ফিচার I ‘বি’তে ব্লান্ডার
সামান্য ভুলচুক থেকে বিয়ের দিনটাই অপ্রীতিকর হয়ে যেতে পারে। সে জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকা চাই। সতর্কতাও নয় কম জরুরি
ভাবুন তো! যেকোনো বড় ইভেন্টের আগেই ত্বকের কোনো একটা ত্রুটি বেরিয়ে আসার প্রবণতা যদি আপনার বিয়ের দিনেও পিছু না ছাড়ে? যা-ই হোক না কেন, নিজের বিয়েতে কোনো বিউটি ব্লান্ডার তো আর সহজভাবে মেনে নেওয়া যায় না!
কনের কাছে মানসিক চাপের অজস্র উৎসের একটি হলো বিয়ের দিনে তার লুক। নিজের বিয়েতে সবচেয়ে সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে কে না চায়! এখানে তার মানসিক সন্তুষ্টিও জড়িত। সবাই চায় সবকিছু হোক ‘পিকচার পারফেক্ট’ আর এই আকাক্সক্ষা পূরণের চেষ্টায় কিছু বাদ পড়ে গেলেই তা থেকে হতে পারে বিশাল গড়বড়। তাই সবকিছুতে নিবিড়ভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
ত্বক
বিয়ের শখানেক কাজের দুশ্চিন্তা হেতু মুখশ্রী মøান হয়ে যেতে পারে। রাতে ঘুম না হলে কিংবা সারা দিন বাইরে ঘুরে শপিং করলে ক্লান্তির ছাপ তো পড়বেই। পাশাপাশি সানট্যান তো আছে। আর এখনকার অস্বাভাবিক ধুলো-ময়লায় পিম্পল কিংবা র্যাশ হয়ে পড়ে নিত্যসঙ্গী। কসমেটিকস থেকেও হতে পারে স্পট। কিংবা বারবার পরিষ্কার করার ফলে ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতাও দেখা যেতে পারে। ত্বকের এত সমস্যা ঢাকতে কিংবা কার্যকর ফিনিশ দিতে যেকোনো ব্র্যান্ডের মেকআপই হবে ব্যর্থ। তাই ব্যবস্থা নিতে হবে কয়েক মাস আগে থেকেই। প্রথমত, ত্বকের সুস্থতা ও উজ্জ্বলতা। দ্বিতীয়ত, যে আউটফিট পরবেন, তা যেন হয় আপনার স্কিনটোনের সঙ্গে মানানসই এবং ত্বকবান্ধব।
ত্বক সুস্থ রাখতে এর বিশেষ যত্ন নিন। এ সময় যথেষ্ট পানি খেতে হবে। রাতে পরিমিত ঘুমান। ঘুমানোর আগে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। যদি ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা থাকে, তবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার করুন। রাতে চেষ্টা করুন ভালো ব্র্যান্ডের সিরাম ব্যবহার করতে। অয়েল বেসড সিরামগুলো ত্বককে হাইড্রেটেড এবং মসৃণ করে। রোধ করে ব্রণ, অ্যাকনে ও পিম্পল। ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখার জন্য বিয়ের কয়েক মাস আগে থেকেই উন্নত মানের বিউটি স্যালনে বিভিন্ন ধরনের ব্রাইডাল প্যাকেজ থাকে। সেগুলোর খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
চুল
বিয়ের সময় মেয়েদের চুলের উপর দিয়ে বেশ ঝড়ঝাপটা যায়। হেয়ার স্প্রে কিংবা বিচিত্র স্টাইলিং, পরচুলা বা শখানেক ববি পিন- সবকিছুর জন্য যদি চুল প্রস্তুতই না থাকে, তাহলে বিয়ের দিন তাতে যে লুকটা চাচ্ছেন, সেটি মাথায় জেঁকে বসতে পারে বিশাল এক ব্লান্ডার রূপে। তাই নিজের অনেক দিনের ভেবে রাখা লুকটা যেন তৈরি করতে পারেন, সে জন্য চুলকে আগে থেকেই প্রস্তুত করে তুলতে হবে। বিয়ের এক-দেড় মাস আগে থেকেই শুরু করুন কেশচর্চা। খুব বেশি কেমিক্যাল প্রডাক্টের দিকে না গিয়ে ঘরের জিনিস দিয়েই বানিয়ে নিতে পারেন হেয়ারপ্যাক। চুল মজবুত করতে ব্যবহার করতে পারেন ডিম, মুলতানি মাটি আর বাদাম তেলে তৈরি প্যাক। ২টি ডিমের সাদা অংশ ব্লেন্ড করে তাতে ২ চামচ বাদাম তেল চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মুলতানি মাটি মিশিয়ে চুলে মাখিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিন। এ ছাড়া ব্রাউন সুগার আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে লাগাতে পারেন চুলে। চুল চকচকে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন অ্যাভোকাডো অলিভ অয়েলের মিশ্রণ। বিয়ের দিন চুল যেন নিজের জায়গায় ঠিকভাবে আটকে থাকে, সে জন্য নারকেল তেল আর পানির মিশ্রণ স্প্রে করে নিতে পারেন। এতে অনুষ্ঠানের পর স্প্রে করা চুল খুলতে খানিকটা সুবিধা হবে। প্রচুর সবুজ শাকসবজি আর ফলমূল নিজের ডায়েট লিস্টে যোগ করে নিন আগে থেকেই। যদি কোনো বিশেষ কাট দিতে চান, তা ২-৩ সপ্তাহ আগেই নিন। কারণ, চুল সেট হতে সময় নেবে। আর চুলের আগা ফাটা থাকলে তা অবশ্যই ছেঁটে নিন। পার্লারে যাওয়ার আগে খেয়াল করুন কোনো হেয়ার অ্যাকসেসরিজ পরার থাকলে তা নিয়েছেন কি না। পারলে বিকল্প কিছু রাখুন সঙ্গে।
নখ
বিয়ের দিন প্রায় সবার দৃষ্টি থাকবে আপনার হাতের দিকে। মানে, বাগদানের আংটি তো দেখতে চাইবে। যদি আপনার হাতে প্রপার মেনিকিওর করা না থাকে কিংবা অসমান নখ থাকে, তবে হবে খুবই দৃষ্টিকটু। তাই আগেভাগেই মেনিকিওরের অংশটা সেরে নিন। নখে নেইলপেইন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই বেইজ কোট এবং টপ কোট ব্যবহার করুন।
পারফিউম
বিয়ের সময় হালকা পারফিউম ব্যবহার করুন। খুব বেশি পারফিউম না দিয়ে কিছু সঠিক জায়গায় সেটি স্প্রে করুন। ছড়িয়ে দিন কবজি, গলা এবং আরও কিছু পালস পয়েন্টে। এই জায়গাগুলো সবচেয়ে বেশি হিট নির্গত করে, যার কারণে সুগন্ধি ছড়াবে বেশি। থাকবেও অনেকক্ষণ। এ ছাড়া চুলেও খানিকটা স্প্রে করে নিতে পারেন, এতে পারফিউমের সুবাস বেশি ছড়াবে। কিন্তু খুব বেশি লাগালে চুলের ক্ষতি হতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিয়ের দিনের জন্য কোনো বিশেষ পারফিউম বেছে নিতে পারেন। হয়তো আপনাদের প্রথম ডেটে যে পারফিউম ব্যবহার করেছিলেন সেটা, কিংবা আপনার পাশের মানুষ উপহার দিয়েছিল বিশেষ কোনো দিনে, এমন কোনো পারফিউমও লাগিয়ে নিতে পারেন।
মেকআপ
বিয়েতে সবচেয়ে জরুরি হলো মেকআপের ব্লান্ডার এড়ানো। কেননা মুখত্বক ও চোখের সৌন্দর্য সৃষ্টিতে ভুলত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। ত্বক সুস্থ থাকলে মেকআপ খুব সুন্দরভাবে বসে যায়। যাদের বিয়ে গরমের মৌসুমে, তাদের জন্য এই ব্লান্ডারের ভয় আরও বেশি। তবে শীতকালের কনেরা যে বেঁচে গেলেন, তা নয়। মেকআপ গলে যায় শুধু ঘামের কারণে নয়, স্কিনের ন্যাচারাল অয়েলও এর একটি বড় কারণ। তাই বিয়ের এক মাস আগে থেকেই প্রতিদিন ক্লে মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া মেকআপের আগে একটা অয়েল কন্ট্রোল ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। প্রাইমার লাগাতে ভুলবেন না। ওষ্ঠরঞ্জনীর ক্ষেত্রে ম্যাট এবং অনেক বেশি সময় থাকে এমন লিপস্টিক ব্যবহার করুন। এগুলো ঠোঁট খুব শুষ্ক করে দেয়। তাই খেয়াল রাখুল আপনার ঠোঁট ময়শ্চারাইজড কি না। মেকআপ খুব চকচকে না চাইলে ফাউন্ডেশন দেওয়ার আগে একটু ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার দিয়ে নিন। তাহলে একটা ম্যাট ফিনিশ থাকবে। ফেস অনুযায়ী কনটুর করুন। সবার জন্য গাঢ় কনটুর মানানসই নয়। আইব্রাও প্লাক করে নিন ২ সপ্তাহ আগেই। দেখেবুঝে পছন্দের মেকআপ আর্টিস্ট বুক করে নিন আগে থেকেই। কারণ, ওয়েডিং সিজন হলে শিডিউল পাওয়া মুশকিল।
শিরীন অন্যা
মডেল: আন্নি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: রিলা’স
ছবি: সৈয়দ অয়ন