ট্রাভেলগ I কাঞ্চনজঙ্ঘা
সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা। তবে এ লেখা সেই চলচ্চিত্র নিয়ে নয়। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে সম্ভ্রান্ত চা-বাগান তুমসং। বাগানে বেড়াতে এসে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপে মুগ্ধ হলেন শর্মিলা বসুঠাকুর
বেড়ানো আমার নেশা। পাহাড় হলে তো কথাই নেই। পাহাড় আমাকে ডাকে। এ ডাকের তীব্রতা আমি কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারি না। শহুরে কাজের ব্যস্ততা আর একঘেয়েমির মধ্যে একটু জিরোতে মন চাইলেই চলে যাই পাহাড়ের কোলে। তিন দিনের ছুটিতে ঘুরে এলাম চা-বাগান।উত্তরবঙ্গ আমার ভারি প্রিয়। প্রকৃতি দুই হাত ভরে সাজিয়েছেন এই অঞ্চল। প্লেন ধরে সোজা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করাই ছিল। তিন ঘণ্টা লাগল। পৌঁছে গেলাম তুমসং চা-বাগানে। এলাহি আরামের আয়োজন।
এই বাগানের জন্ম ১৮৬৭ সালে। হেরিটেজ প্রপার্টি। বাগানে পা দিয়েই বুঝতে পারলাম, আগামী দুদিন আমি নিশ্চিন্ত। প্রকৃতির বুকে, পাহাড়ের কোলে আরামে, আয়েশে দিন কাটবে আমার। এই রিসোর্টের জোরের জায়গা হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা।
ঘরে বসে, বাগানে বেড়াতে বেড়াতে, পাশে পাবেন এই মহান পর্বতমালাকে। এখানকার মানুষজন ভদ্র, বিনয়ী, তৎপর। বাগান ঘুরে ঘরে এসে দেখি, লাগেজ এসে গেছে। প্রশস্ত ঘর, বিলাসী আয়োজন। ঘরে চায়ের শৌখিন সরঞ্জাম। আমি চা-প্রিয় মানুষ। এক কাপ সুগন্ধি দার্জিলিং চায়ে দিলখুশ।
আমার সব সময়ই মনে হয়, বেড়ানো মানে শুধুই লিস্ট মিলিয়ে জায়গা দেখা নয়। বেড়ানো মানে সেই নির্দিষ্ট জায়গার সংস্কৃতিকে জানা, স্থানীয় খাবার চেখে দেখা, মানুষের সঙ্গে আলাপ করা। বিরাট এলাকাজুড়ে এই বাগান।
প্রায় ১৮৬ হেক্টর জমিজুড়ে এই বাগান। দার্জিলিং শহর এখান থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টার রাস্তা। ঘুম থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার। বিকেলে দারুণ আফটারনুন টি-এর ব্যবস্থা করলেন এরা।
সুবিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘার স্বর্গীয় বৈভব দেখতে দেখতে, সোনালি চা, সঙ্গে এদের নিজেদের বানানো শিঙাড়া, স্যান্ডউইচ খেতে খেতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। চা নিয়ে যাদের উৎসাহ আছে, তাদের জন্য টি টেস্টিংয়ের দারুণ ব্যবস্থা আছে।
ধীরে ধীরে আঁধার নেমে এলো। ডুব সূর্যের আলোয় এক মায়াময় পরিবেশ। রাতে ভালোই ঠান্ডা। সারা দিনের ক্লান্তিতে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিতে দেরি হলো না। ঘুম ভাঙল সোনালি পাহাড়ের আলোর আবেশে। প্ল্যান ছিল দার্জিলিং যাওয়ার। কোথাও নড়তে ইচ্ছে করল না। এ এক অদ্ভুত নেশাগ্রস্ত অবস্থা আমার। দিগন্তজোড়া লাল সোনালির খেলা। কাঞ্চনজঙ্ঘার এই রূপ কোনো দিন ভুলব না।
ফিরে আসব আবার।
লেখক: সানন্দার সাবেক সম্পাদক
ছবি: লেখক