ফিচার I অ্যাকনের অদ্ভুত উৎস
অজস্র কারণের মধ্যে এ তিনটি অন্য রকম। অনেকের কাছে হয়তো অজানা, কিন্তু অনাসৃষ্টিতে তুলনাহীন
ত্বকের অতিরিক্ত তেলে ভাব, মেকআপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পারিপার্শ্বিক দূষণ, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা কিংবা হরমোনের গন্ডগোল—অ্যাকনে আক্রান্ত হওয়ার কারণ মেলা। জানা, অজানা অবিদিত। এমন কয়টি কারণ আছে যেগুলো অবিশ্বাস্য হলেও প্রতিটিরই রয়েছে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা। স্বস্তির ব্যাপার হচ্ছে, ইতিমধ্যেই অ্যাকনে-সংক্রান্ত এ সমস্যাগুলোর সমাধানে সক্ষম হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সে জন্য চাই বিশেষ সতর্কতা। সাবধান হওয়া দরকার শুরু থেকেই।
হুক আপ অ্যাকনে
না! একদম ভুল দেখছেন না। ভালোবাসার বিশেষ মুহূর্তগুলোতেও হতে পারেন অ্যাকনে-আক্রান্ত। কারণ, ঘর্মাক্ত শরীর যখন চাদরের ভাঁজের মধ্যে পড়ে যায়, তখনই তৈরি হয় ব্যাকটেরিয়া। যা ত্বকে অ্যাকনে আক্রমণের জন্য যথেষ্ট। আর তখন মুখে মেকআপ থাকলে তো কেয়াবাত! এর সঙ্গে ঘাম আর ত্বকের তেল মিশলে অ্যাকনে তৈরির একদম জুতসই সুযোগ সৃষ্টি হয়। দিনের পর দিন তা ঘটতে হবে না। মাত্র এক রাতই যথেষ্ট। এ ছাড়া ঘুমানোর সময় বালিশের বদলে যখন সঙ্গীর বুকটাই বেশি পছন্দের, তখনো বাধে বিপত্তি। হাত কিংবা পিঠ ঘেঁষে ঘুমালেও একই সমস্যা। কারণ, মুখত্বকে সঙ্গীর শরীরের অন্য যেকোনো অংশের সংস্পর্শ থেকে বাড়তে পারে এ সমস্যা। এ সময় একজনের শরীরের তেল সহজেই অন্যজনের মুখত্বকে স্থানান্তরিত হয়। তারপর তা লোমকূপ দিয়ে ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে। বাড়ে অ্যাকনে। শুধু কি শরীরের অংশ, সঙ্গীর দাড়ি থেকেও সংক্রমিত হতে পারে ব্রণের ব্যাকটেরিয়া। আদর করে মুখে মুখ ঘষলেই বিপদ। সুন্দর, মসৃণ মুখত্বকে দাড়ির খোঁচায় বাড়বে ত্বকের তেল উৎপাদনের মাত্রা। বাড়বে ব্রণ।
সমাধান: সঙ্গী নিয়ে ঘুমাতে যান ভালো কথা, কিন্তু কোনোভাবেই মেকআপ নিয়ে যাওয়া নয়। প্রয়োজনে হাতের কাছে মজুত রাখা চাই ক্লিনজিং ওয়াইপস। সেগুলো টি ট্রি অয়েলে তৈরি হলে সবচেয়ে ভালো। চটজলদি পরিষ্কার করে নেওয়া যাবে ত্বক। আর ঘুমাতে গেলে বালিশের বদলে সঙ্গীর শরীর ব্যবহারের অভ্যাস যদি কোনোভাবেই ছাড়া না যায়, সে ক্ষেত্রে সকালে উঠেই প্রথম কাজ হবে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ফেসওয়াশ ব্যবহার করা। আর খেয়াল রাখা চাই কোনোভাবেই যেন দাড়ির খোঁচা না লাগে মুখত্বকে। আর যদি সঙ্গী শেভ করতে রাজি হন, তাহলে তো কথাই নেই!
কমফোর্ট ফুড অ্যাকনে
পাস্তা পছন্দ? নাকি পিজ্জা? দারুণ পেটপূজা হবে; কিন্তু বাড়বে ব্রণের বাড়াবাড়ি। স্টার্চযুক্ত এবং মিষ্টি খাবার দেহের ইনসুলিন বাড়ায়। ত্বকের তেল উৎপাদনের মাত্রা বাড়ে। ত্বকের জ্বালাপোড়া ভাবও। বন্ধ হয়ে যায় লোমকূপ। অ্যাকনে আক্রান্ত হয় ত্বক। এ ছাড়া দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারেও বাড়তে পারে এই সংক্রমণ। কারণ, এগুলো শরীরের অ্যান্ড্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মতো হরমোনগুলোর উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের তৈলাক্ততা বাড়ায়। এই বাড়তি তৈলাক্ততা থেকে বাড়ে অ্যাকনে। এ ছাড়া অনেকেরই ঝালে-ঝোলে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া খুব পছন্দ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই খাবারগুলো তৈরিতে ব্যবহৃত টমেটো আর মরিচে থাকে প্রচুর অ্যাসিডিক লাইকোপেন, যা ত্বকের পিএইচ লেভেলের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার প্রতিবন্ধক। অ্যাকনে সৃষ্টির নিয়ামকও বটে।
সমাধান: লো জি-আই ডায়েট মেনে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। খাবারের তালিকায় থাকুক চর্বিহীন প্রোটিন, দানাদার কার্বোহাইড্রেট, বাদাম, তাজা শাকসবজি আর ফলমূল। আরও থাকা চাই গ্রিন টি, জিঙ্ক আর মাছের তেলের মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। আর যদি ত্বকে ব্রণের প্রকোপ বেড়েই যায়, সে ক্ষেত্রে সুদিং অয়েল দেওয়া অ্যাকনে রিডিউসিং প্রডাক্টগুলোই সেরা সমাধান।
গ্যাজেট অ্যাকনে
এক গালে ব্রণ আছে আর অন্য গালে নেই! এ কেমন কথা! মাঝেমধ্যে তো গাল পেরিয়ে কানের ত্বকেও উঁকি দিচ্ছে ব্রণ। তাও সেই এক পাশে। এমনটাই যদি সব সময় ঘটতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে কালপ্রিট আসলে প্রতিদিনকার ব্যবহৃত প্রযুক্তির পণ্যগুলো। সহজে বলতে গেলে গ্যাজেট। মোবাইল ফোনই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শত্রু। কারণ, এর সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমণ সহজ। হাতে জমে থাকা জীবাণু খুব সহজেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে মুখত্বকে। তারপর তা বাসা বাঁধে, ছড়ায়। বন্ধ করে দেয় ত্বকের লোমকূপ। ফলে, বাড়ে ব্রণের প্রকোপ।
সমাধান: গ্যাজেটগুলো পরিপূর্ণভাবে পরিষ্কার রাখা চাই। প্রতিদিন। যেন ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধতে না পারে। সঙ্গে হালনাগাদ করা চাই ত্বক পরিষ্কারের পদ্ধতিও। ঘুমাতে যাবার আগে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। তারপর তুলায় অ্যান্টি-অ্যাকনে টোনার নিয়ে তা মাখিয়ে রাখতে হবে সংক্রমিত হওয়া স্থানগুলোতে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: আনিকা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন