ফিচার I ফিউচারিস্টিক ফার্নিচার
ত্রিকালসম্মত আসবাব। নতুন প্রজন্ম, বৈশ্বিক সংস্কৃতি ও দেশীয় ঐতিহ্য— এই তিনের মর্ম ধারণ করে জানিয়ে দিচ্ছে উদ্ভাবনী যাপনের বার্তা
পুরোনোকে আঁকড়ে থাকার প্রবণতা মানুষের সহজাত। এর মধ্যে সে খুঁজে নেয় নস্টালজিয়ার আনন্দ। কিন্তু কখনো কখনো এই পুরোনোই বোঝা হয়ে যায়। নতুনকে স্বাগত জানানোর মানে তাই সময়ের সঙ্গে থাকা। এটাই স্মার্টযাপন। ঠিক এই ভাবনায় নিজেদের ফার্নিচার লাইন শুরু করেছে ডেকো ইশো গ্রুপ। আধুনিক আর স্মার্ট আসবাবের সম্ভার বাজারে এসেছে ইশো ব্র্যান্ড নেমে। সময় আর পরিসরকে বিবেচনায় রেখে এর ডিজাইন করা হয়েছে। তাতে গুরুত্ব পাচ্ছে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। আমাদের ঐতিহ্য, সমৃদ্ধ কারুশিল্পকে নতুনের সৌন্দর্য আর উদ্ভাবনের নতুনতর মাত্রায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর সেই উপস্থাপনায় সমকালীন চাহিদার পাশাপাশি স্থান পাচ্ছে ভবিষ্যতের উপযুক্ততা।
ইতিমধ্যে হয়েছে ইশো ফার্নিচারের অনলাইন লঞ্চ। তবে অচিরেই ইশো আউটলেট খুলবে। তবে এর আগেই ইশো লঞ্চ করবে অগমেন্টেড রিয়েলিটি সমৃদ্ধ অ্যাপ। ফলে পছন্দের ফার্নিচার আপনার স্পেসে কেমন লাগবে, তা দেখে তবেই কিনতে পারবেন।
ইশো ফার্নিচার লাইন করার আগে অনেক ভেবেচিন্তেই কাজ শুরু করেছে। কারণ, আসবাবের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমাদের দেশের বাজারের কোনো মিলই নেই। সে জন্য প্রথমেই বাজার জরিপ ছিল তাদের প্রকল্প শুরুর প্রথম পদক্ষেপ। বর্তমানে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি, তরুণ দম্পতি, প্রযুক্তি অনুরক্ত ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলে উদ্যোক্তাদের পছন্দ জেনে নিয়েই ডিজাইন ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু করে ইশো।
বস্তুত, বিদেশি সিনেমায় বা নেটের দুনিয়ায় যে ধরনের আসবাব আমরা দেখি, অভ্যন্তরীণ সজ্জা আর আবহের সঙ্গে পরিচিত হই, তা আমাদের দেশে মেলে না। অথচ এখানকার নতুন প্রজন্ম সেটাই চায়। মাত্রা আনতে চায় তাদের যাপনে। হয়ে উঠতে চায় এই সময়ের প্রতিনিধি। চায় কোজি, স্লিম আর ফাংশনাল জিনিসপত্র।
বাজার জরিপে উঠে আসা এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েই প্রডাক্ট ডিজাইনে মনোযোগী হয়েছে তারা।
ইশোর রয়েছে বেশ কয়েকটি লাইন। প্রথমেই আসা যাক ট্র্যাডিশনাল লাইনে। হঠাৎ দেখলে এসব আসবাবকে আধুনিক না বলে উপায় নেই। কিন্তু এর ডিজাইনে রয়েছে অতীত, ইতিহাস আর অবশ্যই সেই নস্টালজিয়ার সোনালি স্পর্শ। কারণ, আধুনিকতার মধ্য দিয়েই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর ইশো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় যাদের বিচরণ, তারা ইশোর এই ভাবনা, নকশা প্রেরণায় আগ্রহী হচ্ছে।
মডার্ন ফার্নিচারের ক্ষেত্রে ম্যাটেরিয়ালই প্রধান। অর্থাৎ ম্যাটেরিয়াল ফোকাসড সিম্পল ডিজাইন এই লাইনের বৈশিষ্ট্য। ট্রেন্ডি লুক, স্লিম শিলুয়েট আর আভিজাত্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্লোবাল ট্রেন্ড। এই সময়ের উপযোগী রঙ আর বৈশিষ্ট্যে আপহোল্টারিং ম্যাটেরিয়ালে ঋদ্ধ এসব ফার্নিচার।
ছোট অ্যাপার্টমেন্ট, স্টুডিও, ছোট অফিসের জন্য উপযুক্ত ফাংশনাল লাইন। কারণ, স্পেস কমিয়ে স্টোরেজ বাড়ানোর মতো করেই তৈরি ইশোর আসবাব। বলা যেতে পারে, স্টার্টআপ সংস্কৃতির জন্য একেবারে রাজযোটক এই ফার্নিচার। এগুলোর একেকটি একের ভেতর দুই বা তার অধিক কাজের উপযোগী। সেভাবেই তৈরি করা হয়েছে।
এ ছাড়া এক্সক্লুসিভ লাইনে গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে এখানকার তাঁতের কাপড়, হস্তশিল্পজাত ও সাংস্কৃতিক উপাদান। এতে কখনো স্থানীয় শিল্পী বা কারুশিল্পীর সৃজনসম্ভার যেমন এই আসবাবের উপাদান হতে পারে, তেমনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও অবদান রাখতে পারে। নানা ক্ষেত্রের শিল্পীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিশীলতাকে অন্যতর মাত্রায় উপস্থাপনের প্রয়াস পাচ্ছে ইশো।
এরপর আসে বর্তমানে থেকে ভবিষ্যৎ অভিমুখী আসবাবের আকাক্সক্ষা পূরণের বিষয়। অর্থাৎ আমরা যাকে বলছি ফিউচারিস্টিক ফার্নিচার। সে ব্যাপারেও সচেতন ইশো কর্তৃপক্ষ। তাই রয়েছে তাদের স্মার্ট লাইন। টেকনোলজিক্যাল ইকোসিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত এই স্মার্ট ফার্নিচার। এর জন্য রয়েছে বিশেষ ল্যাব।
পাশাপাশি আরও অনেক কিছুই সংযুক্তির পরিকল্পনা ইশোর আছে। বিশেষত হোম আইটেম। যেমন রাগস, বেডশিট, কাটলারি, ক্রোকারিজ ইত্যাদি। ইতিমধ্যে কিছু কিছু তৈরিও হচ্ছে। কোনো কোনোটি নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে।
এখানেই শেষ নয়, টেকসই উন্নয়ন মাথায় রেখে, এথিক্যাল বিজনেস পলিসি অনুসরণে এগোচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান। ফলে ভবিষ্যতে দেশীয় কাঁচামাল, বিশেষত কাঠ সংগ্রহের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আপাতত বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্লাস্টিক বর্জ্য, সাগরের বর্জ্য, তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্যকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য কাজে লাগিয়ে এরই মধ্যে শতরঞ্জি তৈরি করছে। তা দিয়ে আসবাবের আপহোলস্টার করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় আসবাবশিল্পে উদ্ভাবনের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায় ইশোর। নইলে পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান গতির সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না। সম্ভব হবে না সেই প্রতিযোগিতায় এঁটে ওঠা।
শেখ সাইফুর রহমান
sksaifurrahman@gmail.com
ছবি: ইশো