skip to Main Content

সম্পাদকীয়

মার্চ এলেই আমার মন নানামাত্রিক অনুভূতির মধ্যে এসে পড়ে। পাকিস্তানি হানাদাররা খুব ভয়ংকর ও বীভৎস গণহত্যা সংঘটিত করেছিল ঢাকার বুকে, সেই নিষ্ঠুরতার ছবি ও বর্ণনা যখন দেখি- হৃদয় বড় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন ভাবি, মুক্তিকামী বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের বদৌলতে আমরা স্বাধীন একটা দেশ পেয়েছি- মনটা গর্বে আন্দোলিত হয়, শান্তিতে ভরে ওঠে। শহীদদের প্রতি অপার কৃতজ্ঞতা জাগে। স্বাধীনতার মতো অমূল্য আর কিছু হয় না।
নারীর জন্য মাসটি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই মার্চে পৃথিবীর সব নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হয়। যত আনুষ্ঠানিক হোক, এর তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা উপেক্ষা করার সুযোগ বিশ্ববাসীর নেই। তবু একটা কথা বলি, সারা বছরই নারী শ্রম দিয়ে চলে, বিশেষত পারিবারিক জীবনে তাদের অবকাশ বলে কিছু নেই। সাপ্তাহিক ছুটিহীন এই শ্রমের কোনো পারিশ্রমিক নেই, এতে তাদের আপত্তিও নেই। জীবনভর নারীর এই যে আত্মোৎসর্গ, তার মর্যাদা আমরা কতটুকু দিই? অথচ নারীর এই মহত্ত্ব না থাকলে মানবসভ্যতাই বিকশিত হতো না।
এবারের ক্যানভাস তাই নারীকে প্রাধান্য দিয়েছে। নানাভাবে আলো ফেলেছে তার কৃতিত্ব ও অর্জন, কর্ম ও গৌরব, অবস্থান ও বিস্তৃতি- সবকিছুর ওপর। কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নারী-পুরুষের সমতায়। ফলে আমাদের এবারের কভারস্টোরি ‘সাম্যে সুন্দর’। আর আমরা তো জানিই যে, মানুষের জীবন তখনই শান্তিপূর্ণ, সুখকর ও সুন্দর হয়ে ওঠে- যখন সমাজ-রাষ্ট্রে সাম্যাবস্থা বিরাজ করে।
এবার কিছু বেদনার কথা বলি। ফ্যাশন জগতের কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব কার্ল লেগারফেল্ড আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর অবদান এত বিপুল যে, জীবদ্দশাতেই তিনি অভিহিত হয়েছিলেন ‘ফাদার অব ফ্যাশন’ বলে। আর দুজনের মৃত্যুসংবাদ আমাকে ভীষণ বিচলিত ও ব্যথিত করেছে। তাঁরা হলেন জীবনানন্দ-পরবর্তী বাংলা কবিতার অগ্রগণ্য প্রতিভা আল মাহমুদ, অন্যজন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের শীর্ষস্থানীয় সংগঠক মুহম্মদ খসরু। উভয়েই নিজ নিজ ক্ষেত্রে যে অবদান রেখে গেছেন, এই ক্ষণিকের উল্লেখে তা শেষ হওয়ার নয়।
পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণজনিত অগ্নিকান্ডে যে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে, তা ভুলবার নয়। মৃত্যুর এই বিভীষিকা দুঃস্বপ্নেও অকল্পনীয় ও সহ্যাতীত। এই বিপুল প্রাণহানি আমাদের নগরব্যবস্থা ও প্রশাসনে যে বিপজ্জনক গলদ রয়েছে, তারই প্রমাণবাহী। অথচ একটু দায়িত্বশীল আর সাবধান হলে কত প্রাণ রক্ষা পেতো! আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। তবে আমাদেরও সচেতন থাকা দরকার।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। নারী দিবসের শুভেচ্ছা রইলো সবার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top