ফিচার I ফেশিয়াল ফিটনেস
মুখত্বকের জন্য কি শুধু বিউটি স্যালনই যথেষ্ট! পুরোদস্তুর ব্যায়ামাগারও কিন্তু আছে। ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্য সুনিশ্চিত করতে
‘ইটস নট আ ফেশিয়াল, ইটস আ ওয়ার্কআউট’- ফেস জিমের ট্যাগলাইন। একদম অনপয়েন্ট। কারণ, নামের মতোই প্রতিষ্ঠানটির কাজ। ব্যায়ামাগার বটে, তবে শুধু মুখত্বকের জন্য। এর প্রতিষ্ঠাতা ইংগা থেরন। পেশায় ব্রিটিশ বিউটি জার্নালিস্ট। যিনি বছর তিনেক আগে লন্ডনে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন ফেস জিম। মূলত বিউটি বিজনেসকে নতুন করে আবিষ্কারের ইচ্ছা থেকেই ফেস জিমের শুরু। তা ছাড়া বোটক্স আর ফিলার বাদেও যে ত্বকের তারুণ্যোজ্জ্বল ভাব ধরে রাখা যায়, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করেছেন থেরন। প্রাচীন চীনা ফেস লিফটিংই এর প্রথম অনুপ্রেরণা। তারপর বিখ্যাত সব বুটিক জিমে গিয়ে তাদের প্রক্রিয়াগুলো পর্যালোচনার পর এই বিকল্প পদ্ধতির কথা মাথায় আসে থেরনের। কারণ, বডি মাসলগুলোকে যেমন ব্যায়ামের মাধ্যমে ম্যানুপুলেট অর্থাৎ প্রভাবিত করা যায়, তেমনি ত্বকের পেশিগুলোর ক্ষেত্রেও এটা কার্যকর। ফেস জিমে চলে নানান প্রক্রিয়ায় মাসল ম্যানুপুলেশন। ওয়ার্মআপ দিয়ে শুরু। তারপর কার্ডিও, স্কাল্পটিং আর কুল ডাউন দিয়ে এগিয়ে যায় তাদের সিগনেচার ম্যানুপুলেশন। একে আরও কার্যকর করে তুলতে সঙ্গে ব্যবহৃত হয় হাই টেক সব বিউটি টুল। ত্বককে লিফ্ট, স্কাল্পট, টোন আর টাইটেন করতে। বোটক্স, ফিলার, ফেশিয়াল সার্জারির মতো ইনভেইসিভ সব ট্রিটমেন্টের ভিড়ে এই নন-ইনভেইসিভ ট্রিটমেন্ট ক্লায়েন্টকে অনেকটা স্বস্তি দেয়। ফেস জিমে এক্সপার্ট ফেস ট্রেইনাররা ক্লায়েন্ট ভেদে পারফেক্ট ফেশিয়াল ফিটনেস রুটিন তৈরি করে দেন। পুরো প্রক্রিয়ায় মুখত্বকের সব পেশিকে উদ্দীপ্ত করা হয়। ‘ফরগটেন ফর্টি মাসল’ হিসেবে পরিচিত মুখের এ পেশিগুলো সাধারণ ফেশিয়ালে খুব একটা প্রভাবিত হয় না। কিন্তু ফেস জিমে এটা গ্যারান্টেড। ব্যায়াম করার পর শরীরের পেশিগুলোতে যেমন তা অনুভূত হয়, ঠিক তেমনটাই হয় ফেস জিম সারার পর, মুখত্বকে। রেগুলার ওয়ার্কআউটের পাশাপাশি, অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্টেরও ব্যবস্থা থাকে ক্লায়েন্টদের জন্য। লেজার স্কাল্পটিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও কঠিনভাবে করা হয় মাসল ম্যানুপুলেশন। এ ছাড়া ফেস জিমের তালিকায় রয়েছে হরেক রকমের ওয়ার্কআউট। দ্য সিগনেচার, হলিডে স্কিন, পার্টি ফেস, দ্য বস, ক্রায়ো অক্সিজেন, সিগনেচার ইলেকট্রিক্যাল, ইয়োগা ফেস, গেম পেস, স্কিন আইভি, হলিউড লাঞ্চটাইম লিফটের মতো মজার সব নামের এ ওয়ার্কআউটগুলো ক্লায়েন্টদের ত্বকের ধরন এবং পছন্দ অনুসারে বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ফেস জিমের বিশেষজ্ঞরা। ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট থেকে ঘণ্টাখানেক দীর্ঘ হয় একেকটা ওয়ার্কআউট সেশন। খরচ করতে হবে ৭০ থেকে ৫৫০ ডলার অব্দি।
ওয়ার্কআউটের শুরুটা হয় ওয়ার্মআপ দিয়ে। ক্লিনজিং সেরাম দিয়ে। স্ট্রেচিং, নাকলিং, ফেস বলিং, ফ্লিকিং, পিঞ্চিং মুভমেন্ট দিয়ে ম্যাসাজ করা হয় মুখত্বক ও গলায়। দশ মিনিটব্যাপী এ প্রক্রিয়ায় ডিপ ক্লিন তো হয়ই, সঙ্গে মাসলের রিলাক্সেশন হয়। ফলে বাড়ে ত্বকের ইলাস্টিসিটি। ওয়ার্মআপের পর দ্বিতীয় ধাপ কার্ডিও। ফেস জিমের সবচেয়ে তীব্র এ অংশে হাই এনার্জি, কুইক, হুইপিং স্ট্রোকের মিশেলে চলে ম্যাসাজ। অনেকটা চড়ের মতো অনুভূত হলেও বাড়ে ত্বকের রক্তসঞ্চালন। ফলাফল কোলাজেন উৎপাদনের হার বৃদ্ধি। পূর্ণদীপ্ত দেখায় ত্বক। তারপর এক্সফোলিয়েশনের পালা। মাইক্রোনিডলিং টুল দিয়ে চলে নিখুঁত এক্সফোলিয়েশন। এতে করে ত্বকের গভীর থেকে ময়লা আর দূষণ দূর হয়। সেই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে ব্যবহার করা বিউটি প্রডাক্ট সহজেই লোমকূপ দিয়ে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। তারপর স্কাল্পটিংয়ের পালা। ফেস জিমের বিশেষায়িত প্রো অথবা পিওর লিফট ইএমএস ডিভাইস ব্যবহারে চলে এ সেশন। হাই ইনটেসিটির এ মেশিন ত্বককে লিফট, টোন ও টাইটেন করে। তারপর চলে স্কিন গ্লোয়িং সেশন। স্কিন আইভি টেকনোলজিতে তৈরি বিভিন্ন ধরনের স্কিন ককটেল, পেপটাইট আর অ্যাসিড পুরে দেওয়া হয় ত্বকে। এ ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের ত্বকের প্রয়োজন অনুসারে ত্বকবান্ধব সব উপাদান ব্যবহার করা হয়। সবশেষে কুল ডাউনের পালা। ত্বকবান্ধব জেড রোলার দিয়ে আপওয়ার্ড মোশনে চলে এ প্রক্রিয়া। তারপর দেওয়া হয় হাইড্রেটিং টোনার।
তবে এখনই দেশে মিলছে না ফেস জিমের সেবা। এর জন্য যেতে হবে সাত সমুদ্র পেরিয়ে, রানির দেশে। ফেস জিম প্রতিষ্ঠানটি মূলত লন্ডনবেজড।
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু প্রদেশেও মিলবে এর শাখাপ্রতিষ্ঠান। সময় আর সুযোগ মিলে গেলে করে আসতে পারেন অভিনব এ ত্বকচর্চা।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নাজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন