কুন্তলকাহন I স্কিনিফিকেশন স্কিম
ত্বকযত্নের প্রক্রিয়াতেই চুলের পরিচর্যা। বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে। কিন্তু কার্যকর
দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের ভালো মানের তেল, শ্যাম্পু আর কন্ডিশনারের যথাযথ ব্যবহার, সঙ্গে বিশেষ যত্নে হোমমেড হেয়ার প্যাক। দিব্যি হয়ে যায় চুলচর্চা। আর মাসে দু-একবার স্যালনে গিয়ে যদি স্পেশালাইজড হেয়ার ট্রিটমেন্ট সেরে নেওয়া যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কিন্তু প্রচলিত এ ধারাতেই লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। চুলচর্চায় ট্রেন্ড এখন স্কিনিফিকেশন। অর্থাৎ, চুলের যত্ন নেওয়া হবে, তবে তা ত্বকের মতো করে। ফলে ‘ওয়াশ অ্যান্ড গো’র চিরচেনা রুটিন এখন হয়ে উঠেছে আরও বিশেষায়িত। শ্যাম্পুইং আর কন্ডিশনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন ধাপ। শুধু কি তাই! চুলের যত্নের নতুন এ ধারাকে উসকে দিচ্ছে বড় বড় হেয়ার কেয়ার ব্র্যান্ড। তাদের পরীক্ষাগারে প্রস্তুত হচ্ছে হেয়ার সেরাম, সানস্ক্রিন থেকে শিট মাস্ক পর্যন্ত। প্রতিদিন চুলের নিবিড় পরিচর্যার জন্য।
ক্লিনজার
শুধু শ্যাম্পুতে চুল পরিষ্কারের দিন শেষ। বিশেষ ধরনের হেয়ার ক্লিনজার মিলছে বাজারে। সাধারণত চারকোল আর উইচ হ্যাজেল দিয়ে তৈরি হয় এগুলো। যা দেয় আলটিমেট হেয়ার ডিটক্স। মাথার ত্বকে জমে থাকা তেল-ময়লা পরিষ্কার করে দেয় একদম গোড়া থেকে। তবে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা স্তরের ক্ষতি না করে। সঙ্গে চুলের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। বাড়ায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব। এমনকি মাইসেলস, অ্যাবাসিনিয়ান সিড অয়েল, জোজোবা এবং প্যানথেনলেতে তৈরি হেয়ার মাইসেলার ওয়াটারও মিলছে এখন। যা ময়লা অপসারণ করে চুল থেকে, চটজলদি। ফলে কেশগুচ্ছ হয়ে ওঠে কোমল ও মসৃণ।
এক্সফোলিয়েটর
সপ্তাহে দুদিন অ্যাসিড পিল আর এনজাইমে পরিপূর্ণ এক্সফোলিয়েটর দিয়ে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া হচ্ছে। চুল বাদ পড়বে কেন? যদি নিয়মিত মাথার ত্বকও এক্সফোলিয়েট করে নেওয়া যায়, ক্ষতি কী! এএইচএ, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক তেল, লবণ আর চুলের জন্য উপকারী নানা নির্যাসের মিশ্রণে তৈরি হয় হেয়ার এক্সফোলিয়েটর। স্ক্যাল্পে জমে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড সারাইয়ে এগুলো দারুণ কার্যকর। অর্থাৎ, মৃতকোষ, খুশকি কিংবা দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা হেয়ার প্রডাক্টের অবশিষ্ট এক্সফোলিয়েটর—এগুলোর কিছুই টিকতে দেয় না স্ক্যাল্পে। ফলে হেয়ার ফলিকলের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। তেল উৎপাদনের হার থাকে নিয়ন্ত্রণে। ফলে চুল দেখায় নজরকাড়া।
রোলার
ত্বকচর্চায় পাকাপোক্ত স্থান সম্প্রতি দখল করে নিয়েছে জেড রোলার। তো চুলচর্চার জগৎ পিছিয়ে থাকবে কেন? রোলার নয়, তৈরি হচ্ছে জেড দিয়ে তৈরি চিরুনি। স্ক্যাল্প গুয়া শা হিসেবে পরিচিত এগুলো মাথার ত্বকের আকুপ্রেশার পয়েন্টগুলোকে উজ্জীবিত করে। ফলাফল—চুল দ্রুত লম্বা হয়, দেখায় ঘন।
সেরাম
শুষ্ক স্ক্যাল্প থেকে স্বস্তি খুঁজছেন? চুলকানিরও সমাধান চান? তেল নয়, এ ক্ষেত্রে হেয়ার সেরাম এখন সেরা সমাধান। জিঙ্ক, চারকোল, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এসেনশিয়াল অয়েলে তৈরি এসব হেয়ার সেরাম স্ক্যাল্পে অনেক সমস্যার সমাধান করে। তেল উৎপাদনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। স্ক্যাল্পের শুষ্কতা সারাইয়ে সাহায্য করে। ফলে চুলের রুক্ষতা কমে যায়। ক্ষতিও সেরে ওঠে। অনেক হেয়ার সেরামেই থাকে বায়োটিন। যা চুল বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। পেপারমিন্ট, স্পেয়ারমিন্ট আর টি ট্রি অয়েলের মতো কুলিং কমপ্লেক্স যুক্ত হেয়ার সেরামগুলো স্ক্যাল্পে জমে থাকা টক্সিন দূর করে। চুলের গোড়া শক্ত করে।
ময়শ্চার মিস্ট
ত্বকের যেমন আর্দ্রতা দরকার হয়, ঠিক তেমনি চুলেরও তা চাই। প্রো-ভিটামিন বি-ফাইভে তৈরি হেয়ার ময়শ্চারাইজারগুলো মাল্টিটাস্কিং হয়ে থাকে। এগুলোয় চুল থাকে মসৃণ, জটামুক্ত। রুক্ষ চুলে চটজলদি আর্দ্রতার জোগান দিতে তুলনাহীন। এমনকি রুকুইয়ের মতো অনেক দুর্লভ তেল দিয়েও তৈরি হয় চুলের ময়শ্চারাইজার। যা শুধু আর্দ্রই রাখে না, বাঁচায় সূর্যের এবং পরিবেশের নানান দূষণ থেকে। বিভিন্ন ধরনের ভেজিটেবল প্রোটিন থেকে তৈরি ময়শ্চারাইজারগুলো চুলের ম্যাড়ম্যাড়ে ভাব প্রতিরোধ করে। আগা ফাটা প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
শিট মাস্ক
বিউটি স্টেপলে পরিণত হওয়া শিট মাস্ক এখন শুধু কোরিয়ান সৌন্দর্য সাম্রাজ্যের অংশ নয়। এর প্রতাপ রয়েছে বিশ্বজুড়ে। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকায় প্রতিনিয়ত একে নিয়ে চলছে নানান নিরীক্ষা। সাম্প্রতিক সংযোজন হেয়ার শিট মাস্ক। ভিটামিন বি, রোজহিপ, বায়োটিন আর আরগানের মতো চুলবান্ধব উপাদানগুলোকে মাইক্রো ইনক্যাপসুলেটেড করে তৈরি হয় হেয়ার শিট মাস্ক। সাধারণত টুপির আদলে তৈরি এ মাস্কগুলো চুলের গভীর পর্যন্ত পুষ্টি জোগায়। শুষ্কতা আর রুক্ষতা দূর করে চুলকে করে তোলে সুন্দর।
সানস্ক্রিন
অবাক হচ্ছেন? কিন্তু ত্বকের মতো চুলেরও দরকার সূর্য থেকে প্রতিরক্ষা। ইউভিএ এবং ইউভিবি ফিল্টারযুক্ত এসব হেয়ার মিস্ট চুলে প্রোটেকটিভ ফিল্ম তৈরি করে, যা সুস্থতার সঙ্গে চুলের স্বাভাবিক রঙকে সুরক্ষা দেয়। এমন দাওয়াইও এখন উদ্ভাবিত হয়েছে। যেগুলো শুধু সূর্যরশ্মি থেকে নয়—চুলকে বাঁচায় ধুলাবালি, ক্লোরিন এমনকি সমুদ্রের লবণাক্ততা থেকে। কেবল মিস্ট স্প্রে রূপেই নয়, হেয়ার এসপিএফ পাওয়া যায় মিনারেল পাউডারি ফর্মুলায়। যাতে থাকে ভিটামিন সির মতো অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। সানস্ক্রিন হিসেবে তো বটেই, এসব পাউডার ড্রাই শ্যাম্পুর সমান কাজ করে। অতিরিক্ত তেলে ভাব শুষে নেয়। ফলে, চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: লিন্ডা আয়শা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন