skip to Main Content

অর্গানিক I অনার্দ্রতায় ঔষধি

বাড়ি পেরিয়ে বাগান, খুব বেশি হলে মোড়ের বাজার কিংবা সামনের সুপারমার্কেট। গেলেই মিলে যাবে শুষ্কতা সারানোর সেরা দাওয়াই। ভেষজ গুণে ভরপুর, শতভাগ প্রাকৃতিক

ত্বকের শুষ্কতাকে হারাতে সেরা বাজি হতে পারে হার্ব। ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ, এমন সব গাছগাছড়া, যেগুলোর বীজ, ফুল এমনকি পাতা- প্রতিটি অংশ দিয়েই পরিচর্যা সম্ভব। শুষ্ক ত্বকের অস্বস্তি সারাতে দারুণ এগুলো। বাড়তি আর্দ্রতার জোগান দেয়, রাখে সুরক্ষিত। ত্বকের প্রাকৃতিক তেল পুনরুদ্ধার করে স্বাভাবিক সুন্দর করে তোলে। করে তোলে মাখন-মসৃণ, ফুলের পাপড়ির মতো পেলব। তবে বেছে নিতে হবে শুষ্ক ত্বকের জন্য উপযোগী হার্ব। নতুবা হিতে বিপরীত হতে পারে। নিয়ম মেনে নিয়মিত পরিচর্যায় থাকলে ত্বকে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসবেই।
অ্যালোভেরা
ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যরহস্যে যে অ্যালোভেরার উল্লেখ পাওয়া যায়, তা সম্ভবত সবার জানা। আর ঠিক এ জন্যই প্রাচীন মিসরে এই ভেষজটিকে বলা হতো ‘ম্যাজিক হার্ব’। শুধু ইতিহাসের নয়, এ যুগেও অ্যালোভেরার গুণ নিয়ে যথেষ্ট গুণকীর্তন করে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। ৯৫ শতাংশ পানিসমেত এই ভেষজের উপকারিতার শেষ নেই। অ্যালোভেরায় রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আরও রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন ই-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদান। এগুলো শুষ্ক ত্বককে ভেতর থেকে পরিপুষ্ট এবং সুস্থ রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে। ত্বকের কোষের স্বাভাবিক গঠন বজায় রাখে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতার ভারসাম্যে কোনো রকম ঘাটতি হতে দেয় না। শুষ্ক ত্বকে সহজেই বয়সের ছাপ পড়ে। অ্যালোভেরার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গুণ হলো এটি বয়সের ছাপ রোধ করে ত্বককে রাখে তারুণ্যে ভরপুর। ফলে বলিরেখা পড়তে দেয় না। শুষ্ক ত্বকের সর্বাঙ্গীণ সুরক্ষায় এই ভেষজ দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক দারুণ কার্যকর। ব্লেন্ডারে কয়েক টুকরা পাকা পেঁপে, ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরার জেল, সামান্য গোলাপজল আর দুধের সর নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর মুখে আর ঘাড়ে ম্যাসাজ করে নিয়ে রাখতে হবে পনেরো মিনিটের জন্য। এই মিশ্রণ পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই ত্বক হয়ে উঠবে কোমল। তবে অত ঝামেলায় না যেতে চাইলে বাজার থেকে নিয়ে আসুন অ্যালোভেরা জেলের কৌটা। সরাসরি তা-ও ব্যবহার করা যাবে ত্বকে।
ক্যামোমাইল
শুষ্ক ত্বকের যত্নে দারুণ উপকারী এ হার্বে রয়েছে ফ্ল্যাবনয়েড। যা এ ধরনের ত্বকের ফাটা ভাব ও জ্বালাপোড়া রোধ করে। ত্বককে ঢেকে দেয় আর্দ্রতার প্রলেপে। ক্যামোমাইলের নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্ক ত্বকের টেক্সচার এবং ইলাস্টিসিটির উন্নতি হয়। এমনকি ত্বকে বয়সের ছাপ রুখতেও এর জুড়ি নেই। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কার্যকরভাবে বলিরেখা সারায়। ত্বককে পরিবেশগত দূষণ থেকে দূরে রাখে। শুষ্ক ত্বকের পিগমেন্টেশন, দাগছোপ সারাতে ক্যামোমাইলের নির্যাস কাজ করে জাদুর মতো। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে দিন দিন।
ল্যাভেন্ডার
স্কিন টনিক হিসেবে চমৎকার এই ভেষজ। যা শুষ্ক ত্বকে প্রাকৃতিক তেল উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখে। জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিয়ে ত্বককে রাখে কোমল, আর্দ্র ও আকর্ষণীয়। চোখের চারপাশের অংশে শুষ্কতা দূর করে রোধ করে বলিরেখা। এ ছাড়া ল্যাভেন্ডার ত্বকের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে ত্বকে সহজেই অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে। সৌন্দর্য সঞ্চারের পুষ্টিগুণও পৌঁছে যায় ত্বকের গভীরে। ত্বককোষকে পুনরুজ্জীবিত করে। ল্যাভেন্ডারে তৈরি স্কিন টনিক সহজেই তৈরি করে নেওয়া যায় বাসায় বসে। এর মাথার অংশ একটি পাত্রে নিয়ে তাতে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দিতে হবে। এটা কয়েক দিন রেখে দিয়ে তারপর ছেঁকে নিতে হবে। ল্যাভেন্ডার ইনফিউজড টনিক তৈরি করে। ত্বক পরিষ্কার করার পর এই টনিক মেখে নিতে হবে মুখে। নিয়মিত ব্যবহারে শুষ্কতা থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
রোজহিপ সিড
ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত এ ভেষজ শুষ্ক ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় কার্যকর। এটা খসখসে, ম্যাড়ম্যাড়ে ত্বককে আর্দ্রতার আদরে ঢেকে রাখে। নতুন ত্বক কোষ উৎপাদনেও সাহায্য করে। এর ফল থেকে নিষ্কাশিত তেল শুষ্কতার ক্ষতি পুষিয়ে ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। আফটারসান ম্যাসাজ অয়েল হিসেবেও এটি কাজ করে জাদুর মতো। সূর্যের সংস্পর্শে আসার ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতার যে ক্ষতি হয়, তা পুষিয়ে দেয় রোজহিপ সিড অয়েল। কনুই আর হাঁটুর শুষ্কতা সারাতেও উপযোগী এটি। ভিটামিনের দারুণ উৎস এই ভেষজে তৈরি ক্রিম কিংবা লোশন ত্বককে পরিবেশের দূষণ থেকেও রক্ষা করে দীর্ঘ সময়ের জন্য।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: সিম্মি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top