skip to Main Content

পাতে পরিমিতি I তারুণ্যের ডায়েট

বয়স যতই হোক, তারুণ্য ধরে রাখতে কে না চায়! তবে লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাস ঠিক না থাকলে তরুণ বয়সের যে সহজাত গ্ল্যামার, তা ধরে রাখা কঠিন। রইল নিশাত শারমিন নিশির পরামর্শ

স্থূলদেহী মানুষের আধিক্য বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মধ্যবয়সীদের তো বটেই, অনেক তরুণের মাঝেও যে সমস্যা আজকাল বেশি দেখা যায়, তা হলো ওবেসিটি বা স্থূলতা। কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন কখনোই সুস্থতা বয়ে আনে না। বরং ওবেসিটির কারণে ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক অসুবিধা তৈরি হয়। তাই তারুণ্য ধরে রাখতে ফুড হেবিট ও লাইফস্টাইলের সামঞ্জস্য জরুরি। সে ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় যোগ করুন এই সাত খাবার:
স্পিনাচ স্যুপ
স্পিনাচ বা পালংশাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত তিন দিন স্পিনাচ স্যুপ রাখতে পারেন ইভনিং স্ন্যাকস হিসেবে। এটি ক্যানসার প্রতিরোধক। তা ছাড়া অল্পতেই যারা ডিজিনেস বা ফ্যাটিগ ফিল করেন, তাদের ক্ষেত্রে বেশ ভালো কাজ করে। ইমিউনিটি বুস্ট করার পাশাপাশি স্ট্রেন্থ বাড়াতেও কার্যকর এই স্যুপ।
টমেটো স্যুপ
লাল রঙের টমেটো দেখতে যেমন দারুণ, খেতেও সুস্বাদু। মধ্য সকাল কিংবা বিকেলের স্ন্যাকসের পরিবর্তে খাওয়া যেতে পারে টমেটো দিয়ে তৈরি স্যুপ। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা ও পিগমেন্টেশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। টমেটোতে থাকে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, ফোলেট, লাইকোপেন এবং ভিটামিন সি। তা ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি হৃদ্‌পিণ্ড ও হাড়ের সুস্থতায় রাখে কার্যকর ভূমিকা।
ব্ল্যাক অলিভ
সাধারণত পিৎজা, পাস্তা, শর্মা প্রভৃতি খাবারে ব্ল্যাক অলিভের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। অনিয়ন, নাটস, চিজ ও ব্ল্যাক অলিভ দিয়ে স্টাফ তৈরি করে ব্রেডের মধ্যে জুড়ে বানানো যায় মজাদার নানা খাবার। তা শুধু খাবারের ভিন্নতা বা স্বাদ পরিবর্তনের জন্য নয়, এর রয়েছে কিছু হেলথ বেনিফিটও। ব্ল্যাক অলিভে থাকে কপার, ভিটামিন ই এবং কার্যকর ডায়েটারি ফাইবার। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মাসল রিলাক্স রাখে; স্কিন নারিশ ও হাইড্রেট রাখতে কাজে দেয়।
অ্যাভোকাডো
বছর কয়েক আগেও অ্যাভোকাডো আমাদের দেশে সহজলভ্য ছিল না। তবে এখন সুপারশপগুলোতে সহজেই মেলে। ব্রাউন ব্রেডের সঙ্গে বাটারের পরিবর্তে অ্যাভোকাডো পেস্ট খেতে পারেন, যাতে এগ বয়েল বা স্টিম চিকেন স্প্রেড করে তৈরি করা যায় হেলদি ব্রেকফাস্ট। অ্যাভোকাডোতে রয়েছে ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি রক্তের গুড কোলেস্টেরল এইচডিএল বাড়াতে এবং ত্বক মসৃণ রাখতে উপকারী।
সিসেমি অয়েল
ডায়েট নিয়ে সচেতনতা বাড়ার পরও অনেকের মধ্যেই তেল নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়ে গেছে। মনে রাখা চাই, ডায়েট মডিফিকেশনে তেলের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন, কার্বোহাইড্রেট বন্ধ করে অথবা কোনো নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সুস্থ থাকা সম্ভব। অথচ খাদ্যে ব্যবহৃত যে তেল রয়েছে, সেটি হেলদি না হলে তা-ই ট্রান্সফ্যাট তৈরির জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে সিসেমি অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে নানা রেসিপি তৈরি করা যায়। এই তেল গ্রহণে রয়েছে কিছু হেলথ বেনিফিট। এটি ব্যবহারে চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে। এতে থাকা ভিটামিন ই, এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, রিবোফ্লাবিন, নায়াসিন, ফলিক অ্যাসিড, জিংক প্রভৃতি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
ক্যারট জুস
শরীরকে হাইড্রেট রাখতে পানি ও তরলের বিকল্প নেই। খাদ্য তালিকায় তাই রাখা যেতে পারে নানা রকমের জুস। সেটি যদি হয় ক্যারট জুস, সে ক্ষেত্রে ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়বে প্রায় দ্বিগুণ। অরেঞ্জ কালারের ক্যারট বা গাজর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে গ্লো করতে সাহায্য করে। অনেক সময় কম বয়সেও ডার্ক সার্কেল পড়া কিংবা চোখের নিচে কালো স্পট হওয়ার প্রবণতা থাকে। সে ক্ষেত্রে অন্তত এক মাস ধরে প্রতিদিন গাজরের সঙ্গে মাল্টা বা টারমারিক জুস গ্রহণে বেশ উপকার মেলে।
ক্যামোমাইল টি
অনেকেই দিনভর প্রচুর চা বা কফি পান করে থাকেন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিমিত পানই শ্রেয়। ক্যামোমাইল টি হতে পারে বেস্ট অপশন। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনাকে সাহায্য করবে মাসল রিলাক্সেশনে।
চিরসবুজ থাকতে চান যারা, তাদের খাদ্যতালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দেওয়া ভালো:
কোল্ড ড্রিংকস
অতিরিক্ত গরমে এটি অনেকেরই প্রিয় পানীয়। তা ছাড়া দাওয়াত, এমনকি আড্ডায় কোল্ড ড্রিংকস তরুণদের কাছে যেন রীতিমতো ফ্যাশন অনুষঙ্গ! অথচ এতে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ উপকরণ। কোল্ড ড্রিংকস হাড়ের দুর্বলতা, এমনকি ওবেসিটির অন্যতম কারণ। তাই এর পরিবর্তে ন্যাচারাল কোনো পানীয় গ্রহণ করা উত্তম।
জাঙ্ক ফুড
অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড রক্তের এলডিএল ও কোলেস্টেরল অনিয়ন্ত্রিত করে ফেলে। তা ছাড়া এতে থাকা প্রচুর লবণ রক্তচাপ বাড়ানোর পাশাপাশি মানসিকভাবেও উত্তেজিত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই যারা যখন তখন জাঙ্ক ফুড গ্রহণ পছন্দ করেন, তাদের এখনই নেওয়া চাই সতর্ক পদক্ষেপ।
ভাজাপোড়া
বিকেলে স্ন্যাকস হিসেবে পুরি, শিঙাড়াসহ বিভিন্ন রকম ভাজাপোড়া খাবার বাইরে থেকে কিনে অথবা ঘরে তৈরি করে গ্রহণ করেন অনেকে। এ ধরনের খাবার রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ায়। তাতে ত্বকের সৌন্দর্যও ধীরে ধীরে নষ্ট হয় এবং রক্তে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যালের পরিমাণ বেড়ে যায়।
তারুণ্য ধরে রাখার স্বাস্থ্যসম্মত টিপস
 শরীর সুস্থ রাখতে গ্রহণ করা চাই পরিমাণমতো খাবার। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিংবা কম নয়। শরীর অসুস্থ থাকলে এমনিতেই গ্ল্যামার হারিয়ে যায়। তাই তারুণ্য ধরে রাখতে খাদ্য গ্রহণের মাত্রা ঠিক রাখা জরুরি।
 সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি নেওয়া চাই কিছু বাড়তি যত্ন। মাসে অন্তত দুই বার স্যালন বা পার্লারে যাতায়াত করা ভালো। সে ক্ষেত্রে সময় মেলাতে না পারলে ত্বক ও চুলের যত্নে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন বাড়িতেই নিতে হবে কেয়ার।
 বাড়িতে তৈরি করা যেতে পারে প্রাকৃতিক ফ্রেশ ক্লিনজার। এ ক্ষেত্রে চালের গুঁড়া ও মধু দিয়ে তৈরি হোমমেইড স্ক্রাব মুখে ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট ঘষে নিয়ে একটি বাটিতে মধু ও অ্যালোভেরা যোগে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে, ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি বাইরে থেকে মুখের স্কিন গ্লো করতে বেশ কাজের।
 চুলে দেওয়া যেতে পারে মেথিবাটা, মেহেদিবাটা ও নানা রকম তেল। এ ক্ষেত্রে আমন্ড অয়েল সপ্তাহে অন্তত এক দিন ব্যবহার করুন।
 ডায়েট মডিফিকেশনের পাশাপাশি লাইফস্টাইল মডিফিকেশন করাও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এক ঘণ্টা হাঁটার চেষ্টা করুন। কর্মব্যস্ত জীবনে ততটা সময় দিতে না পারলে কমপক্ষে ২৫ মিনিট হাঁটা বা দৌড়ানো অত্যন্ত জরুরি। সে ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন ট্রেডমিল। এ ছাড়া সুইমিং বা সাইক্লোন সাইক্লিংও করা যেতে পারে।
মনে রাখা চাই, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের বাইরে ফিটনেস বা তারুণ্য ধরে রাখা সম্ভব নয়।

লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top