ইভেন্ট I নগরে ঐতিহ্যের হাট
রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ২-এর ৭১ নম্বর রোডের ১বি বাসাটি দুই দিনের জন্য পরিণত হয় গ্রামীণ মেলায়। পিঠা থেকে শুরু করে হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী নানা সামগ্রী নিয়ে। নগরবাসীকে বাংলাদেশের লোকজ নানা পণ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এর আয়োজন করে বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফট ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠিত হয় ৫ ও ৬ অক্টোবর। উদ্বোধন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকিয়া আফজাল রহমান। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম, মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত অতীশ শান সাকির, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত হোয়াও তাবায়ারা অলিভেরা জুনিয়র, ইন্টারন্যাশনাল হেরিটেজ ক্র্যাফট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট স্যান্ড্রা এস্টেভেস তাবায়ারা প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে রোকিয়া আফজাল রহমান বলেন, ‘আমার খুব ভালো লাগছে যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উদ্যোক্তারা তাদের তৈরি করা পণ্য এখানে নিয়ে এসেছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে আরও বেশি এই ধরনের উৎসব আয়োজন করা হবে।’ বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফট ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট তুতলী রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত হোয়াও তাবায়ারা অলিভেরা জুনিয়র বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এ ধরনের ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করা প্রয়োজন। এতে একটি দেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। তাই আমি বলবো, ভবিষ্যতে এ ধরনের ফেস্টিভ্যালে আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা থাকবে।’ সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম বলেন, ‘আজকের এই আয়োজন দেখে সত্যি আমি মুগ্ধ হয়েছি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কারু ও লোকশিল্পকে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই যেমন পাট চাষ ও পাটশিল্প। এর সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িত। স্বাধীনতার পরও দেড় যুগ ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অবদানই ছিল মুখ্য।’
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের নানা ধরনের প্রায় অর্ধশত পণ্য প্রদর্শনীতে স্থান পায়। এগুলোর মধ্যে স্থান পায় তাঁতপণ্য, যেমন- জামদানি, তাঁতের শাড়ি, বিভিন্ন পাটজাত পণ্য, নকশিকাঁথা, পোড়ামাটি, কাঠ ও বাঁশের তৈরি পণ্য। বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির অংশ হিসেবে কারুপণ্য এবং এর দৈনন্দিন ব্যবহার দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এই প্রদর্শনীতে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে হেরিটেজ হাটে অংশ নেয় গ্রিনফিল্ড জুটেক্স লিমিটেড, এএসকে হ্যান্ডিক্রাফট, অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টস, বাই-দেশি, ওয়ান কালচার, কল্পরূপ, ফারজানা মালিক ডিজাইন, জেএস ফ্যাশন, জেড অ্যান্ড জেড কালেকশনস, মুনস বুটিক, এথেনা ফার্নিচার, আর্টিসান প্রভৃতি। এ ছাড়া মরক্কো, ইথিওপিয়া, ইতালি, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, জর্ডান, জাপান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মিসর, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, গ্রিস, থাইল্যান্ড, চীন ও রাশিয়ার পণ্য এই উৎসবে প্রদর্শিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী।
আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, গুলশান সোসাইটির প্রেসিডেন্ট শাখাওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদ, সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ। উৎসব প্রসঙ্গে তুতলী রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যকে জনপ্রিয় করে তোলাই বাংলাদেশ হেরিটেজ ক্র্যাফট ফাউন্ডেশনের মূল উদ্দেশ্য। প্রথমবারের মতো এই উৎসবের আয়োজন করেছি আমরা। আমাদের ইচ্ছে, প্রতি তিন মাস পর এই রকম ছোট পরিসরে এবং বছরে একবার বড় পরিসরে উৎসব আয়োজন করব। এবারের এই আয়োজন আমরা একেবারে নিজেদের উদ্যোগেই করেছি। কারও কোনো সহযোগিতা নেওয়া হয়নি। যতটা আশা ছিল, তার থেকে বেশি সাড়া পেয়েছি।’
স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: ক্যানভাস