ফিচার I রাতের রূপচর্চার রূপান্তর
রোজকার হলেও রাতের রূপচর্চা হালনাগাদ হওয়া চাই। ত্বকের ধরন বুঝে। চেহারায় জেল্লা বাড়ানোর জন্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাত হচ্ছে রূপচর্চার সেরা সময়। কারণ দুটো। এক. সারা দিনের ধকলের পর সন্ধ্যার পর ত্বক বিশ্রামের সুযোগ পায়। দুই. রাতের শুরুর সময় থেকেই ত্বকের কোষগুলো প্রাকৃতিকভাবে পুনর্জীবিত হতে শুরু করে। তাই ত্বকচর্চায় একচুল ছাড় দেওয়া যাবে না এ সময়। বেসিক নাইট কেয়ার রুটিন কমবেশি সবারই জানা। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে হালের সেরা নাইট কেয়ার প্রোডাক্টগুলো। তবে অবশ্যই ত্বকের ধরন বুঝে, প্রয়োজন মেনে। নিয়ম মেনে রাতের রূপচর্চার রুটিন অনুসরণ করলেই দেখবেন সুন্দর ত্বক পাওয়া কত সহজ।
পরিষ্কারই প্রধান
দিন কিংবা রাত— ত্বকচর্চার প্রথম এবং প্রধান ধাপ হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য তৈরি হতেও এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাতে কোনোভাবেই ক্লিনজিং এড়ানো যাবে না। ত্বক পরিষ্কারের মাধ্যমে দিনভর জমতে থাকা ধুলা-ময়লা, ঘাম দূর হবে। সঙ্গে পরবর্তী সময়ে যে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হবে, সহজেই তা বসে যাবে ত্বকে। পৌঁছে যাবে ত্বকের গভীর পর্যন্ত। ডাবল ক্লিনজিংটাই বেশি জুতসই রাতের রূপরুটিনে। তাই প্রথমে ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে ক্লিনজিং অয়েল বেছে নিতে হবে। তারপর ব্যবহারবিধি অনুসারে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এটা হচ্ছে ত্বক পরিষ্কারের সবচেয়ে সহজ ও কোমল প্রক্রিয়া। যা ময়লা, মেকআপ আর দূষণ দূর করে নিমেষেই। মুখে মিনিটখানেক ম্যাসাজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই প্রথম ধাপের ক্লিনজিং শেষ। তারপর ব্যবহার করতে হবে ফেসওয়াশ অথবা অন্য কোনো ফর্মুলার ক্লিনজার। ত্বকের ধরন বুঝে ফোম, মিল্ক কিংবা জেল ফর্মের বেছে নেওয়া যেতে পারে। যদি আর কোনো ময়লার ছিটেফোঁটাও থাকে, তা দূর করবে।
ট্রিট ট্রিক
ক্লিনজিংয়ের পরপরই সেরামের সময়। ক্লিনজারের মতো সেরাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ত্বকের ধরন বুঝে, প্রয়োজন মেনে বেছে নিতে হবে এসব স্কিন ট্রিটমেন্ট প্রোডাক্ট। এগুলো ত্বকবান্ধব সব অ্যাকটিভ এবং কনসেনট্রেটেড উপাদানে তৈরি হয়, যেগুলোর মূল কাজ ত্বকের নির্দিষ্ট সমস্যাগুলো সারিয়ে তোলা। সেরামের অনেক ধরনের অপশনের মধ্যে তাই কার্যকরটা বেছে নেওয়া জরুরি। ত্বকে অ্যাকনের সমস্যা সারাতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের মতো বিএইচএ অথবা ল্যাকটিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কিংবা ম্যান্ডেলিক অ্যাসিডের মতো এএইচএ সমৃদ্ধ সেরামগুলো কার্যকর। হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য ভিটামিন সি, নিয়াসিনামাইড, লাইকোরাইস এক্সট্র্যাক্ট এবং আলফা আরবিউটিনের মতো উপাদানগুলো খুব কাজের। অন্যদিকে, অ্যান্টি-এজিংয়ের জন্য রেনিটন আর পেপটাইড সমৃদ্ধ সেরামই সেরা।
হাইড্রেশনের হিসাব
খেয়াল রাখা জরুরি, হাইড্রেশন ও ময়শ্চারাইজেশন কিন্তু এক নয়। কাজটা মূলত টোনারের, ময়শ্চারাইজারের নয়। ত্বককে ডিহাইড্রেটেড অনুভূত হতে দেয় না টোনার। পানির মতো দেখতে এ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে থাকে ত্বকের জন্য উপযোগী ও উপকারী সব উপাদান, যেগুলো ত্বকের পানির অভাব পূরণ করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিউমিকটেন্ট দিয়ে তৈরি হওয়ায় ত্বকের যত্নে দারুণ উপকারী। এটা ত্বকের প্রাকৃতিক তেলগ্রন্থিগুলোর যত্ন নেয়। ফলে অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ত্বক তেলতেলে দেখায় না, অ্যাকনের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। তাই রাতে নিয়মিত টোনারের ব্যবহার পরের দিন সকালে সুস্পষ্ট ফুটিয়ে তোলে ত্বক। দেখায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও পরিপুষ্ট।
ময়শ্চারাইজার মাস্ট
এত সময় ধরে ত্বকের যে চর্চা হলো, অর্থাৎ যেসব পণ্য ব্যবহৃত হলো— সেগুলো ত্বকে আটকে দেওয়ার মোক্ষম হাতিয়ার ময়শ্চারাইজার। সেই সঙ্গে রাতভর জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিতেও এটি জুড়িহীন। তবে ওই যে! বেছে নিতে হবে ত্বকের ধরন বুঝে, প্রয়োজন মেনে। সেই সঙ্গে বিশেষভাবে রাতে ব্যবহারের জন্য তৈরি কি না, তা-ও দেখে নিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এসেনশিয়াল অয়েল ছাড়াও হাই কনসেনট্রেটেড অ্যাকটিভ উপাদানসমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার বেছে নেওয়াই ভালো। তবে সিনথেটিক সুগন্ধি কিংবা রঙ দেওয়া ময়শ্চারাইজারগুলো এড়িয়ে যাওয়া চাই। এমনকি অ্যালকোহল বেসড ময়শ্চারাইজারগুলোও রাতে ব্যবহারের উপযোগী নয়। জিঙ্ক অক্সাইড কিংবা অন্য সব ইউভি ফিল্টার যুক্ত যেন না হয় রাতের ময়শ্চারাইজারগুলো। রাতে তো সূর্য থেকে সুরক্ষার কিছু নেই। বরং প্রয়োজন ত্বকের স্বাভাবিক সৌন্দর্য পুনরুদ্ধার করবে, এমন ময়শ্চারাইজার।
এ ছাড়া রাতে রূপচর্চার বেসিক এসব স্টেপের সঙ্গে সপ্তাহে দুই থেকে এক দিন যোগ হতে পারে ফেস মাস্কের বিশেষ পরিচর্যা। ক্লে মাস্ক কিংবা এক্সফোলিয়েটিং মাস্কের কথা তো সবার জানা। এগুলো ছাড়াও ক্রিম এবং জেল বেসড কিছু নাইট মাস্ক মিলবে বাজারে। যা সারা রাত ধরে মুখে মেখে রাখা যায়। এগুলো কাজও করে রাতজুড়ে। তো নাইট কেয়ার রুটিনের তালিকায় থাকুক এ মাস্কগুলোও। রাতে পরিপূর্ণ পরিচর্যার জন্য।
জাহেরা শিরীন
মডেল: বর্ণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন