ই-শপ I এফ অ্যান্ড সি
নিজের ব্যবসা সফলভাবে দাঁড় করানো খুব কঠিন। অন্যদিকে বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে মনমতো চাকরি পাওয়াও সহজ নয়। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। এসব ভেবেই ডিজিটাল পেশার জগতে প্রবেশ করেছেন এফ অ্যান্ড সির কর্ণধার ইশরাত জাহান। আগে ফটোগ্রাফি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন সমকাল এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। মাস্টার্স শেষে বিভিন্ন রকমের চাকরি খুঁজলেও মনমতো পাচ্ছিলেন না কিছুই। আর এভাবেই জন্ম এফ অ্যান্ড সির।
২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু এফ অ্যান্ড সির ফেসবুক পেজের যাত্রা। এফ অ্যান্ড সি ‘ফ্যাশন অ্যান্ড ক্লিক’ কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ। ফটোগ্রাফি আর ফ্যাশনের প্রতি ভালোবাসা থেকে এই নাম। ফ্যাশনের ক্ষেত্রে বিবি রাসেল থেকে বেশ অনুপ্রাণিত হন ইশরাত। এ ছাড়া তার একজন খুব কাছের বন্ধু, যিনি বাংলাদেশের একটি বড় ফ্যাশন হাউজের সিনিয়র ডিজাইনার, তিনিও ইশরাতকে উৎসাহ জোগান এই ই-শপ শুরু করার জন্য। পেজটি সব ইন হাউজ প্রোডাক্ট বিক্রি করে থাকে। অর্থাৎ সব পোশাকের ডিজাইন ইশরাত নিজেই করেন। পোশাকগুলো তৈরি হয় নিজের কারখানাতেই। জামা বিক্রির অনলাইন পেজ বর্তমানে কম নয়। চাহিদা ব্যাপক বলে অনেক সময়ই সব পোশাকের মান এক হয় না। তবে এফ অ্যান্ড সি সব পোশাকে একই মান ধরে রাখার চেষ্টা করে। হোক সেটা ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে কিংবা ডিজাইনের দিক থেকে। কাস্টমারের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সব ধরনের সেবায় নিবেদিত ইশরাত।
শুধু মেয়েদের জামা নিয়ে কাজ করে থাকে এফ অ্যান্ড সি। এসব পোশাকের মূল উপাদান জর্জেট কাপড়। উন্নত মানের জর্জেট কাপড়ের ওপর কারচুপি আর এমব্রয়ডারি করে তৈরি করা হয় বিভিন্ন পোশাক। কটনের কামিজও তৈরি করেন ইশরাত। কিছু পোশাকে থাকে হ্যান্ড প্রিন্টের কাজ। মেয়েদের সিঙ্গেল কামিজ আর থ্রিপিসই মূল প্রোডাক্ট। তবে গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজড পোশাকও তৈরি করা হয়ে থাকে। ডিজাইনার শাড়িও আছে তার প্রোডাক্টের তালিকায়। শাড়ির মূল উপাদান মসলিন, সিল্ক আর জর্জেট। সিঙ্গেল কামিজের দাম ২০০০ থেকে শুরু করে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত। এই পেজের থ্রিপিস পাওয়া যায় ৫৫০০ থেকে ১৫০০০ টাকা পর্যন্ত। আর ডিজাইনভেদে শাড়ির দাম পড়বে ৮৫০০ থেকে ৫৫০০০ টাকার মধ্যে। পেজটির ফেসবুক লিঙ্ক: https://www.facebook.com/fashionandclick/
কোনো আউটলেট নেই এফ অ্যান্ড সির। তবে ঢাকার পান্থপথে একটা স্টুডিও আছে। অন্যান্য ফ্যাশন হাউজের মতো আউটলেট তৈরি করতে চান না ইশরাত, তবে ডিজাইন স্টুডিওটার পরিসর আরও বড় করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তিনি জানান, তাদের ক্রেতাদের সিংহভাগই দেশের বাইরে থাকেন। অর্থাৎ প্রবাসী বাঙালিদের কাছেও পৌঁছে দেন তার তৈরি পোশাক। বিদেশের ক্ষেত্রেও হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা আছে। যারা বাইরে থাকেন তারা সাধারণত একসঙ্গে অনেক কাপড় অর্ডার করেন। সর্বনিম্ন ৫টা থেকে ২০টাও হয় অনেক সময়। নেপালের কিছু ক্রেতাও রয়েছেন এই ই-শপের। আর দেশে তাদের চাহিদা যে কম, তা নয়। কারণ, পেজে ফলোয়ার সংখ্যা আড়াই লাখের বেশি।
ইশরাত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করতে চান এবং নিজের ডিজাইন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আর এই লক্ষ্যেই চেষ্টা করেন যেন তার কাজ আন্তর্জাতিক মানের হয়। কোকো শ্যানেল, গুচি, ভিক্টোরিয়া বেকহাম, প্রাদা ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর ডিজাইনের ধাঁচ পর্যবেক্ষণ ও অনুসরণ করেন তিনি। নিজেই করে থাকেন বেশির ভাগ কারচুপি কিংবা হ্যান্ড পেইন্টের কাজ। এ ছাড়া সব মিলিয়ে ২০ জন কর্মী কাজ করেন তার সঙ্গে। প্রচুর অনলাইন শপ এখন মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ করে থাকলেও নিজেদের ডিজাইনের ভিন্নতা, কাপড়ের মান আর রুচিশীল কালার স্কিম নিয়ে কাজ করলেই এই ব্যবসায় অনেক দূর যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
ছবি: এফ অ্যান্ড সি