skip to Main Content

ফিচার I ত্বকসংযম

শারীরিক রোজায় সুস্থতা সুনিশ্চিত। ত্বকের সংযমে তো তাহলে সুন্দর হয়ে ওঠা যাবেই

সৌন্দর্যচর্চায় নতুনত্ব! এ আর নতুন কী! বরং নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তবে চমক যে থাকে না, তা কিন্তু নয়। কখনো সাপের বিষে তৈরি শিট মাস্ক দিয়ে চর্চা তো কখনো ব্লেমিশ দূর করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এলইডির আলো। তৈরি হচ্ছে অভিনব সব প্রোবায়োটিক, যা ত্বকস্তরকে শুধু বাইরে থেকে নয়, পরিষ্কার করে ভেতর থেকেও। সম্প্রতি ঘটেছে নতুন সংযোজন। না, সোনায় মোড়ানো সৌন্দর্যসেবা বা ইউনিকর্নের নির্যাসে তৈরি কোনো পণ্য নয়। এখন ট্রেন্ড ‘কিছু না করা’র। ‘স্কিন ফাস্টিং’ নামের নতুন এ ট্রেন্ড সম্প্রতি সৌন্দর্যসচেতনদের আকর্ষণের শীর্ষে।
জাপানিজ স্কিন কেয়ার কোম্পানি ‘মিরাই ক্লিনিক্যাল’-এর মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এ ট্রেন্ড নিয়ে গোটা ইন্টারনেট এখন আলোড়িত। ইনস্টাগ্রাম ফিড থেকে পিন্টারেস্টের পিন—সবেতেই চর্চায় রয়েছে ‘স্কিন ফাস্টিং’। মূলত ফাস্ট বা সংযমের সনাতন ধারা থেকে অনুপ্রাণিত এটি। ধারণা করা হয়, শরীরের প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে সংযম। ঠিক একই পদ্ধতিতে কাজ করে স্কিন ফাস্টিং। ত্বকের স্বাভাবিক নিরাময়ক্ষমতাকে উসকে দেয়। সনাতন সংযমে যেমন আহার থেকে বিরত থাকা হয়, ঠিক তেমনি ত্বকের সংযমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ত্বকের খাবার। অর্থাৎ ময়শ্চারাইজার থেকে মেকআপ—বন্ধ করে দেওয়া হয় এগুলোর ব্যবহার। বিরতি নেওয়া হয় সৌন্দর্যচর্চার স্বাভাবিক রুটিন থেকে। নিজে থেকেই আর্দ্রতা তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করা হয় ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দিয়ে। কারণ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্বক যখন প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, পুষ্টি আর যত্নের জন্য সৌন্দর্যপণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন এর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়। সেটা সচল রাখতেই দরকার স্কিন ফাস্টিং। জাপানিদের দাবি, ফাস্টিং চেহারার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ত্বকের ডিটক্সিফিকেশন অর্থাৎ দূষণ দূর করার সহায়কও এটি। ফলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখায় ত্বক। তবে ডার্মাটোলজিস্টদের মধ্যে ভিন্ন মত আছে এই ট্রেন্ড নিয়ে। একদল বলছেন, শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত দলিল নেই এর কার্যকারিতার। তাই হুট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া ঠিক নয়। হিতে বিপরীত হবার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ত্বকের প্রয়োজন মেনে কাস্টমাইজড স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলা। দরকার বুঝে পণ্য ব্যবহার এবং বিরতি দেওয়া। অন্য দলের মতামত আবার ভিন্ন। তারা বলছেন, স্কিন ফাস্টিং ট্রেন্ডের ফলেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় আসছে। গেল পাঁচ বছরে সৌন্দর্যচর্চার ধাপ এবং পণ্য নিয়ে যে বাড়াবাড়ি শুরু হয়েছিল, সে সম্পর্কে ভাবতে শুরু করেছেন সৌন্দর্যসচেতনেরা। তারা বলছেন, যত বেশি সাদাসিধে ও সহজ হবে, বিউটি রুটিন ত্বকের জন্য ততই ভালো। সেটাতেই সাহায্য করে নতুন এ সৌন্দর্যকৌশল ‘স্কিন ফাস্টিং’। যদি সৌন্দর্যচর্চার কোনো ধাপ কিংবা পণ্য ত্বকের জন্য সুবিধাজনক মনে না হয়, তা বাদ দেওয়ার সুযোগ করে দেয় এই পদ্ধতি। এ ছাড়া বাড়তি পণ্য ব্যবহারে বিরতি দেওয়া হয় বলে অ্যাকনে, একজিমা প্রদাহ এবং চুলকানি তুলনামূলকভাবে দ্রুত সারে। ওভার ক্লিনজিং এবং ওভার পিলিংয়ে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সে আশঙ্কাও এতে অনেক কমে যায়। কীভাবে করা হয় স্কিন ফাস্টিং? নিয়মটা জানলে সংযত থাকতে সুবিধা হবে। শুরুতে সপ্তাহে এক বা দুই দিনই যথেষ্ট স্কিন ফাস্টিংয়ের জন্য। ত্বকের প্রতিক্রিয়া বুঝে পরে বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে সময়। প্রথমে সুবিধাজনক একটা দিন বেছে নেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিনটাই সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কারণ, ফাস্টিংয়ের ফলে ত্বকে কোনো সমস্যা দেখা দিলে পরের দিন তা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ মিলবে। বাড়তি মেকআপ ব্যবহারেরও তাগিদ থাকবে না বেশি। ফাস্টিংয়ের সময় ত্বক কোনো ধরনের পণ্যে আবৃত থাকবে না। সে জন্য বালিশের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। যে দিন স্কিন ফাস্টিং করার পরিকল্পনা থাকবে, সেদিন বালিশের কাভার পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। কারণ, অপরিচ্ছন্ন বা ব্যবহৃত কাভারে পুরোনো তেল, ময়লা, ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে, এগুলো ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। ঘরের তাপমাত্রা যেন খুব কম বা বেশি না হয়। সম্ভব হলে জানালা খুলে প্রাকৃতিক হাওয়ার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যথেষ্ট পানি পান করা চাই ফাস্টিংয়ের পুরো দিন। এতে শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র থাকবে। কফি কিংবা মিষ্টি পানীয় খাওয়া যাবে না। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু স্কিন ফাস্টিংয়ের নিয়ম হচ্ছে এমন ক্লিনজারের ব্যবহার, যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের কোনো ক্ষতি করবে না। করবে না রুক্ষ, শুষ্ক। বেনজয়েল পার-অক্সাইড, অ্যালকোহল আর সুগন্ধিমুক্ত হতে হবে। কোমল ফোমিং ফেসওয়াশ অথবা মাইসেলার ওয়াটারও ব্যবহৃত হতে পারে। পরিষ্কার হাতে আলতো চাপড়ে চাপড়ে ম্যাসাজ করতে হবে ত্বক। ব্যস! শেষ রাতের রূপচর্চা। তারপর এক কাপ পানি পান করে ঘুমাতে চলে যান। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে শুধু পানিতে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। কোনো ধরনের ক্লিনজার ব্যবহার করা যাবে না। তারপর খুব প্রয়োজন হলে সামান্য ময়শ্চারাইজার অথবা সেরাম মেখে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই লেয়ারে লেয়ারে প্রডাক্ট মাখা যাবে না। স্পট ট্রিটমেন্ট শুধু দাগযুক্ত স্থানে মাখুন।
সতর্কতা
 বিশেষ ধরনের ফেশিয়াল বা স্কিন ট্রিটমেন্টের পরপরই স্কিন ফাস্টিং করা যাবে না
 একজিমা বা রোজাশিয়ার মতো সমস্যায় চিকিৎসার মধ্যে থাকলে স্কিন ফাস্টিং করতে হবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে
 ত্বকে উপকারের চেয়ে ক্ষতির মাত্রাটা বেশি হলে স্কিন ফাস্টিং এড়িয়ে যাওয়াই ভালো

 জাহেরা শিরীন
মডেল: মিথিলা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top