কুন্তলকাহন I কোরীয় কেশচর্চা
কোরিয়ান কৌশল। দশ ধাপের চর্চা। কিন্তু ত্বকের নয়, চুলের যত্নে
একদম ত্বকযত্নের মতোই, চুলের পরিচর্যায় একচুল ছাড় দিতে নারাজ কোরিয়ানরা। ‘নারিশিং ইট, রাদার দ্যান অ্যাবিউসিং ইট’—যার মূলমন্ত্র। তাই কোরিয়ান স্কিন কেয়ারের মতোই বিশেষভাবে তৈরি তাদের হেয়ার কেয়ার রেজিমটাও। মোট দশ ধাপে সম্পন্ন হয় পুরো প্রক্রিয়া। যা দেখে চোখ কপালে উঠতে পারে যে কারও। কিন্তু চুল পড়ে যাওয়া, রঙ উড়ে যাওয়া, খুশকি, রুক্ষতার মতো হাজারো সমস্যার চুলোচুলিতে চুলকে ফুরফুরে আর প্রাণোচ্ছল রাখতে এমন দারুণ সমাধান কোরিয়ানরা ছাড়া আর কে দেবে! হ্যাপার মনে হলেও একবার যদি অভ্যাসে পরিণত হয় এ পরিচর্যা, তবেই কেল্লা ফতে।
স্ক্যাল্প স্কেলার
টেন স্টেপ হেয়ার রুটিনের প্রথম এবং প্রধান একটি ধাপ। সুস্থ চুলের জন্য চাই স্ক্যাল্পের সুস্থতা। মানে, স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক পরিষ্কার এবং এক্সফোলিয়েটেড রাখা জরুরি। এই কাজে স্ক্যাল্প স্কেলার দারুণ অপশন। এগুলো মূলত স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বেসড প্রি ট্রিটমেন্ট। যা স্ক্যাল্পকে এক্সফোলিয়েট করে মৃতকোষ সারাইয়ে সাহায্য করে। দূষণ দূর করে এবং অতিরিক্ত তেলে ভাব রোধ করে। সপ্তাহে এক থেকে দুবার এর ব্যবহার যথেষ্ট। শ্যাম্পু করার আগে শুকনো মাথায় এটি দেওয়া হয়। আলাদা কয়েকটি ভাগ করে স্কেলারের সুচালো মাথা দিয়ে স্ক্যাল্পে দেওয়া হয় এটি। তারপর মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করে পুরোটায় ছড়িয়ে দিয়ে অপেক্ষা ১৫ মিনিটের। চুল ধুয়ে নিয়ে এবার শ্যাম্পুর পালা।
শ্যাম্পু, সঙ্গে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ
শ্যাম্পু নিয়ে তো বাড়তি কিছু বলার নেই। কিন্তু এর উপকারিতা বাড়িয়ে নেওয়ার উপায় আছে। শ্যাম্পুইংয়ের সময় স্ক্যাল্প ব্রাশ যোগ করেন কোরিয়ানরা। এর ব্যবহারে শ্যাম্পুর ফেনা তো বাড়েই, সঙ্গে স্ক্যাল্পে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ডিপ ক্লিন হয় মাথার ত্বক। কারণ, শ্যাম্পুইংয়ের সময় এই ব্রাশের ম্যাসাজ স্ক্যাল্পের ময়লা, জমে থাকা হেয়ার প্রোডাক্ট, এমনকি মৃতকোষও তুলে ফেলে। মাথায় শ্যাম্পু দেওয়ার পর এই ব্রাশ দিয়ে আলতো হাতে রাউন্ড স্ট্রোকে ম্যাসাজ করে নিতে হবে স্ক্যাল্প। পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার।
কন্ডিশনার
চুল ধোয়ার এ ধাপটা অনেকে হুড়োহুড়ি করে সেরে ফেলেন। কিন্তু কন্ডিশনারটা চুলে বসতে দিলে পুষ্টি পৌঁছে যাবে গভীরে। খুব বেশি ভেজা চুলে নয়, কন্ডিশনার টাওয়েল ড্রাই চুলে ব্যবহার করতে হয়। স্ক্যাল্পে মাখাবার দরকার নেই। বরং চুলের মাঝের অংশ থেকে গোড়া অব্দি মাখিয়ে নিলেই চলবে। মিনিট পাঁচেক পর ধুয়ে নিতে হবে।
হেয়ার মাস্ক
কোরিয়ানদের কাছে হেয়ার প্যাক হিসেবে প্রচলিত। একেক ধরনের প্যাক একেক রকম চুলের উপযোগী। শক্তিশালী সব উপাদান আর দারুণ সব ফর্মুলায় তৈরি এ প্যাকগুলো চুলের বাড়তি পরিচর্যার জন্য। সপ্তাহে এক দিন এগুলোর ব্যবহার চুলকে করবে আরও মজবুত ও পরিপুষ্ট। বাঁচাবে সূর্য, আবহাওয়া এবং পরিবেশদূষণের হাত থেকে। কন্ডিশনারের বদলে একদিন ব্যবহার করা যেতে পারে হেয়ার প্যাক। শ্যাম্পুর পর। ১৫-২০ মিনিট রেখে তারপর চুল ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
ভিনেগার রিন্স
ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত, কোরিয়ানরা তখন কাজ করছেন চুলের পিএইচ ব্যালান্স রক্ষায়। কারণ, এর একটু হেরফেরই তো খুশকি, চুলকানি, অতিরিক্ত তেলে ভাবের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। খুব কম বা বেশি পিএইচ লেভেলের কোনোটাই ভালো নয়। ভিনেগার রিন্স সেই ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফিরিয়ে দেয় স্ক্যাল্পের স্বাভাবিকতা। চুল দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। সপ্তাহে একবার স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে ব্যবহার করা যেতে পারে এই ভিনেগার রিন্স। কন্ডিশনার দেওয়ার পর। তারপর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেললেই চলবে।
স্ক্যাল্পে মাস্ক
চুলের মতোই, মাথার ত্বককে সব সময় আলাদা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন কোরিয়ানরা। চুল এবং স্ক্যাল্পের গঠন যেমন আলাদা, প্যাকটাও হওয়া চাই আলাদা। সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করার পর এর ব্যবহার স্ক্যাল্পের সুস্থতা নিশ্চিত করে শতভাগ।
স্ক্যাল্প টনিক
ত্বক পরিষ্কারের পর টোনার যেমন কাজ করে, স্ক্যাল্প টনিকের কাজটাও অনেকটা সে রকম। স্ক্যাল্পের টোনার বলা হয় এগুলোকে। যা মাথার ত্বকের পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখে। পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য তৈরি করতে সাহায্য করে। গোসল থেকে বেরোনোর পর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে তারপর স্ক্যাল্পে স্প্রে করা হয় এ টনিক। ধুয়ে ফেলার ঝক্কি নেই। সামান্য ম্যাসাজ করে নিলেই দ্রুত শুষে নেবে স্ক্যাল্প।
স্ক্যাল্পে সেরাম
মাথার ত্বক আর্দ্র ও সুরক্ষিত করতে স্ক্যাল্প সেরাম দারুণ উপযোগী। যারা স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত শুষ্কতা কিংবা তেলে ভাব নিয়ে বিরক্ত, তাদের জন্য।
হেয়ার এসেন্স
এটা শুধু চুলের যত্নের জন্য। নানাবিধ শক্তিশালী উপাদান দিয়ে বিশেষ ফর্মুলায় তৈরি এসব হেয়ার এসেন্স আর্দ্রতাকে আটকে রাখে চুলের ভেতর। লিভ ইন কন্ডিশনারের মতোই এর ব্যবহার। চুলে দিয়ে ম্যাসাজ করে নিতে হবে আলতো হাতে। এতে সেরাম সহজে এবং দ্রুত শুষে নেবে চুল।
ওভারনাইট ট্রিটমেন্ট
চুলের বাড়তি পরিচর্যার জন্য দারুণ উপযোগী ওভারনাইট হেয়ার প্যাক। সপ্তাহে এক থেকে দুবার চুল শ্যাম্পু করে, তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে, সেরাম ও এসেন্স মাখার পর ব্যবহার করতে হবে ওভারনাইট ট্রিটমেন্টগুলো। তারপর রাতভর রেখে দিন চুলে। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে পারেন। পরের দিন সকালে উঠে ধুয়ে নিলেই দেখা যাবে, সুন্দর হয়ে উঠেছে চুল।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নিকি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন