এই শহর এই সময় I প্রকৃতি, মানুষ ও শিল্পকলা
প্রকৃতিবিচ্ছিন্নতা ও শহরের যান্ত্রিকতায় হারিয়ে যাওয়া মানবসত্তার সন্ধানকে উপজীব্য করে রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শিল্পী বিপ্লব করের একক চিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম ছিল ইন সার্চ অব নেচার । এতে শিল্পীর ৩৮টি চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। এটি শিল্পীর দ্বিতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী।
নিজের শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে বিপ্লব করের বক্তব্য, সভ্যতার শুরু থেকে মানুষ মেতে আছে সৃষ্টির নেশায়। মানবজাতির জন্য তা যেমন কল্যাণ আনে, তেমনি কখনো কখনো হয়ে দাঁড়ায় ধ্বংসের কারণ। কালক্রমে মানুষের আবিষ্কৃত যন্ত্র জীবনকে সহজ করলেও প্রকৃতির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। মানুষ পরিণত হয় যন্ত্রমানবে । একসময় সে যান্ত্রিক শহরের যন্ত্রণায় খুঁজে ফেরে প্রকৃতিকে।
এই শহরেই আরেকটি উল্লেখযোগ্য চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো। আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার লা গ্যালারিতে। শিরোনাম আবেগের ক্ষুদ্র বহিঃপ্রকাশ । চিত্রকর আবদুল গাফফার বাবুর সৃষ্টিকর্ম নিয়ে। এটি তাঁর তৃতীয় একক চিত্র প্রদর্শনী।
এই প্রদর্শনীতে শিল্পী তাঁর ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন মানুষের আবেগময় পরিবর্তনগুলো। বিভিন্ন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় মানুষ যা প্রতিনিয়ত অনুভব করে। শিল্পী মো. আবদুল গাফফার বাবু অনুভূতির বিভিন্ন মাত্রাকে তাত্ত্বিক ধারণার সঙ্গে মিশ্রিত করে ফ্রেমবন্দি করার চেষ্টা করেছেন।
আবদুল গাফফার বাবুর বক্তব্য, আবেগ জটিল এবং দুরূহ। মানুষের আবেগানুভূতি তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থাভেদে পরিবর্তিত হয়। কিছু কিছু তত্ত্ব, আবেগকে বিভিন্ন উপাদানের লক্ষণ বলে গণ্য করে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেরণা, অনুভূতি, আচরণ ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। দৃশ্যকল্পের মাধ্যমে এসবই প্রদর্শনীতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়েই বাংলায় যুগ যুগ ধরে বসন্ত যাপনে মেতে ওঠে মানুষ। আজকের এই পরিবেশদূষণ, প্রাকৃতিক ভারসাম্যের জায়গায় নতুন করে পরিবেশবাদী চেতনা উন্মেষের জন্যও বসন্ত উৎসব খুব প্রাসঙ্গিক।
প্রতিবছরের মতো এবারও পয়লা ফাল্গুনে ঢাকা শহরে ইতিউতি চোখ মেললেই দেখা গেছে ফুলেল পসরা সাজিয়ে বসে গেছেন দোকানিরা। গোলাপ, পলাশ, করবী, গাঁদাসহ রঙিন ফুল আর বাসন্তী রঙের শাড়ি ও পাঞ্জাবিতে সেজে উঠেছিলেন তরুণ-তরুণীরা। একে অন্যকে আবিরে রাঙিয়ে দিয়েছেন। ফাল্গুনকে বরণ করে নেওয়ার জন্য গোটা দেশের নানা জায়গায় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। বসন্তকে স্বাগত জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানা অনুষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় পয়লা ফাল্গুন সমগীত-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসন্ত উৎসব। এই উৎসবে গান শোনান কফিল আহমেদ, কৃষ্ণকলি, সায়ান। অরূপ রাহীর নেতৃত্বাধীন গানের দল লীলা, আর গানের দল সমগীত সুরে আর কণ্ঠে রঙিন করে তুলেছিল শ্রোতাদের মন। এ ছাড়া গানে মন জয় করে নিয়েছে সমগীত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ, মাদল, সহজিয়া, পথের দল, সমগীত ও আরমিন মুসার গ্রুপ ঘাসফড়িং। শিউলি ভট্টাচার্যের বেহালার পরিবেশনা এই অনুষ্ঠানকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছিল। আর এই উৎসব ভরে উঠেছিল আদিবাসী নৃত্যের ঐশ্বর্য। পরিবেশন করেন তাথৈয়া, পিংকি চিরান ও সুস্মিতা রেমা।
I স্টাফ রিপোর্টার
ছবি: সংগ্রহ