সম্পাদকীয়
পৃথিবী উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে। হিমালয়ের গ্ল্যাসিয়ার গলে যাচ্ছে। জানা গেল, আগামী কয়েক বছরে ভূমন্ডলের তাপমাত্রা আরও ৪ ডিগ্রি বাড়বে। এটা হলো মানুষের ওপর প্রকৃতির প্রতিশোধ। বন উজাড়, নদী–জলাশয় দখল, কয়লা ও অন্যান্য জ্বালানির নির্বিচার ব্যবহার করে আমরা ভেবেছি প্রকৃতি জড়, এর কোনো ক্ষমতাই নেই; সুতরাং এর প্রতি ইচ্ছামতো আচরণ করা যায়। বা, যা–ই ঘটুক না কেন, আমাদের আরামে থাকাটাই বেশি দরকার। কিন্তু এখন? প্রকৃতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, কী নিষ্ঠুরতা আমরা তার ওপর করেছি! আমার মনে পড়ছে মানুষ সম্পর্কে জার্মান লেখক ও দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিৎশের কথা। ‘দাস স্পোক জরথ্রুস্ত্র’ গ্রন্থে তিনি লিখেছিলেন, ‘মানুষ জগতের সবচেয়ে নিষ্ঠুর প্রাণী। কেননা নিষ্ঠুরতাই তার উৎকৃষ্ট বিনোদন। সে ভালোবাসে ট্র্যাজেডি, বুলফাইট আর ক্রুসিফিকশন। স্বর্গ ভেবে সে তৈরি করেছে নরক।’
নিৎশের এই বক্তব্যে আমার সমর্থন রয়েছে, এমনটা কিন্তু নয়। কথাটা তিনি বলেছেন মানুষের এই বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে একধরনের বেদনাবোধ থেকে। এই যে দেখুন, নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলঙ্কায় কী ঘটে গেল। কী ক্ষমাহীন নিষ্ঠুরতা আমরা দেখলাম। প্রশ্ন জেগেছে, মানুষ হত্যায় কার কী লাভ? হিংসা আর সন্ত্রাস কি কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে পৃথিবীর জন্য? কত সমস্যায় রয়েছে মানুষ—ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, সুদানসহ আরও নানা দেশে শিশুরা বিপন্ন; বাংলাদেশের নাফ নদীর তীরবর্তী শরণার্থী শিবিরে শিশু ও নারীর জীবন যে কত করুণ, তা বর্ণনার সাধ্য আমার নেই। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, উদ্বাস্তু সমস্যা, ড্রাগ ও মাদকের সর্বনাশা বিস্তার, নারী ও শিশু নির্যাতন— এগুলোর মধ্যে আবার যদি পরস্পর হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ি, তবে মানবজাতির ধ্বংস হতে বেশি দিন লাগবে না।
নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হলো। সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেই ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার চিত্র এবং প্রতিবেদন আমাকে বিপন্ন ও শোকার্ত করেছে। মনে হয়েছে, যে আদর্শ ও মূল্যবোধ নিয়ে সবাই মিলে সুন্দর ও মানবিক একটা সমাজ গড়ার প্রত্যয় আমাদের ছিল বা থাকার কথা, তা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আশা হারাইনি। কারণ, এ ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছে সর্বত্র। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ও চাপ এসেছে সমাজের সব স্তর থেকে। সম্পাদক হিসেবে শুধু নয়, একজন নাগরিক হিসেবে, বিবেকবান মানুষ হিসেবে, নারী হিসেবে আমিও এ ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছি।
এবার ক্যানভাসের কথা বলি। এই মাসে আমাদের প্রথম আয়োজন ক্যানভাসের ঈদ এক্সক্লুসিভ। ঈদ উপলক্ষে আমরা দুটো ইস্যু করে থাকি। এটি হাতে মিললো রমজানের প্রথম দিনেই। অন্যটি ঈদসংখ্যা, ঈদের এক পক্ষ আগে পাওয়া যাবে। পাঠকের জন্য আমাদের বিশেষ উপহার। এই ভলিউমে সামার, রোজা ও উৎসবের চাহিদা মিলিয়ে নিয়মিত ও বিশেষ রচনাগুলো বিন্যস্ত হয়েছে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
এই এপ্রিলে আমরা হারিয়েছি বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা টেলি সামাদ ও আনিসুর রহমানকে। হারালাম অভিনেতা সালেহ আহমেদকে। চলে গেলেন প্রবীণ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য এঁদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রদ্ধা জানাই প্রত্যেকের জীবন ও কর্মের প্রতি।
সিয়ামের মাস প্রীতিকর হোক।