ফিচার I নির্ঘুম রাতের ত্বকযত্ন
ইফতার থেকে সেহরির সময়টুকুতে ঘুমের ঘাটতি হয় অনেকেরই। অনেক সময় সেহরির পরও ঘুমানো যায় না। এর মাশুল বর্তায় ত্বকে। এর মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব? লিখেছেন আহমেদ বুবলি
রোজা পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হচ্ছে ভোররাতে উঠে খাওয়া। তাই রাতের খাওয়া সেরে নেওয়ার পর আবার খেতে ওঠা পর্যন্ত সময়টুকুতে ঘুম নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। অনেকে আবার ভোররাতের খাওয়া সেরে ঘুমুতে যান। কিন্তু এতে পর্যাপ্ত ঘুমানো সম্ভব হয় না। বিশেষ করে নারীদের। সকালে খুব দেরি করে ওঠা অনেকের জন্য সম্ভব নয়। এই যে কম ঘুম বা ঠিকমতো ঘুম হলোই না, এর প্রভাব শরীর ও মনের ওপর পড়ে। নিদ্রাহীনতার ক্লান্তি আর অবসাদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে চেহারায়। ত্বকে এর বিরূপ প্রভাবও পড়ে। বিশেষ করে ত্বক মলিন হয়ে পড়া, চোখের নিচে ফোলা ভাব, ডার্ক সার্কেলসহ ব্রণ, র্যাশ নানান সমস্যায় পড়তে হয়। চেহারায় ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ। এর কারণ হলো ঘুমের সময় আমাদের শরীর তার মৃত কোষগুলোকে সরিয়ে নতুন কোষ তৈরি করে এবং সেগুলো পুষ্টির জোগান দেয়। তাই কম ঘুমের জন্য ত্বককেও মূল্য দিতে হয়। তাহলে কি এই মলিন চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন? এ থেকে পরিত্রাণেরও উপায় রয়েছে।
চেহারার মনমরা ভাব কাটিয়ে তুলতে এক্সফোলিয়েশন বেশ কার্যকর। তবে মনে রাখতে হবে, এটা করতে গিয়ে ত্বকে খুব জোরে চাপ দেবেন না। আলতো করে ম্যাসাজ করে নিন, এতে আপনার এক্সফোলিয়েটর ভালো কাজ দেবে।
চোখের নিচের পাফিনেস বা ফোলা ভাব থেকে মুক্তি পেতে পনেরো মিনিটের আইমাস্কই যথেষ্ট। মাস্কটি লাগানোর আগে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে দিন। এর ঠান্ডা ভাব পাফিনেস কমাতে সাহায্য করবে। মাস্কে শসা বা অ্যালোভেরা যোগ করলে এটি ভালো কাজ দেবে।
ইফতারের পর প্রচুর পানি পান করুন। মুখত্বকের হাইড্রেশন সে সময় খুব জরুরি হয়ে পড়ে। কেননা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে তা কমে যায়। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত আট গ্লাস পানি পান করা দরকার।
রাতে ঘুমের ঘাটতিজনিত যে ক্লান্তি, তা দূর করার বেশ ভালো একটি উপায় হতে পারে অ্যালোভেরা। ত্বককে ক্লান্তির ছাপ থেকে বের করে প্রশান্ত করে তোলার এটি একটি মোক্ষম দাওয়াই। অ্যালোভেরার রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও হাইড্রেট করার গুণ, যা ত্বকের শুষ্কতা ও জ্বলুনির চিকিৎসায় কার্যকর সমন্বয়। সকালের রুটিন শুরুর আগে অ্যালোভেরা জেলের একটি পাতলা স্তর পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। চাইলে ফ্রিজে রেখে একটু ঠান্ডা করে নেওয়া যায়। এতে বেশ আরাম পাওয়া যাবে। চোখের নিচের ফোলা ভাব কমাতে এটি সহায়ক। কয়েক মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন আর পরিচর্যার নিয়মিত রুটিনের সঙ্গে এটি যুক্ত করে সতেজ ত্বক উপভোগ করুন।
কারও ভালো ঘুম হয়নি— এটি বোঝা যায় তার নিষ্প্রভ ত্বক দেখলেই। কেননা ঘুম না হওয়ার প্রভাব বেশি পড়ে মুখাবয়বে। একে উজ্জ্বলতায় রূপান্তরের চাবি হলো এক্সফোলিয়েশন। সে জন্য নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন ঘরোয়া কিছু স্ক্রাব। এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ অর্গানিক ব্রাউন সুগার, দেড় টেবিল চামচ জোজোবা অয়েল এবং কয়েক ফোঁটা ফ্র্যাঙ্কিনসেন্স এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। পুরো মুখে মিশ্রণটি সমানভাবে লাগিয়ে বৃত্তাকারে স্ক্রাব করে নিন। এটি রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করবে এবং মৃত ত্বক থেকে মুক্তি দেবে। এ ছাড়া মিশ্রণটি টোনার হিসেবেও কাজ করবে ও লোমকূপ সংকুচিত করবে। ধুয়ে ফেলার পর যে নতুন কোমলতা পাবেন, তা ধরে রাখার জন্য একটি ভালো ফেশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
ত্বকের জন্য ঘুম খুব ভালো। কেননা এ সময়টাতে ত্বক ইউভি রশ্মি, পরিবেশগত ক্ষতি থেকে দূরে থাকে। তাই ঘুম ছাড়া ত্বক ঠিকঠাক হওয়ার সুযোগ পায় না। নিয়মিত ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে কিংবা একেবারে ঘুম না হলে এর প্রভাব ত্বকে বেশ ভালোভাবেই পড়ে। এক রাতের কম ঘুম তেমন কোনো ক্ষতির কারণ হয় না, কিন্তু নিয়মিত কম ঘুম হওয়ার ফল নিস্তেজ ত্বক ও বিরক্তিকর ব্রণ। এমনটা হলে সকালের ক্লিনজার দ্বিগুণ করে দিন। ব্যবহার করুন ফেশিয়াল ক্লিনজিং অয়েল, যা ময়লাযুক্ত ও মৃত ত্বক নরম করে সহজে মুছে নিতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে কোমল রাখবে। এরপর সামান্য মাইসেলার ওয়াটার নিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এটি ত্বক পরিষ্কার ও হাইড্রেট করে।
ডার্ক সার্কেল হলে পুরো চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কালো হয়ে যাওয়া জায়গাটিতে সানস্ক্রিন সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার লাগাতে পারেন। এটি ত্বকে উজ্জ্বলতা তৈরি করে এবং এমন দীপ্তি ছড়ায়, আপনার ইলুমিনেটরেরও দরকার হবে না। আলতো করে এটি চোখের কালো অংশে লাগিয়ে নিন।
এ ছাড়া মাত্র বিশ মিনিটের একটি কার্ডিও ওয়ার্ক আউট দ্রুত নিষ্প্রভ চেহারা প্রাণবন্ত করে দেবে। মাঝে মাঝে স্প্লাশ বা ঠান্ডা পানির ঝাপটা মুখে দিলে ত্বক সতেজ থাকবে আর গরমে আরামও পাওয়া যাবে। এতে খুব কম সময়ে নিজেকে ফ্রেশ দেখবেন।
রোজার সময় ইফতারে ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার বেশি খাওয়া হয়। যতটা সম্ভব সেসব এড়িয়ে চলুন। খাদ্যতালিকায় রাখুন তাজা ফল ও সবজি। ফলের রস ত্বকের সতেজতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। কম ঘুমের কারণে দেহে কর্টিসল হরমোনের ক্ষয় হয়, যাকে আবার স্ট্রেস হরমোনও বলা হয়। এটি কোলাজেন ভেঙে দেয়। ফলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে ও মলিন ভাব আসে। তাই যতটা পারা যায় খাবারের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। আর রোজার সময় নিজেকে দেখুন একেবারে প্রাণবন্ত লুকে।
মডেল: মানসী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন