ফিচার I জাদুকরি জল
পাহাড়ের গভীরে সংরক্ষিত পানি। পরিবেশের সব দূষণ থেকে নিরাপদ। এতেই তৈরি হচ্ছে ক্রিম, সেরাম থেকে স্প্রে মিস্ট। দাগছোপ আর বলিরেখা রুখতে
থার্মাল ওয়াটার। মূলত পানি। কিন্তু জাদুকরি। সংগৃহীত হয় হট স্প্রিং থেকে। পৃথিবীর অনেক স্থানেই জিওথার্মাল অ্যাকটিভিটি অর্থাৎ প্রাকৃতিক তাপ উৎপাদিত হয়। ফলে মাটির গভীরে থাকা পানি উত্তপ্ত হয়। উঠে আসে মাটির উপরে। উদ্গিরণ হয় ঝরনাকারে, হট স্প্রিং হয়ে। আর তা থেকেই আসে থার্মাল ওয়াটার। মাটি আর পাথর ছুঁয়ে আসা এই পানির সঙ্গে প্রাকৃতিকভাবেই মিশে থাকে হরেক রকমের মিনারেল। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড কিংবা সালফেটের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত এ উপাদানগুলোর প্রতিটি ত্বকবান্ধব। পিএইচের ভারসাম্য বজায় রেখে কোনোটার কাজ ত্বককে আর্দ্র রাখা তো কোনোটা স্বস্তি জুগিয়ে কমায় ত্বকের লালচে ভাব। দাগছোপ কাটিয়ে উঠতেও সমান কার্যকর। থার্মাল ওয়াটার ত্বকে তৈরি করে সুরক্ষা বলয়। সূর্য আর পারিপার্শ্বিক দূষণ থেকে। বলিরেখা দূর করতেও চমৎকার এটি। সেই সঙ্গে ত্বকের পূর্ণ উৎপাদন পায় ভিন্ন মাত্রা। যোগ হয় বাড়তি জেল্লা। এমনকি মেকআপের জন্য তৈরি করে তোলে ত্বককে। টিকিয়ে রাখে বহুক্ষণ। সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী— এমনকি তা সংবেদনশীল হলেও। ব্যবহার করা যায় সব বয়সে। কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই গেল কয়েক বছরে স্পা সেন্টারগুলোতে ব্যবহার বেড়েছে থার্মাল ওয়াটারের। তবে সুখবর রয়েছে। এর উপকারিতা উপভোগের জন্য এখন আর স্পাতে ছোটাছুটি করতে হবে না। বোতলবন্দি করার ব্যবস্থা হয়েছে এ জাদুকরি জল। শুরুটা অ্যাভেন, লা রোশ পোসে আর ভিশির মতো ফরাসি ব্র্যান্ডগুলোর পরীক্ষাগারে। এখন বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডও ঝুঁকছে। থার্মাল ওয়াটারে তৈরি হচ্ছে হাইড্রেটিং ক্রিম, মাস্ক, স্ক্রাব, লিপবাম, লোশন, ক্লিনজার, স্প্রে মিস্ট। সাড়াও মিলছে বেশ।
আর্দ্রতায়
প্রচন্ড গরম বা শর্ত কোনোটাই ত্বকের জন্য সুখকর নয়। ডিহাইড্রেটেড করে দেয় বলে ত্বক হারায় তার স্বাভাবিক জেল্লা। সে ক্ষেত্রে জরুরি আর্দ্রতার জোগান দিতে ময়শ্চারাইজার, ক্রিম বা লোশনের বিকল্প নেই, কিন্তু থার্মাল ওয়াটার ত্বককে হাইড্রেশন দিতে চমৎকার। তাই সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ত্বক পরিষ্কারের পর, ময়শ্চারাইজার মাখার আগে এটি ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। বাড়তি পরিষ্কারের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি এটা আর্দ্রতার আদুরে পরতে ঢেকে দেবে ত্বককে। শুষ্ক কিংবা স্পর্শকাতর ত্বকের কোমলতা ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। অনেক সময়ই এর সঙ্গে মিশ্রিত থাকে এসেনশিয়াল অয়েল অথবা ফলের নির্যাস। যা থার্মাল ওয়াটারের সঙ্গেই শুষে নেয় ত্বক। পায় বাড়তি ফায়দা। দিনের যেকোনো সময়ই ত্বকে আর্দ্রতার অভাব অনুভূত হলেই ব্যবহার করা যায়। সেই সঙ্গে ময়শ্চারাইজিং মাস্ক হিসেবেও রয়েছে এর কার্যকারিতা। পাতলা এক টুকরো কাপড়ে থার্মাল ওয়াটার স্প্রে করে ভিজিয়ে নিয়ে তা মুখের উপর রেখে দিন। মিনিটখানেকের মধ্যে পানি শুষে নেবে ত্বক। দেবে কোমলতা। জিমে যাওয়ার সময় সঙ্গে নেওয়া যায় এই স্প্রে। ব্যায়ামের সময় ত্বক থেকে বেরিয়ে যাওয়া মিনারেলের অভাব মেটাবে এটা। ত্বকের ভারসাম্য বজায় থাকবে। দেখাবে সতেজ।
সতেজতায়
ত্বকের ক্লান্ত ভাব কাটিয়ে উঠতে কুইক ফিক্স থার্মাল ওয়াটার। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পার্টিকেলগুলো চটজলদি ত্বকের ম্লান ভাব সারাই করে, ফিরিয়ে দেয় স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা। জ্বালাপোড়া ভাব, একজিমা, সোরাইসিস আর চুলকানি সারিয়ে ত্বককে আরাম দিতে সমান কার্যকর থার্মাল ওয়াটার। শুধু কি তাই, ফেশিয়ালের কিংবা ওয়াক্সিংয়ের পর ত্বকের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতেও দারুণ এটি। এমনিতে স্প্রে করে নিলেই চলে, তবে বেশি জ্বালাপোড়ার জন্য নেওয়া যায় বিশেষ ব্যবস্থা। একটা টিস্যু কিংবা নরম কাপড় থার্মাল ওয়াটারে ভিজিয়ে নিয়ে সংক্রমিত স্থানে চেপে ধরে থাকা যায় মিনিট দশেক। তারপর স্প্রে করে নিলেই দেখা যাবে জাদু। জ্বালাপোড়া ভাব উধাও। সতেজ সুন্দর ত্বক দৃশ্যমান।
সুরক্ষায়
ফ্রি র্যাডিকেলের কথা জানা আছে নিশ্চয়ই! সূর্যের আলো থেকে সৃষ্ট ক্ষতিকর এ রশ্মি ত্বকের বারোটা বাজিয়ে দিতে একাই এক শ। এগুলো ত্বকের এমন কিছু ফাইবারের ওপর হামলে পড়ে, যেসব তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলাফল অকালে বুড়িয়ে যেতে শুরু করে ত্বক। কিন্তু এই সমস্যাও রুখতে পারে থার্মাল ওয়াটার। এতে থাকা সেলেনিয়াম, জিংক আর কপার ত্বকের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এনজাইমগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে সচল রাখতে সাহায্য করে, যা ফ্রি র্যাডিকেল শুষে নেয়। ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায় ত্বক।
সৌন্দর্যে
এটি পানি মেকআপেও বেশ কাজে লাগে। ফাউন্ডেশন ব্লেন্ড করার সময় ব্যবহৃত হতে পারে। বিউটি ব্লেন্ডার থার্মাল ওয়াটারে ভিজিয়ে নিয়ে ব্লেন্ড করা যেতে পারে। এতে করে কম ফাউন্ডেশনে বেশি কাভারেজ মিলবে। সঙ্গে বাড়তি আর্দ্রতার জোগান তো থাকছেই। দেখাবেও একদম ন্যাচারাল। মেকআপ সেটিং স্প্রে হিসেবেও কম যায় না থার্মাল ওয়াটার। এতে থাকা সেলেনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন আর জিংক ত্বকে মেকআপ টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময়, নিখুঁতভাবে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: মিথিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন