ই-শপ I ক-বাঙাল
নিজের একটা আলাদা পরিচয় আর অন্যের জন্য কিছু গড়ে তোলার তাগিদেই ক-বাঙালের ভাবনার উৎপত্তি। এই ই-শপের দুই স্বত্বাধিকারী আরাত জাহান লিজা এবং উত্তম কুমার দাশ প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছেন একে অন্যকে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে নিজের মাথায় জমতে থাকা কিছু হতাশাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ক-বাঙালের জন্ম। অরিগ্যামির প্রতি আগ্রহ থেকে হাতে তৈরি গয়না নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে জাগে লিজার। তাই এক-দেড় মাসে আনুষঙ্গিক সব কাজ ও পরিকল্পনা সেরে নেন দুজনে।
লিজা প্রাথমিকভাবে গয়নার এক্সপেরিমেন্ট চালান কাছের বান্ধবীদের গয়নার ওপর। আর আঁকিবুঁকির ক্যানভাস হিসেবে গয়নাকে বেছে নিয়ে নিজের জন্য তৈরি করতেন অনেক ধরনের অলংকার। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরির এবং অনলাইনে এগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা জোগান উত্তম। ক-বাঙাল নামটাও তারই দেওয়া। এ ছাড়া তাদের পরিচিত অনেক ক্রাফটারও এগিয়ে আসেন অনুপ্রেরণা জোগাতে। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি থেকে ই-শপ হিসেবে অফিশিয়ালি যাত্রা শুরু করে ক-বাঙাল।
ছোটবেলায় পয়লা বৈশাখ এলেই লিজার মা রঙবেরঙের মাটির গয়না কিংবা কাঠ-পুঁতির মালা দিয়ে সাজিয়ে তুলতেন তাকে। সেই থেকে এসবের প্রতি তার অন্য রকম মায়া জন্মে। তাই নিজের পেজের জন্যও এমন ধরনের উপকরণ খুঁজতে শুরু করেন তিনি। এগুলোর প্রতি মমতার কারণেই বাংলাদেশ ও কলকাতার রঙ এবং ঐতিহ্যর ধাঁচে তৈরি করেন কিছু পণ্য। ক-বাঙালের প্রায় সব গয়নাই ট্র্যাডিশনাল ধাঁচের। উপকরণের দিক থেকে কাঠ, রঙ, পুঁতি, কড়ি, মাটি, সুতা, জার্মান সিলভার ইত্যাদির আধিপত্য বেশি।
লিজা বলেন, ‘বেশির ভাগ গয়না নিজ হাতে তৈরি। যেখানে আলাদা একটা মমতা এবং দুই বাংলার ভালোবাসা সুতায় গেঁথে রাখতে পারি। তাই ক্ষুদ্র হলেও ক-বাঙাল আমাদের কাছে নিজ সন্তানের মতো’।
ব্যবসায়িক ভাবনার চেয়ে ঐতিহ্য সংস্কৃতি বা যা কিছু ভালোবেসে বড় হওয়া তার পৃষ্ঠপোষক হিসেবেই ক-বাঙালকে দেখতে চান লিজা ও উত্তম। তাই পণ্যের দরদাম যথাসম্ভব হতের নাগালে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে এই পেজে। মূলত কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রী কিংবা চাকরিজীবী নারীদের মধ্যে এসব গয়নার চাহিদা বেশি। তাই সব প্রডাক্ট পাওয়া যাবে ১০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই। এ ছাড়া সব সময় ব্যবহারের জন্য কিংবা একেবারেই সাধ্যের মধ্যে রাখার জন্য একটা আলাদা অ্যালবাম পাবেন, যাতে সব গয়নার দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। হাতে তৈরি পণ্যের ক্ষেত্রে পরিশ্রমের কথা মাথায় রেখে দাম পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পেজটির ফেসবুক লিঙ্ক: www.facebook.com/ক-বাঙাল-২৪৫৪৭৪৬১৯২৩৮৯৪৮/
ক-বাঙাল নিয়ে লিজা আর উত্তমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খানিকটা অন্য রকম। এই পেজ থেকে উপার্জিত অর্থের কিছুটা অংশ তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দিয়ে সাহায্য করতে চান। ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় কিংবা তাদের পরিচিত অনেক ক্রাফটারই এই উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পান লিজা। গ্রামের বাড়ি সিলেটে হওয়ায় শুরু করতে চান সেখান থেকেই। সিলেটের কোনো একটা সংগঠনের সাহ্যায্য পেলেই শুরু করবেন এই কাজ। অবশ্য ইতিমধ্যেই এমন কিছু শিশুকে ছোটখাটো প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেওয়া শুরু করেছেন তারা। আউটলেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে উত্তম বলেন, ‘খুব অতিথিপরায়ণ আর মায়াময় একটা পরিবেশে ক-বাঙালকে নিয়ে পসরা সাজানোর ইচ্ছা আছে।’
ইতিমধ্যে পেজটির সাড়ে চার হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। এর রিভিউ ঘুরে এলেও সন্তুষ্ট হবেন আপনি। এই ই-শপের গয়নার ডিজাইনগুলো ভিন্ন ধরনের। তাই এগুলো নজর কাড়তে পারে সব বয়সের নারীদের। ভার্সিটি কিংবা অফিস- সবখানেই মানিয়ে নেওয়ার মতো কিছু গয়না মিলবে এখানে। বন্ধুদের উপহার সিলেক্ট করতে যাদের অনেক ঝক্কিতে পড়তে হয়, তারা ঘুরে দেখতে পারেন পেজটি।
শিরীন অন্যা
ছবি: ক-বাঙাল