আলাপন I গান ছাড়া কিছু লিখতে চাইনি -শহীদ মাহমুদ জঙ্গী
১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ নতুন করে গড়ার প্রস্তুতি চলছিল। প্রস্তুত হচ্ছিল সাংস্কৃতিক অঙ্গনও। তখনই জন্ম হয় সোলস ব্যান্ডের। ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে যুক্ত তৎকালীন ক্ষুদে তারকাদের মাথার উপর গুরুজন হয়ে ছিলেন নিভৃতচারী গীতিকার শহীদ মাহমুদ জঙ্গী। শিবলী আহমেদের সঙ্গে আলাপনে উঠে এসেছে তাঁর ফেলে আসা দিনের স্মৃতিচারণা এবং কর্মময় জীবন
রেনেসাঁর নকিব খান তখন স্কুলপড়ুয়া। ‘সৈকতচারী’ নামের একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। আইয়ুব বাচ্চু তখন ছোটখাটো ব্যান্ডে গিটার বাজান আর ইংরেজি গান করেন। কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর, তপন চৌধুরী ও পার্থ বড়ুয়ারা তখনো গানের জগতে নমস্য হয়ে ওঠেননি। সোলস ব্যান্ডের ড্রামার ছিলেন রনি (রনি বড়ুয়া)। ছিলেন নেওয়াজও (আহমেদ নেওয়াজ)। তরুণ ব্যান্ড তারকাদের কাছে শহীদ মাহমুদ জঙ্গী হয়ে উঠলেন গুরু। তাঁর লেখা বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা নিয়ে বেঁচে আছে চার দশক ধরে। ‘হারানো বিকেলের গল্প বলি’, ‘একদিন ঘুমভাঙা শহরে’, ‘আজ যে শিশু’, ‘হৃদয় কাদামাটির কোনো মূর্তি নয়’, ‘ননাইয়া ননাইয়া কতা কই’, ‘হে বাংলাদেশ তোমার বয়স কত’, ‘চায়ের কাপে পরিচয়’, ‘যতীন স্যারের ক্লাসে’, ‘সময় যেন কাটে না’, ‘দখিনা হাওয়া ওই তোমার চুলে’র মতো জনপ্রিয় গানের রচয়িতা তিনি।
১৯৫৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম। বাবা লুতফে আহমেদ চৌধুরী। মা হামিদা চৌধুরী। বড় হয়েছেন সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে। নিজের পরিবার সম্পর্কে বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে দেখতাম, বাবা উঠানে বসতেন আর তাঁর সামনে আব্বাস ফকির এসে বসতেন একতারা নিয়ে। বাবাকে গান শোনাতেন। কবি রমেশ শীলের গান, কিছু নজরুলগীতি, কিছু মাইজভান্ডারীর। বাসায় গ্রামোফোনে গান শুনতাম। ছোটবেলায় আমি শচীন দেববর্মন ও রাহুল দেববর্মনের গান শুনতাম। তাঁদের গাওয়া গানই আমাকে গান লিখতে উৎসাহী করেছে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেছেন তিনি। ছাত্র হিসেবে মন্দ ছিলেন না। গৎবাঁধা পড়াশোনার বাইরে স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সর্বদাই থাকতো তাঁর উপস্থিতি। বিতার্কিক, নিবন্ধ লিখিয়ে, উপস্থিত বক্তা এ ব্যক্তি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন নিজের লেখা গানের মাধ্যমে। তাঁর ভাষ্য, ‘গান দিয়ে মানুষের কাছে যত সহজে ও দ্রুত পৌঁছানো যায়, শিল্পের অন্য কোনো মাধ্যম দিয়ে তা সম্ভব হয় না।’ একনাগাড়ে গান লিখে চলেছেন সত্তর দশক থেকে। শুরুটা সৈকতচারী দিয়ে। ‘সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলাম। উপস্থিত বক্তৃতা, ক্রমান্বয়ে গল্প বলা, বিতর্ক- এসব বিষয়ে বারবার বিজয়ী হতাম। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ‘বিশ্ববিদ্যালয় পদক ১৯৮০’ দিয়েছিল। এসব সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের জন্য তো সব সময় কিছু না কিছু লেখালেখি করতেই হতো। আমি নিবন্ধ লিখতাম। তবে গান লেখা দিয়েই আমার শুরু। তা ব্যান্ডে যাবে, চিন্তা করিনি। সচেতনভাবেই গান ছাড়া অন্য কিছু লিখতে চাইনি। দুটি গান যদি চল্লিশ বছর বেঁচে থাকে, সেটাই তো একজন গায়ক, গায়িকা বা গীতিকারের সার্থকতা। এটা শুধু গানেই সম্ভব। অন্য কোনো মাধ্যমে এটা নয়। যদি প্রশ্ন করি, পার্শ্ববর্তী দেশের কোন বিষয়টির সঙ্গে আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত? উত্তর আসবে গান। আসলে নিজের কথা বা নিজের দর্শন যদি বলতে চাই, সেটার সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হচ্ছে গান।’ নিজের গীতিকার সত্তাকে এভাবেই সমর্থন করলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।
অধ্যাপনা করেছেন। ব্যবসাও করেছেন কিছুদিন। সোলস ব্যান্ডের রনি ও নেওয়াজকে নিয়ে করেছেন অ্যাড ফার্মের অংশীদারি কারবার। ব্যবসার বিস্তার ঘটাতে ১৯৮৬ সালে পাড়ি জমান রাজধানীতে। ৩৬ এলিফ্যান্ট রোডের একটি আবাসিক হোটেলের পুরোটা লিজ নেন তাঁরা। নাম হোটেল ব্লুনাইল। সেখানেই আড্ডা জমাতেন বর্তমান ব্যান্ড সংগীতাঙ্গনের মহাতারকারা। খোদ আইয়ুব বাচ্চু সেই হোটেলে ছিলেন ছয় বছর। তাঁর সঙ্গে কীভাবে পরিচয়, সেটা পুরোপুরি স্মরণ করতে না পারলেও যতটুকু মনে আছে ততটুকুই বললেন তিনি- ‘তখন আইয়ুব বাচ্চুর বয়স ১৬ বছর। ছোটখাটো তিন-চারটি ব্যান্ডে গিটার বাজিয়ে শেষে ফিলিংস ব্যান্ডে নাম লিখিয়েছে। চট্টগ্রাম শিল্পকলায় ওর সঙ্গে আমার দেখা। আমি বললাম, ‘ইংরেজি গান করে তো তুমি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে না। তার চেয়ে বরং বাংলা গান গাও।’ বাচ্চু জিজ্ঞাসা করলো, ‘জঙ্গী ভাই, আমাকে বাংলা গান লিখে দেবে কে? সুরই-বা দেবে কে?’ আমি বললাম, ‘সুর নিজে নিজে করতে চেষ্টা করো। হয়ে যাবে একটা সময়।’ তারপর আইয়ুব বাচ্চুকে একটি গান লিখে দিই। ‘হারানো বিকেলের গল্প বলি’ শিরোনামে। বাচ্চুকে বলেছিলাম, এক দিন এই গানটি তুমি স্মরণ করবে। এই ছিল ওর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ।’
এরপর ঠিকই তা ঘটেছিল। আইয়ুব বাচ্চু তাঁর জীবদ্দশায় একটি টিভি প্রোগ্রামে বলে গিয়েছেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর কথা। স্মরণ করেছেন তাঁর গাওয়া ‘হারানো বিকেলের গল্প বলি’ গানের কথা।
‘বাচ্চু লাকি। এই অর্থে যে, ও সুযোগ যেগুলো পেয়েছে, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে সেগুলো ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে’, নিজের কথার সঙ্গে যুক্ত করলেন গীতিকার জঙ্গী।
তাঁর গানগুলো বক্তব্যধর্মী। তিনি বলেন, ‘বক্তব্যধর্মী গান ভারতের আগেই আমাদের দেশে গাওয়া হয়েছে। ‘তুমি আমি না হয় আজ চলো গাই গান’ এ গান তো আমরা সত্তর দশকে করে এসেছি, যেসব বক্তব্যধর্মী গানের কথা ভারতে বলা হয়। আমি বলবো আমাদের গানগুলো সময়ের আগের গান। ভারতে যখন বক্তব্যধর্মী গান করা হয়েছে, সেই সময়ে যদি আমরা করতাম তাহলে আরও বেশি মানুষ হয়তো আমাদের গান শুনত। কিন্তু আমাদের সত্তর দশকে করা গান যখন আশির দশকে এসে প্রকাশ পেল, তখনো বক্তব্যধর্মী গান শোনার কান তৈরি হয়নি মানুষের। রেনেসাঁর অ্যালবামে পাবেন, তৃতীয় বিশ্ব এমনই বিশ্ব/ বানায় না অস্ত্র তবু সশস্ত্র/ মরণ খেলায় বড় অভ্যস্ত- এ ধরনের বক্তব্যধর্মী গান তো আমরা অনেক আগেই করেছি’।
শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর গীতিকার জীবনের শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে। ঠিক কবে থেকে গান লেখা শুরু করেছেন? বললেন, ‘আমার লেখা প্রথম গান ছিল ‘আঁর দ্যাশে যাইয়ো তুই’ এবং ‘আলো ছায়াতে তুমি’। ১৯৭৭ সালের কথা। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
গান মানুষের আত্মার খোরাক। সুর ও স্বরের এই খেলায় নানাভাবেই সম্পৃক্ত হওয়া যায়- কেউ কণ্ঠ দিয়ে গান ধারণ করেন, কেউ আবার সুর করে। কেউ শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর মতো গানের কথা লিখে। তাঁর সুযোগ ছিল আইয়ুব বাচ্চু বা জেমসের মতো লাইমলাইটের নিচে দাঁড়িয়ে মঞ্চ মাতানোর। কিন্তু সেটা না করে তিনি বেছে নিয়েছেন গান লেখা। কেন? ‘আমার মনে হয়েছে গানে অন্তর্নিহিত দুটি বিষয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে সুর আরেকটি হচ্ছে কথা। একটি গানের মালিক হচ্ছেন সুরকার ও গীতিকার। আবার গীতিকার হচ্ছেন গানের প্রথম মালিক। কারণ, তিনি গান না লিখলে তো আর সুর হচ্ছে না। আমার কেন যেন মনে হয়েছে, আমি যদি গানের কথা লিখি তাহলে এই পুরো জিনিসটা আমারই থাকলো। আমার পুরো ভাবনাকে আমি শ্রোতাদের কাছে পৌঁছুতে পারছি গান লেখার মাধ্যমে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সবাইকে দিয়ে তো সবকিছু হয় না। আমার মনে হয়েছে গান লেখাই আমার প্রধান কাজ হওয়া উচিত’।
শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা গানের তালিকা দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মূলত ব্যান্ড শিল্পীদের জন্যই গান লিখেছেন। ভিন্ন ঘরানার কণ্ঠশিল্পীদের গান না দিয়ে শুধু ব্যান্ড শিল্পীদের দিয়ে নিজের গান গাওয়ানোর কারণ হিসেবে নিজেদের আন্তরসায়নকে গুরুত্ব দিলেন তিনি। উঠতি বয়সে তাঁর সঙ্গে পার্থ বড়ুয়া, কুমার বিশ্বজিৎ, পিলু খান, আইয়ুব বাচ্চু ও নকিব খানের দহরম-মহরম ছিল বেশি। তাঁরা ছিলেন একটি দল। আড্ডার সঙ্গী। জঙ্গী জানালেন, টিমওয়ার্কটা গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের মধ্যে আন্তরসায়ন জরুরি। তিনি যখন কোনো গান লিখতেন, সেটা নকিব, পিলু খান বা আইয়ুব বাচ্চুই ভালো বুঝতে পারতেন যে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন। তাই অন্য ঘরানায় গান না গাইয়ে ব্যান্ড শিল্পীদের হাতেই তুলে দিয়েছেন তাঁর লিরিক।
সত্তর, আশি ও নব্বই দশকের অনেক গানই কালোত্তীর্ণ হয়েছে। তিন পুরুষ ধরে শোনা হয়েছে এমন গানও আছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে পৃথিবী যত এগিয়েছে, শিল্প যেন ততই ফ্যাকাশে হয়েছে! এখনকার গানগুলোর জীবনকাল অনতিদীর্ঘ। শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘আমাদের সময় ব্যান্ডগুলোর মধ্যে এই প্রতিযোগিতা ছিল যে, কে কত ভালো গান করতে পারে। পরিশ্রম ছিল, চেষ্টা ছিল। এ কারণেই গানগুলো কালোত্তীর্ণ হয়েছে। এখন সেই পরিশ্রম আছে কি না, আমি জানি না। তবে এখনকার গান যে খারাপ হচ্ছে, তা নয়। অনেক গান ভালো হচ্ছে, হয়তো আমরা শোনার সুযোগ পাচ্ছি না।’
তাঁর কথার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হওয়া গেল না। কেননা, শোনার মাধ্যম ও প্রযুক্তি এখন আগের চেয়ে বেশি উন্নত ও বহুমুখী। তুচ্ছ বার্তাও মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তড়িৎ গতিতে।
বিয়েবাড়িতে কিংবা অন্য কোনো বাংলা উৎসবে বাংলা গানের কদর নেই। হিন্দি গানের ছড়াছড়ি। কিন্তু কেন? ঘাটতি কোথায়? ‘গানের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করার একটি বিষয় রয়েছে। ইউটিউবে থেকে হেডফোন বা ইয়ারফোন দিয়ে গান শুনলে গানটা ভালোমতো বোঝা যায়, ভালো শোনা যায়। কিন্তু ইউটিউবে যখন ইয়ারফোন ছাড়া শোনা হয়, তখন গানের প্রকৃত সাউন্ড পাওয়া যায় না। গানের অর্ধেক তো এখানেই মার খাচ্ছে। আমরা তো ইউটিউব মাধ্যমে গান শুনতে অভ্যস্ত নই এখনো। আমরা যখন ক্যাসেট বা সিডি প্লেয়ারে গান শুনতাম, সেগুলোর তো একটা আলাদা সাউন্ড ছিল। তা ইউটিউবে শোনা সাউন্ডের চেয়ে ভালো ছিল। কিছুদিন আগে পর্যন্তও মানুষ জানত না যে ইউটিউবে গান পাওয়া যায়। আর আমাদের সময়, মানে আশি থেকে নব্বই দশকে আমাদের গানের মূল শ্রোতা ছিল ছাত্ররা। ২০০০ সাল নাগাদ আরেকটি বড় মাপের শ্রোতা শ্রেণি তৈরি হয়েছিল। তারা হচ্ছে গার্মেন্টস কর্মী। সিডি প্লেয়ার কিনে তারাও গান শুনতো। তো, ছাত্রসমাজ ও গার্মেন্টস কর্মীদের গান শোনার মূল মাধ্যম ছিল সিডি বা ক্যাসেট প্লেয়ার। এখন ইউটিউবে শুনতে হয়। কিন্তু এই যে গার্মেন্টস কর্মী এবং সাধারণ মানুষ, তারা তো জানেই না যে কীভাবে ইউটিউব ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে সার্চ করতে হয়। এটার সঙ্গে যুঝতে তাদের সময় লাগবে। সেই সময় তাদের দিতে হবে’, উত্তর দিলেন শহীদ মাহমুদ জঙ্গী।
তাঁর লেখা গান অনেকাংশেই তারুণ্যনির্ভর। এর পেছনে গোছানো যুক্তিও আছে তাঁর কাছে। বললেন, ‘যদি আপনার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তাঁর কোন গানগুলো পছন্দ, তিনি বলবেন তাঁর যুবক বয়সের গানগুলোর কথা। মানুষ গান শোনা শুরু করে ছাত্র বয়স থেকেই। ৩০ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত মানুষ নতুন নতুন গান গ্রহণ করে। তারপর আর নতুন গান চায় না। যৌবন হচ্ছে একজন মানুষের স্বর্ণসময়। ৩৫ বছরের পর গিয়ে মানুষ তাঁর স্বর্ণসময়ের গানগুলোই বারবার শোনে, শুনতে চায়। আর তাই আমার গানের শ্রোতা হচ্ছে যুবকসমাজ।’
শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর গানের উপাদানগুলো জীবন থেকে নেওয়া। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে তাঁর রচিত ‘আজ যে শিশু’। গানটি ইউনিসেফও গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা থেকে সপ্তাহে তিন দিন চট্টগ্রামের একটি কলেজে অধ্যাপনা করতে যেতাম। তখন স্টেশনের পথশিশুদের দেখতাম। এ ছাড়া ওভারব্রিজের উপর কিংবা সিঁড়ির নিচে ঘুমিয়ে থাকা শিশুরা আমার সমস্ত চৈতন্যকে স্পর্শ করেছিল। সেখান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই গানটি রচনা করেছিলাম।’
নিজের গানে যতক্ষণ পর্যন্ত না সন্তুষ্ট হন, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে তা দেন না গীতিকার জঙ্গী। আবার অনেক সময় পুরো গান একবারে না দিয়ে, দু-চার লাইন দিয়ে, পরে বাকি গান লিখে দিয়েছেন তিনি। এভাবেই চার দশক ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর গীতিকার সত্তা। এত বড় ক্যারিয়ারে দেশের অন্য কোনো গীতিকারকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেননি তিনি। লিখে গিয়েছেন নীরবে। গান হিট না হলে আত্মপীড়ায় ভোগেননি তিনি। তাঁর কাছে গান হচ্ছে সব সময়ের সঙ্গী। তাঁর মতে, গান দিয়ে মন ভালো করা যায়, অন্যের মন ভালো করা যায় এবং ঘরের সদস্যদেরও মন ভালো করা যায়। গান বেঁচে থাকার রসদ জোগায়।
পরিশেষে প্রশ্ন ছিল, তাঁর নামে ‘জঙ্গী’ যুক্ত হলো কীভাবে? ‘বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর বাবার নাম ছিল আবু সালেহ মুছা জঙ্গী। যেহেতু এটি একজন ভালো মানুষের বাবার নাম, তাই বাবা-মা আমার নামের সঙ্গে জঙ্গী যুক্ত করে নাম রেখেছেন’, বললেন তিনি।
২০১৯ সালে ১৬টি গান নিয়ে রেনেসাঁর একটি অ্যালবাম বের হবে, যার ৮টি গানই শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা। সম্প্রতি পিলু খানের জন্যও ৮টি গান লিখেছেন তিনি। তাই জীবনে মোট কতগুলো গান লিখেছেন, সে হিসাব তাঁর কাছে নেই।
ছবি: মো. রাকিবুল হাসান রাফিউ