আলাপন I দেখার ধরনে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে -অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘স্বাধীন’ চলচ্চিত্রনির্মাতা, চলচ্চিত্রশিক্ষক ও লেখক। কলকাতার মেয়ে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহো প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র পড়ান। পাশাপাশি তাঁর আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নারীবাদী সমাজকর্মী। ‘থার্ড ব্রেস্ট’ নামের সম্প্রতি একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। সেই ছবিটিসহ বাংলাদেশে ঘুরে গেলেন। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি-সংক্রান্ত ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও নিজের ছবির প্রদর্শনীর কাজে তাঁর এই বাংলাদেশ সফর। নানা ব্যস্ততার ফাঁকে ঘুরে গেলেন ‘ক্যানভাস’ পত্রিকার দপ্তর। তাঁর সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করে তা নিয়ে লিখছেন অতনু সিংহ
এই আলাপের শুরুতেই তাঁর কাছে ইনডিপেনডেন্ট সিনেমা বিষয়টি কেমন, এই প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেন—
ইনডিপেনডেন্ট ছবি হিসেবে কোনো ছবিকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে একটু সাবধানতা দরকার। সাধারণত কোন ছবি ইনডিপেনডেন্ট, তা বুঝতে সব থেকে আগে লগ্নির ব্যাপারটাই আসে। অর্থাৎ ছবি নির্মাণের জন্য লগ্নি করা টাকা কে দিচ্ছে বা কারা দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ফান্ড জোগাড় করে বা ইন্ডাস্ট্রির সমান্তরালে ছবি করার ব্যাপারটাকেই ইনডিপেনডেন্ট ছবি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমার মনে হয়, শুধু এই যে স্টুডিও সিস্টেম বা ইন্ডাস্ট্রির বাইরে বেরিয়ে ছবি করার ব্যাপারটাই ইনডিপেনডেন্ট সিনেমার লক্ষণ নয়। বরং পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ও চিন্তাগত ইনডিপেনডেন্সির ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্টুডিও সিস্টেম পুরোনো একটা বিষয়, আর চলচ্চিত্রকে ঘিরে অনেক অনেক মানুষের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া ইন্ডাস্ট্রির যে ধারণা, তা-ও খুবই সংকুচিত। আলেকজান্ডার আস্ত্রুক (ফরাসি চলচ্চিত্রী ও চলচ্চিত্র তাত্ত্বিক) কবেই বলেছিলেন, ফিল্ম উইল বিকাম চিপ লাইক পেনসিল অ্যান্ড পেপার! এবং সেই দিন সিনেমায় বিপ্লব হবে! তাঁর এই কথাটা এখন আর ‘সম্ভাবনা’র জায়গায় নেই। এটা এখন রিয়েলিটি। এটা ঘটে গেছে। এখন মুঠোফোনেও সিনেমা বানানো সম্ভব। এ রকম ছবি তৈরিও হয়েছে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোও হয়েছে। এবার এই ইনডিপেনডেন্ট সিনেমা বানানোর ক্ষেত্রে কেবল লগ্নি ও বিপণনে স্বনির্ভরতাই বিবেচ্য নয়। কারণ, এই সিনেমায় প্রি-প্রোডাকশন থেকে শুরু করে পোস্ট-প্রোডাকশনের লাস্ট স্টেজ অব্দি একজন চলচ্চিত্রকর্মী বা নির্মাতা স্বাধীন কিংবা স্বনির্ভর। যেমন ধরুন, আমি যখন ছবি করছি, তখন কিন্তু একই সঙ্গে ছবিটা লিখেছি, ছবির জন্য চিত্রগ্রহণ করেছি, সম্পাদনা করছি, সাউন্ড ডিজাইন করছি— এই এত ফ্যাকাল্টিতে একা কাজ করছি। এবার এসব কাজে আমাকে দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে, এটা অনেক ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকারেরই আছে। এই দক্ষতা অর্জন সম্ভব হয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে একটা বিপ্লব ঘটে যাওয়ার ফলে। সুতরাং চলচ্চিত্রের যন্ত্রপাতি ব্যবহার এখন আর আগের মতো শ্রমসাধ্য নয়। ভারী ভারী যন্ত্রপাতি নয়, বরং হালকা, স্থিতিস্থাপক ও সহজে স্থানান্তরযোগ্য যন্ত্রপাতির উদ্ভব হয়েছে। একজন কবি বা একজন চিত্রকর যেভাবে কবি লেখেন বা ছবি আঁকেন, ঠিক একইভাবে ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার ফিল্ম বানাতে পারেন। আবার এই ছবি করতে গিয়ে চিন্তার জায়গাতেও ইনডিপেনডেন্সি অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়। যেটা আসলে কনটেন্ট বা ভাবনার দিক থেকে প্রথার বাইরে কাজ করার আগ্রহ। তো এই ছবি করতে গিয়ে অনেকেই সিনেমার ক্ষেত্রে নবোদ্যমে র্যাডিক্যাল হয়ে উঠছেন।
কিন্তু এই সিনেমার ভাবনা, নির্মাণ, শিল্প, নন্দন ইত্যাদির বাইরে একটা বড় ব্যাপার হলো এর মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন। এ ক্ষেত্রে কি কোথাও একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে? যেহেতু এর ডিস্ট্রিবিউশন চেইন এখনো মজবুত নয়! জানতে চাইলাম অনামিকার কাছে।
তিনি বললেন—
ব্যাপারটা আজ আর অতটা ঠিক নয়। কারণ, এখন দেখার অভ্যাসে বদল আসছে। যাকে আমরা বলি ‘সি হ্যাবিটস!’ আমার-আপনার ‘সি-হ্যাবিটস’-এর মধ্যে এখনো বড় পর্দায় প্রোজেকশনের ব্যাপারটা রয়ে গেছে। কিন্তু আপনার টার্গেট যদি ছবি দেখানো, তাহলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইল ফোনেও গোটা বিশ্বকে দেখাতে পারবেন। এখন ওয়েব মাধ্যম আমাদের দুনিয়ার পরিধিটা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে যদি কেউ বড় পর্দায় ছবি দেখাতে চান, একটু অসুবিধা আছে। সে ক্ষেত্রে আমরা যেভাবে বই পৌঁছে দিই, সেভাবে ফ্ল্যাশ ড্রাইভে করে ছবি পৌঁছে দেওয়া যায়। ভাবুন তো, ইরানে গৃহবন্দি জাফর পানাহি কীভাবে ছবি বানালেন। এমন একটি মানুষ চার দেয়ালের মধ্যে বানিয়ে ফেললেন ‘দিস ইজ নট আ ফিল্ম’। ছবিটা সারা বিশ্বে দেখানো হলো। সুতরাং সবই সম্ভব।
অনামিকার কথা শুনতে শুনতে মনে পড়ল, চলচ্চিত্র বলতে আমরা এত দিন যা বুঝতাম, তার একপ্রকার পরিসমাপ্তি হয়েছে। সেই ধারণার রূপান্তরও ঘটেছে। জঁ লুক গোদারের সাম্প্রতিক দুটি সিনেমা, ‘গুডবাই টু ল্যাংগুয়েজ’ ও ‘ইমেজ বুক’-এর কথা এ প্রসঙ্গে মনে পড়ল। এই শেষ দুটি ফিল্মে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এসবই বলা হয়েছে। এসেছে অডিও-ভিজ্যুয়ালের মধ্যেই রূপান্তরের নতুন মাধ্যমের কথা।
ইন্টারনেট, ওয়েব বেসড সিনেমা ইত্যাদি নিয়ে কথার ফাঁকেই উঠে এলো ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির প্রসঙ্গ। এটি নতুন একটি বিষয়। অডিও-ভিজ্যুয়ালের প্রথাগত নন্দনতত্ত্ব ও ল্যাঙ্গুয়েজের বাইরে যার জগৎ। বাংলাদেশ সফরে এসে চট্টগ্রামের ফাইন আর্টস ইনস্টিটিউশনে এই ভি-আর বিষয়ে ওয়ার্কশপও করিয়েছেন। মাধ্যম হিসেবে কীভাবে এটি নতুন, জানতে চাইলাম অনামিকার কাছে।
তিনি বললেন—
চট্টগ্রামে আমার ওয়ার্কশপের বিষয়টা ছিল নতুন মিডিয়াম নিয়ে। এখানে ‘দেখার অভ্যাস’ বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে। যা হোক, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি এসে যাওয়ায় অডিও-ভিজ্যুয়ালের ভাষা সম্পূর্ণতই বদলে গেছে। চলচ্চিত্র নামক মাধ্যমটা যখন প্রথম এসেছিল, তাতে তখন নতুন কিছু হওয়ার বা করার সম্ভাবনা ছিল। এতে শিল্প হয়েছে, স্টুডিওর ছবি হয়েছে, ভাষার ক্ষেত্রে নানা ভাঙাগড়া হয়েছে ইত্যাদি। তেমনই ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির ক্ষেত্রেও অগাধ সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটা প্রথমেই মনে রাখা দরকার, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি আমাদের দেখার ধরন বা স্পেকটেটরশিপ পুরো পাল্টে দিয়েছে। চলচ্চিত্রে যেমন ক্যামেরা পজিশন, অ্যাঙ্গেল ইত্যাদি আমাদের মধ্যে যে দেখার ধারণা তৈরি করেছিল, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি সেই খেলাটা পুরো পাল্টে দিয়েছে। অগমেন্টেশন, থ্রিডি আর থ্রি-সিক্সটি— এই তিনটি প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়েই ভি-আর বা ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি। অর্থাৎ অগমেন্টেড রিয়েলিটি, থ্রিডি ক্যামেরা আর তার থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি এরিয়া…যেহেতু থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি, তাই দর্শক ফটোগ্রাফি বা সিনেমাটোগ্রাফির স্পেসে ঢুকে যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের চলচ্চিত্রের যে ওয়ান-এইটটি ডিগ্রি রুল, তা এখানে ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু ইন্টারেস্টিং বিষয়, সিনেমার আদিলগ্নে ক্যামেরা পজিশনিং বা ক্যামেরা কোথায় বসাবো, এই চিন্তা থেকেই তৈরি হয়েছিল ক্যামেরার ভাষা বা ল্যাঙ্গুয়েজ অব সিনেমাটোগ্রাফি, এখন এই ভি-আর-এর জমানাতেও নতুন করে চিন্তা করতে হবে ক্যামেরাটা কোথায় বসাব, যাতে করে ৩৬০ ডিগ্রি কভার করা যায়। থ্রিডি হওয়ার ফলে ফ্রেমের ধারণায় বিরাট চেঞ্জ এসেছে। সিনেমায় ফ্রেমের যে ধারণা, তাতে পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক ঠিক করে দেন— দর্শক কী দেখবেন, কী দেখবেন না। এটা একটা ক্ষমতার ব্যাপার। কিন্তু ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিতে সেই ক্ষমতাচর্চায় আঘাত এসেছে। এখন আর ফ্রেম নেই। সবই গোলক। এখন প্যাসিভ দর্শক বলে কিছু নেই। সকলেই অংশগ্রহণকারী।
অনামিকার কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, ব্রেখটের বিচ্ছিন্নতা তত্ত্ব যেভাবে পাশ্চাত্যের নাট্যকলাকে মঞ্চ থেকে বের করে এনেছিলেন দর্শকের মধ্যে, ফিল্মে এই ব্রেখটিয়ান তত্ত্বকে প্রয়োগ করেছিল গোদাররা; কিন্তু সেখানেও ছিল ফ্রেমের ধারণা। ফ্রেমের এই ক্ষমতা থেকে মুক্তি এনে দিল ভি আর। যা হোক, এবার অনামিকার বানানো ছবির ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে আলাপ হলো। বলে রাখি, তিনি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রেড’, ‘১৭০০ কেলভিন’, ‘টেক কেয়ার’, ‘টেইলর মেইড’, ‘ব্ল্যাক রোজ’ নামক বেশ কয়েকটি ছবি করেছেন। অনামিকা একজন ফেমিনিস্ট ফিল্মমেকার। তাঁর সাম্প্রতিক ছবি ‘দ্য থার্ড ব্রেস্ট’। এই ছবির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বললেন—
ছবিটা ভারতীয় সমাজে সেক্সুয়ালিটির ট্যাবুকে কেন্দ্র করে। উপমহাদেশে যৌনশিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। যৌন অজ্ঞানতার ফলে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। এবং প্যাট্রিয়ার্কির সঙ্গেও সেক্সুয়াল ট্যাবুগুলো সম্পৃক্ত। যৌনসন্ত্রাসের ব্যাপারেও ট্যাবুগুলো দায়ী।
জানতে চাইলাম, আমাদের উপমহাদেশে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অনুভূতিকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতির বনিয়াদি বিষয়গুলোর চর্চা হয়েছে অনেকাংশে। তারপরেও যৌনতা এখানে ট্যাবু। এই ব্যাপারে তাঁর কী মনে হয়?
অনামিকা বললেন, এই ব্যাপারটা ঘুরেফিরে এসেছে দ্য থার্ড ব্রেস্টে। এর জন্য আমি খাজুরাহো আর কামসূত্রকে ধরে এগিয়েছি। এ ছাড়া এসেছে কামরূপ-কামাখ্যার প্রসঙ্গ। যেহেতু মেয়েদের যোনির নিয়ন্ত্রণ পুরুষের হাতে। অথচ কামরূপ-কামাখ্যার মতো মন্দিরে যোনি পূজা হয়, যা আসলে ফার্টিলিটি কাল্টের একটি মিথিক্যাল এক্সপ্রেশন।
ছবির নাম ‘থার্ড ব্রেস্ট’ হওয়ার পেছনেও একটি মিথ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনামিকা। তিনি বললেন—
দক্ষিণ ভারতে যে দেবী মীনাক্ষী পূজিতা হন, তাঁর মিথটা হলো এই রকম, তিনি জন্মেছিলেন অতিরিক্ত একটি স্তন নিয়ে। তাঁর এই শারীরিক গঠনকে ‘অস্বাভাবিক’ হিসেবে দেখা হলো। এবং বলা হলো— যদি শিবের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, তাহলে তাঁর এই অস্বাভাবিকত্ব থেকে মুক্তি ঘটবে। তো মীনাক্ষীর বাবা মেয়েকে নানাভাবে পারদর্শী করলেন। সমরবিদ্যাতেও দক্ষ হলেন মীনাক্ষী। আমি এই ছবিতে প্রশ্ন রেখেছি, একজন যদি নিজের যোগ্যতার বলে জ্ঞান ও ক্ষমতা অর্জন করে, সে ক্ষেত্রে তিনটে স্তন না চারটে স্তন, তা দিয়ে কী যায় আসে! এবং তাঁর নিজস্ব অর্জনের ব্যাপারগুলোকে বিবাহ প্রতিষ্ঠানের কাছেই-বা কেন সমর্পণ করতে হবে! বডি শেইমিং থেকে শুরু করে প্যাট্রিয়ার্কির যাবতীয় প্রসঙ্গ ছবিতে ঘুরেফিরে এসেছে।
সিনেমা বিষয়ে আলাপের পাশাপাশি এই আলাপনে উঠে এসেছে অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজকর্মী পরিচিতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছড়িয়ে পড়া যে ওমেনস মার্চ থেকে গোটা বিশ্বে পুঁজিবাদ, বর্ণবাদ ও প্যাট্রিয়ার্কির বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে, আমেরিকায় সেই র্যালি সংগঠিত করার পেছনে তাঁর অবদান আছে। মার্কিন মুলুকে আদিবাসী প্রান্তিক নারীর অধিকারের প্রশ্নেও কাজ করছেন। কাজ করছেন সেখানকার উদ্বাস্তু নারীদের নিয়েও। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলো, ট্রাম্প আসার পর রাজনৈতিকভাবে কতটা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে মার্কিন সমাজকর্মীদের? তিনি বললেন—
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে নতুন করে বর্ণবিদ্বেষের রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়েছে। নয়া-নাৎসিদের উপদ্রব চোখে পড়ার মতো। যৌন সহিংসতা, নারীনিগ্রহের ঘটনাও ঘটছে। এগুলো নানাভাবে গোটা বিশ্বের নজরে এসেছে। অবশ্য শুধু আমেরিকা নয়, ইউরোপের নানা জায়গায়, বলা ভালো গোটা বিশ্বেই উগ্র ডানপন্থীদের প্রভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমেরিকার ব্যাপারে একটা কথা বলব, উপমহাদেশের মতো রাজনৈতিক পরিস্থিতি অতটা কুৎসিত নয় সে দেশে। কারণ, প্রতিবাদের একটা স্পেস রয়েছে। ধরেন, মিটিং-মিছিল-অবস্থান-রোডমার্চের পাশাপাশি ছোট ছোট পরিসরে গ্রাফিতি এঁকে প্রতিবাদ জানানো, ব্যঙ্গচিত্র তৈরি— এসব তো হচ্ছে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক স্বৈরাচারগুলোকে এর সঙ্গে মেলানো যাবে না। আমি নিজে যদিও টয়লেটের দেয়ালে বা টয়লেট পেপারে শত্রুরও মুখ আঁকতে পছন্দ করব না। কিন্তু এটা একধরনের প্রতিবাদ। এটা অনেকেই করছেন। কিন্তু আমরা জানি যে ভারতের রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা কোন জায়গায় পৌঁছেছে। সাম্প্রদায়িক, বর্ণবাদী ও নারীবিদ্বেষী রাজনৈতিক আবহ কী ব্যাপকতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়ায়।
ওম্যানস মার্চ নিয়ে সাফল্যের কথা জানালেন অনামিকা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সিনেমা, সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী। নারীবাদচর্চা নিয়েও। তিনি বললেন—
বাংলাদেশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের সময় মেয়েরা কতটা এগিয়েছিলেন আমরা জানি। আমি তো জন অ্যাশবেরির সঙ্গে ফরিদা মাজিদের সিগারেটসহ ফটোগ্রাফটা দেখেই অবাক। কাঁধে বন্দুক নিয়ে জিপ চালাচ্ছেন বাংলাদেশের মেয়েরা, তা-ও দেখেছি। কিন্তু ক্রমে গোটা উপমহাদেশেই দক্ষিণপন্থা, পিতৃতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আজ তাই দুই বাংলায় মেয়েরা নতুন করে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে সামাজিক মাধ্যমে বা অন্যত্র, মেয়েরা যেভাবে নারীবাদের চর্চা করছেন, নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে কথা বলছেন, তা বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থার বিপরীতে কাউন্টার ডিসকোর্স তৈরি করতে সক্ষম, যদি তৃণমূল স্তর অবধি ব্যাপ্ত হয়।
ছবি: সৈয়দ অয়ন