কভারস্টোরি I প্রস্তুতির প্রান্তে
কাউন্টডাউন কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। সংযমের মাস ফুরাতে বাকি আর মাত্র কটা দিন। আটঘাট বেঁধে দোকান, শপিং মল আর স্যালন দাবড়ে সাজপোশাকে সুন্দর হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিশ্চয়ই অনেকটা সেরে নেওয়া হয়েছে। তবে বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব বলে কথা। শেষ হইয়াও হইল না শেষের মতোই তৈয়ারির তোড়জোড় চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত, সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে ত্বক আর চুলের জেল্লার জোরে স্পটলাইটটা কেড়ে নিতে চাইলে। তাই আয়োজনের আখেরি দিনগুলোতে আপাদমস্তক সৌন্দর্যের সেরা প্রস্তুতির গাইডলাইন বাতলাচ্ছেন জাহেরা শিরীন
সারা দিন শহর ঘুরে শপিং। সেরেই ছুট ইফতারের জমাটি আয়োজনে। তারপর রাত পেরোতেই শুরু সেহ্রির তোড়জোড়। এর মধ্যেই সামলাতে হয় দৈনন্দিন কাজের দীর্ঘ তালিকা, অফিসের ডেডলাইন থেকে প্রার্থনার বাড়তি ব্যস্ততা। ফলাফল—অপর্যাপ্ত ঘুম, খাওয়াদাওয়ার উল্টোপাল্টা রুটিন। শরীরের সঙ্গে যার পাক্কা প্রভাব পড়ে সৌন্দর্যেও। কিন্তু এর সবটা সামলে উঠতে মাসের প্রথম থেকেই প্রস্তুত ছিলেন নিশ্চয়ই? নিয়মিত পরিচর্যা আর যত্ন নিয়েছেন ত্বকের। ঈদের আগের শেষ কটা দিনেও কিন্তু থাকতে হবে সচেতন। দিতে হবে বাড়তি আর বিশেষ পরিচর্যা। একদম চুলের গোড়া থেকে নখের ডগা অব্দি। কোন পোশাকের সঙ্গে কোন মেকআপ আর হেয়ারস্টাইল মানাবে, সেটাও ঠিক করে নিতে হবে আগেভাগেই। কারণ, ঈদে সাজবেন বলে তার মাত্র কদিন আগে মনোযোগী হয়ে উঠলেন রূপচর্চায় আর রূপ খোলতাই হতে শুরু করল, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। আর শেষের সময় তো নষ্ট করা যাবে না একদমই। তাহলে দেখবেন ঈদের সময় নতুন জামাকাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের চেহারা দেখে দিলখুশ হবেই হবে। সাজটাও হবে সবার থেকে আলাদা। হয়ে উঠবেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
ঈদের আগের কটা দিন রোদে ঘুরে কেনাকাটা, রাতে দেরি করে বাড়ি ফেরা, হুইহুল্লোড়, অপর্যাপ্ত ঘুম, খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম—সব মিলিয়ে ত্বকের উপর তো কম ধকল যায়নি। এর মধ্যেই হয়তো অনেক সময় মনেই ছিল না সানস্ক্রিন মাখার কথা। ফলাফল রোদে পুড়ে তামাটে ত্বক। সঙ্গে সানবার্ন, সানট্যান, ডার্কপ্যাচ তো উপরি আপদ। তদুপরি প্রচন্ড গরম আর বাতাসে আর্দ্রতার বাড়াবাড়ি। ত্বকে তাই ঘাম আর তেলের নিঃসরণও বেশি। ফলে র্যাশ, ব্রণের মতো সমস্যাও যেন নাছোড়বান্দা। অনেকে তো আবার সারা দিন ঘোরার পর রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে মেকআপ না তুলেই ঘুমিয়ে পড়েছেন। আর নিয়ম মেনে রাতে আট ঘণ্টা ঘুম—অত সময় কই! সেহ্রির কয়েক ঘণ্টা পর কোনোরকমে আবার সকাল সকাল বেরিয়ে পড়া। এই সব অনিয়মের প্রভাবে ত্বক ক্লান্ত, নিষ্প্রভ। তবে চিন্তার কিছু নেই। সহজ কিছু নিয়ম মেনে নিয়মিত পরিচর্যায় ঈদের চাঁদের দ্যুতি ছড়াবে ত্বক।
ত্বক সমস্যার মোকাবিলা করে সৌন্দর্য বাড়াতে বাসায় বসেও পরিচর্যা সম্ভব। কিন্তু শুধু এর ওপর নির্ভরশীলতায় শতভাগ ফল পাওয়া যায় না। বিশেষায়িত স্যালন ট্রিটমেন্ট দরকার পড়বেই। বছরের অন্য সময় এ ব্যাপারে অত তোয়াক্কা না করলেও ঈদের আগে স্যালনে যাওয়া জরুরি। আর স্যালনগুলোও কিন্তু বসে নেই। বিশেষ উপলক্ষগুলোতে তাদেরও থাকে বিশেষায়িত সব সেবার সম্ভার। সার্ভিস লিস্ট থেকে শুধু বেছে নেওয়ার দেরি। ঈদের দশ দিন আগে ব্রাইটেনিং ও লাইটেনিং ফেশিয়ালগুলো সেরে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে রোদের তামাটে ভাব কমে ত্বক দেখাবে উজ্জ্বল। দাগছোপ দূর হয়ে দেখাবে লাবণ্যোদীপ্ত। শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়শ্চারাইজিং, সিল্ক, কুল রেডিয়েন্স ফেশিয়ালগুলোই বেশি জুতসই। তৈলাক্ত ত্বকে অরেঞ্জ, ফ্রুট আর হারবাল উপাদানে তৈরি ফেশিয়ালগুলো করালে ভালো। সব ধরনের ত্বকেই কমবেশি ব্যবহারের উপযোগী গোল্ড, ডায়মন্ড, পার্ল ফেশিয়াল। পরিণত ত্বকের পরিপূর্ণ পরিচর্যায় অ্যান্টি-এজিং বা স্পা কোলাজেন ফেশিয়ালগুলো বেশি কার্যকর। তবে শেষ দিনগুলোতে আরও বিশেষ পরিচর্যা চাইলে চলে যাওয়া যেতে পারে স্পাতে। আলট্রাসাইন্ড, গ্যালভানিক, ডার্মাব্রেশন ছাড়াও হট অ্যান্ড কোল্ড হ্যামারের মতো অত্যাধুনিক সব মেশিনে যেসব স্যালনে সৌন্দর্যসেবা দেওয়া হয়, সেগুলো বেছে নেওয়াই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। সঙ্গে পদ্ধতিগতভাবেও যদি আধুনিক হয় স্যালন কিংবা স্পা, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। মুখত্বকের পাশাপাশি গলার জন্যও নেওয়া যেতে পারে অত্যাধুনিক নেক ফেশিয়াল। যা গলার কালো দাগছোপ কমাবে। দেখাবে পরিষ্কার ও সুন্দর। যাদের ফেশিয়াল হেয়ার আছে, ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই তা সরিয়ে ফেলা চাই। থ্রেডিং, ওয়াক্সিং বা স্কিন পলিশ—ত্বকের অবস্থা বুঝে নিতে হবে ব্যবস্থা। বাছতে হবে পদ্ধতি। আর বাসায় বসে পরিচর্যা করতে চাইলে হাতের কাছে রাখা চাই ত্বক পরিচর্যার উপাদানগুলো। অর্গানিক জাতীয় পণ্য ব্যবহার করতে হলে তার সতেজতা সুনিশ্চিত করা দরকার। ক্লিনজিং, টোনিং, স্ক্রাবিং, ময়শ্চারাইজিং তো নিয়মিত পরিচর্যাই। সঙ্গে যোগ হতে পারে এসেনশিয়াল অয়েল আর হাইএন্ড সব সেরামের সংগত। ঈদের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপাদানে তৈরি ফেসপ্যাক মেখে নেওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই ত্বকের ধরন মেনে। চলতে পারে শিট মাস্কও। সানস্ক্রিন কিন্তু মাস্ট। পরিষ্কার বালিশের কাভার ব্যবহার করা চাই। সেলফোন আর মেকআপ ব্রাশও থাকতে হবে ঝকঝকে, জীবাণুমুক্ত।
ঈদের আগে চুলের যত্নে বিশেষ পরিচর্যা জরুরি। কারণ, হালের ট্রেন্ডি হেয়ার কাট বা হেয়ারস্টাইলে চুল সাজানোর প্রথম শর্ত—সুন্দর এবং সুস্থ চুল। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই যত্ন নিতে হবে স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বকের। কারণ, মাথার পুরোটা অংশের মধ্যে শুধু স্ক্যাল্পটাই জীবন্ত, চুলের পুরোটাই তো প্রাণহীন মৃতকোষের গোছা। তারপরও সময়, শক্তি আর প্রডাক্টের অধিকাংশই খরচ হয় চুলের পেছনে। অযত্নে পড়ে থাকে স্ক্যাল্প। যত্ন নিয়ে পরিষ্কার না করায় বাড়ে মৃতকোষ। জমতে থাকে হেয়ার স্প্রে, মুজ, জেলের মতো প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ। তাই ঈদের আগে স্ক্যাল্পের স্পেশালাইজড ট্রিটমেন্ট নেওয়া যেতে পারে স্যালন বা স্পা থেকে।
স্ক্যাল্প ডিটক্স ট্রিটমেন্ট এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। যা ডিটক্সিফাই করে এতে জমে থাকা মৃতকোষ সরাবে। হেয়ার ফলিকল চুলের তেলগ্রন্থি থেকে গোড়ায় পরিপূর্ণ পুষ্টি পৌঁছে দেয়। সঙ্গে চুলকে ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। ঈদের দিনকয়েক আগে করে নিলেই ভালো। এতে করে ঈদের কয়টা দিন চুল দেখাবে নজরকাড়া। এ ক্ষেত্রে ওজোন প্রোটিন হেয়ার ট্রিটমেন্ট চুলে প্রোটিনের পরিচর্যা তো দেবেই, সঙ্গে ওজোন স্ক্যাল্পকে সুস্থ রাখবে। নেওয়া যেতে পারে ন্যাচারাল হেয়ার অয়েল ট্রিটমেন্ট। স্বাভাবিক চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য। যাদের চুল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের জন্যও পাওয়া যাবে বিশেষ ট্রিটমেন্ট। এমনকি রঙের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্যও থাকছে যত্নআত্তির সুবন্দোবস্ত। শুষ্ক, খসখসে, ম্যাড়ম্যাড়ে চুলে সিল্কি শাইনি হেয়ার ট্রিটমেন্টগুলোই বেশি জুতসই। আর যাদের চুল পড়ার সমস্যা, তারা বেছে নিতে পারেন অ্যান্টি হেয়ার ফল ট্রিটমেন্ট। ওজোন ছাড়া অথবা ওজোন সমেত। আর বাসায় বসে যত্ন নিতে চাইলে সে ক্ষেত্রেও রয়েছে সমাধান। ঠিক ত্বকের মতো করেই এখন চুলের যত্ন নেওয়ার ট্রেন্ড চালু হয়েছে। শুধু শ্যাম্পু আর কন্ডিশনারে চুলের যত্ন নেওয়ার প্রথা এখন পুরোনো। তাই হেয়ার ক্লিনজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন স্ক্যাল্প আর চুল। আছে অ্যাসিড পিল আর বিভিন্ন ধরনের এনজাইমে পরিপূর্ণ এক্সফোলিয়েটরও, যা স্ক্যাল্পের মৃতকোষ, খুশকি আর দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা হেয়ার প্রডাক্টের অবশিষ্টাংশ দূর করবে। চুলের সুস্থতা জোগাতে ব্যবহার করা যেতে পারে সেরাম আর ময়শ্চারাইজারও। আর বাইরে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন মাস্ট। চুলের জন্য যা বিশেষভাবে তৈরি। আরও বিশেষ পরিচর্যায় ব্যবহৃত হতে পারে হেয়ার শিট মাস্ক। ব্যবহার সহজ। স্বল্প সময়ে স্যালন ট্রিটেড সুন্দর চুলের নিজস্বতা দেয় শাওয়ার ক্যাপের আদলে তৈরি শিট মাস্কগুলো। আর একদম অর্গানিক পণ্য দিয়ে চুলচর্চা চাইলে তো বাসায় তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহারের অপশন থাকছেই। নতুন কাটে চুল কেটে নেওয়ার জন্য সপ্তাহখানেক আগেই তা সেরে নেওয়া প্রয়োজন। এতে করে নতুন হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে নিজের সম্পূর্ণ লুক মানিয়ে নেওয়ার সময় মেলে। পছন্দ না হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নেওয়া যায়। তবে নতুন কোনো হেয়ার কাট ট্রাই করতে না চাইলে সামান্য টাচআপ কিন্তু করাতেই হবে। করাতে হবে ট্রিমিং। হেয়ার কালার করা থাকলেও দরকার হবে টাচআপ। আর করা না থাকলে নতুন করে করতে চাইলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মানতেই হবে। এবারের হেয়ার কাট ট্রেন্ডের শীর্ষে জ’লাইন বা মিডলেন্থ ব্লান্ট বব। থাকবে পিক্সিও। সত্তর দশকের স্টাইলের শ্যাগেও কেটে নেওয়া যেতে পারে। আর চুল বড় রাখতে চাইলে হুইস্পি লেয়ার সেরা অপশন। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, চুল যেভাবেই কাটা হোক না কেন, সঙ্গে ব্যাঙসের যোগ এ বছর থাকবে ট্রেন্ডের শীর্ষে। বেবি, কার্টেন, বারডট, হুইস্পি ফ্রিঞ্জ এখন দারুণ ইন। কালারে অ্যাশি সিলভার, স্ট্রবেরি হানি আর মাশরুম ব্রাউনে মাতবে বছর। থাকবে রিচ কপারি শেডগুলোও।
কথায় বলে, বিউটি লাইজ ইন দ্য আইজ অব দ্য বিহোল্ডার। তাই অন্যের চোখে নিজেকে আরও সুন্দর দেখাতে ত্বক ও চুলের পরিচর্যার পাশাপাশি প্রয়োজন চোখের যথাযথ যত্নের। কারণ, ঈদের কয় দিন আগের স্ট্রেস, ক্লান্তিতে দৃশ্যমান হতে পারে চোখের নিচের কালো দাগ। দেখা দিতে পারে ফোলা ভাব। তখন পুরো সাজটাই মাটি। এ ক্ষেত্রে বাড়ি ফিরেই প্রথম কাজ হবে গোলাপজলে তুলা ভিজিয়ে রেখে তা আইপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা। ২০ মিনিট শুয়ে রিল্যাক্স করলেই দেখবেন ক্লান্তি কেটে গেছে। আর নিয়মিত করলে কালিও জমবে না চোখের কোলে। গ্রিন টিতেও চোখের ক্লান্তি কমে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডার্ক সার্কেল সারাতে সক্ষম। এ ছাড়া ঈদের আগের কটা দিন নিয়ম করে আমন্ড, ক্যাস্টর বা নারকেল তেল ম্যাসাজ করলে দেখবেন উধাও ডার্ক সার্কেল। শসা, কাঁচা আলু, টমেটো, লেবুর রস কিংবা দুধের সরেও দ্রুত সারে চোখের চারপাশের কালো ছোপ। সঙ্গে ব্যবহার করা চাই এমন আই মাস্ক, যা এই অংশের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। অ্যাভোকাডো, গ্রেপসিড বা জোজোবার মতো এসেনশিয়াল অয়েল যেমন এ ক্ষেত্রে কাজের, তেমনি শসা, পুদিনা গোলাপজলের মিশ্রণ যদি মাখিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে তো আরও ভালো। দই আর অ্যালোভেরা জেলের মিশ্রণও চোখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চমৎকার। তা ছাড়া এ কটা দিন যেন কোনোভাবেই ভুল না হয় সানগ্লাস পরতে। সানস্ক্রিন আর আই ক্রিম মাখতেও ভুলে যাওয়া যাবে না একদমই। আরও বিশেষ পরিচর্যার জন্য আন্ডারআই ট্রিটমেন্ট সেরে আসা যেতে পারে ভালো কোনো স্যালনে।
ঠোঁটেরও দরকার হবে বিশেষ পরিচর্যা। এক্সফোলিয়েট করতে হবে নিয়মিত, যেন মৃতকোষ জমতে না পারে। তারপর ব্যবহার করতে হবে মাস্ক। বাজারেই মিলবে শিট মাস্কের আদলে তৈরি লিপ মাস্কগুলো। ঠোঁটের শুষ্কতা সারাইয়ে আমন্ড, শিয়া বাটার, অ্যাপেল বাটার, বিভিন্ন ধরনের অয়েল, গ্লিসারিন আর ভিটামিন সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজিং মাস্কগুলো উপকারী। সঙ্গে নিয়াসিনামাইড, পেপটাইড আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মাস্কগুলো জোগান দেবে জরুরি আর্দ্রতা। কোলাজেন ইনফিউজড লিপ মাস্ক ঠোঁটকে দেখাবে পুষ্ট। তারপর নিয়মিত লিপবাম ব্যবহার করতে হবে। দেখবেন ঠোঁটের কালচে ছোপও দূর হয়েছে।
হাত-পায়ের পরিপূর্ণ পরিচর্যায় মেনিকিওর আর পেডিকিওরই সেরা সমাধান। ঈদের আগে বিলাসবহুল সব পণ্য দিয়ে করা এমন একটি সেবা পাল্টে দিতে পারে হাত-পায়ের ফিচার। হাইএন্ড মেনিকিওর পেডিকিওর ট্রিটমেন্টের ফলটাও মেলে আন্তর্জাতিক মানের। কারণ, শুধু হাত-পা পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার করেই ছেড়ে দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় দুধ, ফুল ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদানের সহযোগী হ্যান্ড অ্যান্ড ফুটবাথ। ফলে পরিষ্কারের পাশাপাশি বাড়ে উজ্জ্বলতা। অনেক স্যালনেই থাকে প্যারাফিন র্যাপের বন্দোবস্ত। অর্থাৎ মেনি আর পেডি সেরে প্যারাফিনে হাত-পায়ের পুরোটা মুড়িয়ে দশ মিনিটের জন্য রেখে দেওয়া হয়। ফলে উজ্জ্বল আর মসৃণ ত্বকে তা যোগ করে বাড়তি কোমলতা। এ ছাড়া স্পাতে গিয়ে ফুটথেরাপিও নেওয়া যায়। যা ক্লান্তি দূর করতে দারুণ কার্যকর। বাসায় বসেও বিশাল আয়োজন না করেই সেরে নেওয়া যায় হাত-পায়ের যত্ন। হাতের জন্য নিয়ম করে স্ক্রাবিং, ময়শ্চারাইজিং এবং সঠিক প্যাক—এসবই হলো মখমলি হাত পাওয়ার ম্যাজিক সলিউশন। ঘুমাতে যাবার আগে অ্যালোভেরার সঙ্গে ভিটামিন ই মিশিয়ে তা হাতে ম্যাসাজ করে রেখে দিতে হবে রাতভর। কম সময়েই কোমল হয়ে উঠবে হাত। পায়ের যত্নে প্রতিদিন গোসলের সময় নিয়ম মেনে পছন্দের কোনো অয়েল ম্যাসাজ করতে হবে। তারপর এক্সফোলিয়েট করে মাখতে হবে লোশন। দুদিন পরপর ব্যবহার করা যেতে পারে ফুট প্যাক। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ফুট লোশন বা ভালো ময়শ্চারাইজার ক্রিম দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। গোড়ালি ফাটা থাকলে তাতে পেট্রোলিয়াম জেলি আর লেবুর রস মিশিয়ে পা ফাটার ওপর মাখিয়ে রাখা যেতে পারে। এটা নিয়মিত করলে গোড়ালি দেখাবে কোমল ও নিখুঁত। ঈদের অন্তত দুদিন আগে সেরে নিতে হবে হাত-পায়ের ওয়াক্সিং। একদম ভুলে যাবেন না যেন!
হাত-পায়ের সঙ্গেই হয়ে যাবে নখের যত্ন। তবে মেনিকিওর, পেডিকিওরের বাইরেও রয়েছে বেশ কয়েক রকমের প্রফেশনাল নেইল ট্রিটমেন্ট, যা আপনার নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার সঙ্গে করে তুলবে আরও আকর্ষক। তারপরেও মনমতো না হলে রয়েছে অ্যাক্রিলিক নেইল আর জেল। নেইলের মতো এনহ্যান্সমেন্ট ট্রিটমেন্ট।
সাধারণত মুখত্বক নিয়ে মানুষের যতটা মাথাব্যথা, ঠিক ততটাই অবহেলায় রয়ে যায় শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বক। ঈদের আগে তাই স্পাতে গিয়ে সেরে নেওয়া যেতে পারে ফুল ডে ইন্ডালজেন্স সার্ভিস। যাতে থাকবে ফুল বডি অয়েল ম্যাসাজ, স্ক্রাবিং, র্যাপিং আর বাথের পরিপূর্ণ প্যাকেজ। ফলে ঈদের আগে শরীরের ক্লান্তি তো দূর হবেই, সেই সঙ্গে জরুরি পুষ্টি পৌঁছে যাবে দেহত্বকের গভীরে। মূলত থাই অ্যারোমা থেরাপি বডি ম্যাসাজ দেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে। পুরো প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় উঁচু মানের সব এসেনশিয়াল অয়েল। ম্যাসাজ টেকনিকেও থাকে বৈচিত্র্য। এতে শরীরের ক্লান্তি সেরে যায়। ব্যথা দূর হয়। অবসাদ কাটিয়ে দেহ ও মন হয়ে ওঠে চনমনে। দ্বিতীয় ধাপে বডি স্ক্রাবিং বেছে নেওয়ার অপশন থাকে। হোয়াইটেনিং বডি স্ক্রাব মৃতকোষ সারাই করে। নতুন কোষ উৎপাদন করে। ভিটামিন সমৃদ্ধ থাই এক্সফোলিয়েটর টক্সিন সারানোর পাশাপাশি ত্বককে করে তোলে কোমল, মসৃণ।
এ ছাড়া বেছে নেওয়া যাবে আমেরিকান স্টাইল সল্ট বডি স্ক্রাব, নাট ইয়োগার্ট অথবা টারমারিন্ড স্ক্রাব। তারপর দেওয়া হয় বডি র্যাপ। মিল্ক, হানি অথবা মাড র্যাপ ত্বকের গভীর পর্যন্ত পুষ্টি পৌঁছে দিতে সক্ষম। সবশেষে বডি বাথিং। ফ্লোরাল অথবা মিল্ক বাথে এসেনশিয়াল অয়েল আর ফুলের পাপড়ির যোগে তৈরি হয় গোসলের দারুণ ব্যবস্থা। মিনারেল সল্ট বাথও নেওয়া যেতে পারে। এগুলোর সবই ত্বক সজীব ও সতেজ রাখার জন্য।
এ তো গেল উৎসবে আগের সার্বিক প্রস্তুতি। ঈদের কয়টা দিন কীভাবে সাজবেন, সেটা কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চার-পাঁচ দিন নানাভাবে সেজে দেখা যেতে পারে। পরিকল্পনা সেরে নেওয়া চাই আগেভাগেই। ঈদের কদিনের জন্য।
প্রথমেই স্টক চেক করে নেওয়া প্রয়োজন। কোন কোন কসমেটিকস শেষ হয়ে গেছে বা নতুন কী কী কিনলে ভালো হয়, সেটা যাচাই-বাছাই করে নেওয়া দরকার। ঈদের আগেই বিউটি বক্সে পুরে নিন প্রয়োজনীয় সব সামগ্রী। রানওয়ে, রেড কার্পেট আর ম্যাগাজিনের পাতা ঘেঁটে সাম্প্রতিক সাজপ্রবণতা বের করে ফেলা এখন খুব কঠিন নয়। সঙ্গে চাই ব্যক্তিত্ব আর ব্যক্তিগত পছন্দের মিশেল। এ বছর বেজ মেকআপে শিশিরসিক্ত স্বাভাবিকতার সৌন্দর্য সুস্পষ্ট। মিনিমাল, নো মেকআপে চেহারায় আবেদন তৈরি করাই হবে কাজ। কনটুর না করে হাইলাইটে বেশি মনোযোগ এবার। আর ব্লাশঅন। ব্যস! এতেই তৈরি বেজ। চোখ সাজাতে কালোই ভালো। একদম সোজাসাপটা লাইন থেকে পুরোটা জুড়ে কাজল টানা ড্রামাটিক লুকের রমরমা থাকবে। জনপ্রিয় নীলও। চোখের পাতার পুরোটা কিংবা শুধু লাইন ঘেঁষে থাকতে পারে নীলের টান। ল্যাশও হতে পারে নীলচে। থাকছে পিঙ্ক, পার্পল আর অরেঞ্জের শেডগুলোও। রঙের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি আইলাইনারের টানের পদ্ধতিও থাকবে পরীক্ষামূলক। ক্যাটলাইন, গ্রাফিক লাইনের সঙ্গে সাজে থাকবে ফ্রি স্টাইল অ্যাবস্ট্রাক্ট লাইন। গ্লিটার শিমারের সঙ্গে ট্যানড, কালার ব্লক আর স্মোকিতে সাজানো হবে চোখের পাতা। মাসকারাবিহীন লুক যেমন থাকছে, থাকছে কালারড মাসকারাও।
নো মেকআপ মেকআপ লুকের সঙ্গে মানিয়ে ট্রেন্ডে সেট হয়েছে বোল্ড লিপকালার। ম্যাজেন্টা রেড, ব্রাইট ফুশিয়া থেকে কালো আর নীলও তাই মেখে নিতে পারবেন ঠোঁটে। আলাদা কদর থাকছে লালের বিভিন্ন শেডের। থাকছে ওয়াইন লিপসও। তাই বলে যে ন্যুডের বাজার নেই, তা নয়। ম্যাট শেডের মভ, ট্যান, ক্যারামেল কিন্তু কোথাও যাচ্ছে না। জাস্ট বিটেন বা কিসড লুক থাকবে। ফর্মুলায় পাউডারি, স্টেইন আর গ্লসের নাম থাকবে তালিকার শীর্ষে। এদের সংগত দেবে শিমার আর গ্লিটারও।
এ তো গেল মেকআপ! হেয়ারস্টাইলের ক্ষেত্রে পেছনে টেনে বাঁধা চুল থাকছে ট্রেন্ডের শীর্ষে। পরিপাটি করে আঁচড়ে নিয়ে পেছনে বাঁধতে পারেন পনিটেইল, বেণি আর বান। এমনকি এসবের মিশেলে তৈরি হতে পারে উৎসবসম্মত হেয়ারস্টাইল। সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি গরমে আরাম দেবে অনায়াসে। চুল সটান সোজা না রেখে এতে যোগ করা যেতে পারে ব্লো ড্রাইয়ের ভলিউম কিংবা ওয়েভ।
অনেক দিন ধরেই হয়তো ভাবছিলেন, ঈদে এমন কিছু করবেন, যা আগে কখনো করেননি। আমাদের দেওয়া ব্লু প্রিন্টের সঙ্গে ইচ্ছাগুলোকে মিলিয়ে দেখুন না—কী হয়!
ঈদ মোবারক।
মডেল: অভিনেত্রী পূজা চেরী এবং ইন্দ্রাণী, রেহান
ওয়্যারড্রোব: লা রিভ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন ও ইন্টারনেট