ফিচার I দারাজ নন্দিনী
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজ সম্প্রতি নারীর জন্য শুরু করেছে একটি বিশেষ প্রকল্প দারাজ নন্দিনী । প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন ও ই-কমার্সবিষয়ক শিক্ষার মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করাই এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। নারীর প্রতি নিবেদিত বিশেষ এই প্রকল্পে বছরব্যাপী থাকবে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন। যেখানে দারাজের নারী ক্রেতারা পাবেন বিশাল অঙ্কের ডিসকাউন্ট। পাশাপাশি দারাজ প্রকাশ করবে নারীর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প। এর প্রথম পর্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডে কর্মরত আটজন নারী কর্মকর্তার জীবনসংগ্রাম ও সফলতার গল্প।
১. আমরা তিন বোন। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, মানুষ আমার বাবা-মাকে বলতো, ওহ্! আপনাদের কোনো ছেলে নেই? আমার মায়ের খুব মন খারাপ হতো এটা শুনে। কারণ, আমাদের সোসাইটিতে সবার বিশ্বাস, যেকোনো বিপদে ছেলেরাই সবার আগে কাজে আসে।
কিন্তু আমি নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলেছি যে আমি এখন স্বাধীন। আমি দারাজ বাংলাদেশের হেড অব কাস্টমার সার্ভিস, আমার বোন একজন ডাক্তার এবং সবচেয়ে ছোট বোন আইনজীবী। বাবা-মা আমাদের নিয়ে গর্বিত।
– ফারহানা রফিকুজ্জামান, হেড অব কাস্টমার সার্ভিস, দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেড
২. আমি মঞ্জরী মল্লিক, দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ও পেমেন্টস হেড হিসেবে কাজ করছি। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আমার বাবা-মা তাদের জীবনে কখনোই ছেলে সন্তানের অভাব বোধ করেননি। কারণ, আমি তাদের জন্য ছেলে ও মেয়ে দুটোই। আমাকে একজন স্বাধীন মেয়ের মতো মানুষ করা হয়েছে, যে শুধু নিজের জন্যই না বরং তার পরিবারের জন্যও সেরা সিদ্ধান্তটি নিতে পারে। মেয়েরা এখন আর পিছিয়ে নেই। একটি মেয়ে যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে সে একজন ছেলের চেয়েও বেশি সফলতা অর্জন করতে পারে।
-মঞ্জরী মল্লিক
প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট ও পেমেন্টস হেড
৩. মা-বাবা আমাদের সব সময় শিখিয়েছেন চাঁদের দিকে হাত বাড়াতে। কারণ, তাদের বিশ্বাস, পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই এবং লিঙ্গ সেখানে কোনো বাধা হতে পারে না। কিন্তু এমন অনেক মানুষ ছিল, যারা আমার বাবাকে প্রতিনিয়ত জিজ্ঞেস করতো তিনি কেন ছেলে সন্তানের আশায় তৃতীয় সন্তানের জন্য চেষ্টা করেননি, যে তার বংশপরিচয় বহন করবে, তার সঙ্গে বাজার করবে। বাবা সব সময়ই তাদের একইভাবে উত্তর দিয়ে এসেছেন যে তার জীবনে কমতির কোনো জায়গা নেই। তিনি খুব গর্ব করে বলতেন, আমার দুই মেয়ে।
– তানজিলা রহমান
হেড অব সিএসআর অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট
৪. জীবন মানেই স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে ছুটে চলা- এটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস। আমি নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করি। কারণ, একটি রক্ষণশীল সমাজে জন্মানো সত্ত্বেও নিজের স্বপ্নগুলো পূরণে সফল হয়েছি। আর এই যাত্রার বীজ বপন শুরু হয়েছিল আমার শিক্ষাজীবনের শুরুতেই। কারণ, ভাগ্যবশত আমি দেশের সেরা স্কুলগুলোর একটিতে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। এখন আমি বুঝি কীভাবে আমার স্কুল আমার স্বপ্নকে একটি বাস্তব আকারে পরিণত করার পেছনে ব্যাপক অবদান রেখেছে। আর আমার ইউনিভার্সিটি জীবন আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে বাস্তববাদী হয়ে জীবনযুদ্ধের প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়।
– খাদিজা ইসলাম রিফাত
ম্যানেজার, অপারেশন্স এক্সেলেন্স
৫. তিনি সারা জীবনই ওয়ান্ডার উইমেন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন। গল্পটি একটি ছোট্ট মেয়ের, যে সব সময়ই একজন স্থপতি হতে চেয়েছিলেন; কিন্তু ভাগ্যক্রমে একজন সামরিক কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন। ১৫ বছর ধরে দেশের সেবায় নিয়োজিত থেকে তিনি ভাবলেন আরেকটি কর্মজীবন শুরু করার কথা। আর যোগ দিলেন দারাজ বাংলাদেশে। আসলে জীবন একটি চ্যালেঞ্জ ছাড়া কিছু নয়। তিনি একাধারে একজন মা, একজন স্ত্রী, মেয়ে, বোন ও ভাবি। হ্যাঁ, আমিই এই গল্পের সেই ছোট্ট মেয়েটি।
-সাদিয়া হক সিমি
প্রধান প্রশাসক ও সিকিউরিটি অফিসার
৬. আমি বাংলাদেশের আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো, যে একটি সাধারণ রক্ষণশীল পরিবার থেকে এসেছে। যেখানে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে একটি ঝামেলামুক্ত সাধারণ জীবন যাপন করাই পরিবারের প্রত্যাশা। কিন্তু স্বভাবতই আমার নিজেকে প্রমাণ করার এবং নিজের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার প্রবল ইচ্ছা ও তীব্র প্রেরণা ছিল। যদিও কয়েক বছর ধরে নারীর ক্ষমতায়ন কথাটি বিশেষভাবে আলোচিত। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, কোনো মেয়েকে তার দক্ষতার বিষয়ে বিশেষ কোনো শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
-সুমাইয়া রহমান
হেড অব ফ্যাশন অ্যান্ড এফএমসিজি, দারাজ বাংলাদেশ
৭.
বাবা-মা পাশে থাকলে একজন নারী অতিক্রম করতে পারে যেকোনো বাধা- তারই দৃষ্টান্ত আজকের এই নন্দিনী।
আমার বেড়ে ওঠা আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে আর তারা দুজনই চাকরিজীবী। আমার মা একজন উচ্চশিক্ষিত নারী, তিনি ডক্টরেট অর্জন করেছেন। আমার বাবা-মা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা, বিশেষ করে আমার বাবা, যিনি বাংলাদেশ জুডিশিয়ারিতে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন। আজ আমি যেখানে আছি, তারা আমাকে সব সময় ঠিক এই জায়গাটিতেই দেখতে চেয়েছিলেন। আমি একজন সুখী, স্বাধীন ও সত্যিকারের সন্তুষ্ট নারী।
– ইসমাত জেরিন খান
হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স
দারাজ বাংলাদেশ
৮. ছোটবেলা থেকে কখনো বুঝতেই পারিনি যে একটা ছেলে আর একটা মেয়ের মধ্যে অধিকারের দিক দিয়ে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে। মাঠে-ঘাটে দৌড়ে বেড়িয়েছি। নাচের ক্লাসে নাচ শিখেছি। পাড়ায় ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন খেলেছি। স্কুলের সামনে উঁচু পাঁচিলে পা ঝুলিয়ে বসে গল্প করেছি। গলা খুলে গান করেছি। ভিডিও গেম খেলেছি। স্বপ্ন দেখেছি মহাকাশবিজ্ঞানী হওয়ার।
কিন্তু কীভবে যেন ওই ছোট বয়সেই বুঝে গেছিলাম, পৃথিবীকে বদলাতে হলে আগে নিজের আশপাশের মানুষকে বদলাতে হবে। শুরু হলো আমার খুব ছোট ছোট কিন্তু সিগনিফিক্যান্ট পদক্ষেপ নেওয়া। সোসাইটি কী বলছে তাতে কান না দিয়ে আরও বেশি করে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গেম খেলি, মুভি দেখি, হেভিমেটাল গান শুনি, সাঁতার কাটি। রাস্তায় কেউ খারাপ কমেন্ট করলে মার লাগিয়ে দিই। আমাকে যারা কাছ থেকে দেখে, তারা আমার কর্মকান্ডে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এখন আমার আশপাশের মানুষগুলো প্যান্ট-শার্ট পরা মেয়ে দেখলে আর বাঁকা চোখে তাকায় না। মেয়েদের পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে বা খেলতে দেখলে সেটা নিয়ে অদ্ভুত সব গুজব ছড়ায় না।
-সায়ন্তনী ত্বিষা
হেড অব পিআর, মিডিয়া ও কমিউনিকেশন