নিয়মমাফিক ত্বকচর্চা দিয়েও দুরূহ। খাবার, ঘুমসহ দৈনন্দিন জীবনধারার সঠিক দেখভালও দরকার পারফেক্ট ক্লাউডলেস স্কিনের জন্য।
ভিত্তি গড়ুক ভেতর থেকে
বাইরে যতই ঘষামাজা করা হোক, সৌন্দর্যের শুরুটা কিন্তু শরীরের ভেতর থেকে। ক্লাউডলেস স্কিনের বেলায় কথাটা আরও বেশি খাটে। তাই খাবারের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। তালিকায় থাকতে হবে প্রচুর পরিমাণে ফল আর শাকসবজির সুষম অনুপাত। উচ্চমাত্রার লবণ, চিনি আর দুধমিশ্রিত খাবার একদম এড়িয়ে যাওয়া উচিত। তালিকা থেকে বাদ পড়বে প্রোসেসড আর জাঙ্ক ফুডও। ক্লাউডলেস স্কিন পেতে চাইলে অ্যালকোহল আর ক্যাফেইনের দিকেও হাত বাড়ানো যাবে না। কারণ, এগুলো রক্তনালি সংকুচিত করে দেয়। ফলে শরীরজুড়ে পুষ্টি আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। শুষ্ক ও অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ে ত্বক। পানিও পান করতে হবে প্রচুর পরিমাণে। ভেতর থেকে আর্দ্র থাকবে ত্বক। দেখাবে দাগমুক্ত, পরিষ্কার। দুশ্চিন্তা করা যাবে না কোনো কারণেই। এতে করে ত্বকে কোর্টিসল নামক হরমোনের উৎপাদন বাড়ে; যা তৈলাক্ততা বাড়ায়, ব্রণের প্রকোপও। তাই দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকা চাই। তা ব্যায়াম বা ইয়োগা যে পন্থা অবলম্বনেই হোক। সেই সঙ্গে দরকার সাত থেকে নয় ঘণ্টার টানা ঘুম। নিয়মিত ভালো বিউটি স্লিপের বদৌলতে ত্বক তারুণ্যজ্জ্বল হয়ে উঠতে বাধ্য।
ত্বকের বাহ্যিক পরিচর্যায়
নিষ্প্রভতা, বন্ধ লোমকূপ, জ্বালাপোড়া আর পরিবেশজনিত ক্ষতি সারাতে ত্বকের ধারাবাহিক দেখভাল দরকার। রাতারাতি এগুলো সারানো একেবারেই অসম্ভব। এ জন্য চাই বিশেষ রূপ রুটিন এবং তার নিয়মমাফিক চর্চা। ক্লাউডলেস স্কিন পেতে শুরু করা চাই ক্লিনজিং দিয়ে। ধুলা, দূষণ, মেকআপ- সব দূর করতে এটা অব্যর্থ। রাতে আর দিনে দুবার ত্বক পরিষ্কার করতে হবে নিয়ম করে। ডাবল ক্লিনজিং পদ্ধতিতে। অর্থাৎ প্রথমে মাইসেলার ওয়াটার কিংবা অয়েল বেসড ক্লিনজার দিয়ে ত্বকের ময়লাগুলো আলগা করে নিতে হবে। তারপর ফেশিয়াল ফোম বা ফেসওয়াশ দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এতে করে ময়লার শেষ ছিটেফোঁটাটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে ত্বক থেকে। ত্বক পরিষ্কারের পরপরই জরুরি টোনারের ব্যবহার। অ্যালকোহল ফ্রি, ভিটামিন সি যুক্ত টোনার ত্বকের দূষণ দূর করে, ত্বকরঙে ফিরিয়ে দেয় হারানো সজীবতা। এক্সফোলিয়েটিং টোনার লোমকূপগুলো পরিষ্কার রাখে, দেয় অভিন্ন ত্বকরঙ। এই টোনারগুলোতে উপাদান হিসেবে থাকে উইচ হেজেল, উইলো বার্ক আর বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড। কোরিয়ান ত্বকযত্নের রুটিনে এসেন্সের ব্যবহার অপরিহার্য। ক্লাউডলেস স্কিন পেতে টোনিংয়ের পরপরই তাই এসেন্স মেখে নেওয়ার পালা। তা বাড়তি পুষ্টি আর আর্দ্রতার জোগান দেবে। এসেন্সের পর সেরাম মেখে নিতে হবে। ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন অনুসারে এটি বেছে নিতে হয়। হাই কনসেনট্রেটেড রেটিনলযুক্ত এন্টি-এজিং সেরাম বলিরেখাময় ত্বকের যত্নে বেশি উপযোগী। আর যদি দাগছোপ দূরীকরণে ব্যবহার করতে হয়, সে ক্ষেত্রে রেটিনয়েডযুক্ত কারেক্টিং এবং ইলিউমিনেটিং সেরাম কাজ করবে কার্যকরভাবে। এরপর জরুরি আর্দ্রতা জোগানোর পালা। হায়ালুরনিক অ্যাসিডযুক্ত ময়শ্চারাইজারগুলো এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। এগুলো ত্বকের গভীরে আর্দ্রতা পৌঁছে দেয়। তা ধরে রাখে দীর্ঘ সময়ের জন্য। ফলে ক্লাউডলেস স্কিন পেতে এর চেয়ে চমৎকার অপশন আর হয় না। রোজকার পরিচর্যায় ত্বক সুরক্ষাটাও খুব জরুরি। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন ব্রড স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। যা একই সঙ্গে ইউভি এ এবং ইউভি বি থেকে রক্ষা করবে। বাড়তে দেবে না দাগছোপ, বলিরেখাসহ বয়সজনিত সমস্যাগুলো। ত্বক থাকবে নিখুঁত।
ক্লাউডলেস স্কিনের জন্য প্রতিদিনকার পরিচর্যায় এগুলো যথেষ্ট। তবে সঙ্গে দরকার হবে কিছু বাড়তি যত্নআত্তি। এক্সফোলিয়েশন এগুলোর একটি। কারণ, মৃতকোষ জমতে শুরু করলে ত্বক এমনিতেই নিষ্প্রাণ দেখায়। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে তিনবার নিয়ম করে এক্সফোলিয়েশন ত্বককে রাখবে মৃতকোষমুক্ত, মসৃণ ও দাগছোপহীন। সপ্তাহে তিন দিন ফেস মাস্কও ব্যবহার করতে হবে নিয়ম করে। এতে ক্লান্ত ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় পরিপুষ্টি। পিউরিফায়িং ক্লে মাস্ক ডিটক্সিফাই করে। ফলে দূষণ দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। পিওর ক্লে মাস্ক ত্বকের মসৃণতা বাড়ায়, দূর করে অতিরিক্ত তৈলাক্ততা। বাড়তে দেয় না ব্রণ। মাল্টিমাস্কিং পদ্ধতিতেও যত্ন নেওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের একেক অংশের প্রয়োজন অনুসারে মাস্ক ব্যবহার করা হয়। যা মিটিয়ে দেয় ত্বকের চাহিদা। ক্লাউডলেস স্কিনের মতো উজ্জ্বলতা পেতে সাহায্য করে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন