ফরহিম I ব্রোটক্স
বয়সের ছাপ দূর করার মোক্ষম এক উপায়। এতে তারুণ্য ধরে রাখা যায় মাসের পর মাস
বিভিন্ন ধরনের কসমেটিক ট্রিটমেন্টের মধ্যে বোটক্স সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে শুধু মেয়েরাই বোটক্স করে থাকে, এমন ধারণা করা হলেও আমেরিকান সোসাইটি অব প্লাস্টিক সার্জনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে বোটক্স করতে চাওয়া ছেলেদের সংখ্যা বেড়েছে ৩৫৫ শতাংশ! আর ছেলেদের বোটক্সকেই আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয় ‘ব্রোটক্স’ নামে।
ব্রোটক্স সুচের মাধ্যমে ত্বকের ফাইন লাইনগুলো সমান করা এবং বলিরেখা দূর করে ত্বককে বয়সের ছাপ পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার একটি কসমেটিক প্রক্রিয়া। ব্রোটক্সের মাধ্যমে ত্বকের পেশিগুলোকে স্থির ও নিরুত্তেজ করে চেহারার কুঁচকে যাওয়া ভাব কমিয়ে আনা হয়। ছেলেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্রোটক্সের ব্যবহার করে থাকেন কপালে। এ ছাড়া চোখের চারপাশে, ঠোঁটের দুই পাশে কিংবা আইব্রাওয়ের আশপাশেও করা যায় এই ট্রিটমেন্ট। খুব বেশি ঝামেলাযুক্ত কিংবা সময়সাপেক্ষ না হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বেশি। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। অর্থাৎ খুব ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও শুধু লাঞ্চ ব্রেকে গিয়ে করিয়ে নিতে পারেন এটি। প্রায় সব ক্ষেত্রে ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই ত্বকে ব্রোটক্সের প্রভাব অনুভব করা যায়।
ছেলেদের ব্রোটক্সের দিকে ঝুঁকে পড়ার রয়েছে বেশ কিছু কারণ। সেগুলো মেয়েদের থেকে খুব ভিন্ন নয়। বয়সের ছাপ কিংবা চেহারার গঠনের দিকে মেয়েরা বেশি জোর দিলেও একই প্রবণতা থেকে মুক্ত নয় ছেলেরাও। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক প্রসারের কারণে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও এখন নিজেদের শারীরিক উপস্থিতি নিয়ে ভাবেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের কিছু তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, আজকাল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শারীরিক উপস্থিতির সঙ্গে আপনার পেশাগত জীবনের উন্নতি সরাসরি জড়িত। এ ছাড়া যখন আপনাকে বাইরে থেকে দেখতে সবচেয়ে ভালো লাগবে, তখনই আত্মবিশ্বাস আর মর্যাদাবোধ বেড়ে যাবে কয়েক গুণ, যা প্রতিদিনের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্রোটক্সের বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে।
এটি পরীক্ষিত যে, ব্রোটক্স চেহারার বলিরেখা দূর করে। আইব্রাও, চোখের চারপাশের সংবেদনশীল অংশ, ঠোঁটের দুপাশের হাসির রেখা— এই সব স্থানেই ব্রোটক্স করা সম্ভব।
ব্রোটক্স মাইগ্রেনের ব্যথা কমিয়ে আনতে সক্ষম। এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলেও মেডিকেল এক্সপার্টদের ধারণা, সংবেদনশীল স্নায়ুগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এটি ব্যথাকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয় না। এ ছাড়া ব্রোটক্স পেশিকে নিরুত্তেজ করে দুশ্চিন্তা থেকে তৈরি হওয়া মাথাব্যথারও প্রশমন ঘটায়।
ঘাম কমিয়ে আনতে সাহায্য করে, হোক সেটা হাতের তালুর কিংবা বগলের। ব্রোটক্সের এক দিনের ট্রিটমেন্ট মাসের পর মাস অতিরিক্ত ঘাম এতে সৃষ্ট কাপড়ের দাগ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যেকোনো স্থানের পেশি কুঁচকে যাওয়া, বিশেষ করে চোখের চারপাশের কুঁচকানো ভাব দূর করতে ব্রোটক্স খুব কার্যকর।
এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। ব্রোটক্স করার পরপরই সুই দেওয়া অংশের আশপাশে কিছুটা ব্যথা হতে পারে। সামান্য মাথাব্যথা আর অবশতাও আসতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এমন হতে দেখা যায়। আইব্রাও কিংবা চোখের পাতা একটু নুয়ে পড়া দেখায়, কিন্তু তা আবার এক মাসের মধ্যেই নিজের জায়গায় ফিরে আসে। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়ার কোনোটিই এক সপ্তাহের বেশি থাকে না।
কোন ডার্মাটোলজিস্টের কাছে ব্রোটক্স করাবেন, তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রক্রিয়ার আগেই তার সঙ্গে আলোচনা করে নিন। ব্রোটক্স যতটা স্বাভাবিক দেখায় ততই ভালো। যদি আপনি কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকেন, তাহলে ব্রোটক্স করাবেন না। ব্রোটক্স করানোর কমপক্ষে ২ সপ্তাহ আগে থেকে কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া বন্ধ না করলে এর অপকারিতাগুলো স্থায়ী হতে পারে। ডার্মাটোলজিস্টকে আপনার গ্রহণ করা ওষুধগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।
শিরিন অন্যা
মডেল: তন্ময়
মেকওভার: পারসোনা মেন্জ্
ছবি: সৈয়দ অয়ন