skip to Main Content

সেলুলয়েড I আহা রে

কাহিনি, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: রঞ্জন ঘোষ
প্রযোজনা: ভাবনা আজ ও কাল
অভিনয়ে: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আরিফিন শুভ, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমৃতা চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, শকুন্তলা বড়ুয়া ও আলমগীর
দৃশ্য গ্রহণ: হরি নায়ার
সম্পাদনা: রবিরঞ্জন মৈত্র
সংগীত পরিচালনা: বিনীত রঞ্জন মৈত্র
পোশাক পরিকল্পনা: শ্রেয়সী বসু
রূপসজ্জা: কিশোর দাস
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট

রন্ধনশিল্প খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে, এমন ছবি গোটা বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকটা। এগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক ‘লাঞ্চ বক্স’ ছবিটির কথা বলা যেতে পারে। তপন সিনহা একসময় ‘গল্প হলেও সত্যি’ নির্মাণ করেছিলেন, তাতে একান্নবর্তী পরিবারে রান্নাঘর ও রান্নার স্বাদের সঙ্গে সাংসারিক শান্তির প্রসঙ্গ উঠে এলেও ওই চলচ্চিত্র সামগ্রিকভাবে রন্ধনশিল্পকে ঘিরে আবর্তিত নয়। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সম্ভবত রঞ্জন ঘোষ পরিচালিত ‘আহা রে’ প্রথম কোনো ছবি, যার ন্যারেটিভের আধার রন্ধনশিল্প।
স্বাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্কৃতির প্রশ্ন। একেক ধরনের সংস্কৃতির অন্দরের রসনাপরিচিতি একেক রকম স্বাদে মহিমান্বিত। যেমন বাঙালি জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক সত্তায় তার রসনা বৈশিষ্ট্য অন্য সবার থেকে আলাদা। একইভাবে বাংলাদেশে ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির এবং বাঙালি হিন্দু ও মুসলমানের রন্ধনসত্তায় সাদৃশ্যের ঐক্য যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বৈসাদৃশ্যের বৈচিত্র্য। বাঙালির এই স্বাদজগতের বৈচিত্র্যের মধ্যে বিনিময়ের সূত্রে তৈরি হতে পারে প্রেমের বন্ধন— এই বার্তার দৃশ্যশ্রাব্য গল্পের মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়েছেন পরিচালক রঞ্জন ঘোষ, তার ‘আহা রে’ ছবিটার মাধ্যমে। ঢাকা ও কলকাতার রসনাজগতের বিনিময়ের মাধ্যমে দুই বাংলার প্রেম ও আত্মিক বন্ধনের মায়াচিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি।
ঢাকার রন্ধনশিল্পী রাজা (আরিফিন শুভ) তার প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। সেখানে একটি রেস্তোরাঁয় আলাপ হয় বসুন্ধরার (ঋতুপর্ণা) সঙ্গে। রান্নায় লবণ কম না বেশি, সেই ঝগড়া থেকেই আলাপের সূত্রপাত। প্রয়াত স্বামীর শখের প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি ক্যাটারিং সার্ভিস খুলেছেন বসুন্ধরা। নাম দিয়েছেন ‘ইয়ং বেঙ্গল’। তাই রসনাবৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে পেশা ও নেশার জায়গা থেকে রাজা ও বসুন্ধরার মধ্যে আগ্রহের জায়গাটা কমন। রান্নায় রান্নায় ছবির গল্প ঢুকে পড়ে ব্যক্তিগত অনুভূতির জগতে। মৃত স্বামীর ব্যাপারে জমিয়ে রাখা দুঃখ থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি পেতে থাকেন বসুন্ধরা তার নতুন বন্ধু রাজার সুবাদে। সম্পর্ক গভীর হতে থাকে। কিন্তু মধ্যবিত্ত টানাপোড়েন, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তাড়া করে বেড়ায় বসুন্ধরাকে। রাজার জীবনেও ফিরে আসে সাবেক হয়ে যাওয়া প্রেমিকা। এসব নিয়ে খুব সাধারণ প্রেমকাহিনির ভঙ্গিতেই এ ছবি এগিয়েছে। ছবিটি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের, নামাজ কবুল ও সরস্বতীপূজাকে একই ছবির মধ্যে ফুটিয়ে তোলার, সম্প্রীতির, প্রেমের।
রাজা চরিত্রে আরিফিন শুভর অভিনয় অনবদ্য। ঋতুপর্ণা সাবলীল। রাজার বান্ধবী চরিত্রে অমৃতা চট্টোপাধ্যায় ও বস্ন্ধুরার বাবার চরিত্রে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়ও দারুণ। রাজার বাবা-মায়ের চরিত্রে দীপঙ্কর দে কিংবা শকুন্তলা বড়ুয়াকে আরও কিছু সময় ফ্রেমে হাজির করানো যেত। স্বল্প পরিসরেও আলমগীর যথাযথভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন।
এ ছবির সম্পদ হরি নায়ারের সিনেমাটোগ্রাফি আর রবিরঞ্জন মৈত্রর এডিটিং। সিনেমাটোগ্রাফির কাব্যিক ডিটেইলিং ও ভিজ্যুয়াল মন্তাজের জন্য ছবিটা বারবার দেখা যায়। মিউজিকও সুন্দর।
ছবিটির সফল হয়ে ওঠার পেছনে বিরাট অবদান কস্টিউম ডিজাইনার শ্রেয়সী বসু ও রূপসজ্জাশিল্পী কিশোর দাসের। পোশাক পরিকল্পনা চিত্রনাট্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। বসুন্ধরার শাড়ির ব্যবহার, রাজার পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, জিনস, তার বান্ধবীর ক্যাজুয়াল শার্ট, সালোয়ার— এ সবকিছু সাধারণভাবে প্রকাশের আড়ালে আছে ছবির মুড তৈরির খেলা। পোশাকের হালকা কালার এবং কনট্রাস্টে ছবির চরিত্রগুলোয় যখন যেভাবে ফুটে ওঠার কথা, সেভাবেই পর্দায় মূর্ত হয়েছে। আর ঋতুপর্ণার চরিত্রটির প্রয়োজনে তার খোঁপা, শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে কানের ঝোলা দুলের ব্যবহার যথাযথ। মধ্যবিত্ত বিধায় সাদা-কালো জীবন আর নতুন বন্ধুতার পর তার চরিত্রের রঙ ফুটে উঠেছে পোশাকে আর সাজসজ্জায়। কার্লি হেয়ারের অমৃতার পোশাক ও রূপসজ্জায় ফুটে উঠেছে তার উচ্ছল জীবন।

 অতনু সিংহ

কুইজ
১। বসুন্ধরা কোন পেশায় যুক্ত?
ক। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং খ। গার্মেন্টস গ। ক্যাটারিং
২। বসুন্ধরার বাবার চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক। দীপঙ্কর দে খ। পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় গ। রবিরঞ্জন মৈত্র
৩। রাজার মায়ের চরিত্রে কে অভিনয় করেছেন?
ক। শকুন্তলা বড়ুয়া খ। মমতাশঙ্কর গ। চিত্রা সেন
গত সংখ্যার বিজয়ী

১. ফারজানা লিসা, ধানমন্ডি, ঢাকা
২. শাহরিয়ার আলম, রূপনগর, ঢাকা
৩. সুপ্রিয়া রায়, চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top