skip to Main Content

টেকসহি I এআই পাওয়ারড

পরবর্তী স্কিন কেয়ার ইনফ্লুয়েন্সার কোনো বিউটি গুরু নয়; নয় কোনো ডারমাটোলজিস্টও! সেই জায়গা নিতে যাচ্ছে একটি অ্যালগরিদম

ফেসবুকে মাঝে মাঝেই হাস্যরসাত্মক সব মিম দেখা যায় কসমেটিকসের উচ্চ মূল্য নিয়ে। এই জমানায় সবকিছুর দাম বেড়েছে তুলনামূলকভাবে। প্রসাধনীর দামও বেড়েছে সমানুপাতিক হারে। আবার এখানে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগও নেই। মানিয়ে নিলে সৌন্দর্য আর ত্বকের স্বাস্থ্য—দুই-ই হারায়।
সৌন্দর্য রক্ষার্থে যেসব প্রসাধনী দরকার, সেগুলো কেনার ক্ষেত্রেও ভাবতে হয় বারবার। ভালো হবে কি না, ত্বকে মানাবে কি না, উপকারী কি না—এসব নিয়ে চিন্তা করতেই হয়। কিন্তু সব সময় যে হিসাব-নিকাশে কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে, তেমন নিশ্চয়তা নেই। এমন অনিশ্চয়তার সমাধানের উদ্দেশ্যেই স্কিন জিপিটির উদ্ভাবন। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সৌন্দর্যের ভবিষ্যদ্বক্তা বলা যায়। টাইম ট্রাভেল করে কোনো প্রসাধন ৬ মাস থেকে ১ বছর ব্যবহারে ত্বক কেমন হবে, তা বাতলে দিতে পারে। এটি কোনোভাবেই চেনা-জানা বিউটি ফিল্টার নয়। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে পাওয়া বিজ্ঞানভিত্তিক উপস্থাপন।
স্কিন জিপিটি ক্রেতা ও বিক্রেতা—দুই পক্ষের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একটি ছবি এই সাইটে আপলোড করার মাধ্যমে সহজে সৌন্দর্যবিষয়ক সমাধান পাওয়া সম্ভব হয়। নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম দর্শনেই মুগ্ধ করার সূত্র বাতলে দেবে এই স্কিন জিপিটি। এরই মধ্যে বহুল জনপ্রিয়তা পাওয়া চ্যাটজিপিটির উত্তরসূরি মনে হলেও আদতে এদের শিকড় এক জায়গায় নয়। স্কিন জিপিটির উদ্যোক্তা জর্জিইভস্কায়া। পড়াশোনা সম্পন্ন করেছেন বায়োফিজিকস নিয়ে। বন্ধুর সঙ্গে মিলে গড়ে তুলেছেন বিজ্ঞানভিত্তিক সৌন্দর্য প্রযুক্তি কোম্পানি। ওত কতুরের মতো ওত এআই। সেখান থেকে তৈরি হয়েছে স্কিন জিপিটি। এআই পাওয়ারড এই টুল ব্যবহারকারীদের ভিজ্যুয়াল ইফেক্টের মাধ্যমে দেখিয়ে দিতে পারে, কোন উপাদান ব্যবহার করলে ফল কেমন হবে। মেকআপ, হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার—সংশ্লিষ্ট সব প্রসাধন এবং যত্নের জন্য ব্যবহার করা হয় এমন উপাদানের জন্যই ব্যবহার করা যাবে এই আধুনিক প্রযুক্তি। এতে সম্ভাব্য ক্রেতা সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন; যা উদ্যোক্তা ও বিক্রয়কারী—উভয়ের জন্যই ভালো। ক্রেতাচাহিদাও বুঝতে পারা যায় অনায়াসে। আর সে অনুযায়ী পণ্যের মান উন্নয়ন করা যায়।
কর্মযজ্ঞ নাকি যজ্ঞের কর্ম
ওত এআইয়ের কাজ তথ্যের ওপর নির্ভর করে। তথ্যগুলোর উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, এখানে ব্যবহৃত হয় সিনথেটিক ডেটা। অর্থাৎ কম্পিউটার থেকে প্রাপ্ত তথ্য। সরাসরি কোনো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে উদ্যোক্তা জর্জিইভস্কায়ার অভিজ্ঞতা কাজ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ত্বক নিয়ে যেসব গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হন বলে জানা যায়। কারণ, সেসবে একই ক্যাটাগরির ডেটা বারবার ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়; যার বেশির ভাগই পাওয়া গেছে তরুণ এবং ফর্সা ত্বকের মানুষদের কাছ থেকে। বিচিত্র গায়ের রঙের বিষয়ে তা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া তিনি যুক্তিযুক্ত মনে করেননি। কিন্তু ওত এআই মডেলকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে সিনথেটিক ডেটা ব্যবহার করে প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর দেওয়ার। এতে নানা রঙের ত্বক, বিভিন্ন টেক্সচার আর বয়সের বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ সহজ হয়।
স্কিন জিপিটির মাধ্যমে মূলত চার ধরনের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
 বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করা;
 প্রসাধন অথবা কোনো বিউটি কেয়ারের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিশ্লেষণ;
 ব্যবহার করা প্রসাধন, যত্ন অথবা চিকিৎসার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব পর্যালোচনা করা;
 পরিবেশ যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
স্কিন জিপিটিকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ডেটা এবং ৩০ লাখের বেশি হাই-রেজল্যুশন ছবির ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে, যেখানে নানা ধরনের ত্বকের সম্পর্কে তথ্য রয়েছে।
বিজনেস টু বিজনেস ব্যবহার হচ্ছে এই আবিষ্কারের। অর্থাৎ ব্যবসায়ীরা কিনে নিচ্ছেন ওত আইটির কাছ থেকে। এতে তাদের ক্রেতারা কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। এরই মধ্যে আলটা বিউটি, ক্ল্যারিন্স, ইউনিলিভার এই পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেছে।
ই-কমার্স সাইটের ভার্চ্যুয়াল ট্রাই অন হিসেবে বেশ কার্যকরী এটি। আবার ইন স্টোর টাচস্ক্রিন, ট্যাবলেটসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এতে ক্রেতার সঙ্গে সম্পর্ক হয় বিশ্বস্ততার, টেকসই সূত্রে। পণ্য সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য দেওয়ার মতো অপরাধ সংঘটিত হয় না। বাস্তব আর বিজ্ঞানের মিশেলে জানা যায় প্রকৃত অবস্থা; যা সম্ভাব্য ক্রেতাকে আস্থা দেয়।
ইংরেজি শব্দ প্রমিজ; যার অর্থ প্রতিজ্ঞা। প্রসাধনের বিজ্ঞাপনে এই শব্দের প্রতিফলন দেখা যায়। চটকদার বিজ্ঞাপন হোক কিংবা ইনফ্লুয়েন্সার কনটেন্ট—সবেতেই সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার। কিন্তু এখানে শুধুই শব্দের চাকচিক্য। বাস্তবতা অধরাই বলা চলে। এখানেই ক্রেতা আর কসমেটিক কোম্পানির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। স্কিন জিপিটির মাধ্যমে তা অতিক্রম করা সম্ভব। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্রেতা সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিশ্চয়তা পান। এতে তিনি নিজের অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারে আনন্দিত থাকেন।
স্নো হোয়াইট ফেইরি টেলের সেই রানির কথা মনে আছে? যার ছিল একটা জাদুর আয়না। স্কিন জিপিটিকে বলা যেতে পারে আধুনিক সময়ের ম্যাজিক মিরর; যাকে জিজ্ঞেস করা যায়, ‘সামনের দিনগুলোতে আমাকে কেমন দেখাবে’!

 বিউটি ডেস্ক
ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top