ফিচার I ফেস অব এশিয়া
সম্প্রতি সিউলে অনুষ্ঠিত এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যালে ফেস অব এশিয়া মেল মডেল অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন বাংলাদেশের মডেল পলাশ
দক্ষিণ কোরিয়া থেকে জয়ী হয়ে ফিরেছেন মডেল মেহেদী হাসান পলাশ। হয়েছেন ফেস অব এশিয়া। জুন মাসের ৭, ৮ ও ৯ তারিখে সিউলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘এশিয়া মডেল ফেস্টিভ্যাল’-এর ১৪তম আসরের মূল পর্ব। এশিয়ার ২৬টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে প্রতিযোগিতায়। বাছাই করা মডেলদের টপকে ‘ফেস অব এশিয়া মেল মডেল অ্যাওয়ার্ড’ নিয়ে ১০ জুন দেশে ফিরেছেন সুদর্শন ও প্রতিভাবান মডেল পলাশ।
প্রতিটি দেশ থেকে চারজন করে মডেল পাঠানো হয়েছিল মূল আসরে— দুজন ছেলে ও দুজন মেয়ে। বাংলাদেশ থেকে সেরা চার মডেল নির্বাচন করার জন্য আয়োজিত হয়েছিল ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’ প্রতিযোগিতা। আবেদন করেছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার মডেল। এত আবেদনকারীর মধ্য থেকে শতভাগ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত করা হয় ৩০ জন ছেলে ও ৩০ জন মেয়েকে। ডাকা হয় ইন্টারভিউতে। দুদিন ধরে ইন্টারভিউ চলে। ২১ ও ২২ মার্চ। নগরীর সীমান্ত স্কয়ারে। সেখানে চারটি সেগমেন্টে মডেলদের জাজ করা হয়। ওভারঅল লুক অ্যান্ড ফিটনেস, ফটোজেনিসিটি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও ইন্টেলিজেন্সি। এ মহাযজ্ঞের ভার ন্যস্ত ছিল ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের ওপর। বাছাই করা মডেলদের রূপের যত্নে পাশে ছিল পারসোনা। যুক্ত ছিল পারসোনা হেলথও। মেয়েদের হেলথ-ওয়েলনেসের দেখভাল করেছে পারসোনা। পাশাপাশি সঙ্গী হয় ক্যানভাস ম্যাগাজিন, প্রথম আলো ডট কম, লা মেরিডিয়ান, এবিসি রেডিও এবং নাগরিক টেলিভিশন। ফেস অব বাংলাদেশের গ্রুমিং পার্টনার ছিল আজরা মাহমুদ গ্রুমিং অ্যান্ড কাস্টিং স্টুডিও। এ সময় কঠোর রুটিনে হাড়ভাঙা পরিশ্রমে গ্রুমিং হয়েছে তাদের। ২৭ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত। শেষে ১০ জন ছেলে এবং ১০ জন মেয়েকে নির্বাচিত করা হয় ফাইনাল রাউন্ডের জন্য।
২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর লা মেরিডিয়ানে হয়েছে ‘ফেস অব বাংলাদেশ ২০১৯’-এর গ্র্যান্ড ফিনালে। মডেলদের ডিসিপ্লিন, অ্যাডাপ্টেবিলিটি অব নলেজ, কথা বলার ধরন, আচার-আচরণ, কতটা স্বতঃস্ফূর্ত, কতটা রেজাল্ট ওরিয়েন্টেড, এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচিত হন চারজন মডেল। চ্যাম্পিয়ন হন মারুফ রহমান ও শিরিন শিলা। রানারআপ হন মেহেদী হাসান পলাশ ও সাহেলা মজুমদার নিধি। সিউলে বাংলাদেশ থেকে চারজন মডেল যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মডেলদের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে কোরিয়ানরা আরও একজনকে নির্বাচন করেন। পঞ্চম হয়েছিলেন মানসী কান্তা সরকার। কিন্তু বিধি বাম। ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতায় সিউলে যাওয়া হয়নি মানসীর।
যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২২ মে ঢাকা থেকে সিউলের উদ্দেশে রওনা হন চার মডেল। কোরিয়ার মাটিতে পা রাখতেই বাংলাদেশি মডেলদের সাদর সম্ভাষণ জানায় কোরিয়ান এজেন্সি। এরপর আর অবসর নেই। সরাসরি বুস্টক্যাম্পে। সেখানকার অ্যাংকর নামে একটি হোটেলে ওঠেন বাংলাদেশের মডেলরা। শুরু হয় গ্রুমিং। আবারও হাড়ভাঙা খাটুনি। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। কোরিয়ান টিমই করিয়েছে গ্রুমিং।
মডেলদের প্রধান ফোকাস ছিল ক্যাটসওয়াকে। ফ্যাশন ডিজাইনারদের উপস্থিতিতে প্রত্যেক মডেলের আলাদা অডিশন নেওয়া হয়। প্রতিজনকে ১০ থেকে ১৫টি অডিশন পার করতে হয়েছে নিজেকে প্রমাণ করতে। এ সময় দুটি শো হয়েছিল। ডিজাইনার শো এবং স্কলার শো। মূলত এই অডিশনগুলোই ছিল শ্রেষ্ঠ মডেল বাছাই প্রক্রিয়া।
গালা অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে ৬ জুন মডেলদের নিয়ে একটি ওয়েলকাম পার্টির আয়োজন করা হয়। পরের দিন থেকে সিউলের অলিম্পিক হলে শুরু হয় গালা রাউন্ড। অন দ্য স্টেজেই রিহার্সাল হয়েছে। সেদিনই ফলাফল হাতে পান মডেলরা। ফার্স্ট রাউন্ডে ২০ জন মডেলকে স্পন্সর প্রাইজবন্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশের মেহেদী হাসান পলাশ পান কোরিয়ান ওশিয়া ব্র্যান্ডের প্রাইজবন্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে সেরা দশ মডেলের নাম ঘোষণা করা হয়। সেরা দশে নিজের নাম শুনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন পলাশ। কিন্তু চমকের শেষ এখানেই নয়। সেরা দশ থেকে ‘ফেস অব এশিয়া মেল মডেল’ নির্বাচিত হন তিনি। অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। বনে যান ফেস অব এশিয়া। গালায় ফেস অব এশিয়া ফিমেল মডেল অ্যাওয়ার্ড এবং গ্র্যান্ড প্রাইজ অ্যাওয়ার্ডও দেওয়া হয়।
বিজয়ী পলাশ বলেন, ‘আমাকে যে উইনার করা হয়েছে, এটা মূলত বাংলাদেশের জন্য একটা পাওয়া। কারণ, ফেস অব বাংলাদেশ থেকে ফেস অব এশিয়া হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের অনেক ভূমিকা আছে। আমার এই প্রাপ্তি আমার নয়, এটা বাংলাদেশের প্রাপ্তি। এতজন ইন্টারন্যাশনাল মডেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমি ফেস অব এশিয়া হয়েছি। আমি মনে করি, এটি আমার ক্যারিয়ারে অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। আমি ভালো কিছু করতে পারব। আমার মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস আছে যে আমি সামনে অনেক ভালো কিছু করতে পারব।’
৯ জুন স্টার মডেলদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয় সিউলে। বাংলাদেশ থেকে স্টার মডেল হিসেবে গিয়েছিলেন তানজিয়া জামান মিথিলা। গালা শেষে ১০ জুন একটি নাইট পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন মডেলরা। পার্টি শেষে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হন।
পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে ক্রসওয়াক কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মারুফ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ফেস অব বাংলাদেশ হওয়া মডেলদের প্রস্তুত করে দেওয়া, তাদের কনফিডেন্স বুস্টআপ করার মূল কাজটা আমরা করেছি। ওটা খুব বড় রোল প্লে করে। কনফিডেন্স বুস্ট না করলে তারা গিয়ে ভালো পারফর্ম করতে পারত না। এই দেশগুলোর এতজন মডেলের মধ্যে কীভাবে নিজেকে প্রুভ করতে হবে, সেগুলো আমরা এখান থেকেই প্রিপেয়ার করে দিয়েছি। আমাদের এখান থেকে দুজন সার্বক্ষণিকভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। বাংলাদেশের জন্য এ অর্জন অনেক বড়। তাদের এখন হাউ টু বিকাম আ সেলিব্রিটি এবং হাউ টু হ্যান্ডেল সাকসেস, এ নিয়ে ওয়ার্কশপ করাব। যে চারজন ফেস অব বাংলাদেশ হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে করাব। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে সিউলে উইন্টার ফেস্টিভ্যাল হবে। সেখানেও আমরা একজন ছেলে ও একজন মেয়ে পাঠাব।’
ফেস অব বাংলাদেশে নির্বাচিত মডেলদের উন্নত ক্যারিয়ার কামনা করলেন ফেস অব বাংলাদেশ পর্বের ওভারঅল লুক অ্যান্ড ফিটনেসে স্কিন হেয়ার অ্যান্ড মেকআপের জাজ, পারসোনার ডিরেক্টর এবং ক্যানভাসের অ্যাসোসিয়েট এডিটর নুজহাত খান দিশা। বললেন, ‘বাংলাদেশে ফেরত আসার পর ইতিমধ্যে তারা পারসোনা জিমে ওয়ার্কআউট করছে। আমার মনে হয় গ্রুমিংয়ের সময় তাদের যা যা বলা হয়েছিল, তারা চেষ্টা করছে সেগুলো ধরে রাখতে। ফিরে এসে তাদের মধ্যে ডিফারেন্ট একটা ম্যাচিউরিটি লেভেল গ্রো করেছে। এতে তাদের ক্যারিয়ার বিল্ডআপ সহজ হবে। ক্যানভাস চেষ্টা করছে যেকোনো ভালো শুটে তাদের রাখতে। অবশ্যই চাই তাদের ভালো হোক, তারা আরও ভালো করুক। ওভারঅল ইন্ডাস্ট্রিটাও আরও ভালো হোক, বড় হোক। আমাদের ছেলেমেয়েরা কঠোর পরিশ্রমী। তাদের যদি ভালো জায়গায় সুযোগ দেওয়া যায়, এটা আমাদের জন্যই ভালো হবে।’
শিবলী আহমেদ
ছবি: ক্যানভাস ও ক্রসওয়াক