অর্গানিক I ত্বকের ফলাহার
শুধু খেতেই উপাদেয় নয়, ত্বকের জন্যও উপকারী। তাই ফল হচ্ছে বোতলবন্দি। কখনো শাঁস তো কখনো নির্যাসে তৈরি হচ্ছে অর্গানিক সব স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। বাদ পড়ছে না খোসাও
যারা ফল খেতে ভালোবাসেন, তাদের তো রীতিমতো জিভে জল এসে যাবে ফ্রুট বেসড স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলোর উপাদানের তালিকায় একবার চোখ বোলালে! অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ করা তাজা ফলগুলো থেঁতো করে নেওয়া হয় প্রথমে। প্রসেস না করেই সংগ্রহ করা হয় পাল্প। নিংড়ে নেওয়া হয় নির্যাস। তারপর এর সঙ্গে মেশানো হয় খাঁটি মধু, হলুদ, গোলাপজলসহ হরেক রকম ত্বকবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদান। তৈরি হয় ত্বকের পরিচর্যার জন্য অভিনব সব অর্গানিক প্রোডাক্ট। ভেতর থেকে সুস্থ, উজ্জ্বল, ঝলমলে ত্বক পেতে চাইলে এসব ফ্রুট বেসড প্রোডাক্টগুলো হতে পারে সেরা সমাধান।
তরমুজে তাজা
সেরা সুপারফ্রুটের খেতাব এখন তরমুজের দখলে। সামার স্ন্যাক হিসেবে জনপ্রিয় এ ফল ৯২ শতাংশ পানিতে তৈরি। শুধু তা-ই নয়, এতে আরও মিলবে ভিটামিন এ, বি৬ এবং সি। এ ছাড়া রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড আর লাইকোপেনের মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাই তরমুজে তৈরি ক্রিম, সেরাম, স্ক্রাব, লিপ বাম বা শিট মাস্ক যখন ত্বকে মাখানো হয় এবং ত্বক তা শুষে নেয়, ফিরে পায় তার হারানো সতেজতা। সঙ্গে যোগ হয় উজ্জ্বল শিশিরসিক্ত ভাব।
কিউই কীর্তি
কিউই হচ্ছে বয়স রোধের শস্ত্র। এতে থাকা ভিটামিন সি সূর্যালোকের ফলে সৃষ্ট দাগছোপ আর অকালে বুড়িয়ে যাওয়াকে রুখে দেয়। শুধু কি তাই! ভিটামিন ই-এরও আধার এই ফল। যা ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতির হাত থেকেও বাঁচায় ত্বককে। করে তোলে উজ্জ্বল। তাই কিউইতে তৈরি হচ্ছে ফেসওয়াশ, মিস্ট, বডিওয়াশ, বডিবাটার, ক্রিমবার থেকে নিয়ে বাথ সল্ট পর্যন্ত। ব্যস্ততার কারণে যারা কিউই মাখতে পারছেন না ত্বকে, তারা অনায়াসেই সমগুণের এ স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো যোগ করতে পারেন দৈনন্দিন রূপচর্চায়।
স্ট্রবেরিতে সারাই
সমস্যাযুক্ত ত্বক? সেরা সমাধান স্ট্রবেরি। প্রাকৃতিকভাবে অ্যাসিডিক এ ফল ত্বকের বাড়তি সেবাম আর তৈলাক্ততা সারায় চটজলদি। অবাঞ্ছিত দাগও দূর করে। এমনকি ব্রণের কঠিন দাগও দূর হয়ে যায় এতে। আর বাড়তি প্রাপ্তি হিসেবে ভরপুর ভিটামিন সি তো থাকছেই। ত্বকের জেল্লা বাড়াতে। তাই স্ট্রবেরিতে তৈরি ত্বকযত্নের পণ্যগুলো ব্যবহারে উপকারিতার ক্ষেত্রে কোনো আপোস হবে না। শতভাগ নিশ্চিত।
আঙুরের আস্বাদ
আঙুর টক হোক বা মিষ্টি, ত্বকের যত্নে এর উপকারিতা এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। এর বিচি থেকে শাঁস— সবই ত্বকযত্নের জন্য তৈরি পণ্যের দারুণ উপাদান। কারণ, আঙুরে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শুধু পারিপার্শ্বিক দূষণ থেকেই ত্বককে রক্ষা করে না, বয়সও বাড়তে দেয় না অকালে। ব্রণ আর অ্যাকনের সংক্রমণ রুখতেও সক্ষম এই ফল। তাই আঙুরের গুণ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা আর প্রশংসা করে এসেছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্র্যান্ডগুলোও ঝুঁকছে এতে তৈরি সৌন্দর্যপণ্য উৎপাদনে। তৈরি হচ্ছে ক্লিনজার, এসেন্স আর নাইটক্রিমের মতো হাইএন্ড স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। কাটতিও চোখে পড়ার মতো।
আশ্চর্য অ্যাভোকাডো
স্বাস্থ্যকর চর্বি আর অ্যান্টি-এজিং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের আধার এই ফল। ভিটামিন আর মিনারেলও এতে রয়েছে মেলা। বি, সি, ই এবং কে ছাড়াও অ্যাভোকাডোতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, বেটা ক্যারোটিন, ওমেগা থ্রি। তাই এতে তৈরি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট নিশ্চিন্তে ব্যবহারের উপযোগী। বছরজুড়ে, যেকোনো সময় ঝলমলিয়ে উঠতে এটি সেরা এক অপশন।
প্রয়োজন পেঁপে
অত্যন্ত সহজলভ্য এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ভেতর থেকে পরিষ্কার তো করেই, জমে থাকা মৃতকোষও তুলে আনে সহজে। কারণ, এতে থাকা প্যাপেইন এনজাইম কাজ করে প্রাকৃতিক কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে। ফলাফল, তারুণ্য হোক বা উজ্জ্বলতা— সবই ম্যাজিকের মতো বাড়তে থাকে। ত্বক হয়ে ওঠে ভেতর থেকে পরিপুষ্ট।
আপেলে পেলব
শুধু শরীরের সুস্থতাই নয়, আপেল নিশ্চিত করে ত্বকের সৌন্দর্যও। শরীরকে যেমন বুড়িয়ে যেতে দেয় না এই ফল, তেমনি ত্বকের তারুণ্যোজ্জ্বল ভাব ধরে রাখতেও কার্যকর আপেল। ফলটি ত্বককোষ পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে একে বলা যায় প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন। কারণ, আপেল ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। ক্ষতি পুষিয়ে দেয় পরিপূর্ণভাবে। এমনকি এতে থাকা এসকরবিক অ্যাসিড ত্বকের বলিরেখা আর সূক্ষ্মরেখা সারিয়েও তোলে। তাই আপেলের নির্যাসে তৈরি এজ ডিফেন্স প্রোডাক্টগুলোর কদর এখন বিশ্বজুড়ে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নীল
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন