কুন্তলকাহন I সুন্দর চুলের সাতকাহন
সাত ধরনের হেয়ার প্যাক তৈরির কৌশল। সহজে এবং সুলভ। চুলের সব সমস্যা সমাধানে কার্যকর
ক্ল্যারিফায়িং
মাথার ত্বক চুলকানোর সমস্যায় দারুণ কার্যকর এ হেয়ার প্যাক। যা স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। ফলে ইচি স্ক্যাল্প সেরে যায় এর নিয়মিত ব্যবহারে। প্যাকটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় লবণ এবং তেলের মিশ্রণ। যা মাথার ত্বকের খুশকি আর মৃত চামড়া সরিয়ে দেয় শুষ্কতা তৈরি করা ছাড়াই। অলিভ অয়েল চুলে পুষ্টি জোগায়। লেবুর রস স্ক্যাল্পে জমে থাকা হেয়ার প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ সারাইয়ে সাহায্য করে। প্যাকটি তৈরিতে দরকার ২ টেবিল চামচ সামুদ্রিক লবণ। এর সঙ্গে মেশাতে হবে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ লেবুর রস আর সমপরিমাণ অলিভ অয়েল। সব উপাদানে মিশ্রণটি তৈরি করে নিতে হবে। চুল ভিজিয়ে নিয়ে তা মাথায় ঘষে নিতে হবে মিনিটখানেক ধরে। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে চুল।
ময়শ্চারাইজিং
চুল আর্দ্র রাখতে চান? প্রোটিন আর হেলদি ফ্যাটের পরিমাণ বাড়াতে হবে খাবারের লিস্টিতে। এড়াতে হবে হট স্টাইলিং টুলগুলো। আলতো হাতে, টানাহেঁচড়া না করে আঁচড়াতে হবে চুল। আর ব্যবহার করা চাই ময়শ্চারাইজিং হেয়ার প্যাক। যা চুল আর্দ্র ও কোমল রাখবে। সেই সঙ্গে চুলের আগা ফাটাও রুখবে কার্যকরভাবে। এ জন্য দরকার কোয়ার্টার কাপ ননিপূর্ণ দই আর ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল। ভালোভাবে নেড়ে মিশ্রণটি তৈরি করে নিতে হবে। তারপর মাথায় মেখে ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের অপেক্ষা। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিতে হবে চুল। দই চুলকে করবে মজবুত। স্প্লিট এন্ড বা আগা ফাটা সারাবে। আর অলিভ অয়েলের ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা আটকে রাখবে। রক্ষা করবে নানান ক্ষতি থেকে।
এক্সট্রা কন্ডিশনিং
চুলচর্চায় মধু মানেই বাড়তি কিছু। এক্সট্রা কন্ডিশনিং এবং সুপার হাইড্রেটিং এ উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই আর্দ্রতার দারুণ দাওয়াই। একই সঙ্গে তা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানসমৃদ্ধও। এর সঙ্গে যদি নারকেল, অ্যাভোকাডো কিংবা আমন্ডের তেল মিশিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। চুল মজবুত রাখতে জাদুকরী এগুলো। এক্সট্রা কন্ডিশনিং এ প্যাক তৈরিতে ২ টেবিল চামচ পছন্দসই তেলের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মৃদু গরম করে নিতে হবে। তারপর তা মাথার ত্বকে মেখে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে হবে আধঘণ্টার জন্য। ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে। চুল হবে ফ্লেক ফ্রি, মসৃণ ও উজ্জ্বল।
শাইনিং
এ হেয়ার প্যাক তৈরিতে ব্যবহৃত হয় নারকেলের দুধ। যা শুধু চুল জটমুক্তই রাখে না, রাখে আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ। গোড়া থেকে ডগা অব্দি। আরও ব্যবহৃত হয় প্রোটিন প্যাকড ডিম। যা চুলকে কন্ডিশনড রাখার সঙ্গে সঙ্গে করে তোলে উজ্জ্বল। প্যাক তৈরির জন্য প্রথমে একটা ডিম ফেটিয়ে নিতে হবে। সঙ্গে মেশাতে হবে ১ কাপ নারকেল দুধ আর এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল। মিশ্রণটি প্রথমে মাথার ত্বকে ঢেলে নিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর বাকিটুকু পুরো চুলে ঢেলে নিতে হবে। চুলের ডগার অংশে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মিশ্রণটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাখায় রেখে অপেক্ষা করতে হবে। তারপর চুল ভালো করে ধুতে হবে শ্যাম্পু দিয়ে।
গ্রোথ স্টিমুলেটিং
নিজেদের পাতলা চুল যারা ঘন করতে চান, এই হেয়ার প্যাক তাদের জন্য। যা তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় গ্রিন টি। এতে থাকা ক্যাফেইন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ক্যাটেচিন মাথার ত্বকের এবং হেয়ার ফলিকলের রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। ফলে চুল বাড়ে দ্রুত। সাধারণত এক টেবিল চামচ গ্রিন টির গুঁড়ার সঙ্গে সমপরিমাণ অলিভ অয়েল এবং একটা ডিম মিশিয়ে তৈরি হয় এই হেয়ার প্যাক। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করতে হয় পরিষ্কার চুলে। প্রথমে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে ছোট ছোট ভাগে ভাগে করে নিয়ে গোড়ার অংশে মেখে নিতে হবে প্যাকটি। আস্তে আস্তে স্ক্যাল্পজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। ত্রিশ মিনিট বাদে শ্যাম্পু করে নিলেই চলবে।
পিএইচ ব্যালান্সিং
তৈলাক্ত চুলের সবচেয়ে বড় সমস্যা দ্রুত তেলচিটে হয়ে যাওয়া। তাই এমন হেয়ার প্যাক ব্যবহার করা চাই, যা স্ক্যাল্পের পিএইচের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রেখে হেয়ার কিউটিকলকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তুলবে। সে ক্ষেত্রে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করা যায় নির্দ্বিধায়। এটা কোয়ার্টার কাপ নিয়ে তাতে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে এক টেবিল চামচ লেবুর রস। যা চুলের তেলচিটে ভাব দূর করবে, সঙ্গে স্ক্যাল্পে জমে থাকা হেয়ার প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ সারাবে। লিকুইড এ প্যাক ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাথায় রাখলেই চলবে। শাওয়ার ক্যাপ পরে নেওয়া যেতে পারে এ সময়। তারপর উষ্ণ পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। কন্ডিশনার ব্যবহার করা যাবে না।
রিপেয়ারিং
ধুলাবালি, সূর্যালোক কিংবা ক্লোরিন- পারিপার্শ্বিক অনেক উপাদানই চুলের কোমলতা নষ্ট করে দেয়। করে তোলে জটাযুক্ত। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ফ্রিজ হেয়ার প্যাক হতে পারে চুলের পরম বন্ধু। একটা পাকা কলা চটকে নিয়ে এর সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি হয়। ব্লেন্ড করে নিতে পারলে আরও ভালো। তারপর পুরো চুলে মাখিয়ে নিতে হবে। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে হবে। মিনিট বিশেক পর ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে চুল।
খেয়াল রাখা চাই
সপ্তাহে যেকোনো এক দিন একটা হেয়ার প্যাক বেছে নিতে হবে
হেয়ার প্যাক তৈরির পরপরই ব্যবহার করে ফেলা উচিত। বাসি হয়ে গেলে এর কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে যায়
জাহেরা শিরীন
মডেল: সাদিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন