ফিচার I চুল রাঙানোর পূর্বাপর
হেয়ার কালারিং নিয়ে শঙ্কা? সামান্য সতর্কতা আর দেখভালই হতে পারে দারুণ সমাধান
আজও অনেকের ধারণা, চুলে রঙ করলেই এর বারোটা বাজবে, হুড়মুড়িয়ে চুল পড়বে, পাকা চুল বাড়বে। শুধু একটা নয়, হাজারো মিথ। কিন্তু এর সত্যতা শূন্য। হেয়ার কালারিংয়ের সময় এবং পরে তো বটেই, আগেও যদি একটু সতর্ক থাকা যায়, তাহলেই সামলে নেওয়া যায় সমস্যা। চুল সুন্দর রঙিন হয়ে ওঠে পছন্দসই রঙে।
প্রক্রিয়ার আগে
প্রথমেই বেছে নিতে হবে কালারিস্ট। পরিচিত মানুষজনের পাশাপাশি অনলাইন রিভিউ দেখে বেছে নেওয়া যেতে পারে পছন্দের প্রতিষ্ঠান কিংবা কালারিস্ট। তারপর পরামর্শ সেরে নেওয়ার পালা। এটা খুব জরুরি হলেও অনেকেই এড়িয়ে যান। কালার করার আগে কালারিস্টের সঙ্গে কথা বলে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন কোন ধরনের লুক আসবে রাঙানোর পর। এমনকি শেড আর টেকনিক নিয়েও যদি আলাপ সেরে নেওয়া যায়, তাহলে সুবিধাজনকটা বেছে নেওয়া যায় সহজে। সে সময় পছন্দের হেয়ার কালার বা লুকের একটা ছবি সঙ্গে নিয়ে গেলে কালারিস্টের কাজটাও সহজ হয়। চাহিদা বুঝে, ত্বকের টোনের সঙ্গে মিলিয়ে সেরা পরামর্শটা পাওয়া যায় তখন। এ ছাড়া চুল কাটার পরিকল্পনা থাকলে কালার করার আগেই তা সেরে নিলে ভালো। এতে একদম টোটাল লুকটা পাওয়া যায়। হেয়ার পার্ম বা রিবন্ডিংয়ের মতো ট্রিটমেন্টগুলোও সেরে নেওয়া প্রয়োজন কালারিংয়ের আগেই। ভার্জিন হেয়ার অর্থাৎ মেহেদি কিংবা ডাই করা নেই এমন চুলে রঙ সবচেয়ে ভালো বসে। তাই মেহেদি ব্যবহারের পর কিংবা কালারিংয়ের পর নির্দিষ্ট সময়ের আগে কালার ব্যবহার না করাই ভালো। প্রক্রিয়া শুরুর প্রথমেই প্যাচ টেস্ট করিয়ে রাখা ভালো। অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন এড়ানোর জন্য। শেড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পছন্দ প্রাধান্য পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সাবধানি হওয়া প্রয়োজন। ত্বকরঙের সঙ্গে মিলিয়ে সবচেয়ে মানানসইটা বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। রাঙানোর আগের দিন ভালো ব্র্যান্ডের ক্ল্যারিফায়িং শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে হাইড্রেটিং হেয়ারমাস্ক। এতে চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকবে কালার করার পরও। যাদের মাথার ত্বক বেশি শুষ্ক, কালারিংয়ের আগে স্ক্যাল্পে তেল ব্যবহার জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যারা প্রথমবার চুল রাঙাতে যাচ্ছেন, শুরুতেই খুব এক্সপেরিমেন্টাল কিছু না করাই ভালো। সেমি পার্মানেন্ট গ্লস কিংবা হাইলাইটস দিয়েও সুন্দর রাঙানো যায় চুল।
প্রক্রিয়ার পর
কালারিংয়ের পরও প্রয়োজন নিয়মিত পরিচর্যা। এতে চুলের রঙ সুন্দর থাকবে। টিকে থাকবে দীর্ঘ সময়ের জন্য। অনেকেরই ধারণা, প্রক্রিয়া শেষে সঙ্গে সঙ্গে চুল ধোয়া যায় না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। কালার করার নির্দিষ্ট সময় পর শ্যাম্পু ব্যবহার করাই যায়। তবে ব্যবহার করতে হবে হেয়ার কালার রেঞ্জ। বিশেষভাবে রঙিন চুলের জন্য তৈরি। শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, লিভ ইন সিরাম থেকে ট্রিটমেন্ট মাস্ক— সবই মিলবে এতে। রঙবান্ধব এ হেয়ার প্রোডাক্টগুলো চুলের প্রয়োজন মেটায় পরিপূর্ণভাবে। কিন্তু রঙের একচুল ক্ষতি করে না। সূর্য থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে রঙিন চুল। টুপি, স্কার্ফ কিংবা ইউভি প্রটেকশন স্প্রে— চুলের প্রয়োজন বুঝে বেছে নিতে হবে যেকোনোটি। কারণ, সূর্যের আলোতে চুল শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, রঙ তামাটে হতেও শুরু করে। দেখায় ম্যাড়ম্যাড়ে, অনুজ্জ্বল। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি আর সুইমিংপুলের ক্লোরিনযুক্ত পানিও রঙিন চুলের জন্য ক্ষতিকর। রঙ নষ্ট করে দেয়। এমনকি বেশি দিন টিকতেও দেয় না চুলে। তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন এ ক্ষেত্রে। তা ছাড়া হেয়ার কালার করার পর চুলের যত্নে বিশেষ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট জরুরি। নিয়মিত কো-ওয়াশিং, হট অয়েল ট্রিটমেন্টের সঙ্গে বিশেষ এসব পরিচর্যা কালার করা চুলের যত্নে দারুণ। অ্যাভোকাডো, কলা, দই, মধু, নারকেলের দুধ, অ্যালোভেরা কিংবা ভিটামিন ই অয়েলযুক্ত পরিচর্যা মাস্ক ব্যবহার করা চাই নিয়মিত। যেগুলো বিশেষভাবে কালার করা চুলের জন্য তৈরি। ভালো কোনো স্যালনে গিয়ে বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে মাসে অন্তত একবার প্রফেশনাল ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে পারলে তো আরও ভালো।
কালার ট্রেন্ড ২০১৯
বছর বদলের সঙ্গে পাল্টে যায় হেয়ার কালারের ট্রেন্ড। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। শীর্ষে রয়েছে অ্যাশি সিলভার। সব ধরনের ত্বকরঙে মানিয়ে যায়। দেয় স্মার্ট সফিস্টিকেটেড লুক। সলিড ছাড়াও সুন্দর ওমব্রে, এমনকি হাইলাইটসও করে নেওয়া হচ্ছে সিলভারে। দেদার চলছে মাশরুম ব্রাউনও। ব্রুনেটের সঙ্গে অ্যাশের সংগতে তৈরি এই সফট শেড একদম সামারপ্রুফ। একটু লালচে বাদামি ঘেঁষা হেয়ার কালার যাদের পছন্দ, বেছে নিতে পারেন কোরাল কপার, কোল্ড ব্রিউ, রিচ কপার, স্ট্রবেরি হানি, ডিপ অবার্ন, মোকা লাত্তে ক্যারোব রঙা শেডগুলো। গেলবারের রোজ গোল্ড হেয়ার ট্রেন্ডকে হটিয়ে এ বছরের হটেস্ট ট্রেন্ড লাইলাক হেয়ার। যারা চুলের রঙ নিয়ে নিরীক্ষা পছন্দ করেন, তারা অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন এই প্যাস্টেল পার্পেল শেড।
জাহেরা শিরীন
মডেল: স্পৃহা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন