skip to Main Content

কুন্তলকাহন I ডাবল ডিউটি ক্লিনজিং

প্রথমবার বিল্ডআপ সারাতে আর পরেরবার আসল প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে। সৌন্দর্যসচেতনেরা তো বটেই, ডার্মাটোলজিস্টদেরও পরামর্শের প্রথম দিকে থাকছে এর অবস্থান

সৌন্দর্যসচেতন মহলে ‘ডাবল ক্লিনজিং’ শব্দটি বেশ পরিচিত; বিশেষ করে ত্বকযত্নের ক্ষেত্রে। কোরিয়ান রূপচর্চার এই গোপন রহস্য এখন বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। ধারণাটি খুব সহজ: প্রথম দিকে এই ডাবল ক্লিনজিং শুধু ত্বকযত্নে ব্যবহার করা হতো, কিন্তু এই একই কৌশল চুলের যত্নেও আনতে পারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
পরিচয় সন্ধান
চুলের ডাবল ক্লিনজিং হলো দুবার শ্যাম্পু করার একটি পদ্ধতি। যার পেছনে একটি নির্দিষ্ট কৌশল ও বিজ্ঞান কাজ করে। ত্বকের ডাবল ক্লিনজিংয়ের মতোই চুলের ডাবল ক্লিনজিংয়ের মূল উদ্দেশ্য চুল ও স্ক্যাল্পকে দুই ধাপে পরিষ্কার করা।
প্রথম ধাপের শ্যাম্পু মূলত একটি ‘প্রি-ক্লিনজ’ বা পূর্বপরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। এর প্রধান কাজ চুলে জমে থাকা ময়লা, তেল এবং বিভিন্ন হেয়ারস্টাইলিং পণ্যের (যেমন হেয়ার স্প্রে, জেল, ড্রাই শ্যাম্পু, সেরাম) স্তরকে ভেঙে আলগা করে দেওয়া। প্রায়ই দেখা যায়, প্রথমবার শ্যাম্পু করার সময় খুব বেশি ফেনা হয় না। কারণ, শ্যাম্পুটি তেল ও ময়লার সঙ্গে বিক্রিয়া করতে ব্যস্ত।
দ্বিতীয়টি আসল পরিষ্কারের ধাপ। প্রথম ধাপে চুল ও স্ক্যাল্পের ওপরের ময়লার স্তর উঠে যাওয়ার পরে, দ্বিতীয়বারের শ্যাম্পু সহজে স্ক্যাল্পের গভীরে পৌঁছাতে এবং লোমকূপ পরিষ্কার করতে পারে। এই ধাপে শ্যাম্পুর পুষ্টিকর উপাদানগুলোও ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। ফলে চুল ও স্ক্যাল্প অনেক বেশি পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
উপকারিতা
চুলে নিয়মিত তেল, সেরাম, কন্ডিশনার, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করাই হয়। এগুলোর অবশিষ্টাংশ একটি স্তর তৈরি করে, যা সাধারণত একবার শ্যাম্পু করলে পুরোপুরি পরিষ্কার হয় না। ডাবল ক্লিনজিং এই প্রোডাক্ট বিল্ডআপকে কার্যকরভাবে দূর করে চুলকে ঝরঝরে ও সতেজ করে তোলে।
সুস্থ চুলের মূলই হচ্ছে সুস্থ স্ক্যাল্প। কিন্তু এর লোমকূপ তেল ও ময়লা জমে বন্ধ হয়ে গেলে খুশকি, চুলকানি, এমনকি চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডাবল ক্লিনজিং স্ক্যাল্পকে গভীরভাবে পরিষ্কার করে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
অনেক সময় তেল ও ময়লার ভারে চুল নিস্তেজ আর চ্যাপ্টা হয়ে থাকে। ডাবল ক্লিনজিং চুলকে ভারমুক্ত করে। ফলে চুল অনেক বেশি হালকা, বাউন্সি ও ঘন দেখায়। যারা পাতলা চুল নিয়ে চিন্তিত, তারা এই পদ্ধতি থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারেন।
চুল ও স্ক্যাল্প সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকলে কন্ডিশনার, হেয়ার মাস্ক বা সেরামের মতো পুষ্টিকর পণ্যগুলো ভালোভাবে শোষিত হতে পারে এবং এগুলোর কার্যকারিতাও বেড়ে যায়। গভীরভাবে পরিষ্কার হওয়ার ফলে চুল ও স্ক্যাল্প বেশি তৈলাক্ত হয় না। ফলে যাদের প্রতিদিন শ্যাম্পু করার অভ্যাস, তারা হয়তো এক দিন বা দুই দিন বেশি সময় ধরে চুল পরিষ্কার রাখতে পারবেন।
নিয়মাবলি
সঠিক ফল পেতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ডাবল ক্লিনজিং করা আবশ্যক।
ধাপ ১: চুল ভেজানো
প্রথমে চুল ও স্ক্যাল্প কুসুম গরম পানিতে ভালোভাবে ভিজিয়ে নেওয়া চাই। এতে চুলের কিউটিকল এবং স্ক্যাল্পের লোমকূপগুলো খুলে যাবে, যা ময়লা পরিষ্কারে সাহায্য করবে।
ধাপ ২: প্রথম শ্যাম্পু (প্রি-ক্লিনজ)
অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু হাতে নিয়ে সরাসরি স্ক্যাল্পে মাসাজ করা চাই। মনে রাখতে হবে, প্রথম ধাপের মূল লক্ষ্য স্ক্যাল্প পরিষ্কার করা। আঙুলের ডগা দিয়ে আলতোভাবে মাসাজ করতে হবে; নখ ব্যবহার করা যাবে না। এই ধাপে খুব বেশি ফেনা না হলে চিন্তার কিছু নেই। কিছুক্ষণ মাসাজ করার পর পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
ধাপ ৩: দ্বিতীয় শ্যাম্পু (ডিপ ক্লিনজ)
এবার আবার সমপরিমাণ বা তার চেয়ে সামান্য কম শ্যাম্পু নিতে হবে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি ফেনা হচ্ছে; কারণ, স্ক্যাল্প ও চুল এখন অনেকটাই পরিষ্কার। এই ফেনা দিয়ে স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে আলতোভাবে মাসাজ করতে হবে। এরপর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা চাই, যাতে শ্যাম্পুর অতটুকু অবশিষ্টাংশ না থাকে।
ধাপ ৪: কন্ডিশনিং
শ্যাম্পু করার পর চুলের ধরন অনুযায়ী একটি ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করা চাই। কন্ডিশনার মূলত চুলের মধ্যভাগ থেকে আগা পর্যন্ত লাগানো উচিত; স্ক্যাল্পে নয়। ৩-৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে একবার বা দুবার এই পদ্ধতির পর একটি হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল মিলবে।
যাদের জন্য
 যাদের চুল ও স্ক্যাল্প তৈলাক্ত, তাদের মাথা দ্রুত তেলতেলে হয়ে যায়। এদের জন্য ডাবল ক্লিনজিং আশীর্বাদের মতো। এটি অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
 যারা নিয়মিত স্টাইলিং প্রোডাক্ট যেমন হেয়ার জেল, মুজ, স্প্রে বা ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তাদের সপ্তাহে অন্তত একবার ডাবল ক্লিনজিং করা উচিত।
 যারা প্রতিদিন নয়, সপ্তাহে ২-৩ বার শ্যাম্পু করেন, তাদের চুলে ও স্ক্যাল্পে তেল-ময়লা বেশি জমে। তাদের জন্য এই পদ্ধতি আদর্শ।
 ভলিউম বাড়ানোর জন্য এবং চুলকে হালকা রাখতে পাতলা চুলের অধিকারীরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
সতর্কতা
চুল আগে থেকেই শুষ্ক বা কেমিক্যাল ট্রিটমেন্টের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে, ডাবল ক্লিনজিংয়ের কারণে শুষ্কতা বেড়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে খুব হালকা ও হাইড্রেটিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা এবং সপ্তাহে একবারের বেশি এই পদ্ধতি প্রয়োগ না করাই মঙ্গল।
কালার ট্রিটেড চুলে ঘন ঘন ডাবল ক্লিনজিং করলে রং দ্রুত হালকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ক্ষেত্রে কালার-সেফ ও সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা জরুরি। আর যাদের স্ক্যাল্প খুব সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিষ্কারের ফলে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে।
সঠিক শ্যাম্পু
ডাবল ক্লিনজিংয়ের জন্য একই শ্যাম্পু দুবার ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা দুটি ভিন্ন শ্যাম্পুও ব্যবহার করা যায়।
 প্রথম ধাপে একটি ক্ল্যারিফাইং বা ডিটক্স শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে, যা তেল ও প্রোডাক্ট বিল্ডআপ দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর।
 দ্বিতীয় ধাপে চুলের ধরন অনুযায়ী একটি ময়শ্চারাইজিং, ভলিউমনাইজিং বা রিপেয়ারিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
দুটি ভিন্ন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে, সেগুলোর মধ্যে একটি অবশ্যই ভালো মানের সালফেটমুক্ত শ্যাম্পু হওয়া উচিত। এটি চুলের স্বাভাবিক তেল ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ডাবল ক্লিনজিং প্রতিদিনের জন্য আবশ্যক নয়, বরং এটি একটি সাপ্তাহিক কর্মযজ্ঞ। চুলের জন্য বিশেষ যত্ন বা ‘রিসেট বাটন’; যা চুলকে নতুন জীবন দিতে পারে। কর্মব্যস্ত জীবনে নিজের যত্ন নেওয়ার সময় না পেলেও ঘরে বসে এই সহজ পদ্ধতির মাধ্যমে চুল হয়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।

 স্বর্ণা রায়
মডেল: সিমলা মিম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top