ফটো ফিচার I স্বর্ণকুমের গল্প…
কল্পনা করুন, আপনি একটি জঙ্গলে বাঁশের ভেলায় ভাসছেন। দুই দিকে দালানের মতো উঠে যাওয়া খাড়া পাহাড়। নাম সিপ্পি পাহাড়।
ঘন বনজঙ্গল আর এই খাড়া পাহাড়ের জন্য দিনের বেলা কুমের ভেতরের দিকটায় আলো ঠিকমতো পৌঁছায় না। ভেলা ভাসিয়ে যত ভেতরে যেতে থাকবেন পরিবেশ ততই ঠান্ডা আর নিস্তব্ধ হতে থাকবে। নিস্তব্ধতা এমনি থাকবে যে দূরে পাতা থেকে পানি পড়ার শব্দ এমনকি নিজের নিশ্বাসের শব্দও ভালোভাবে শুনতে পারবেন। এখানকার আদিবাসীদের মুখে প্রচলিত আছে, এই কুমে বিরাট একটি কচ্ছপ বা অন্য কোনো নাম না জানা প্রাণী রয়েছে। যার ওজন ২ মণের বেশি হবে। অনেকেই এই প্রাণীটাকে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে এসব লোমহর্ষক গল্প আর এই কুমের ভুতুড়ে পরিবেশ এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি দেয়।
এটা বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে অবস্থিত পং সু আং কুম, দেবতাকুম ও স্বর্ণকুমের গল্প। খুব অল্প সময়ে ও কম খরচে এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়ে আসতে পারবেন। উল্লেখ্য, স্বর্ণকুমের অভিযাত্রী আমরাই প্রথম।
যেভাবে যাবেন ও খরচ
এখানে যেতে হলে প্রথমে বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি উপজেলায় আসতে হবে। জনপ্রতি বাস ভাড়া ৬০ টাকা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিলে ৫০০ টাকা। সেখান থেকে গাইড নিয়ে কচ্ছপতলী আসতে হবে। গাইড ৫০০-১০০০ টাকা নেবে। রোয়াংছড়ির পর কচ্ছপতলী। সে ক্ষেত্রে অটোরিকশা নিলে সরাসরি কচ্ছপতলী চলে আসাই ভালো। যেতে সময় লাগবে আধঘণ্টার মতো। কচ্ছপতলী আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে রওনা দিন শিলবান্ধা পাড়ার দিকে। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মতো। দুভাবে যেতে পারবেন। পাহাড় অথবা তারাসা খাল দিয়ে। যাওয়ার সময় ঝিরি পথে গিয়ে আসার সময় পাহাড় দিয়ে এলে দুটি পথই দেখা যায়।
যাওয়ার পথ কিন্তু সহজ নয়। শিলবান্ধা গিয়ে ১৫ মিনিট হাঁটলেই প্রথমে পং সু আং কুম পার হতে হবে। পং সু আং কুম পার হওয়ার পর দেবতাকুমের শুরু। স্থানীয় আদিবাসীদের মতে দেবতাকুম ৫০ ফুট গভীর এবং লম্বায় ৬০০ ফুটের বেশি। দেবতাকুমে যাওয়ার শেষের দিকে রাস্তা খুব বিপজ্জনক। শেওলা ভরা খাড়া পাথর দিয়ে গাছের শিকড় ধরে প্রায় ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। হাত ফসকে পড়ে গেলে সাঁতার না জানলে গভীর জলে ডুবে বা পাথরে মাথা ফেটে মৃত্যুর আশঙ্কাও আছে। তাই নিরাপত্তার জন্য লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যেতে পারেন। শিলবান্ধার আশপাশে ঘুরলে ছোট বড় ৫-৬টা ঝরনা পাবেন। শিলবান্ধা থেকে সঙ্গে গাইড নিয়ে নিন। ভেলা বানাতে আর ঘুরে আসতে তিনজন গাইডের জন্য ৩০০০ টাকা লাগবে। রান্না করার মানুষ গাইড ঠিক করে দেবে। পুরো দেবতাকুম ঘুরে আসতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগবে। দেবতাকুমের পর স্বর্ণকুম শুরু। স্বর্ণকুমের মুখে থাকতে হলে তাঁবু নিয়ে যাওয়াই ভালো। রান্না করার সবকিছু সঙ্গেই নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে পরের দিন ভোরে হাঁটা দিলে ওই দিনে বান্দরবান পৌঁছে যেতে পারবেন। পাথর, পাহাড়, কুম, ঝর্না ও বনফুলের সৌরভে এই ভ্রমণ হয়ে উঠবে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
লেখা ও ছবি: কমল দাশ