ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I স্প্রিং-সামার ২০১৯
এ মৌসুম সৃজিত ফ্যাশনের সৌকর্য উপস্থাপনার। ডিজাইনাররা যা ভাবেন তা কাপড়ের ক্যানভাসে মূর্ত করে তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর সামনে। তাই তো ফি বছর এই সময়টা সরগরম থাকে ফ্যাশন ক্যাপিটালগুলো। নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন আর মিলান হয়ে প্যারিস। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। পাশাপাশি অন্য শহরগুলোও জমে ওঠে আয়োজনের সৌন্দর্যে
এই লেখা আপনাদের হাতে পৌঁছানোর আগেই পারির সপ্তাহ শেষ হয়ে যাবে। সেটা এযাত্রায় আপনাদের জানানো যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যে পর্দা নামা নিউইয়র্ক, লন্ডন আর মিলানের ইতিবৃত্ত শোনানো যেতে পারে। বসন্ত আসতে ঢের বাকি। তার পরে না সামার। তবে ডিজাইনাররা ছয় মাস আগেই তাদের ঝাঁপি উপুড় করে দেন, যাতে আপনার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে থাকে। যদিও ডিজিটাল জমানায় জেটসেট গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে হয় ভুবনগ্রামের বাসিন্দাদের। ফলে এত আগে অনেক ডিজাইনারই তাদের হাতের তাস দেখাতে রাজি নয়। এ জন্যই আলেকজান্ডার ওয়াঙ আর রোজি আসোলিন এই সময়ে তাদের সংগ্রহ উপস্থাপন থেকে বিরত থেকেছেন। বরং বলে দিয়েছেন, তারা জুনে দেখাবেন তাদের ভেল্কি। ফলে নিউইয়র্ক এবার তাদের পায়নি। পায়নি পাবলিক স্কুল আর হেলমুট লাঙকেও। তারা বিশ্রাম নিয়েছেন।
১০ বছর আগে নিউইয়র্কে হাজির হয়েছিলেন পশ স্পাইস ভিক্টোরিয়া বেকহাম। স্বামীর হাত ধরে। কারণ, জাতীয় দল ছাড়ার পর ডেভিড বেকহাম তখন খেলছেন সেখানে। তত দিনে রীতিমতো ডিজাইনার হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন তিনি। এরপর ফি বছর নতুন কাজ দিয়ে বিশ্ববাসীর মন জয় করেছেন। অবশ্য অনেক তো হলো পরবাসে। তাই ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছেন। এবার আর নিউইয়র্ক নয়, লন্ডনই হবে সাবেক পশ গার্লের ঠিকানা। অন্যদিকে, প্রোয়েঞ্জা শুলার আর রোডার্টের প্রত্যাবর্তন সূচিত হয়েছে। আর মহীরুহ র্যালফ লরাঁ এবার উদ্যাপন করলেন ফ্যাশন সাম্রাজ্য বিস্তারের স্বর্ণজয়ন্তী। পাশাপাশি আলোচনা করা যাক উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপস্থাপনা নিয়ে।
শতাধিক শো হয়েছে। ছিল একজিবিশন। এগুলো সবই যে নজর কেড়েছে তা নয়। নতুন যেমন চমক দিয়েছেন, তেমনি পুরোনোরা নিজেদেরও স্বমহিমায় ভাস্বর রাখতে চেষ্টার কসুর করেননি। এবারের নিউইয়র্ক জমজমাট ছিল আমেরিকার রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধতা প্রকাশে। সেটা ডিজাইনাররা স্পষ্ট এবং জোরালোভাবে জানান দিয়েছেন। উপরন্তু তাদের সংগ্রহের মাধ্যমে আমেরিকান জাতীয়তাবাদ নয়, বরং বিবিধের মাঝে মহান মিলনের বার্তা শুনিয়েছেন। তাতে ট্রাম্প প্রশাসনের কী ভাবান্তর হয়েছে বা হবে, তা আমাদের অবশ্য জানা নেই।
ডিজাইনার এবার ফ্যাশনকে কেবল আভিজাত্যের ঘেরাটোপে আবদ্ধ না রেখে অন্তর্ভুক্ত করেছেন সমাজের নানাজনকে। এমনকি ব্রাত্যরা রয়েছে এই তালিকায়। ফলে নারী, পুরুষ, তৃতীয় লিঙ্গ থেকে অন্তঃসত্ত্বা, প্রতিবন্ধী মায় পৃথুলা- সব ধরনের মডেলকে এবার র্যাম্পে দেখা গেছে।
মাইকেল করস আমাদের নিয়ে যায় সৈকত থেকে সান্ধ্যভোজে। তার পোশাকে উপস্থিত ফুল থেকে জলজ উপকরণসহ বন্য প্রাণীরাও। কোচ নাইনটিন ফোর্টিওয়ান নানা কিছুর নিরীক্ষায় সাজিয়েছে তাদের কালেকশন। ডাইনোসর থেকে ডিজনির উপাদান- সবই আছে। টম ফোর্ড আবার হয়েছেন অতীতাশ্রয়ী। স্মৃতির প্রেরণায় তৈরি পোশাকে তিনি পরিধানকারীকে এমপাওয়ার করার প্রয়াস পেয়েছেন। মার্ক জেকবস ছিলেন এক্সট্রাভ্যাগান্ট।
তবে যে কালেকশন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, সেটা রিহানার স্যাভেজ এক্স ফেন্টি। লঞ্জরি লাইন। অন্তর্বাস সংগ্রহের উপস্থাপনায় এভাবেও যে ভাবা যায়, তা বোধ হয় তার পক্ষেই সম্ভব। নৃত্যশিল্পী থেকে অন্তঃসত্ত্বা- ব্যবহার করেছেন নানা ধরনের মডেল। এটাই তার নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে অভিষেক। এই শো দিয়েই অবশ্য পর্দা নেমেছে আসরের।
যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তথৈবচ। ব্রেক্সিট নিয়ে কোনো সমাধানে এখনো উপনীত হতে পারা যায়নি। কেবলই চলছে উতর চাপান। ফলে ডিজাইনাররা এই দমবন্ধ পরিস্থিতিতে নিজেদের সেরাটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এরডেম, সিমোন রোচা, মেরি কাটরানজাউদের সঙ্গে নবাগত রিচার্ড কুইন মুগ্ধ করেছেন তাদের কালেকশনে। মলি গর্ডাডের সামার কালেকশন নজরকাড়া। জে ডব্লিউ অ্যান্ডারসনের পরিধানযোগ্যতা পাশাপাশি বোহেমিয়ান আভিজাত্য অন্যতর মাত্রা দিয়েছে। রিচার্ড টিসিও আভিজাত্যের সৌন্দর্য ছড়িয়েছেন। আর তাতে বারবেরির অভিষেকটা হয়েছে জম্পেশ। প্রথমবারের মতো ঘরের মেয়ে ভিক্টোরিয়া বেকহাম লন্ডনে তার কালেকশন উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে দশম বার্ষিকী উদ্যাপন করেছেন। আর ক্রিস্টোফার কেইন অবশ্য উসকে দিয়েছেন আদি রস।
গুচি আর বোত্তেগা ভেনেতা এবার মিলানে অনুপস্থিত। গুচির পরিবর্তে উপস্থিত ছিলেন প্যারিস। আর ভেনেতার সূচি ভিন্ন। তা সত্ত্বেও উদ্বেল হওয়ার মতো বিষয় ঘটেছে। ভারসাচিতে শালোম হারলো ফিরিয়ে নিয়েছে নব্বই দশকে। ফুলেল ছাপে র্যাপ আর ড্রেপে তার কালেকশন অনবদ্য। ইভা হারজিগোভা, কার্লা ব্রুনি আর ডলশে অ্যান্ড গ্যাবানার মারপেসা সবাইকে আত্মহারা হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবে সপ্তাহের সেরা আকর্ষণ অবশ্যই ছল ফ্রানসেসকো রিসোর মারনি শো। ফিউশন কালেকশন ভাবিয়েছে অন্যভাবে। দ্য এত্রো আর মিসোনি। এত্রোর প্রিন্ট আর মিসোনির লেয়ার উল্লেখ করার মতো বিষয়। হতাশ হতে হয়নি প্রাদার বারমুডা শর্টস আর স্কুপড বডিস্যুটে।
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: ইন্টারনেট